Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

কল্পনা দত্ত: ভারতের বিপ্লবী সংগ্রামের এক সাহসিনী কন্যা।

🔰 ভূমিকা

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বহু নারী বীরাঙ্গনার নাম আমরা জানি, কিন্তু কল্পনা দত্ত (পরে কল্পনা যোশী) তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে স্মরণীয়—কারণ তিনি ছিলেন যুগান্তর বিপ্লবী দলের এক সক্রিয় সদস্যা, যিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন।
যে সময় নারীদের মূলত ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রচলন ছিল, সে সময় কল্পনা দত্ত নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দেশের মুক্তির জন্য।


👶 শৈশব ও শিক্ষাজীবন

কল্পনা দত্ত জন্মগ্রহণ করেন ২৭ জুলাই ১৯১৩ সালে, চট্টগ্রামের (বর্তমান বাংলাদেশ) একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তাঁর পিতা ছিলন তিলক দত্ত, যিনি ব্রিটিশ সরকারের এক কর্মচারী। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলেও কল্পনা ছোট থেকেই স্বাধীনচেতা এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ছিলেন।

তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন চট্টগ্রামেই। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় আসেন এবং বেথুন কলেজে ভর্তি হন। এখানেই তিনি প্রথম রাজনৈতিক চেতনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হন। কলেজ জীবনে তিনি ছাত্র আন্দোলন, স্বদেশী প্রচার এবং দেশীয় পণ্যের ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে যুক্ত হন।


🚩 স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যোগদান

কলকাতায় পড়াশোনার সময় কল্পনা দত্তের সঙ্গে পরিচয় হয় সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শে প্রভাবিত ছাত্রছাত্রীদের একদল সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীর। এই সময় তিনি যুগান্তর বিপ্লবী দল-এর সঙ্গে যুক্ত হন।

১৯৩০ সালে মাস্টারদা সূর্য সেন চট্টগ্রামে সশস্ত্র আন্দোলন সংগঠিত করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই খবর কল্পনা দত্তকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তিনি কলেজ ছেড়ে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন এবং সরাসরি মাস্টারদার নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী দলে যোগ দেন।


⚔ চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুঠ অভিযানে ভূমিকা

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুঠ অভিযান চালানো হয়। যদিও কল্পনা দত্ত সরাসরি মূল আক্রমণে অংশ নেননি, তিনি অভিযান-পরবর্তী পরিকল্পনা, বার্তা আদানপ্রদান, এবং বিপ্লবীদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলে তিনি কৃষক পরিবারগুলির মধ্যে দেশপ্রেমের বার্তা ছড়িয়ে দেন এবং বিপ্লবীদের সঙ্গে জনসাধারণের সংযোগ স্থাপন করেন।


🛡 গোপন কার্যকলাপ ও নারীর ভূমিকা

ব্রিটিশ পুলিশ তখন বিপ্লবীদের ধরতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছিল। কল্পনা দত্ত, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, এবং অন্যান্য নারী কর্মীরা পুরুষ বিপ্লবীদের নিরাপদে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন।

তিনি নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরিতে বিশেষভাবে কাজ করেন। গ্রামের মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো, বিপ্লবীদের জন্য খাদ্য ও তথ্য সরবরাহ করা—এসব কাজে তাঁর সাহস ছিল অসাধারণ।


🎯 প্রীতিলতার শহিদ হওয়ার পর

১৯৩২ সালে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে শহিদ হন। এই ঘটনার পর কল্পনা দত্তকে মাস্টারদা সূর্য সেনের সরাসরি সঙ্গিনী হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তাঁরা দু’জনে চট্টগ্রামের গ্রামীণ অঞ্চলে গোপন আস্তানা বদলে বদলে পুলিশের চোখ এড়িয়ে চলছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ গুপ্তচরদের খবরের ভিত্তিতে ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ তাঁদের ঘিরে ফেলে।


⛓ গ্রেপ্তার ও বিচার

১৯৩৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কল্পনা দত্ত ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। মাস্টারদা সূর্য সেন একই সময়ে ধরা পড়েন এবং পরে তাঁকে নৃশংসভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়।

কল্পনা দত্তের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যাচেষ্টা এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। তাঁকে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

কারাগারে তিনি অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন। দীর্ঘদিন একাকী সেলে বন্দি থাকতে হয়। কিন্তু তাঁর মনোবল ভাঙেনি।


🕊 মুক্তি ও পরবর্তী জীবন

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পর রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটিশ সরকার। এর ফলে কল্পনা দত্তও মুক্তি পান।

মুক্তির পর তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হন এবং শ্রমিক আন্দোলন, নারী অধিকার আন্দোলন ও কৃষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন।


💍 ব্যক্তিগত জীবন

মুক্তির কিছু বছর পর কল্পনা দত্ত বিয়ে করেন কমিউনিস্ট নেতা পিসি যোশী-কে। বিয়ের পর তাঁর নাম হয় কল্পনা যোশী। যদিও রাজনৈতিক মতপার্থক্য ও ব্যক্তিগত কারণবশত তাঁদের সম্পর্ক পরবর্তীতে বিচ্ছিন্ন হয়, তবুও কল্পনা সারাজীবন সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজে নিবেদিত ছিলেন।


📖 সাহিত্যকর্ম ও স্মৃতিকথা

কল্পনা দত্ত তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বই লেখেন—
“Chittagong Armoury Raiders: Reminiscences”
এতে তিনি চট্টগ্রাম বিপ্লব, মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, এবং নিজের সংগ্রামের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন।

এই বই আজও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অমূল্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়।


🏅 সম্মান ও স্বীকৃতি

যদিও কল্পনা দত্তের নাম আজ সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব বেশি প্রচলিত নয়, ইতিহাসবিদরা তাঁকে ভারতের নারী বিপ্লবীদের মধ্যে অন্যতম অগ্রণী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন তাঁর স্মরণে অনুষ্ঠান আয়োজন করে। তাঁর জীবন নিয়ে তথ্যচিত্রও নির্মিত হয়েছে।


✊ কল্পনা দত্তের আদর্শ

কল্পনা দত্ত আমাদের শিখিয়ে গেছেন—

  1. নারী যদি সংকল্পবদ্ধ হয়, তবে দেশমাতৃকার জন্য যেকোনও ত্যাগ স্বীকার করতে পারে।
  2. বিপ্লব কেবল পুরুষের কাজ নয়; নারীরাও এর সমান অংশীদার।
  3. অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে গোপন ও প্রকাশ্য—দুই ধরনের লড়াই সমান গুরুত্বপূর্ণ।

🔚 উপসংহার

কল্পনা দত্ত ছিলেন এমন এক সংগ্রামী যিনি নিজের পড়াশোনা, আরাম-আয়েশ, এমনকি জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। চট্টগ্রামের বিপ্লবী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল অমূল্য।

যতদিন ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস লেখা হবে, ততদিন কল্পনা দত্তের নাম স্মরণে থাকবে একজন অগ্নিকন্যা হিসেবে—যিনি নির্ভীকভাবে বলেছিলেন:

“দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি।”


 

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

বাংলা চলচ্চিত্র, থিয়েটার এবং বাঙালি লোকনাট্যের কিংবদন্তি অভিনেত্রী গীতা দে – জন্ম দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।।।

গীতা দে ৫ আগস্ট ১৯৩১ সালে জন্ম গ্রহন করেন তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র, থিয়েটার এবং বাংলা লোক নাটকের একজন ভারতীয় অভিনেত্রী। ছয় বছর বয়সে তিনি মঞ্চ শিল্পী হিসেবে আবির্ভূত হন। ১৯৩৮ সালে, তিনি কলকাতার টালিগঞ্জে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে একজন অভিনেত্রী হিসেবে শুরু করেন। ধীরেন গাঙ্গুলি-পরিচালিত আহুতিতে ছয় বছর বয়সে শিশু শিল্পী হিসেবে তার অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন।

