Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

রামোজি ফিল্ম সিটি — যেখানে প্রতিটি ফ্রেমে লুকিয়ে থাকে ভারতের সৃজনশীলতার দীপ্তি।

ভারতের দক্ষিণের মনোরম রাজ্য তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদের উপকণ্ঠে অবস্থিত রামোজি ফিল্ম সিটি। এটি শুধুমাত্র একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, বরং এক বিস্ময়কর দুনিয়া — যেখানে বাস্তবের সঙ্গে মিশে যায় রূপালি পর্দার কল্পনা। বিশ্বের বৃহত্তম ফিল্ম সিটি হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম থাকা রামোজি ফিল্ম সিটি যেন এক জাদুর দেশ, যেখানে প্রতিটি ইটের গায়ে লেখা আছে সিনেমার গল্প।


📍 কীভাবে পৌঁছানো যায়

রামোজি ফিল্ম সিটি হায়দরাবাদ শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হায়দরাবাদ বিমানবন্দর, রেলস্টেশন বা বাসস্ট্যান্ড থেকে ট্যাক্সি, ক্যাব কিংবা ট্যুর বাসে সহজেই এখানে পৌঁছানো যায়। যারা নিজস্ব গাড়িতে ঘুরতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য ভালো রাস্তা ও স্পষ্ট দিকনির্দেশনা আছে।


🎬 ফিল্ম সিটির ইতিহাস

১৯৯৬ সালে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র প্রযোজক রামোজি রাও-এর উদ্যোগে নির্মিত হয় এই ফিল্ম সিটি। তাঁর স্বপ্ন ছিল এমন একটি জায়গা গড়ে তোলা, যেখানে একসঙ্গে সিনেমা নির্মাণ, সেট ডিজাইন, সম্পাদনা এবং প্রদর্শনের কাজ সম্পূর্ণভাবে করা যাবে। আজ সেই স্বপ্নই পরিণত হয়েছে এক আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রে, যেখানে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় জমায়।


🌆 রামোজি ফিল্ম সিটির বিস্ময়কর দুনিয়া

রামোজি ফিল্ম সিটি প্রায় ২০০০ একর জমির ওপর বিস্তৃত। এখানে আছে বিশাল ফিল্ম সেট, কৃত্রিম শহর, বিদেশি লোকেশনের প্রতিরূপ, বাগান, থিম পার্ক এবং থ্রিল রাইড — সব মিলিয়ে যেন এক মায়াবী জগৎ।

🎥 ফিল্ম সেট ও শ্যুটিং জোন

এখানে আপনি দেখতে পাবেন মুম্বাইয়ের রাস্তা, দিল্লির রাস্তাঘাট, বিদেশি শহরের অনুকরণে তৈরি ইউরোপীয় বিল্ডিং, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, গ্রামীণ বাজার থেকে শুরু করে রাজকীয় প্রাসাদ পর্যন্ত। ভাগ্য ভালো থাকলে চলমান কোনো সিনেমার শ্যুটিংও দেখতে পেতে পারেন!

🌺 গার্ডেন ও থিম পার্ক

মার্বেল গার্ডেন, মুঘল গার্ডেন, এবং নানা রঙের ফুলে ভরা “ফ্লোরাল কিংডম” প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ভরিয়ে দেয়। শিশুদের জন্য রয়েছে ফান-টাইম থিম পার্ক, যেখানে রোলার কোস্টার, ৪ডি শো, জঙ্গল বুক অ্যাডভেঞ্চার এবং স্টান্ট শো দর্শকদের চমকে দেয়।

🏰 ইউরোপীয় ও জাপানি স্টাইলের সেট

রামোজি ফিল্ম সিটির অন্যতম আকর্ষণ হল ইউরোপীয় ক্যাফে, জাপানি গার্ডেন এবং আমেরিকান টাউনশিপের নিখুঁত কপি। এই স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়ালে মনে হবে যেন আপনি এক মুহূর্তে ভারত থেকে ইউরোপে পৌঁছে গেছেন।


🎭 শো এবং বিনোদন

প্রতিদিন সকালে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে চলে বিভিন্ন স্টান্ট শো, ম্যাজিক শো, ডান্স পারফর্মেন্স, এবং লাইভ সিনেমা সেট ট্যুর। সন্ধ্যার পর লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো-তে ফিল্ম সিটির সৌন্দর্য নতুন রূপ পায় — ঝলমলে আলোয় পুরো এলাকা যেন রূপকথার শহরে পরিণত হয়।


🍴 খাবার ও বিশ্রাম

ফিল্ম সিটির ভেতরেই রয়েছে অসংখ্য রেস্তোরাঁ ও ফুড কোর্ট। দক্ষিণ ভারতীয় দোসা-ইডলি থেকে শুরু করে উত্তর ভারতীয় থালি, চাইনিজ ও কন্টিনেন্টাল খাবার — সবই পাওয়া যায়। যারা রাত কাটাতে চান, তাদের জন্য আছে বিলাসবহুল হোটেল যেমন Sitara Luxury HotelTara Comfort Hotel, যা নিজেই এক অভিজ্ঞতা।


🛍️ শপিং ও স্মারক সংগ্রহ

ফিল্ম সিটির ভেতরে ছোট ছোট দোকানে পাওয়া যায় সিনেমা-থিমযুক্ত পণ্য, স্থানীয় হস্তশিল্প ও স্মারক সামগ্রী। “মেমরি লেন” থেকে আপনি নিতে পারেন এই জাদুর রাজ্যের এক টুকরো স্মৃতি।


🌄 ভ্রমণ পরামর্শ

  • সকাল সকাল পৌঁছালে পুরো ফিল্ম সিটি ঘোরা সম্ভব।
  • আরামদায়ক জুতো পরুন, কারণ হাঁটাহাঁটি বেশ করতে হয়।
  • টিকিট অনলাইনে বুক করা সুবিধাজনক।
  • ফটো তোলার সুযোগ প্রচুর, তাই ক্যামেরা সঙ্গে রাখুন।

🌠 শেষ কথা

রামোজি ফিল্ম সিটি শুধু একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। এখানে বাস্তব ও স্বপ্ন একাকার হয়ে যায়। শিশু থেকে প্রবীণ — সকলের জন্যই এই স্থান আনন্দ ও বিস্ময়ের উৎস। যদি আপনি কখনও সিনেমার ভেতরে প্রবেশ করার স্বপ্ন দেখে থাকেন, তবে রামোজি ফিল্ম সিটি আপনাকে সেই স্বপ্ন স্পর্শ করার সুযোগ দেবে।


✈️ রামোজি ফিল্ম সিটি — যেখানে প্রতিটি ফ্রেমে লুকিয়ে থাকে ভারতের সৃজনশীলতার দীপ্তি।

Share This
Categories
বিবিধ রিভিউ

মালদায় ১৩ অক্টোবর থেকে শুরু বাজি বাজার, পরিবেশবান্ধব গ্রীন ক্রেকারসহ ৫২ জন ব্যবসায়ী অংশ নেবেন।

মালদা, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ-মালদা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ এবং মালদা মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্সের সহযোগিতায় ১৩ অক্টোবর থেকে শুরু হতে চলেছে বাজি বাজার। চলবে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত।
ইংরেজবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বি এল আর ও অফিস সংলগ্ন ফার্ম ময়দানে খোলা হবে বাজি বাজার।
ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে বাজি বাজারের কাজ। টিনের সেড দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে অস্থায়ী স্টল।
নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অস্থায়ী বাজি বাজার তৈরি করা হচ্ছে মালদা শহরের ফার্ম ময়দানে।
ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে বাজার তৈরির কাজ।
সেখানে পাওয়া যাবে পরিবেশ বান্ধব গ্রীন ক্রেকার বাজি।
এই বিষয়ে মালদা মার্চেন্টস চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক উত্তম বসাক বলেন, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে মালদা শহরের ফার্ম ময়দানে অস্থায়ী বাজি বাজার খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে।
আগামী ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে বাজি বাজারের।চলবে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত। এবছর ৫২ জন ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করবে বাজি বাজারে। লটারির মাধ্যমে বন্টন করা হয় স্টল। তিনজন মহিলাও বাজি বাজারে অংশ নিবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রশাসনিক আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা ।
বাজি বাজারে পাওয়া যাবে পরিবেশ বান্ধব গ্রীন ক্রেকার বাজি।

Share This
Categories
বিবিধ রিভিউ

গড়বেতা সাহিত্য সংসদের ‘গনগনি’- শারদ সংখ্যার চতুর্থ বর্ষের লিপি বন্ধন উন্মোচন হলো গড়বেতার এক বেসরকারি আবাসনে।

পশ্চিম মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা সাহিত্য সংসদের ‘গনগনি’- শারদ সংখ্যার চতুর্থ বর্ষের লিপি বন্ধন উন্মোচন হলো গড়বেতার এক বেসরকারি আবাসনে।এইদিন এই অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন গড়বেতার বিধায়ক উত্তরা সিংহ হাজরা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাহিত্য সংসদের সভাপতি বিশিষ্ট সাহিত্যিক সুভাষ চট্টোপাধ্যায়।লিপি উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শান্তনু দে,দোলন কর হাজরা,নির্মল চালক,মিঠু প্রতিহার,দেবদুলাল মন্ডল,সৌমেন দত্ত,দোলন তেওয়ারি দে,সুপ্রিয়া কুণ্ডু,অনির্বাণ পাল, কৃষ্ণা চন্দ্র,সুস্মিতা রানা পাল,কাঞ্চন দে,কুন্তল তেওয়ারি,মৃন্ময় কোলে,অপূর্বা মিশ্র, স্বর্নেন্দু ব্রহ্ম, লক্ষ্মণ মাইতি,অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়,সম্পাদক রাজীব ঘোষ সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কবি – সাহিত্যিকদের উপস্থিতিতে।নাচ -গান,কবিতা পাঠে সভাগৃহ বর্ণময় হয়ে উঠে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

জীবন ও সংগ্রাম : গ্রাম থেকে শহরে সংগ্রামে ও শপথে অধ্যাপক মহীতোষ গায়েন।

অবিভক্ত চব্বিশ পরগনার ৫২টি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বিনোদ বিহারী গায়েনের কনিষ্ঠ পুত্র মহীতোষ।পঞ্চম শ্রেণিতে হাফ প্যান্ট পরে বন্ধুর সঙ্গে নদী তীরে মাছ ধরার আনন্দ,অন্যের দোকান ঘর পাহার দেওয়া, নদীতীরে মোটর বোট তুলতে বড়দের সঙ্গে শ্রমের শরিক হয়ে ৪টাকা উপার্জন ছিল বড়ই আনন্দের,
এটিই ছিল তার জীবনের প্রথম উপার্জন,তখন ৪টাকা মানে বেশ খুশি হওয়ার মত।ষষ্ঠ শ্রেণিতে অন্যের বাড়িতে থেকে মাঝে মধ্যে গোয়াল ঘরে শোওয়ার নিয়তি যার কৈশোরে । পঞম শ্রেণিতে বাবা ভর্তি করেন বাবারই প্রতিষ্টিত স্কুল সন্দেশখালি রাধারাণী হাইস্কুলে।সন্দেশখালিতে বাবার হাতে গড়া শিক্ষক হরিবিলাস সিংহের বাড়িতে বাবা রেখেছিলেন। সেখানেই পড়া শুরু। জ্বর অবস্থায় একা একা বাড়িতে ছেড়ে দেওয়ার কারণে তার বাবা ষষ্ঠ শ্রেণিতে
ছোট মোল্লাখালি স্কুলে ভর্তি করেন,সেখানে জামাইবাবুর বাড়িতে থাকা, কিন্তু রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কারণে পুণরায় সন্দেশখালিতে, আবার অষ্টম শ্রেণিতে কালীননগর স্কুলে বাবা ভর্তি করেন, সেখানে হস্টেলে থেকে পড়াশোনার জন‌্য।
অর্থ সঙ্কটের কারণে অষ্টম, নবম ,দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় খিদের জ্বালায় স্কুল সংলগ্ন যাত্রাপালার মাঠে বাদাম কুড়িয়ে খেতে হয়েছে, সকাল বেলায় প্রার্থনার পর হস্টেলের অবস্থাপন্ন দাদাদের টিফিন এনে দেওয়ার বিনিময়ে খাবারের ভাগ পাওয়ার আনন্দের লড়াই ছিল অবশ্য তার বেদনার তৃপ্তি।
যদিও এই অর্থ সংকটের মধ্যে পড়াটাও এক নির্মম নিয়তি। বাবা ছিলেন সুন্দরবনের স্থানীয় এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মাত্র ৮বছর শিক্ষকতা করে সুন্দরবন তথা অবিভক্ত ২৪ পরগনার মানুষদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে,সমাজ গড়ার কাজের জন্য স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিলেন, সংসারে নেমে এলো তীব্র অর্থ সংকটের কালোমেঘ। তীব্র প্রতিকূলতাকে জয় করে একে একে ৫২টি স্কুল গড়ে তুললেন তিনি।