বাবা অনাদিবন্ধু মিত্র মেয়ের গান ও অভিনয়ে প্রবল ঝোঁক দেখে তাকে প্রতিবেশী গায়িকা রাধারানী দেবীর কাছে তালিম নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। তাঁর কাছেই গীতা দের প্রথম জীবনের নাচ, গান, অভিনয় শিক্ষা।
১৯৩৭ সালে মাত্র ছ’বছর বয়সে তিনি ‘আহুতি’ নামে একটি বাংলা ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। ছবিটির পরিচালক ছিলেন ধীরেন গাঙ্গুলি। এরপরের ছবি ‘দম্পতি’ এবং ‘নন্দিতা’। পরিচালকরা যথাক্রমে ছিলেন নীরেন লাহিড়ী এবং সুকুমার দাশগুপ্ত।
তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন ১৯৪৪ সালে। তিনি দুই শতাধিক বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র এবং দুই হাজারের বেশি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন। গ্রুপ থিয়েটারে তিনি অভিনয় করেছেন বেশ কিছু বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গে। যেমন তুলসী লাহিড়ী, শম্ভু মিত্র, তুলসী চক্রবর্তী, জ্ঞানেশ মুখার্জি, কালী সরকার, কানু ব্যানার্জি, দিলীপ রায় প্রমুখের সঙ্গে।
তিনি সত্যজিৎ রায় এবং ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারা, সুবর্ণরেখা, কোমল গান্ধার, কত আজনারে, তিন কন্যার মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন।১৯৫৬ ছিল তাঁর কাছে একটি যুগান্তকারী বছর। সে বছর প্রখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের স‍‌ঙ্গে তাঁর আলাপ করিয়ে দেন অভিনেতা কালী ব্যানার্জি। ঋত্বিক ঘটক সম্পর্কে তিনি বলেছেন- ‘ক্যামেরার ব্যবহার এবং শট গ্রহণের ব্যাপারে এত বড় মাপের পরিচালক তিনি আর দেখেননি। তিনি আমার জন্য বেশ কিছু ফিল্মের কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত ‍‌সেগুলি আর বাস্তবায়িত হয়নি।’৬০ বছরের অভিনয় জীবনে উল্লেখ করার মত তাঁর অভিনীত অজয় করের সাত পাকে বাঁধা, নৌকাডুবি, মাল্যদান, অরবিন্দ মুখার্জির নিশিপদ্ম, দুই ভাই, বর্ণচোরা, মৌচাক ইত্যাদি ছবির নাম। বিভিন্ন ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন সাবলীলভাবে। চরিত্রগুলির মধ্যে সহজে ঢুকে যেতে পারতেন বলে দর্শকরা আনন্দ পেতেন।
তিনি ১৯৫৪ সাল থেকে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সাথে যুক্ত ছিলেন এবং রেডিও নাটকে বেশ কয়েকটি সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে তার শেষ নাটক ছিল বাদশাহী চল।১৯৯৬ সালে উত্তর কলকাতার রঙ্গনা মঞ্চে এই নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন গণেশ মুখোপাধ্যায়। তিনি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি এই চলচ্চিত্রগুলিতে তার বহুমুখী পদ্ধতির জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তার অভিনয় এমনকি কিংবদন্তি লরেন্স অলিভিয়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি নেতিবাচক এবং কৌতুক উভয় ভূমিকাতেই পারদর্শী ছিলেন।

তিনি বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন; যার মধ্যে ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিদ্যা বালান এবং সঞ্জয় দত্ত অভিনীতপরিণীতা উল্লেখযোগ্য।
তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকা———–
ইন্দ্রাণী, মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার, ডাইনী, কাঠিন মায়া, কাঞ্চন মূল্য, সাথী হারা, দুই ভাই, তিন কন্যা, কাঁচের স্বর্গ, শুভ দৃষ্টি, বন্ধন, বর্ণচোরা, সাত পাকে বাঁধা, দুই বাড়ী, ছায়া সূর্য, অভয়া ও শ্রীকান্ত, শেষ পর্যন্ত, পিতা পুত্র, নিশিপদ্মা, ময়দান, মৌচাক, বাঘ বন্দী খেলা, দম্পতি, দত্তা, সূর্য সখি, হিরের শিকল, মহাপৃথিবী, সন্তান, কথবশেশান, পরিণীতা, টলি লাইটস, চিরদিনি তুমি যে আমার, নৌকা ডুবি, আহবান (চলচ্চিত্র)।

পুরস্কার ও সম্মাননা—

তিনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতে আজীবন অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন গভর্নর সৈয়দ নুরুল হাসানের কাছ থেকে একটি তারকা পদক পেয়েছিলেন (১৯৮৮)। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও (বাংলা চলচ্চিত্র ও নাট্যশালায় আজীবন অবদানের জন্য)।

মৃত্যু——-

গীতা দে ১৭ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে ৭৯ বছর বয়সে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

বাংলাদেশের প্রথম নারী পাইলট : সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা।।।।।

বাংলাদেশের প্রথম নারী পাইলট : সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানাআজকের দিনেই বিমান দুর্ঘটনায় প্রয়াত হন।১৯৭৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম নারী পাইলট হিসেবে নিয়োগপত্র পান রোকসানা। তবে আকাশে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি তাঁর। নিয়োগের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান রোকসানা।

বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কয়টি ভয়ংকর বিমান দুর্ঘটনা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এটি ছিল অন্যতম।
পুরো নাম সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা। ডাক নাম তিতলী আর প্রিয়জনদের কাছে ‘লিটল আপা’। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর প্রথম নারী বৈমানিক। তিনি ক্যাপ্টেন পদাধিকারী ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি বাণিজ্যিক বিমান পরিচালনার সনদ লাভ করেন।
তার জন্ম ১৯৫৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরে। তার ডাক নাম ছিলো ‘তিতলী’, যার অর্থ ‘প্রজাপতি’। নামের প্রভাব যেন তার উপর ষোলো আনা পড়েছিল। তখনকার সমাজব্যবস্থা নারীর জন্য ছিল খুবই রক্ষণশীল। কিন্তু সেই রক্ষণশীল সমাজে থেকেও প্রজাপতির মতো ডানা মেলে ওড়ার স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। শুধু স্বপ্ন দেখেই থেমে থাকেননি, স্বপ্ন সত্যি করে নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। হয়েছেন দেশের প্রথম নারী পাইলট। তবে চিরাচরিত নিয়ম ভেঙে হুঁট করেই ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাতে পারেননি তিনি। এর জন্য সমাজ ও নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে লড়াই চালাতে হয়েছে তাকে।
রোকসানা ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী এবং নানান গুণে পারদর্শী একজন নারী। ছিলেন রেডিও-টেলিভিশনের নামকরা একজন সংগীতশিল্পীও। তৎকালীন সময়ে জার্মান ভাষার ডিপ্লোমাধারী। যা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। হাতের সামনে ছিল জার্মানির মেডিক্যালের স্কলারশিপ। চোখের সামনে উঁকি দিচ্ছিল উজ্জ্বল এক ভবিষ্যৎ। তবে তিনি অন্য দশজন সাধারণ মানুষের মতো নিচে থেকে নয়, জীবনকে উপভোগ করতে চেয়েছেন নীল আকাশে উড়তে উড়তে। তাইতো অনায়াসে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জার্মানির মেডিক্যালের স্কলারশিপ। তারপর বিএসসিতে ভর্তি হন ঢাকার অন্যতম প্রসিদ্ধ উচ্চ শিক্ষালয় ইডেন কলেজে। কিন্তু অন্তরে তার অন্য বাসনা।
পাইলট হওয়ার স্বপ্ন কখনোই তার পিছু ছাড়েনি। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাব খুঁজে বের করে সেখানে যোগ দেন। এর ঠিক দুই বছরের মাথায় ১৯৭৮ সালে পেয়ে যান কমার্শিয়াল বিমান চালানোর লাইসেন্স। শুধু তাই নয়, সঙ্গে পেয়ে যান সহ-প্রশিক্ষকের লাইসেন্স। যার মাধ্যমে বহু শিক্ষানবীশকে ‘সেসনা’ ও ‘উইজিয়ন’ প্লেন চালানো শেখালেন। আর এভাবেই সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্বপ্ন-পূরণের লক্ষ্যে তার এগিয়ে চলা শুরু।
তাকে দমিয়ে দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় সব মহল থেকে। কিন্তু কোনোভাবেই থেমে থাকেননি এই নারী। সমস্ত বাধা পেরিয়ে এরপর ১৯৭৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও মুসলিম বিশ্বের প্রথম মহিলা পাইলট হিসেবে নিয়োগপত্র পান এই নারী। দেশের সামরিক ইতিহাসে প্রশিক্ষণকালে সার্বিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠ কৃতিত্বের জন্য ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করা তিনিই প্রথম নারী পাইলট। এরপরের ইতিহাস কেবলই গৌরবের। পরবর্তী বছরগুলোতে প্রায় ৬ হাজার ঘণ্টা বিমান পরিচালনার কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি।
তবে তার আকাশে ডানা মেলে ওড়ার পালা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। নিয়োগের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৮৪ সালের ৪ আগস্ট এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যু বরণ করেন তিনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কয়টা ভয়ঙ্কর বিমান দুর্ঘটনা রয়েছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে ফকার এফ-২৭ বিমানে করে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বৃষ্টিবিঘ্নিত আবহাওয়ার দরুন বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে নিহত হন। প্রচণ্ড বৃষ্টি ছিল সেদিন। একই বিমান দুর্ঘটনায় ৪৫ জন যাত্রীসহ ৪জন ক্রু সদস্য নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন ব্রিটিশ নাগরিক, একজন জাপানী এবং ৩৩জন মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত বাংলাদেশী ছিলেন।কেউ বাঁচেনি অভিশপ্ত বিমানের।চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আগত অভ্যন্তরীণ এই ফ্লাইটটি অত্যধিক বৃষ্টিপাতের কারণে দুইবার অবতরণের চেষ্টা করেও রানওয়ে খুজে পেতে ব্যার্থ হয়, তৃতীয়বার অবতরণের চেষ্টার সময় বিমানটি রানওয়ে থেকে ৫০০ মিটার আগেই এক জলাভূমিতে পতিত হয়ে বিধ্বস্ত হয়।
পরে তদন্তে প্রমাণ মেলে ওই বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল।
সৈয়দা কানিজ ফাতেমার আয়ূষ্কাল মাত্র সাড়ে আটাশ বছরের হলেও তিনি সেই অল্প সময়টাতেই রচনা করেছেন নতুন ইতিহাস, যা তাকে বাঁচিয়ে রাখবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। ‘লিটল আপা’ উড়তে শিখিয়ে গেছেন পরের প্রজন্মের নারীদের। তার স্মৃতি রক্ষার্থে ‘রোকসানা ফাউন্ডেশন’ এর উদ্যোগে ১৯৮৫ সালের জুলাই থেকে ‘মাসিক রোকসানা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হতে শুরু করে।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ভারতরত্ন অরুণা আসফ আলী ,ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামী, সমাজকর্মী ও দিল্লির প্রথম মেয়র।।।।।।