মহীতোষের কথায়- “আমাদের সব কষ্ট জল হয়ে গেল মানুষের কল্যাণে বাবার এই ব্রত ও সমাজকল্যাণকর কাজে।জমি জমা এক এক সব বিক্রি হয়ে গেল,কাজের বিনিময়ে কোন অর্থ নিতেন না বাবা।কালীনগর হস্টেলে অষ্টম শ্রেণি থেকে থাকতাম,স্টাইপেন্ড পেতাম,সে টাকা থেকে হস্টেলে মাসের থাকা খাওয়ার খরচের টাকা কেটে নেওয়া হত,কারণ বাবার আর্থিক সঙ্গতি ছিল না মাসের টাকা দেওয়ার মতো,কারণ তিনি যে পরোপকারী সংসার সন্ন্যাসী।একদিন এক রুমমেট এর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। তুচ্ছ এই কারণে সুপারের ঘরে ডেকে আমাকে বেত দিয়ে ভীষণ প্রহার করা হয়,মারতে মারতে সেই শিক্ষকের মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ে এক অদ্ভুত বাণী,”বিনা পয়সায় খেতে লজ্জা করে না, টাকা দিতে পারিস না আবার বাহাদুরি?” তিনি ছিলেন জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক,নামটি আর বলছি না,
সেদিন থেকেই আমার তীব্র জেদ বাসা বাঁধে রক্তে, রক্ত গরম হয়ে যায়,মুখ বুজে নির্মম প্রহার সহ্য করেছি, সেদিন থেকেই শপথ নিলাম আমাকে কিছু একটা করে দেখাতে হবে।মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা অংকে মাত্র ১৩পেয়েছিলাম (Unlike thirteen ).। বাবাকে ডেকে পাঠানো হয়। প্রধান শিক্ষক বলেন,” স্যার ,(প্রধান শিক্ষক ছিলেন শশাঙ্ক শেখর মন্ডল, যিনি বাবারই ছাত্র ছিলেন) আমরা কোন বিষয়ে ফেল করা ছাত্রদের হস্টেলে রাখি না,কারণ এতে স্কুলের বদনাম হয়। বাবা বলেছিলেন, ছেলেকে আমি নিয়ে যাব ঠিকই, কিন্তু যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাই,” শশাঙ্ক, আমার মাথা খারাপ(বুদ্ধি) তা আমার ছেলের মাথা আর কত ভালো হবে?” আর ঠিক সেদিন মাথায় বিদ্যুৎ চমকে ওঠে, কঠিন প্রত্যয়ে মনে মনে স্থির করি, কিছু একটা করতেই হবে, প্রধান শিক্ষককে ছাপিয়ে যেতে হবে ।মনের অগোচরে তীব্র জেহাদ কষ্টের মধ্যে থেকে বাড়তে লাগলো । যথারীতি মাধ্যমিক পাশ করলাম ৫৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে, অংকে ৪৫ পেলাম, গুরুদেব শিক্ষক দিলীপ দেববর্মণ এর কাছে শিখলাম গ্রাফ ও মিডল টার্ম ফ্যাক্ট, ভালো করে রপ্ত করলাম, এই গুরুদেবই আমার কৈশোরের মন্ত্রদাতা পুরোহিত।তখন জীবনের অংকে সমানে পীড়া দিচ্ছে, বিজ্ঞান নিয়ে পাটানখালি কলেজে ভর্তি হলাম,তখন থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে, নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ড্র,পরে Re Counting ১ভোটে হারিয়ে দেওয়া হলো, পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হলো অগত্যা বাড়ি ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পালাতে হলো,৩/৪ দিন পর মা এর কান্না আর দাদার সন্ধ্যানে ধরা দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এবার নতুন উদ্যমে তৈরি হওয়ার জন্য আদা জল খেয়ে লাগার পালা। দক্ষিণ বারাসত কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে মেসের মালিক দিলীপ পুরকাইতের বদান্যতায় ভোটের সময় সেক্টর অফিসে এক দিনের হোম গার্ড হয়ে ৩৫০ টাকা আমার দ্বিতীয় উপার্জন, কাউকেই যেন সেই তৃপ্তি পেতে না হয়,ঈশ্বরের কাছে এ আমার করুণ আর্তি!!! এক জামা এক প্যান্ট অর্থাৎ ছেঁড়া স্কুল ড্রেস পরে শীত গ্রীষ্ম অতিবাহিত করা, পুজোর সন্ধ্যায় রাস্তার ধারে বসে নতুন পোশাকের এর আশায় অশ্রু মিশ্রিত স্বপ্নময় আনন্দরা মিছিল করে মন ও মননে আজও ধাক্কা দেয়,এখনো বঞ্চনা ও মর্যাদার লড়াই চলছে আজও এবং অবিরত।” তাই মরমী
কবি জয় গোস্বামীর কবিতার লাইন মনে পড়ে আজও বারবার….
” ঝাড় খেতে খেতে শেষ হয়ে গেছি
ঝাড় খেতে খেতে শুরু;
অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়েছি গুরু”।
তবে আমার এই উঠে দাঁড়ানো কারো ঈর্ষা ও হিংসার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ,যা কাম্য নয়, মাঙ্গলিক বীণার তারটা বারবার ছিঁড়ে যাচ্ছে , ভুবনভাঙার মাঠে একটি পঞ্চম শ্রেণির ছোট্ট ছেলের কান্না কেউ না শুনতে পেলেও চরাচর,আকাশ,বাতাস, বাংলার মাঠ -ঘাট ,ফুল,পাখি ও নদী আজও স্বাক্ষ‌্য বহন করে চলছে।অনন্ত গোধূলিতে আজও সে সুর অদৃশ্য হয়ে বেড়ায়।”
“সবার জন্য শুভকামনা জানিয়ে বলতে হয়…
আমি ঈশ্বরের সৃষ্টি ,কালের রাখাল। তবে মানুষের মঙ্গলের জন্য দরকার রাজনৈতিক স্বীকৃতি অর্থাৎ জন প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ, যদি তার সারবত্তা কতখানি তার হদিস হয়তো ঈশ্বরেরও জানা নেই।
আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রথিতযশা কবি সুবোধ সরকারের কবিতা মনে পড়ে “দুঃখ ছিল গ্রামেও কিন্তু রাগ ছিল না নিশীথ কালে/যে দুঃখটা ভারত জুড়ে,সে দুঃখটা চালে ডালের” সেই দুঃখ কীভাবে মোচন হবে জানি না,তবে অপেক্ষায় রইলাম কালের রাখালের মত”
মহীতোষ উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এম.এ পাস করে। ছাত্র রাজনীতিতে তখন তার দাপট,পর পর দু’বার ছাত্র সংসদের নির্বাচিত হয়েছেন।এরপর কর্মসংস্থান এর খোঁজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েও চান্স না পেয়ে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে, আন্দোলন করে ভর্তি হলেন এম.ফিলে ,সোনারপুর মেসে থেকে চাকরির পড়াশোনা করতে করতে অন্ন সংস্থানের জন্য দিশা না পেয়ে বাণীপুর বিএড কলেজ ভর্তি,এম.ফিল ডিগ্রি অর্জন আর হলো না দৈব দুর্বিপাকে।বাণীপুর বিএড কলেজ থেকে ফাস্ট ক্লাস পেয়ে বন্ধুর সহায়তায় অশোকনগরে একটি এক কামরার ছোট্ট ঘরভাড়া নিয়ে নিজের হাতে রান্না করে খেয়ে সারা দিন রাত টিউশনি করে খরচ চালাতে থাকলেন, ইতোমধ্যেই এম.এ ক্লাসের সহপাঠী মৌসুমীকে রেজিস্ট্রি করে বন্ধনে জড়িয়ে পড়লেন। টিউশনি করে খরচ চালাতে শুরু করলেন। এভাবেই দিন কাটছিল, হঠাৎ এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে কল পেয়ে অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান ১৯৯৭ এর নভেম্বরে,তার আগেই এপ্রিল মাসে সামাজিক ভাবে বিবাহ সম্পন্ন হয়। অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলে সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেন দীর্ঘ সাড়ে ১২ বছর, শিক্ষক রাজনীতিতে পূর্ণমাত্রায় জড়িয়ে পড়লেন, স্কুল শিক্ষকতা করতে করতে সেট পরীক্ষায় ইতিহাসে ৩৯জনের মধ্যে ১৩তম স্থান পেলেন ২০০৮ এ , কলেজ সার্ভিস কমিশনে ইন্টারভিউ দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১০- এর এপ্রিলে হুগলির শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যামহাপীঠ (কামারপুকুর কলেজ) অধ্যাপনা শুরু করেন, ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে। ২০১৫-১৬ কামারপুকুর কলেজ তখন ছাত্র রাজনীতির গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে জেরবার। মারামারি রক্তপাত দেখে স্থায়ী প্রিন্সিপাল চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে পুরানো কলেজ চলে গেলেন,তখন ছাত্র ভর্তি চলছে। কেউ ভয়ে টিচার ইনচার্জ হতে চাইলেন না,সবাই Un Willing দিলেন, অগত্যা ১৪নম্বর সিনিয়র হিসেবে মহীতোষ দায়িত্ব নিলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের,২০১৬ এর ৫অক্টোবর,১০ মাস সেই দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করলেন, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব সূকৌশলে বন্ধ করে কলেজের স্থিতাবস্থা ফেরালেন, উচ্চ শিক্ষা দপ্তর থেকে ৩৬ লক্ষ টাকা অনুদান যোগাড় করলেন, কলেজে সিসি ক্যামেরা বসালেন, নতুন বিল্ডিং হলো সেই অর্থে, ৮ জন
শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী দীর্ঘ ৮বছর ধরে কাগজপত্রের সমস্যার জন্য পেনশন পাচ্ছিলেন না, তারই অদম্য প্রয়াসে তাঁরা পেনশন পেলেন, ফুলের বাগান করলেন,আজকের কামারপুকুর কলেজের যে সাজানো পরিপাটি রূপ,তা তাঁর অবদান,মাত্র ১০ মাস ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালীন বাড়ির পাশে আসার জন্য ।কলেজ সার্ভিস কমিশনে ইন্টারভিউ দিয়ে ২০১৭ সালের ৬জুলাই সিটি কলেজ এ জয়েন করলেন,২০২২ এর মে মাসে হায়ার এডুকেশন কাউন্সিল বিলের এক ধারা অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষা দপ্তর থেকে ভাইস প্রিন্সিপাল এর নিয়োগপত্র পেলেন। ভাইস প্রিন্সিপাল হওয়াতে সবচেয়ে খুশি হয়েছিলেন তার কলেজের প্রিয় শিক্ষিকা শর্মিলা রায় ও প্রিয় শিক্ষক প্রথিতযশা কবি সুবোধ সরকার। বর্তমানে মহীতোষ সেখানেই কর্মরত ,২০২৫ এ দীর্ঘ ২৮ বছর তার এই শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা।

এবার আসি তার সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক জীবনের বর্তমান দ্বিতীয় অধ্যায়ের। তার বাবা কংগ্রেস রাজনীতি করতেন ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর সন্দেশখালি ইউনিয়ন বোর্ডের দায়িত্ব সামলেছেন। দীর্ঘ ১৪ বছর ছিলেন আলিপূর জাজেস কোর্টে জুরির বিচারক। এরপর পর কংগ্রেস রাজনীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে মনোরঞ্জন শূরের আহ্বানে সিপিআই তে যোগ দেন।১৯৭১ সালে হিঙ্গলগঞ্জ কেন্দ্রে টিকিট পান। কিন্তু সিপিএম -এর ভোট জালিয়াতির শিকার হন, বিনোদ বিহারীর পক্ষে পড়া ভোটের ব্যালট বাক্স সিপিএম পুকুরে ফেলে দিয়ে মাত্র একহাজার ভোটে জালিয়াতি করে বিনোদ বিহারীকে হারায় । ২০১১-র জানুয়ারিতে মহীতোষ এর পিতা প্রয়াত হন।২০১১ তে ভোট আসন্ন, বাংলায় পালা বদলের বছর এটি। সিপিআই এর সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত সিপিআই এর উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জীকে প্রস্তাব দিলেন ,বিনোদদা এতগুলো স্কুল করেছেন, দক্ষ রাজনীতিবিদ, ভালো মানুষ তার কনিষ্ঠ পুত্র কামারপুকুর কলেজের অধ্যাপক, ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতিতে দক্ষ, সুবক্তা ও বিনয়ী তাকে এবার হিঙ্গলগঞ্জ কেন্দ্রের টিকিট দেওয়া হোক ।স্বপন ব্যানার্জী বললেন, ওনার ছেলে সিপিআই এর পার্টি মেম্বার নয় , সিপিএম এর পার্টি মেম্বার নয়,পত্রপাঠ খারিজ হলো প্রস্তাব। বিনোদ বিহারীর রাজনৈতিক শিষ্য পার্টি মেম্বার আনন্দ মন্ডল যথারীতি টিকিট পেলেন, মন্ত্রী গৌতম দেবও বলেছিলেন সিপিআই নেতাদের, ‘আপনাদের প্রার্থী নির্বাচন ঠিক হয়নি, আনন্দ মন্ডল এর নামে কেসও আছে।তাই মহীতোষকে টিকিট দেওয়া হোক ,সে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লড়াকু অধ্যাপক’, সিপিআই নেতৃত্ব আরো রেগে আনন্দ মন্ডলকেই টিকিট দিলেন। আনন্দ মন্ডল অবশ্য বিনোদ গায়েনের ভাবমূর্তি ভাঙিয়ে খুলনা অঞ্চলের ১হাজার ভোটে জয়ী হন।
মহীতোষ বামফ্রন্টের প্রতি তীব্র অসন্তুষ্ট হয়ে
কংগ্রেস দলে যোগ দেন ২০১২ তে এবং সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লক কংগ্রেসের সহ সভাপতি পদ দেন সভাপতি অনিল সরকার। তৃণমূল কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়লাভ করলো,৩৪ বছরের বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন মুখ্যমন্ত্রী।

মহীতোষ অবশ্য ২০১২ র ডিসেম্বরে ওয়েবকুপার প্রথম রাজ্য সম্মেলনের থেকে অর্থাৎ ওয়েবকুপার শুরু থেকেই ওয়েবকুপা করছেন। ওয়েবকুপার তখন তত্ত্বাবধায়ক, শিক্ষা সেলের দায়িত্বে মুকুল রায়, কৃষ্ণকলি বসু হলেন প্রেসিডেন্ট। শিক্ষামন্ত্রী তখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মহীতোষ ইতিমধ্যেই কামারপুকুর কলেজের ওয়েবকুপার ইউনিট কনভেনার নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন এসে গেল, কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য্যের নজরে আসেন মহীতোষ, তিনি বলেন, “আপনি ভালো অধ্যাপক, এখন পঞ্চায়েত নির্বাচন, আপনি আমাদের প্রার্থী হন’
পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হিসেবে টিকিট দিলেন মহীতোষকে, কংগ্রেস সংগঠন তখন খুব দূর্বল জেনেও ভালো ফল করলেন, দীর্ঘ বছর জেতা সিপিএম প্রার্থী তপন প্রামাণিক সেই কারণেই পরাজিত হন,ফলে তৃণমূল জয়লাভ করলো। তখন
সন্দেশখালি তৃণমূল কংগ্রেসের ২নম্বর ব্লক সভাপতি লক্ষ্মন অধিকারী, তিনি মহীতোষকে ও কংগ্রেসের স্থানীয় শিক্ষক সঞ্জয় মন্ডলকে তৃণমূলে যোগ দিতে আহ্বান জানান, তিনি ভালো ফল করার জন্যে মহীতোষকে ও সঞ্জয়বাবাবুকে সন্দেশখালিতে এক বিরাট সমাবেশে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা দুজনের হাতে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা তুলে দিলেন ,মহীতোষকে জয়েন্ট সেক্রেটারি ও সঞ্জয়বাবাবুকে সহ সভাপতির পদ দিলেন। মহীতোষ তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবাদর্শে উদ্দীপ্ত হয়ে চুটিয়ে মিটিং, মিছিল পথসভা করে যাচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে পার্টি অফিসে বসছেন। ইতিমধ্যে বছর অতিক্রান্ত হলো, একদিন পার্টি অফিসে গিয়ে জানতে পারলেন তাকে সহ আরো ১৩ জনকে ব্লক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিনা নোটিশে না জানিয়ে বিনা কারণে এই ঘটনায় খুব দুঃখ পেলেও অসন্তোষ প্রকাশ না করে পার্টি অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিলেও দলের কর্মসূচিতে যোগ দিতেন মহীতোষ,দলকে ভালোবেসে ,জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আকর্ষণ ও মুগ্ধতা থেকে দল ছাড়েন নি, সেই থেকেই আজও একনিষ্ঠ ভাবে দলের কাজ করে যাচ্ছেন অক্লেশে। মহীতোষ অবশ্য মনস্থির করলেন স্থানীয় রাজনীতিতে আবিষ্ট না থেকে অধ্যাপক সংগঠনটা ভালো করে করি,যা ভাবা তাই কাজ, সেই ২০১২ থেকেই শুরু করে ২০১৩ থেকে রাত দিন এক করে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তৈরি লোগো, দলনেত্রীর স্বপ্নের ওয়েবকুপার তিনি আজও অতন্দ্র নিষ্ঠাবান স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সৈনিক, মিটিং মিছিল,দলের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে সদা ব্যস্ত তিনি, নিজের কর্নিমষ্ঠার দ্বারা রাজ্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হলেন, সমস্ত সাংগঠনিক কর্মসূচিতে তিনি আজও সক্রিয়। ২০২১ এর নতুন রাজা কমিটিতে অ্যাসোসিয়েট সেক্রেটারি হলেন মহীতোষ। শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান তখন অধ্যাপক ব্রাত্য বসু।২০২৪ সালে অধ্যাপক ব্রাত্য বসু দায়িত্ব পেলেন ওয়েবকুপার নতুন সভাপতির, তার নেতৃত্বে ওয়েবকুপায় এলো প্রাণের সঞ্চার,রাজ্য সম্মেলন হলো গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে।সহ সভাপতি তখন মণিশঙ্কর মন্ডল ও সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়, মণিশঙ্কর মন্ডল নানান সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলায় যুক্ত,নতুন রাজ্য কমিটি গঠিত হলো। নতুন রাজ্য কমিটিতে মণিশঙ্কর মন্ডল তার সাংগঠনিক শৃঙ্খলা অবমাননার জন্য বাদ পড়লেন ,সহ সভাপতি হলেন্ সেলিমা বক্স মন্ডল ও সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়।। ২০২৫ এর ৭ ফেব্রুয়ারি নবরূপে অধ্যাপক ব্রাত্য বসুর নির্দেশনায় নতুন রাজ্য কমিটি পুনর্গঠন হলো দলের অনুমোদনে, জেনারেল সেক্রেটারি হলেন কৃষ্ণকলি বসু, যিনি আজ প্রয়াত, নতুন সভাপতি অধ্যাপক ব্রাত্য বসু ,সহ সভাপতি বাড়ালেন তিনি ,৩জন সহসভাপতির মধ্যে জায়গা পেলেন মহীতোষ।ওয়েবকুপায় এলো নবজাগরণ,
১মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ৫হাজার অধ্যাপকদের নিয়ে বার্ষিক সাধারণ সভা ও সেমিনার।
যা ওয়েবকুপার ইতিহাসে প্রথম নিদর্শন।
সেদিনের ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে সাড়া ফেলে দেয়, অধ্যাপক ব্রাত্য বসুর উপর হলো হুলিগানদের আক্রমণ, তিনি আহত হলেন।মহীতোষ, অধ্যাপকদের নিয়ে মিছিল করলেন।অতি অল্প সময়ে ৩৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি ও ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠিত হলো। সভাপতির নির্দেশনায়। হঠাৎ করে ২৫সেপ্টেম্বর দল নানা অভিযোগে শিক্ষা সেল ভেঙে পুজোর পর নতুন রাজ্য ও জেলা কমিটি গঠনের ঘোষণা করলো দলীয় ভাবে।