অরুণা আসাফ আলী ছিলেন একজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক কর্মী এবং প্রকাশক। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী, তিনি 1942 সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বোম্বের গোয়ালিয়া ট্যাঙ্ক ময়দানে ভারতীয় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাপকভাবে স্মরণীয় হয়েছিলেন, এই আন্দোলনটিকে এটির সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী চিত্রের একটি দেয়।

তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হয়েছিলেন এবং লবণ সত্যাগ্রহের সময় জনসাধারণের মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি গ্রেপ্তার হন, এবং 1931 সালে গান্ধী-আরউইন চুক্তির অধীনে মুক্তি পাননি যা সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির শর্ত দেয়। অন্যান্য মহিলা সহ-বন্দীরা প্রাঙ্গণ ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছিল যদি না তাকেও মুক্তি দেওয়া হয় এবং মহাত্মা গান্ধীর হস্তক্ষেপের পরেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি তার মুক্তির পর 1942 সাল পর্যন্ত রাজনৈতিকভাবে খুব বেশি সক্রিয় ছিলেন না। তার স্বাধীন ধারার জন্য পরিচিত, তিনি এমনকি 1946 সালে নিজেকে আত্মসমর্পণের জন্য গান্ধীর অনুরোধকে অমান্য করেছিলেন। স্বাধীনতার পর, তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, দিল্লির প্রথম মেয়র হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি 1992 সালে পদ্মবিভূষণ এবং 1997 সালে মরণোত্তর ভারতরত্ন পুরস্কার লাভ করেন।
অরুনা আসাফ আলী 16 জুলাই 1909 সালে কালকা, পাঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে হরিয়ানা, ভারতে) একটি বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা উপেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী পূর্ব বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) বরিশাল জেলার বাসিন্দা কিন্তু ইউনাইটেড প্রদেশে বসতি স্থাপন করেন। তিনি একজন রেস্টুরেন্টের মালিক ছিলেন। তার মা অম্বালিকা দেবী ছিলেন ত্রৈলোক্যনাথ সান্যালের কন্যা, একজন প্রখ্যাত ব্রাহ্ম নেতা যিনি অনেকগুলি ব্রাহ্ম স্তোত্র লিখেছিলেন। উপেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলীর ছোট ভাই ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী (DG) ছিলেন প্রথম দিকের চলচ্চিত্র পরিচালকদের একজন। আরেক ভাই, নগেন্দ্রনাথ ছিলেন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যিনি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একমাত্র জীবিত কন্যা মীরা দেবীকে বিয়ে করেছিলেন। অরুণার বোন পূর্ণিমা ব্যানার্জী ভারতের গণপরিষদের সদস্য ছিলেন।
অরুণা লাহোরের সেক্রেড হার্ট কনভেন্ট এবং তারপর নৈনিতালের অল সেন্টস কলেজে শিক্ষিত হন। স্নাতক হওয়ার পর, তিনি কলকাতার গোখলে মেমোরিয়াল স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। তিনি এলাহাবাদে কংগ্রেস দলের একজন নেতা আসাফ আলীর সাথে দেখা করেছিলেন। ধর্ম এবং বয়সের কারণে পিতামাতার বিরোধিতা সত্ত্বেও (তিনি একজন মুসলিম এবং তার 20 বছরেরও বেশি বয়সী ছিলেন) সত্ত্বেও তারা 1928 সালে বিয়ে করেছিলেন।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অরুণা আসাফ আলীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আসাফ আলীকে বিয়ে করার পর তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হয়েছিলেন এবং লবণ সত্যাগ্রহের সময় জনসাধারণের মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। 21 বছর বয়সে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এই অভিযোগে যে তিনি একজন ভবঘুরে ছিলেন এবং তাই 1931 সালে গান্ধী-আরউইন চুক্তির অধীনে মুক্তি পাননি যা সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির শর্ত দিয়েছিল। অন্যান্য মহিলা সহ-বন্দিরা প্রাঙ্গণ ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছিল যদি না তাকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং মহাত্মা গান্ধী হস্তক্ষেপ করার পরেই ছেড়ে দেওয়া হয়। একটি গণআন্দোলন তার মুক্তি নিশ্চিত করে।
1932 সালে, তাকে তিহার জেলে বন্দী করা হয়েছিল যেখানে তিনি অনশন শুরু করে রাজনৈতিক বন্দীদের প্রতি উদাসীন আচরণের প্রতিবাদ করেছিলেন। তার প্রচেষ্টায় তিহার জেলের অবস্থার উন্নতি হয়েছিল কিন্তু তাকে আম্বালায় স্থানান্তরিত করা হয় এবং নির্জন কারাবাসের শিকার করা হয়। মুক্তির পর তিনি রাজনৈতিকভাবে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না, কিন্তু 1942 সালের শেষের দিকে তিনি ভূগর্ভস্থ আন্দোলনে অংশ নেন।
1942 সালের 8 আগস্ট, সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটি বোম্বে অধিবেশনে ভারত ছাড়ো প্রস্তাব পাস করে। সরকার প্রধান নেতাদের এবং কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সকল সদস্যকে গ্রেফতার করে সাড়া দিয়েছিল এবং এইভাবে আন্দোলনকে সাফল্য থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিল। তরুণ অরুণা আসাফ আলী 9 আগস্ট অধিবেশনের বাকি অংশে সভাপতিত্ব করেন এবং গোয়ালিয়া ট্যাঙ্ক ময়দানে কংগ্রেসের পতাকা উত্তোলন করেন। এটি আন্দোলনের সূচনাকে চিহ্নিত করে। সমাবেশে পুলিশ গুলি চালায়। বিপদের মুখে তার সাহসিকতার জন্য অরুণাকে 1942 সালের আন্দোলনের নায়িকা বলা হয় এবং পরবর্তী বছরগুলিতে তাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের গ্র্যান্ড ওল্ড লেডি বলা হয়। প্রত্যক্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ভারতের তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল কিন্তু গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি ভূগর্ভস্থ হয়ে যান এবং ১৯৪২ সালে আন্ডারগ্রাউন্ড আন্দোলন শুরু করেন। তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও বিক্রি করা হয়। ইতিমধ্যে, তিনি রাম মনোহর লোহিয়ার সাথে কংগ্রেস পার্টির একটি মাসিক ম্যাগাজিন ইনকিলাবও সম্পাদনা করেন। 1944 সালের একটি ইস্যুতে, তিনি যুবকদের সহিংসতা এবং অহিংসা সম্পর্কে নিরর্থক আলোচনা ভুলে যেতে এবং বিপ্লবে যোগ দিতে বলেছিল। জয়প্রকাশ নারায়ণ ও অরুণা আসাফ আলীর মতো নেতাদের “গান্ধীর রাজনৈতিক সন্তান কিন্তু কার্ল মার্ক্সের সাম্প্রতিক ছাত্র” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সরকার তাকে ধরার জন্য 5,000 টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দিল্লির করোলবাগের ডাঃ জোশির হাসপাতালে কিছু সময়ের জন্য লুকিয়ে ছিলেন। মহাত্মা গান্ধী তাকে একটি হাতে লেখা নোট পাঠিয়েছিলেন লুকিয়ে থেকে বেরিয়ে আসতে এবং নিজেকে আত্মসমর্পণ করার জন্য – যেহেতু তার মিশন সম্পন্ন হয়েছিল এবং তিনি হরিজন কার্যের জন্য পুরস্কারের পরিমাণ ব্যবহার করতে পারেন। যাইহোক, 1946 সালে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার করার পরেই তিনি আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি মহাত্মার কাছ থেকে পাওয়া নোটটি মূল্যবান ছিলেন এবং এটি তার ড্রয়িং রুমকে সজ্জিত করেছিল। যাইহোক, তিনি রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি বিদ্রোহকে সমর্থন করার জন্য গান্ধীর কাছ থেকেও সমালোচনার সম্মুখীন হন, একটি আন্দোলনকে তিনি হিন্দু ও মুসলমানদের একক সর্বশ্রেষ্ঠ একীকরণকারী ফ্যাক্টর হিসেবে দেখেছিলেন যেটি পাকিস্তান আন্দোলনের শীর্ষে ছিল।