মহীতোষ ২০১৪ থেকেই ২০২৪ এর সমস্ত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর হয়ে মিটিং, মিছিল, জনসভায় পথসভায় বক্তব্য রাখা, দলের হয়ে নিরবধি কাজ করে যেতে থাকলেন বিভিন্ন জেলায় জেলায় বিভিন্ন দলীয় ও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে নিবেদিতপ্রাণ মহীতোষ । দলের কাছে কখনোই কোনো পদের জন্য দাবি করেন নি। অত্যন্ত বিনয়ী, বিচক্ষণ, দক্ষ এহেন অধ্যাপক দলের ও সংগঠনের সব কাজে ঝড়,জল, বৃষ্টিতে দিবারাত্র তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করেও অবিরাম অবিরত দীর্ঘ ১২ বছর ধরে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জননেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলীয় আদর্শকে পাথেয় করে একনাগাড়ে আজও করে চলেছেন দল ও সংগঠন। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগৎ -এ এক নিষ্ঠাবান, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সুপরিচিত মুখ তিনি ,এজন্যই সংগঠনের অধিকাংশ অধ্যাপকের প্রিয় ও ভালোবাসার পাত্র তিনি।
শুধুমাত্র এই আত্মতুষ্টিতে থাকবেন তিনি?শিক্ষা, সংগঠন, দলের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ বা জনপ্রতিনিধিত্ব করার দাবি কখনো করেন নি বা চান নি তিনি বা সে বিষয়ে কোনো প্রস্তাবও দলীয় ভাবে আসে নি কখনো। জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,দল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ও সাংগঠনিক ঊর্ধ্ব নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে তার। তাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দলীয় ও সাংগঠনিক কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে এক যুগ ধরে তিনি।এই আত্মতুষ্টি নিয়েই কী কাটবে কর্মযোগী জনহিতৈষী এই অধ্যাপকের বাকিটা জীবন? নাকি ২৯৪ এর কোন কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে দেখা যাবে তাকে বা কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে, মা মাটি -মানুষের গুঞ্জনে ,সেই প্রশ্ন ভুবন ডাঙার মাঠে অনুরণিত।

কলমে : হিমাদ্ৰী শেখর মণ্ডল,দিব্যেন্দু সরকার ও রাজীব দত্ত।

(সন্দেশখালি,কামারপুকুর, কলকাতা )

Share This
Categories
প্রবন্ধ বিবিধ রিভিউ

গোয়ার দুধসাগর জলপ্রপাত – প্রকৃতির এক বিস্ময়।।

গোয়া মানেই সাধারণত বিচ, নাইটলাইফ আর পার্টি কালচার – কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য গোয়ার অন্যতম রত্ন হলো দুধসাগর জলপ্রপাত (Dudhsagar Waterfalls)। পশ্চিমঘাট পর্বতের কোলে অবস্থিত এই জলপ্রপাত যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব উপহার, যা প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটককে তার দিকে টেনে আনে।


🏞️ অবস্থান ও সৌন্দর্য

দুধসাগর জলপ্রপাত গোয়া ও কর্ণাটকের সীমান্তে অবস্থিত। এটি ভারতের অন্যতম উঁচু জলপ্রপাত – প্রায় ৩১০ মিটার (১০১৭ ফুট) উঁচু থেকে জল নেমে আসে চার ধাপে। দূর থেকে তাকালে মনে হয় যেন পাহাড় বেয়ে দুধের স্রোত নেমে আসছে, তাই এর নাম “দুধসাগর” – অর্থাৎ দুধের সাগর

বর্ষার সময় যখন মন্ডোভী নদীর জলপ্রবাহ তীব্র হয়, তখন জলপ্রপাতের সৌন্দর্য চরমে পৌঁছায়। চারপাশের সবুজ বন, ঝোপঝাড় আর পাহাড়ের গর্জন মিলিয়ে এক স্বর্গীয় দৃশ্য তৈরি করে।


🚆 যাত্রা ও রোমাঞ্চ

দুধসাগর ভ্রমণের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশ হলো সেখানে পৌঁছানো।

  • ট্রেনপথে: মাদগাঁও থেকে কোল্লেম (Kulem) বা কাসেলরক (Castle Rock) পর্যন্ত ট্রেন ধরে তারপর জঙ্গলপথে হেঁটে যাওয়া যায়। অনেকেই ট্রেনের জানলা থেকে জলপ্রপাতের দৃশ্য দেখতে পছন্দ করেন।
  • জিপ সাফারি: কোল্লেম থেকে জিপ সাফারি নিয়ে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।

🐾 প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী

দুধসাগর জলপ্রপাত ভগবান মহাবীর ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির অংশ। তাই এখানে বানর, হরিণ, পাখি, এমনকি বন্য মোষের ঝাঁকও দেখা যায়। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটি এক স্বর্গরাজ্য।


📸 ফটোগ্রাফির স্বর্গ

জলপ্রপাতের কাছাকাছি গেলে চারপাশে জলকণা ছড়িয়ে পড়ে, যা এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি করে। এখানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা, ভিডিও করা এক অনন্য অভিজ্ঞতা – বিশেষত ট্রেন যখন জলপ্রপাতের সামনের সেতু পেরিয়ে যায়, তখন সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধরার জন্য অনেক পর্যটক অপেক্ষা করে।


🏖️ ভ্রমণ টিপস

  • সেরা সময়: জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর (বর্ষাকাল) – জলপ্রপাত তখন সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর থাকে।
  • নিরাপত্তা: বৃষ্টির সময় পিচ্ছিল পথ সাবধানে চলতে হবে।
  • প্রস্তুতি: সঙ্গে জলরোধী ব্যাগ, হালকা খাবার ও ক্যামেরা রাখতে ভুলবেন না।

🏁 উপসংহার

দুধসাগর জলপ্রপাত শুধু একটি প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়, এটি এক অনন্য অ্যাডভেঞ্চার। জঙ্গলের পথ, পাহাড়ের সৌন্দর্য আর গর্জনরত জলপ্রপাতের দৃশ্য আপনার মনকে পরিপূর্ণ আনন্দ দেবে। গোয়া ভ্রমণে যদি একটু অফবিট অভিজ্ঞতা চান, তাহলে দুধসাগর জলপ্রপাত আপনার ট্রাভেল লিস্টে অবশ্যই থাকা উচিত।

Share This
Categories
প্রবন্ধ বিবিধ রিভিউ

গোয়ার মোলেম ন্যাশনাল পার্ক – প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর স্বর্গ।।

গোয়ার নাম শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে সমুদ্রসৈকত, পার্টি আর রঙিন রাতের ছবি। কিন্তু যারা প্রকৃতিপ্রেমী, বন্যপ্রাণী দেখতে ভালোবাসেন এবং শান্ত-নিরিবিলি পরিবেশ খোঁজেন, তাদের জন্য গোয়া একটি আলাদা রত্ন লুকিয়ে রেখেছে – সেটি হলো মোলেম ন্যাশনাল পার্ক (Mollem National Park)। পশ্চিমঘাটের সবুজ অরণ্যের মাঝে অবস্থিত এই পার্ক প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী এবং অ্যাডভেঞ্চারের এক অপূর্ব মেলবন্ধন।


📍 অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

মোলেম ন্যাশনাল পার্ক গোয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অংশে, কর্ণাটক সীমান্তের কাছে অবস্থিত। এটি বৃহত্তর ভগবান মহাবীর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের অংশ। প্রায় ২৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই পার্কে ঘন অরণ্য, ছোট ছোট নদী, ঝর্ঝর ঝর্ণা এবং পাহাড়ের সারি মিলিয়ে এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি করে।

সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো – এখান থেকেই শুরু হয় বিখ্যাত দুধসাগর জলপ্রপাতের ট্রেক


🐾 বন্যপ্রাণীর ভাণ্ডার

এই পার্ক প্রকৃত অর্থেই জীববৈচিত্র্যের এক স্বর্গ। এখানে আপনি দেখতে পাবেন –

  • স্তন্যপায়ী প্রাণী: বন্য মোষ, চিতা, বন্য শূকর, হরিণ, ভারতীয় বাইসন (গৌর), স্লথ বিয়ার
  • পাখি: মালাবার পিয়েড হর্নবিল, কিংফিশার, উল্লুক, প্যারাকিট
  • সরীসৃপ: কিং কোবরা, পাইথন, মনিটর লিজার্ড
  • প্রজাপতি ও পোকামাকড়: নানা রঙের প্রজাপতি ও অদ্ভুত কীটপতঙ্গ

🚙 ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

মোলেম ন্যাশনাল পার্কে প্রবেশ করার জন্য কোল্লেম (Kulem) গ্রাম থেকে জিপ সাফারি বুক করা যায়। জিপে করে ঘন জঙ্গল পেরিয়ে যখন আপনি পার্কের ভেতরে প্রবেশ করবেন, তখন প্রকৃতির রহস্যময়তা আপনাকে ঘিরে ফেলবে।

অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এখানে রয়েছে –

  • ট্রেকিং ট্রেইল
  • বাইক রাইডিং রুট
  • বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফির সুযোগ

🌿 বিশেষ আকর্ষণ

  • দুধসাগর জলপ্রপাত: মোলেম থেকে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে গিয়ে দুধসাগরের ঝর্ণার গর্জন উপভোগ করা এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
  • তাম্বডি সুরলা মহাদেব মন্দির: ১২শ শতকের এই প্রাচীন মন্দিরটি এই পার্কের কাছেই অবস্থিত এবং গোয়ার ঐতিহাসিক স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন।

🏖️ সেরা সময় ও ভ্রমণ টিপস

  • সেরা সময়: অক্টোবর থেকে মার্চ – আবহাওয়া শীতল ও আরামদায়ক থাকে।
  • কি নেবেন: দূরবীন, ক্যামেরা, হালকা খাবার, পর্যাপ্ত জল এবং আরামদায়ক জুতো।
  • নিরাপত্তা: গাইডের নির্দেশ মেনে চলা খুবই জরুরি, কারণ এটি বন্যপ্রাণীর এলাকা।

🏁 উপসংহার

মোলেম ন্যাশনাল পার্ক শুধুমাত্র একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য নয়, এটি প্রকৃতির এক উন্মুক্ত পাঠশালা। এখানে এসে আপনি বুঝতে পারবেন প্রকৃতির সৌন্দর্য ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রসৈকতের বাইরে গোয়ার এই সবুজ অরণ্যে একবার ঘুরে এলে আপনার ভ্রমণ হবে আরও রঙিন ও স্মরণীয়।

Share This
Categories
প্রবন্ধ বিবিধ রিভিউ

🌿 গোয়ার কোটিগাও ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি – প্রকৃতির এক অমূল্য রত্ন।।

গোয়া শুধুই সমুদ্রসৈকত, পার্টি এবং ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত নয়; প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য গোয়ার অরণ্য এবং বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যও এক অপূর্ব আকর্ষণ। এর মধ্যে অন্যতম হলো কোটিগাও ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি (Cotigao Wildlife Sanctuary)। এটি গোয়ার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত এবং প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর সঙ্গে এক অনন্য সংযোগ তৈরি করে।


📍 অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

কোটিগাও ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি সাওসিমে এবং কর্নারিমের কাছে অবস্থিত। এটি প্রায় ২৯০ হেক্টর বিস্তৃত এবং ঘন সবুজ বনভূমি, পাহাড়ি পথ ও ছোট নদীর ছায়া মিলিয়ে এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে। বনাঞ্চলের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির টিক, সাল, হরিতকি এবং অন্যান্য অরণ্য গাছ দেখা যায়।

জঙ্গলপথে হাঁটার সময় চারপাশে পাখির কিচিরমিচির, ঝর্ণার কলকল শব্দ এবং গাছের ছায়া প্রকৃতিপ্রেমীদের মনকে ভরে দেয়।


🐾 বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্য

কোটিগাও স্যাংচুয়ারি মূলত বনাঞ্চল ও পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য পরিচিত। এখানে রয়েছে –

  • স্তন্যপায়ী প্রাণী: চিতা, হরিণ, বুনো শূকর, বুনো মোষ, লাংউর বানর
  • পাখি: মালাবার হর্নবিল, কিংফিশার, প্যারাকিট, পাখির বিভিন্ন প্রজাতি
  • সরীসৃপ ও প্রজাপতি: পাইথন, মনিটর লিজার্ড এবং রঙিন প্রজাপতি

এছাড়া এখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বনজ সম্পদএথনিক সংস্কৃতি পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ।