তিনি কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন, সমাজতান্ত্রিক ঝোঁক সহ কর্মীদের জন্য কংগ্রেস পার্টির মধ্যে একটি ককাস। সমাজতন্ত্রের বিষয়ে কংগ্রেস পার্টির অগ্রগতিতে হতাশ হয়ে তিনি 1948 সালে একটি নতুন দল, সমাজতান্ত্রিক দল এ যোগ দেন। তবে তিনি এদাতা নারায়ণনের সাথে সেই দলটি ত্যাগ করেন এবং রজনী পামে দত্তের সাথে মস্কো সফর করেন। তারা দুজনেই 1950-এর দশকের গোড়ার দিকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত ফ্রন্টে, 1953 সালে আসাফ আলী মারা গেলে তিনি শোকাহত হন।
1954 সালে, তিনি ভারতীয় নারীদের জাতীয় ফেডারেশন গঠন করতে সাহায্য করেছিলেন, সিপিআই-এর মহিলা শাখা কিন্তু 1956 সালে নিকিতা ক্রুশ্চেভের স্ট্যালিনকে প্রত্যাখ্যান করার পরে পার্টি ত্যাগ করেন। 1958 সালে, তিনি দিল্লির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি দিল্লিতে সমাজকল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য কৃষ্ণ মেনন, বিমলা কাপুর, গুরু রাধা কিষাণ, প্রেমসাগর গুপ্ত, রজনী পালমে জোতি, সরলা শর্মা এবং সুভদ্রা জোশীর মতো তার যুগের সমাজকর্মী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
তিনি এবং নারায়ণন লিঙ্ক পাবলিশিং হাউস শুরু করেন এবং একই বছর একটি দৈনিক পত্রিকা, প্যাট্রিয়ট এবং একটি সাপ্তাহিক, লিঙ্ক প্রকাশ করেন। জওহরলাল নেহেরু, কৃষ্ণ মেনন এবং বিজু পট্টনায়কের মতো নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে প্রকাশনাগুলি মর্যাদাপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরে তিনি অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে প্রকাশনা সংস্থা থেকে সরে আসেন, তার কমরেডদের ধর্ম গ্রহণের লোভে হতবাক হয়ে যান। জরুরী অবস্থা সম্পর্কে সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও, তিনি ইন্দিরা গান্ধী এবং রাজীব গান্ধীর কাছাকাছি ছিলেন।
তিনি 29 জুলাই 1996-এ 87 বছর বয়সে নিউ দিল্লিতে মারা যান।
অরুনা আসাফ আলী ১৯৬৪ সালের জন্য আন্তর্জাতিক লেনিন শান্তি পুরস্কার এবং 1991 সালে আন্তর্জাতিক বোঝাপড়ার জন্য জওহরলাল নেহেরু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি 1992 সালে তার জীবদ্দশায় ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ এবং অবশেষে সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারে ভূষিত হন। ভারতরত্ন, মরণোত্তর 1997 সালে। 1998 সালে, তার স্মরণে একটি স্ট্যাম্প জারি করা হয়েছিল। তার সম্মানে নতুন দিল্লির অরুণা আসাফ আলী মার্গের নামকরণ করা হয়েছে। অল ইন্ডিয়া মাইনরিটিস ফ্রন্ট বার্ষিক ডক্টর অরুণা আসাফ আলী সদভাবনা পুরস্কার বিতরণ করে।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে- হাজার চুরাশির মা, মহাশ্বেতা দেবী।।।।।

মহাশ্বেতা দেবী ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক এবং একজন কর্মী। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে হাজার চুরাশির মা , রুদালী এবং অরণ্যের অধিকার । তিনি একজন বামপন্থী ছিলেন যিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ , বিহার , মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড় রাজ্যের উপজাতিদের ( লোধা এবং শবর ) অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছিলেন ।

তিনি বিভিন্ন সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন যেমনসাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার ( বাংলায় ), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার সহ ভারতের বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী এবং পদ্মবিভূষণ ।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা—————

মহাশ্বেতা দেবী একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৪ জানুয়ারি ১৯২৬ তারিখে ঢাকা , ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে ঢাকা , বাংলাদেশ )। তার বাবা মনীশ ঘটক ছিলেন কল্লোল আন্দোলনের একজন কবি এবং ঔপন্যাসিক , যিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন যুবনাশ্ব ( বাংলা : আত্মনাশ্ব ) । ঘটকের ভাই ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক । দেবীর মা, ধরিত্রী দেবীও একজন লেখক এবং একজন সমাজকর্মী ছিলেন যার ভাইদের মধ্যে রয়েছেন ভাস্কর শঙ্খ চৌধুরী এবং এর প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক।ভারতের ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি , শচীন চৌধুরী।
দেবীর প্রথম শিক্ষা ছিল ঢাকায়, ইডেন মন্টেসরি স্কুল । এরপর তিনি পশ্চিমবঙ্গে (বর্তমানে ভারতে) চলে যান। এরপর তিনি মেদিনীপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন। এরপর তাকে শান্তিনিকেতনে ভর্তি করা হয় । এর পরে, তিনি বেলতলা গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করেন যেখানে তিনি তার ম্যাট্রিকুলেশন শেষ করেন। তারপর ১৯৪৪ সালে তিনি আসুতোষ কলেজ থেকে আই.এ. তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং ইংরেজিতে বিএ (অনার্স) সম্পন্ন করেন এবং তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এমএ সম্পন্ন করেন ।
মহাশ্বেতা দেবী বহুবার ভারতের উপজাতি মানুষদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। মহাশ্বেতা দেবীর বিশেষত্ব আদিবাসী, দলিত এবং প্রান্তিক নাগরিকদের অধ্যয়ন তাদের মহিলাদের উপর ফোকাস করে। তারা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা , মহাজন এবং উচ্চ শ্রেণীর দুর্নীতি ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হিসেবে যুক্ত ছিল । তিনি বছরের পর বছর পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড়ের আদিবাসী গ্রামে বসবাস করতেন, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতেন এবং তাদের কাছ থেকে শিখতেন। তিনি তার কথা ও চরিত্রে তাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকে মূর্ত করেছেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে তার গল্পগুলি তার সৃষ্টি নয়, সেগুলি তার দেশের মানুষের গল্প। যেমন একটি উদাহরণ তার কাজ “ছোট্টি মুন্ডি এবং তার তির”।তিনি লোধা এবং শবর , পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সম্প্রদায়, মহিলা এবং দলিতদের অধ্যয়ন করেছিলেন ।