🚶‍♂️ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

কোটিগাও স্যাংচুয়ারি পুরোপুরি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য।

  • ট্রেকিং ট্রেইল: বনাঞ্চলের ভেতরে বিভিন্ন হাঁটার পথ রয়েছে যা ভ্রমণকে স্মরণীয় করে তোলে।
  • নেচার ওয়াক: গাইডের সঙ্গে হাঁটতে গেলে বনভূমির জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
  • ফটোগ্রাফি: বন্যপ্রাণী ও জঙ্গলের ছবির জন্য এটি স্বর্গরাজ্য।

এখানে গেলে পর্যটকরা শহরের কোলাহল থেকে দূরে এসে প্রকৃতির মাঝে এক শান্তিপূর্ণ সময় উপভোগ করতে পারেন।


🌿 বিশেষ আকর্ষণ

  • প্রকৃতির সৌন্দর্য: পাহাড়ি বন, ছোট নদী ও ঝর্ণার সংমিশ্রণে এক অপূর্ব পরিবেশ তৈরি হয়।
  • বন্যপ্রাণী দেখা: কিছু পর্যটক ভাগ্যবান হলে চিতা, লাংউর বা পাখি খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান।
  • শান্তি ও প্রশান্তি: এটি একটি কম ভিড়ের স্থান, তাই প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে শান্তি ও নিরিবিলি উপভোগ করতে পারেন।

🏖️ ভ্রমণ টিপস

  • সেরা সময়: নভেম্বর থেকে মার্চ – আবহাওয়া শীতল ও মনোরম থাকে।
  • প্রবেশ সময়: সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা
  • টিপস: আরামদায়ক পোশাক, জুতো, ক্যামেরা এবং পর্যাপ্ত জল সঙ্গে রাখুন।

🏁 উপসংহার

কোটিগাও ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি গোয়ার একটি নীরব, সবুজ অভয়ারণ্য। যারা প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে, বন্যপ্রাণী দেখার এবং শহরের কোলাহল থেকে পালাতে চান, তাদের জন্য এটি এক অমূল্য স্থান। এখানে এসে ভ্রমণকারীরা প্রকৃতির সঙ্গে এক গভীর সংযোগ অনুভব করেন এবং মনভরে শান্তি ও আনন্দ পান।

Share This
Categories
প্রবন্ধ বিবিধ রিভিউ

গোয়া’র আরামবোল বিচ – শান্তি, সুর আর সমুদ্রের জাদু।।

গোয়ার সমুদ্রতটের ভিড়ে এক বিশেষ নাম আরামবোল বিচ। যাকে অনেক ভ্রমণপিপাসু “গোয়ার লুকানো স্বর্গ” বলে থাকেন। উত্তর গোয়ার অশ্বেম ও কেরিম বিচের মাঝখানে অবস্থিত এই সমুদ্রতট, যেখানে সমুদ্র, পাহাড়, বালি আর প্রকৃতির অপূর্ব মেলবন্ধন তৈরি করে এক অন্যরকম আবহ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টান

আরামবোল বিচ মূলত শান্তিপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ স্থান। এখানে ভিড় কম, ফলে সমুদ্রের নির্জন সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় নিরবচ্ছিন্নভাবে। বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা, নীলাভ সাগরের জল আর পেছনের সবুজ পাহাড় যেন ছবির মতো এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করে। সূর্যাস্তের সময় সমুদ্রতটের রূপ আরও অপূর্ব হয়ে ওঠে, যেন আকাশ আর জল মিলে একাকার হয়ে যায়।

বিশেষ আকর্ষণ

আরামবোল বিচের আশেপাশে একটি প্রাকৃতিক ফ্রেশওয়াটার লেক রয়েছে, যেটি “আরামবোল সুইট ওয়াটার লেক” নামে পরিচিত। সমুদ্রের এত কাছে মিষ্টি জলের লেক সত্যিই বিস্ময়কর। এছাড়াও কাছেই রয়েছে একটি সালফার স্প্রিং, যার জলে স্বাস্থ্যকর গুণাগুণ আছে বলে স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন।

আরেকটি আকর্ষণ হলো এখানকার ছোট ছোট গুহা এবং প্রাকৃতিক হাঁটার পথ। ভ্রমণকারীরা প্রায়ই পাহাড়ি পথে ট্রেক করে সমুদ্র ও লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।

সংস্কৃতি ও আবহ

আরামবোল বিচ শুধু প্রকৃতির নয়, সংস্কৃতিরও মিলনস্থল। এখানে প্রায়ই ছোটখাটো লাইভ মিউজিক পারফরম্যান্স, ড্রাম সার্কেল, যোগা ও মেডিটেশন সেশন হয়। বিদেশি পর্যটকেরা এখানে এসে দীর্ঘদিন থাকেন শান্ত পরিবেশে আত্ম-অন্বেষণের খোঁজে। প্রতি সন্ধ্যায় সমুদ্রতটে ড্রাম বাজিয়ে গান, নাচ আর হাসিখুশির পরিবেশ তৈরি হয়, যা একেবারেই ভোলার নয়।

করণীয় কাজ

  • সাগরের ধারে সূর্যস্নান ও সাঁতার কাটা।
  • প্রাকৃতিক লেকে গিয়ে স্নান করা।
  • ড্রাম সার্কেলে যোগ দিয়ে সঙ্গীতের মুগ্ধতায় ভেসে যাওয়া।
  • স্থানীয় দোকান থেকে হ্যান্ডমেড গয়না, বাদ্যযন্ত্র বা পোশাক কেনা।
  • যোগা, মেডিটেশন ও প্যারাগ্লাইডিং-এর মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে অংশ নেওয়া।

উপসংহার

যদি ভিড়ভাট্টার বাইরে গিয়ে শান্ত, নির্জন অথচ প্রাণবন্ত কোনো জায়গায় সময় কাটাতে চান, তাহলে গোয়ার আরামবোল বিচ আপনার জন্য আদর্শ গন্তব্য। প্রকৃতির কোলে বসে সূর্যাস্ত দেখা, স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে মিশে যাওয়া আর সাগরের ঢেউয়ের সুরে হারিয়ে যাওয়া—আরামবোল বিচ সেই অভিজ্ঞতা দেয় যা সারাজীবন মনে গেঁথে থাকে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আলীবাগ ভ্রমণ – সমুদ্রের কোলে এক শান্ত সাপ্তাহিক অবকাশ।।

যদি আপনি শহরের কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে, শান্ত সমুদ্রতীরে কিছুটা সময় কাটাতে চান, তবে মহারাষ্ট্রের আলীবাগ আপনার জন্য এক আদর্শ গন্তব্য। আরব সাগরের তীরে অবস্থিত আলীবাগকে অনেকেই “মিনি গোয়া” বলে থাকেন। এটি মূলত একটি সমুদ্রতীরবর্তী ছোট্ট শহর, যা তার পরিচ্ছন্ন সৈকত, ঐতিহাসিক কেল্লা ও প্রশান্ত আবহাওয়ার জন্য বিখ্যাত।

📜 ইতিহাসের ঝলক

আলীবাগের ইতিহাস বহু পুরনো। এটি একসময় কানহোজি আংরে নামে এক মারাঠা অ্যাডমিরালের দুর্গনগরী ছিল। তিনি এখানে বহু সামুদ্রিক দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন, যার মধ্যে কোলাবা ফোর্ট আজও একটি বড় আকর্ষণ।

🏖️ দর্শনীয় স্থান

🔸 আলীবাগ বিচ

আলীবাগের প্রধান সৈকত। এখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সময় সমুদ্রের রঙ বদলে যাওয়া এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। সন্ধ্যায় স্থানীয় খাবারের দোকান, নারকেলের জল আর ঝালমুড়ির স্বাদ অন্যরকম আনন্দ দেয়।