তার বিস্তৃত বাংলা কথাসাহিত্যে, তিনি প্রায়শই শক্তিশালী কর্তৃত্ববাদী উচ্চ-বর্ণের জমিদার, অর্থ-ঋণদাতা এবং ভেনাল সরকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা উপজাতীয় জনগণ এবং অস্পৃশ্যদের উপর নির্মম নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন।মহাশ্বেতা দেবী ভারতে উপজাতিদের দ্বারা ভোগা বৈষম্যের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার তার আওয়াজ তুলেছিলেন। দেবীর ১৯৭৭ সালের উপন্যাস অরণ্যের অধিকার (অরণ্যে অধিকার) ছিল বিরসা মুন্ডার জীবন নিয়ে । এবং ২০১৬ সালের জুন মাসে, দেবীর সক্রিয়তার ফলস্বরূপ, ঝাড়খণ্ড রাজ্য সরকার অবশেষে মুণ্ডার মূর্তি থেকে ম্যানাকলগুলি অপসারণ করতে দেখেছিল, যা উল্লেখযোগ্য তরুণ উপজাতীয় নেতার স্মারক ভাস্কর্যের অংশ ছিল। ব্রিটিশ শাসনের যুগের একটি ফটোগ্রাফের উপর ভিত্তি করে।
দেবী ১০০ টিরও বেশি উপন্যাস এবং ২০ টিরও বেশি ছোট গল্পের সংকলন লিখেছেন প্রাথমিকভাবে বাংলায় লেখা তবে প্রায়শই অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ঝাঁসির রাণীর জীবনী অবলম্বনে তার প্রথম উপন্যাস ঝাঁসির রানী, প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে ।

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি—————–

সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৭৯), সমাজসেবায় পদ্মশ্রী (১৯৮৬), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার (১৯৯৬), রামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার (১৯৯৭), অফিসার দেল’ অর্ডার দেস আর্টস এত দেস লেটার্স (২০০৩), পদ্মবিভূষণ – ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা (২০০৬), সার্ক সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭), ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন (২০০৯), যশবন্তরাও চবন জাতীয় পুরস্কার (২০১০), বঙ্গবিভূষণ – পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা (২০১১)।

চলচ্চিত্রায়ন—————–

সংঘর্ষ, রুদালি, হাজার চৌরাসি কি মা, মাটি মায়,
গাঙ্গোর।

দেবীর প্রধান কাজগুলির মধ্যে রয়েছে——–

হাজর চুরাশির মা, অরণ্যের অধিকার, অগ্নিগর্ভ, মূর্তি, নীড়েতে মেঘ, স্তন্যদায়নী, চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর, বর্তিকা।

মৃত্যু———–

২৩ জুলাই ২০১৬ তারিখে, দেবী একটি বড় হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন এবং তাকে কলকাতার বেলে ভিউ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় । জুলাই ২৮ তারিখে ৯০ বছর বয়সে একাধিক অঙ্গ ব্যর্থতার কারণে দেবী মারা যান।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

মাষ্টার দা সূর্য সেনের এক অকুতোভয় নারী যোদ্ধা : কল্পনা দত্ত ।।।

ভূমিকা — জাতির মুক্তি ও জাতীয়তাবাদের আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই প্রতিটি সংগ্রামে তারা ছিলেন সম্মুখ সমরে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অকুতোভয় যোদ্ধা এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম সদস্য কল্পনা দত্ত। কল্পনা দত্ত ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব।

বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলার যেসব নারী ব্রিটিশ – বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বিপ্লবী কল্পনা দত্ত। তার বিপ্লবী মনভাবের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ‘অগ্নিকন্যা’ বলেছেন।
জন্ম–
কল্পনা দত্তের জন্ম ১৯১৩ সালের ২৭ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নের শান্ত-সবুজ পাহাড়ঘেরা শ্রীপুরে। তার পিতা বিনোদবিহারী দত্ত ও মাতা শোভন বালা দত্ত। কল্পনা দত্তের ঠাকুরদা ডাক্তার দুর্গাদাস দত্ত ছিলেন চট্টগ্রামের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি। ইংরেজ প্রশাসনও তাকে যথেষ্ট সম্মান দিতেন। ফলে তাদের বাড়িটা সবসময় পু‍‌লিশের নজরের বাইরে ছিল। তবে শৈশব থেকেই কল্পনা ছিলেন অন্য সব মেয়েদের থেকে আলাদা। মানসিক দিক থেকেও ছিলেন ব্যতিক্রমী, অত্যন্ত ভাবপ্রবণ এবং স্পর্শকাতর। দুঃখী মানুষের দুঃখের কাহিনী তাকে ব্যথিত করতো। শৈশব তাই সকলকে নিয়ে এক সুখী সমাজের স্বপ্ন দেখতেন।
শিক্ষা জীবন—
কল্পনা দত্তের প্রাথমিক লেখাপড়া শেষে তাকে ডা. খাস্তগীর স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন তার বাবা। বীরকন্যা প্রীতিলতাও এই স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। কল্পনা দত্ত প্রীতিলতার এক ক্লাসের ছোট ছিলেন। এই স্কুলে প্রতিটি শ্রেণিতে প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্ত প্রথম কিংবা দ্বিতীয় ছিলেন। যে কারণে তাদের মধ্যে একটা যোগাযোগ ছিল
চট্টগ্রাম থেকে ১৯২৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর কল্পনা দত্ত কলকাতা আসেন এবং বেথুন কলেজ-এ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। বেথুন কলেজে পড়তে পড়তে তিনি নানা ধরনের বিপ্লবী কর্মকান্ডে জরিয়ে পরেন। শহীদ ক্ষুদিরাম এবং বিপ্লবী কানাই লাল দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বেথুন কলেজ-এ গড়ে ওঠা ছাত্রী সংঘ-এ যোগদান করেন।
প্রীতিলতার সাথে পরিচয়—
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের নেতা বীর শহীদ সূর্য সেন, পূর্ণেন্দু দস্তিদারের নামের সঙ্গে যে দু’জন নারীর নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে তাদের একজন হলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, আর অন্যজন কল্পনা দত্ত। তিনি ছিলেন মাস্টারদার প্রিয় পাত্রী, রবীন্দ্রনাথের ‘অগ্নিকন্যা’ এবং চট্টগ্রামে সকলের ‘ভুলুদা’ নামে পরিচিত। নারীরাও যে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারেন, সেই সময়ে তা কল্পনা করা যেত না। নারীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় চট্টগ্রামের যুব বিদ্রোহ ব্রিটিশদের ভিতকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল। বেথুন কলেজে ভর্তি হওয়ার কয়েক দিন পর প্রীতিলতার সাথে পরিচয় ঘটে। প্রীতিলতা আন্তরিকতা সাংগঠনিক দক্ষতা, ব্যবহারে মেয়েদের খুব আপন করে নিতে পারতেন। তখন প্রীতিলতা ওই একই কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে বি.এ. পড়ছেন। থাকেন ছাত্রীনিবাসে। এখানে মাষ্টারদার নির্দেশে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। গড়ে তুলেন এক বিপ্লবীচক্র। এই বিপ্লবীচক্রে অনেক মেয়ে সদস্য যোগ দেন। এই বিপ্লবীচক্রে কল্পনাও যুক্ত হলেন। এই চক্রের মূল কাজই ছিল বিপ্লবীকর্মী তৈরির পাশাপাশি অর্থ সংগ্রহ করা। অর্থ সংগ্রহ করে প্রীতিলতা চট্টগ্রামে পাঠাতেন।
চট্টগ্রামে সূর্য সেনের সাথে পরিচয়—
১৯৩০ সালে কল্পনা দত্ত আবার চট্টগ্রামে ফিরে যান। এই সময় পুর্নেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে তিনি মাস্টার দা সূর্য সেনের সাথে পরিচিত হন এবং মাস্টার দা প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখা-য় যোগদান করেন। তখন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নেতৃবৃন্দ গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং, লোকনাথ বল প্রমুখ বিচারাধীন বন্দী। সেই সময় মহিলাদের বিপ্লবী দলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু মাস্টার দা এই সমস্ত নিয়ম নীতি শিথিল করে কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-কে তার দলে গ্রহণ করেন।
বিপ্লবী জীবন—-
কলকাতা থেকে ফেরার সময় তিনি গোপনে কিছু বিষ্ফোরক নিয়ে আসেন, এছাড়াও গোপনে গান কটনও তৈরী করেছিলেন। এই সময় বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের বিচার ও সাজা রুখতে তিনি বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি কোর্ট এবং জেলে ডিনামাইট দ্বারা বিষ্ফোরনের পরিকল্পনা করেছিলেন, যাতে বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ পালাতে সক্ষম হন।
কিন্তু তার পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। ফলে তার বিপ্লবী কর্মকান্ডের উপর কিছু প্রতিবন্ধকতা আসে। যাই হোক এই সময় তিনি প্রায়ই মাস্টার দার সাথে তার গ্রামে ঘুরে গ্রামের মানুষের সুখ দুঃখের খবর নিতেন। এরই সাথে সাথে তিনি ও তার সহযোদ্ধা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রত্যহ গুলি চালনার প্রশিক্ষন নিতেন।
ইউরোপীয় ক্লাবে আক্রমণ—
১৯৩১ সালে সূর্য সেন, কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে চট্টগ্রামের ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব দেন। নির্দিষ্ট দিনের এক সপ্তাহ আগে পুরূষের ছদ্মবেশে একটি সমীক্ষা করতে গিয়ে তিনি ধরা পরেন ও গ্রেফতার হন। জেলে বসে তিনি অপারেশন পাহারতলী এবং বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মহত্যার খবর শোনেন।
গ্রেফতার ও নির্বাসন—-
জামিনে মুক্তি পেয়ে মাস্টার দার নির্দেশে তিনি কিছু দিন আত্মগোপন করে থাকেন। ১৯৩৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাদের গোপন ডেরা ঘিরে ফেলে। কল্পনা এবং মনিন্দ্র দত্ত পালাতে সক্ষম হলেও মাস্টার দা বন্দী হন। কিছুদিন পর কল্পনা এবং তার কিছু সহযোদ্ধা পুলিশের হাতে ধরা পরেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলায় মাস্টার দা ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করা হয়। কল্পনা দত্ত যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত হন।
পরবর্তী জীবন—
১৯৩৯ সালে মুক্তি লাভের পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে সাম্মানিকসহ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তারপর তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৪৩ সালে C.P.I নেতা পূরণচাঁদ যোশীর সাথে তার বিবাহ হয়। এর পর তিনি চট্টগ্রামে ফিরে যান এবং দলের মহিলা ও কৃষক সংগঠনকে চাঙ্গা করেন। ১৯৪৬ সালে C.P.I প্রার্থী হয়ে তিনি চট্টগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। কিন্তু জয়ী হতে পারেন নি। স্বাধীনতার পর তিনি ভারতে চলে আসেন। ১৯৫০ সালে ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে চাকরি নেন। পরে দিল্লী থাকতেন। সেখানে নারী আন্দোলনে মুখ্যভূমিকা নেন। ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার মৈত্রী সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট অবদান ছিল। ‘অল ইণ্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ রাশিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
নারী আন্দোলনে ভূমিকা—
দেশভাগের পরও অনেকদিন তিনি চট্টগ্রামেই থেকে যান। ১৯৫০ সালে ইন্ডিয়ান স্ট্যাস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে চাকুরি নেন এবং পরবর্তী সময়ে দিল্লিতে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি নানাবিধ কাজের সাথে যুক্ত হন। ভারতের নারী আন্দোলনে তিনি ভূমিকা রাখেন। কল্পনা দত্ত নারী সমিতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারতের মৈত্রী সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট অবদান ছিল।
তিনি অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ-এর সাধারণ সম্পাদিকাও ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় কল্পনা দত্ত নানাভাবে সহযোগিতা করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ ও খাবার সংগ্রহ করণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে অন্যান্য বিপ্লবী কমরেডদের সাথে কল্পনা দত্ত চট্টগ্রাম আসেন। সেখানে মিউনিসিপ্যাল স্কুল প্রাঙ্গণে বিপ্লবী দলকে সম্বর্ধনা দেয়া হয়। কল্পনা দত্তের লেখা বইয়ের নাম- ‘চট্টগ্রাম অভ্যুত্থান’।
মৃত্যু—
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে কল্পনা দত্ত একটি চিরস্মরণীয় নাম। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অসীম সাহস ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চির জাগরুক হয়ে থাকবেন এক অকুতোভয় নারী যোদ্ধা- কল্পনা দত্ত।১৯৯১ সালে চট্টগ্রামে যুব আন্দোলনের ইতিহাস লিখতে শুরু করেছিলেন, শেষ করতে পারেননি। তার জীবনের স্মৃতিকথার তিন হাজার পৃষ্ঠার পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেলেছিলেন সামান্য এক ভুলের কারণে। সেই মনোবেদনা নিয়ে ১৯৯৫ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি ৮২ বছর বয়সে নয়া দিল্লী তে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে মালতী চৌধুরী , ভারতীয় বিশিষ্ট সর্বোদয় নেত্রী ও সমাজকর্মী।।।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে মালতী চৌধুরী প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল।

মালতী চৌধুরী ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন তিনি। মালতী চৌধুরী ছিলেন মহাত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বিশিষ্ট সর্বোদয় নেত্রী ও সমাজসেবী।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন————

মালতী চৌধুরী ১৯০৪ সালের ২৬ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় একটি সচ্ছল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কুমুদনাথ সেন ব্যারিস্টার ছিলেন। মাতা স্নেহলতা সেন। তাদের পৈতৃক নিবাস ছিল বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা বিক্রমপুরের কামারখাড়া। কিন্তু তাদের পরিবারের সবাই চলে যায় বিহারের শিমুলতলায়। মাত্র আড়াই বছর বয়সে তার বাবা মারা যান এবং তার মা তাকে বড় করেন। মালতী চৌধুরী ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ১৬ বছর বয়সে শান্তিনিকেতনে আসেন। সেখানে অধ্যয়নকালে তিনি সরাসরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংস্পর্শে আসেন। তিনি শান্তিনিকেতনে ১৯২৭ সালে ওড়িশার এক সময়ের মুখ্যমন্ত্রী নবকৃষ্ণ চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

অহিংস আন্দোলন——

মহাত্মা গান্ধী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, তিনি ১৯৩০ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং তাকে গ্রেফতার করে ভাগলপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে হাজারীবাগ কারাগারে ছিলেন। ৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি জেলে যান।

সামাজিক কাজ—–-

তিনি সর্বোদয় নেত্রী নামে পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি দরিদ্র, দলিত, আদিবাসী হরিজন শিশুদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি উৎকল কংগ্রেস শ্রমজীবী কর্মী সংঘ গঠন করেন। গ্রামের কৃষকদের উন্নতির জন্য সংস্কার ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করেন, সংগঠন গড়ে তোলেন। ওড়িশা রাজ্যে গান্ধীজির পদযাত্রায় সঙ্গী হন। ১৯৪৭ সালে, তিনি কিছু সময়ের জন্য ওড়িশা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হন। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারি হলে তার বিরুদ্ধে পথে নামেন এবং ৭১ বছর বয়সে তাকে ছয় মাস কারাবরণ করতে হয়। তিনি আচার্য বিনোবা ভাবের ভূদান আন্দোলনেও সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন।

সম্মান——

(ক) উৎকল রত্ন সম্মান (উড়িষ্যা সরকার)।
(খ) জাতীয় পুরস্কার, ঠাকুর সাহিত্য পুরস্কার, দেশিকোত্তম, (শিশু কল্যাণমূলক কাজের জন্য)।
(গ) ১৯৮৮ সমাজসেবামূলক কাজের জন্যে তিনি সালে যমুনালাল বাজাজ পুরস্কারে সম্মানিত হলেও তা নিতে অস্বীকার করেছিলেন।

মৃত্যু——

১৫ মার্চ ১৯৯৮ সালে ৯৩ বছর বয়েসে তিনি প্রয়াত হন ।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

আজাদ আজাদ হিন্দ ফৌজের রানী ঝাঁসি রেজিমেন্টের সৈনিক ও প্রথম গুপ্তচর : নীরা আর্য।।।।।।

ভূমিকা:- তিনি ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম মহিলা গুপ্তচর, আজাদ হিন্দ ফৌজের ঝাঁসি রেজিমেন্টের নেতৃত্বে ছিলেন লক্ষী সেহেগল। দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভুত মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ১৯৪৩ সালে গড়ে উঠেছিল এই রেজিমেন্ট। ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল ব্যাংকক, রেঙ্গুন ও সিঙ্গাপুর।

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বাঁচাতে নিজের স্বামীকে হত্যা —
নীরা আর্য আজাদ হিন্দ ফৌজের রানি ঝাঁসি রেজিমেন্টের সৈনিক ছিলেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বাঁচাতে তিনি নিজের স্বামীকে হত্যা করেন। নেতাজী তাঁকে নীরা নাগিনী বলে অভিহিত করলে তিনি নীরা নাগিনী নামে পরিচিতি লাভ করেন। বৃটিশ সরকার তাঁকে একজন গুপ্তচর হিসাবে গণ্য করেছিল। তার ভাই বসন্ত কুমারও আজাদ হিন্দ ফৌজে ছিলেন।
প্রখর বুদ্ধিমত্তা, সাহসী ও আত্মসম্মান বোধ–
অনেক লোকশিল্পী নীরা নাগিন ও তার ভাই বসন্ত কুমারের জীবন নিয়ে কবিতা ও ভজন রচনা করেছেন। নীরা নাগিনী নামে তার জীবনের একটি মহাকাব্যও রয়েছে। তার জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তিনি ছিলেন এক দুর্দান্ত দেশপ্রেমিক, সাহসী ও আত্মসম্মান বোধে গর্বিত মহিলা। তার শেষ জীবন কাটে হায়দ্রাবাদে। সেখানকার মহিলারা তাকে গর্বের সাথে ‘পদ্মমা’ বলে সম্বোধন করতেন।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন—-
নীরা আর্য ১৯০২ সালের ৫ মার্চ ভারতের তৎকালীন যুক্তপ্রদেশের অধুনা উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বাগপত জেলার খেকড়া শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা শেঠ ছজুমল ছিলেন সে সময়ের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তার ব্যবসা-বাণিজ্য সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তার পিতার ব্যবসায়ের মূল কেন্দ্র ছিল কলকাতা। তাই কলকাতাতে তার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল। নীরা আর্য হিন্দি, ইংরেজি, বাংলার পাশাপাশি আরও অনেক ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ভারতের সিআইডি ইন্সপেক্টর শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে বিবাহ করেন। শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস ছিলেন ইংরেজপ্রভু ভক্ত অফিসার। মূলতঃ শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে গুপ্তচরবৃত্তি করে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে হত্যা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ—–
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বাঁচাতে তিনি ইংরেজ সেনাবাহিনীর পদস্থ অফিসার শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে হত্যা করেছিলেন। একসময় সুযোগ পেয়ে শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস নেতাজিকে হত্যার জন্য গুলি চালিয়েছিলেন, কিন্তু সেই গুলি নেতাজির গাড়ীর চালককে বিদ্ধ করে । কিন্তু এরই মধ্যে নীরা আর্য শ্রীকান্ত জয়রঞ্জনের পেটে বেয়নেট চালিয়ে হত্যা করে। শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস নীরা আর্যের স্বামী ছিলেন, তাই স্বামী হত্যার কারণে নেতাজি তাঁকে নাগিনী বলে অভিহিত করেছিলেন। আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণের পরে, সমস্ত বন্দী সৈন্যকে দিল্লির লাল কেল্লায় বিচারে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু নীরাকে স্বামী হত্যার কারণে দ্বীপান্তরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। জেলে বন্দীদশায় সেখানে তাঁকে কঠোর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।
আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম গুপ্তচর—–
নীরা আর্য আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম গুপ্তচর হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। পবিত্র মোহন রায় আজাদ ভারতীয় সেনাবাহিনীর মহিলা এবং পুরুষ উভয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ছিলেন। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু নিজেই নীরাকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তার সঙ্গী মনবতী আর্য, সরস্বতী রাজামণি এবং দুর্গা মল্লা গোর্খা এবং যুবক ড্যানিয়েল কালে তার সামরিক গোয়েন্দা শাখার সাথে যুক্ত ছিল। তারা নেতাজির জন্য গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করত। তারা বিভিন্ন কাজের অছিলায় ব্রিটিশ অফিসারদের বাড়ি ও সেনাশিবিরে প্রবেশ করতেন তথ্য সংগ্রহের জন্য, তারপর তা নেতাজীর কাছে পাঠাতেন। এই কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লে প্রথমে নথিগুলি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ও পরে পিস্তল চালিয়ে আত্মহত্যা করতে হবে, এই নিয়ম তারা কঠোর ভাবে মেনে চলতেন।
রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে নীরাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড–
দক্ষিণ এশিয়ার অক্ষশক্তির পরাজয়ের পর ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ। ধরা পড়েছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের হাজার হাজার সেনানী। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে লালকেল্লায় তাদের বিচার শুরু হয়, বেশির ভাগ সেনানী ছাড়া পেলেও নীরাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়, জাহাজে করে পাঠানো হয় আন্দামানের সেলুলার জেলে। সেখানে তার ওপর যে অমানুষিক অত্যাচার হয়েছিল তা সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
আন্দামানে নীরাকে রাখা হয়েছিল একটি ছোট কুঠরিতে, সেখানে বাকি বন্দিরা ছিল মুক্ত, কিন্তু নীরাকে বন্য জন্তুর মত প্রথমদিন বেঁধে রাখা হয়েছিল। গলায় বাঁধা ছিল চেন ও হাতে-পায়ে ছিল শেকল লাগানো বেড়ি। নীরাকে কিছু খেতে দেওয়া হয়নি প্রথম দিন। শোয়ার জন্য মাদুর কিংবা কম্বল কিছুই দেওয়া হয়নি প্রথমে। কুঠরির কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে ছিলেন পরিশ্রান্ত নীরা। মাঝরাতে এক প্রহরী কুঠরিতে ঢুকে গায়ের ওপর ছুঁড়ে দিয়েছিল দুটো কম্বল। সকাল বেলায় প্রথম জুটেছিল খাবার, খেতে দেওয়া হয়েছিল ফুটন্ত খিচুড়ি।
এরপরেও আরও অনেক পাশবিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে নীরাকে। সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। তবুও মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন স্বাধীন ভারতে সূর্যোদয় দেখবেন। এই মহান ত্যাগের সম্মান দেয়নি দেশ। নীরা আন্দামানে আসার একবছর পর স্বাধীন হয়েছিল দেশ। মুক্তি পেয়েছিলেন নীরা। এই আত্মত্যাগের সম্মান দেয়নি দেশ। অভিমানে সাধারণের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন অসাধারণ নীরা।
স্বাধীনতা পরবর্তী জীবন–
স্বাধীনতার পরে, তিনি ফুল বিক্রি করে জীবনযাপন করেছিলেন, তবে কোনও সরকারী সহায়তা বা পেনশন গ্রহণ করেননি। তার ভাই বসন্ত কুমারও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি স্বাধীনতার পর সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। নীরা স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ভূমিকা নিয়ে আত্মজীবনীও লিখেছেন। উর্দু লেখক ফারহানা তাজ’কে তিনি তার জীবনের অনেক ঘটনা শুনিয়েছিলেন। তিনি তার জীবন নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে একটি উপন্যাসও রচনা করেন।
সম্মাননা—
নীরা আর্য নামে একটি জাতীয় পুরষ্কারও চালু করা হয়েছে। ছত্তিশগড়ের অভিনেতা অখিলেশ পান্ডে প্রথম নীরা আর্য পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবং তাঁকে নীরা আর্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
জীবনাবসান—
শেষ জীবনে তিনি তিনি দরিদ্র, অসহায়, নিঃস্ব হয়ে পরেছিলেন। হায়দরাবাদের ফালকনুমার একটি কুঁড়ে ঘরে বাস করতেন। নীরা আর্য জীবনের শেষ দিনগুলিতে ফুল বিক্রি করে কাটিয়েছেন এবং সরকারি জমিতে থাকার কারণে তার কুঁড়েঘরটিও শেষ মুহুর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সকলের অলক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের ২৬শে জুলাই উসমানিয়া হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছিলেন ৯৬ বছরের বীরাঙ্গনা এক অগ্নিকন্যা নীরা আর্য্য।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ভারতীয় বাঙালি মহিলা কবি বিজয়া মুখোপাধ্যায় – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।।