🔸 কোলাবা ফোর্ট

সৈকতের কাছেই অবস্থিত এই দুর্গে হাঁটাপথে বা জোয়ারের সময় নৌকায় পৌঁছানো যায়। দুর্গের প্রাচীর থেকে সমুদ্রের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর।

🔸 কিহিম বিচ

এখানে বালির রঙ সোনালি এবং সমুদ্রতীর বেশ নির্জন। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ স্থান।

🔸 কাশিদ বিচ

আলীবাগ থেকে প্রায় ৩০ কিমি দূরে। এখানে নীল জল, সাদা বালু আর নারকেল গাছের সারি যেন ছবির মতো সুন্দর।

🔸 মুরুদ-জঞ্জিরা ফোর্ট

মুরুদ গ্রামে অবস্থিত এই সামুদ্রিক দুর্গটি একসময় অজেয় বলে পরিচিত ছিল। সমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এই দুর্গে নৌকায় করে পৌঁছানো যায়।

🚤 করণীয়

সৈকতে ঘোড়ায় চড়া ও উটের সवारी

প্যারাসেইলিং, জেট স্কি ও অন্যান্য জলক্রীড়া

কোলাবা ফোর্ট ও জঞ্জিরা ফোর্ট এক্সপ্লোর করা

সৈকতে বসে সূর্যাস্ত দেখা

স্থানীয় সি-ফুডের স্বাদ নেওয়া

 

🌤️ ভ্রমণের সেরা সময়

নভেম্বর থেকে মার্চ মাস আলীবাগ ভ্রমণের জন্য সেরা সময়। গ্রীষ্মে বেশ গরম থাকলেও সমুদ্রতীরে সন্ধ্যা মনোরম লাগে। বর্ষায় সমুদ্র উত্তাল থাকায় জলক্রীড়া এসময় বন্ধ থাকে।

🛣️ যাতায়াত

মুম্বাই থেকে ফেরি: গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া থেকে মাণ্ডভা পর্যন্ত ফেরি চলে, সেখান থেকে বাস/অটোতে সহজেই আলীবাগ পৌঁছানো যায়।

সড়কপথ: মুম্বাই থেকে প্রায় ১০০ কিমি। গাড়িতে বা বাসে ৩-৪ ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়।

রেলপথ: পেন স্টেশন নিকটতম রেলস্টেশন, সেখান থেকে ট্যাক্সি বা বাসে আলীবাগ যাতায়াত হয়।

 

🏁 উপসংহার

আলীবাগ একটি পারফেক্ট উইকএন্ড গেটওয়ে। এখানে একদিকে রয়েছে সমুদ্রের শান্ত ঢেউ, অন্যদিকে ইতিহাসের গৌরবময় দুর্গ। প্রিয়জন বা পরিবার নিয়ে এখানে এলে মন ও শরীর দুটোই প্রশান্ত হবে। তাই পরবর্তী ছুটির দিনে শহরের ব্যস্ততা পেছনে ফেলে আলীবাগে ঘুরে আসুন – প্রকৃতি আপনাকে স্বাগত জানাবে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

গোয়ার বাগা বিচ – সমুদ্র, সঙ্গীত আর নির্ভেজাল আনন্দের শহর।।

যদি আপনি ভারতের সবচেয়ে প্রাণবন্ত, রঙিন ও মজাদার সমুদ্রসৈকত খুঁজে থাকেন, তবে গোয়ার বাগা বিচ (Baga Beach) আপনার জন্য আদর্শ গন্তব্য। বাগা বিচ শুধু একটি সমুদ্রতীর নয়, এটি গোয়ার রাতের জীবন, সঙ্গীত, খাবার ও পার্টি সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। এখানে এলে মনে হবে আপনি যেন এক নতুন জগতে এসে পড়েছেন, যেখানে আনন্দই একমাত্র মন্ত্র।

🌊 সমুদ্রতীরের সৌন্দর্য

বাগা বিচের সোনালি বালি, ঝকঝকে নীল জল আর ঢেউয়ের তাল আপনার মনকে মুহূর্তেই শান্ত করে দেয়। সকালে সৈকত প্রায় ফাঁকা থাকে, তখন হাঁটতে বা যোগব্যায়াম করতে অসাধারণ লাগে। বিকেলের দিকে ভিড় বাড়তে থাকে, রঙিন ছাতা, বিচ চেয়ার, জলক্রীড়া আর পর্যটকদের কোলাহল বাগাকে করে তোলে এক জীবন্ত চিত্রপট।

🎉 নাইটলাইফ ও বিচ শ্যাক

বাগা বিচ গোয়ার নাইটলাইফের জন্য বিখ্যাত। সৈকতের ধার ঘেঁষে সারি সারি বিচ শ্যাক (Beach Shack) রয়েছে – টিটোস, মাম্বোস, ব্রিটোসের মতো নামকরা ক্লাব ও রেস্তোরাঁয় রাতে ডিজে মিউজিক, লাইভ ব্যান্ড ও ডান্স পার্টি চলে। সৈকতের আলো, সঙ্গীত আর সাগরের ঢেউয়ের আওয়াজ এক অসাধারণ আবহ তৈরি করে।

🚤 জলক্রীড়ার স্বর্গ

বাগা বিচে বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার জলক্রীড়া করা যায় –

প্যারাসেইলিং

জেট স্কি রাইড

বানানা বোট রাইড

স্নরকেলিং

ডলফিন স্পটিং বোট ট্রিপ

এগুলো সৈকতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এবং পরিবার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে ভ্রমণের আনন্দ দ্বিগুণ করে তোলে।

🍤 খাবার ও কেনাকাটা

গোয়ার বিখ্যাত সি-ফুড যেমন প্রন কারি, ফিশ ফ্রাই, ক্র্যাব স্যুপ বাগা বিচের শ্যাকগুলোতে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এখানকার ফ্লি মার্কেট থেকে নানা ধরনের হ্যান্ডিক্রাফট, বিচ ড্রেস, অ্যাকসেসরিজ ও গোয়ান মসলা কেনা যায়।

🌤️ ভ্রমণের সেরা সময়

অক্টোবর থেকে মার্চ মাস বাগা বিচ ভ্রমণের জন্য সেরা সময়। তখন আবহাওয়া মনোরম থাকে, সমুদ্র শান্ত থাকে এবং সব ক্লাব, শ্যাক খোলা থাকে। ডিসেম্বর মাসে ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ার পার্টির সময় বাগা বিচ থাকে সবচেয়ে জমজমাট।

🛣️ যাতায়াত

নিকটতম বিমানবন্দর: গোয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ডাবোলিম), প্রায় ৪৫ কিমি দূরে।

নিকটতম রেলস্টেশন: থিভিম ও মাডগাঁও স্টেশন থেকে ট্যাক্সি বা বাসে পৌঁছানো যায়।

রোডওয়ে: পানাজি বা মাপুসা থেকে সহজেই ট্যাক্সি, স্কুটি বা লোকাল বাসে বাগা পৌঁছানো যায়।

 

🏁 উপসংহার

গোয়ার বাগা বিচ এক কথায় অ্যাডভেঞ্চার, পার্টি আর প্রশান্তির মিলনস্থল। দিনে সৈকতের রোদে ভিজে জলক্রীড়ার মজা, আর রাতে লাইভ মিউজিক ও বিচ পার্টির উন্মাদনা – সব মিলিয়ে এটি এক পূর্ণাঙ্গ ছুটির গন্তব্য। যদি আপনি প্রাণবন্ত ভ্রমণ চান, তবে বাগা বিচ আপনার পরবর্তী ট্রাভেল লিস্টে অবশ্যই থাকা উচিত।

Share This