বিজয়া মুখোপাধ্যায় ছিলেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপিকা এবং একজন প্রতিভাশালিনী কবি। প্রবন্ধকার ও অনুবাদক হিসাবেও পরিচিতি ছিল তার। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রবর্তিত “কৃত্তিবাস” কবিতা পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সংক্ষিপ্ত জীবনী——

বিজয়া মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১১ই মার্চ বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের তৎকালীন ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে।

পড়াশোনা কলকাতায়। কলেজে পড়ার সময় থেকেই তিনি কবিতা রচনা শুরু করেন। তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় দেশ (পত্রিকা) পত্রিকায় ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে। সংস্কৃত ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং অসামান্য দখল ছিল তার। কবি বুদ্ধদেব বসু ‘মহাভারতের কথা’ লেখার সময়ে বিজয়ার কাছে সংস্কৃত শিখেছিলেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ সামনে অপর্ণা। তিনি ও তার স্বামী কবি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রবর্তিত “কৃত্তিবাস” কবিতা পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার বহু কবিতা এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তার ছন্দময় কবিতা বিগত পুরানো দিনের স্মৃতি যেমন জাগ্রত করে, তেমনি সহজ, সরল, শান্ত ভঙ্গিমায় সামাজিক চেতনার বিকাশে প্রতিবাদ ব্যক্ত হয়েছে। তার “পুটিকে সাজে না” কবিতা নারীত্বের প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বেশ তাৎপর্যময়।

রচিত কাব্যগ্রন্থ——–

আমার প্রভুর জন্য (১৯৬৭), যদি শর্তহীন (১৯৭১), ভেঙে যায় অনন্ত বাদাম (১৯৭৭), উড়ন্ত নামাবলি (১৯৭৯), দাঁড়াও তর্জনী (১৯৮৮), ঝড়ের সঙ্গে যখন দেখা, অশ্লেষা তিথির কন্যা (১৯৯৩), ভাষায় যেটুকু বলা যায় (২০০৫), মাস্তুলের পাখি, আজন্ম হস্টেলে আছি (২০১৩), শ্রেষ্ঠ কবিতা।

পুরস্কার——

২০০৯ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি কর্তৃক প্রদত্ত রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন (পবিত্র মুখোপাধ্যায়, বিজয়া মুখোপাধ্যায়, অমিয়কুমার বাগচী, শ্যামল চক্রবর্তী, শঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথভাবে)।

সম্পাদিত পত্রিকা——

তিনি দীর্ঘদিন ‘বিভাষা’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।

মৃত্যু——

কবি বিজয়া মুখোপাধ্যায় ২০২০ সালের ২৬ জুলাই ৮৩ বৎসর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

প্রতিভা পাতিল: ভারতীয় রাজনীতিতে একজন পথপ্রদর্শক।।।

25 জুলাই, 2007-এ, ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেওয়া প্রথম মহিলা হয়ে প্রতিভা পাটিল ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। তার অভিষেক ভারতীয় রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত, কাঁচের ছাদ ভেঙে দিয়েছে এবং নারী নেতাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পথ প্রশস্ত করেছে।

প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষা
প্রতিভা পাটিল 19 ডিসেম্বর, 1934 সালে মহারাষ্ট্রের একটি ছোট গ্রাম নাদগাঁওতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মা, নারায়ণ রাও পাতিল এবং শ্রীমতি ইন্দুবাই পাতিল, উভয়েই শিক্ষিত ছিলেন এবং তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। প্রতিভার প্রথম জীবন সরলতা এবং কঠোর পরিশ্রম দ্বারা চিহ্নিত ছিল। তিনি তার গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন এবং পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য জলগাঁও চলে আসেন।
প্রতিভার একাডেমিক কৃতিত্ব ছিল অসাধারণ। তিনি পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনীতিতে তার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই প্রতীয়মান ছিল এবং তিনি কলেজের সময়কালে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

রাজনৈতিক পেশা—

প্রতিভা পাটিলের রাজনীতিতে প্রবেশ দৈবক্রমে হয়নি। তার স্বামী দেবীসিংহ রণসিংহ শেখাওয়াত ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য। রাজনীতিতে প্রতিভার সম্পৃক্ততা 1960 এর দশকে শুরু হয়, যখন তিনি তার স্বামীর সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রচারে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন।
1962 সালে, প্রতিভা জলগাঁও কেন্দ্র থেকে মহারাষ্ট্র বিধানসভার সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। তিনি লোকসভা এবং রাজ্যসভা উভয়েই সংসদ সদস্য হিসাবে কাজ করেছেন। তার রাজনৈতিক কর্মজীবন চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত ছিল, এই সময়ে তিনি শিক্ষামন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এবং পর্যটন মন্ত্রী সহ বিভিন্ন পোর্টফোলিও অধিষ্ঠিত ছিলেন।
প্রেসিডেন্সি
রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রতিভা পাটিলের মনোনয়ন জুন 2007 সালে ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) দ্বারা ঘোষণা করা হয়েছিল। তার প্রার্থিতা বামফ্রন্ট এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি দ্বারা সমর্থিত হয়েছিল। 19 জুলাই, 2007-এ, প্রতিভা পাতিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভৈরন সিং শেখাওয়াতকে পরাজিত করেন।

রাষ্ট্রপতি হিসাবে, প্রতিভা পাটিল নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা এবং গ্রামীণ উন্নয়ন সহ বিভিন্ন উদ্যোগের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। তিনি নারী ও শিশুদের অধিকারের জন্য একজন বলিষ্ঠ উকিল ছিলেন। তার রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন, তিনি নারী ও শিশুদের জন্য শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রচারের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম চালু করেছিলেন।

উত্তরাধিকার—

প্রতিভা পাটিলের রাষ্ট্রপতিত্ব বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অর্জন দ্বারা চিহ্নিত ছিল। তিনিই প্রথম মহিলা যিনি অফিসে ছিলেন, এবং তাঁর উদ্বোধন ভারত জুড়ে লক্ষ লক্ষ মহিলাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে তার স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
প্রতিভা পাটিলের উত্তরাধিকার তার রাষ্ট্রপতির মেয়াদের বাইরেও বিস্তৃত। তিনি একটি প্রজন্মের নারীদের রাজনীতিতে প্রবেশ করতে এবং নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে অনুপ্রাণিত করেছেন। ভারতীয় রাজনীতিতে তার অবদান বিভিন্ন পুরষ্কার এবং সম্মানের মাধ্যমে স্বীকৃত হয়েছে, যার মধ্যে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারগুলির মধ্যে একটি পদ্মভূষণ রয়েছে।

উপসংহার—

প্রতিভা পাটিলের জীবন তার কঠোর পরিশ্রম, সংকল্প এবং জনসেবার প্রতি অঙ্গীকারের প্রমাণ। তার রাষ্ট্রপতিত্ব ভারতীয় রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত, এবং তার উত্তরাধিকার ভারতজুড়ে মহিলাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। ভারতীয় রাজনীতিতে একজন ট্রেইলব্লেজার হিসাবে, প্রতিভা পাটিলকে সর্বদা একজন অগ্রগামী হিসেবে স্মরণ করা হবে যিনি নারী নেতাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পথ প্রশস্ত করেছিলেন।

Share This