Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

🌿 “সুন্দরবন ভ্রমণ: পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমির রহস্যময় অভিযাত্রা” 🌿

ভূমিকা

প্রকৃতির এক বিস্ময়, বিপদের মাঝেও এক স্বর্গীয় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের নাম— সুন্দরবন। বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ অঞ্চল এবং গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার সঙ্গমস্থলে বিস্তৃত এক অতুলনীয় বনাঞ্চল। যেখানে নদী, খাড়ি ও ম্যানগ্রোভ গাছের মাঝে গর্জে ওঠে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সেখানে ভ্রমণ মানেই রোমাঞ্চ, ভয়, সৌন্দর্য আর শিক্ষা—সব মিলিয়ে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

১. সুন্দরবনের ভৌগোলিক পরিচিতি

🌍 অবস্থান

সুন্দরবন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের এক বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। ভারতের অংশটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ছড়িয়ে আছে।

📐 আয়তন

ভারতের সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ১০,০০০ বর্গকিমি, যার মধ্যে প্রায় ৪,২৬০ বর্গকিমি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবেও স্বীকৃত (১৯৮৭ সালে)।

🌊 জলপথ

সুন্দরবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য এর অসংখ্য খাড়ি ও নদী, যেমন—মাতলা, হুগলি, রায়মঙ্গল, বিদ্যাধরী, গোসাবা ইত্যাদি। এরা বনাঞ্চলের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে এক অভূতপূর্ব জলভূমি সৃষ্টি করেছে।

২. সুন্দরবনের ইতিহাস ও নামকরণ

📜 ইতিহাস

সুন্দরবনের ইতিহাস বহু প্রাচীন। একসময় এই অঞ্চল ছিল “চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের” অংশ। পরবর্তীকালে মুঘল ও ব্রিটিশ শাসনের অধীনে এলেও, এটি মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধীনে গড়ে উঠেছে।

📝 নামকরণের উৎস

‘সুন্দরবন’ শব্দটি এসেছে “সুন্দরী গাছ” থেকে, যা ম্যানগ্রোভ প্রজাতির একটি উদ্ভিদ। আবার অনেকে বলেন, “সুন্দর” বন বলেই এর এমন নামকরণ।

৩. কীভাবে যাবেন সুন্দরবন

🚉 রেলপথে

কলকাতা থেকে ক্যানিং পর্যন্ত ট্রেনে যেতে পারেন (প্রায় ২ ঘণ্টা)। ক্যানিং থেকে বাস বা টোটো করে গদখালি পর্যন্ত যেতে হবে।

🛥️ জলপথে

গদখালি থেকে লঞ্চে করে গোসাবা, সাতজেলিয়া, পকিরাল, সজনেখালি ইত্যাদি দ্বীপে পৌঁছনো যায়। পর্যটনের মূল আকর্ষণ এখান থেকেই শুরু।

৪. সুন্দরবনের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র

🌲 ১. সজনেখালি ব্যাঘ্র প্রকল্প কেন্দ্র

রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির, হরিণ ও পাখির জন্য বিখ্যাত।

একটি ছোট্ট জাদুঘর ও ওয়াচ টাওয়ার আছে।

বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের এক অপূর্ব স্থান।

🦌 ২. সুজনখালি অভয়ারণ্য

হরিণ, বন্য শূকর, পাখি, বানর ইত্যাদির অবাধ বিচরণক্ষেত্র।

🌿 ৩. জটখালি

ভ্রমণের এক নতুন গন্তব্য যেখানে সাইকেল চালিয়ে গ্রামের ভিতর দিয়ে ঘোরা যায়।

স্থানীয় হোমস্টেতে থাকার সুযোগ।

🛕 ৪. বনবিবির মন্দির

সুন্দরবনের মানুষ বনবিবিকে দেবীরূপে পূজা করে থাকেন, বাঘ থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায়।

⛵ ৫. দুক্ষিণরায় ও বানবিবির কাহিনী ঘিরে স্থানীয় নাটক

‘বনবিবির পালা’ নামক এক ধরনের লোকগাথা, যা এখানে প্রতি বছর আয়োজন করা হয়।

৫. সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

🐅 রয়েল বেঙ্গল টাইগার

বিশ্বখ্যাত বাঘের এক প্রজাতি যা জলে সাঁতার কাটতেও পারদর্শী। এখানে প্রায় ৯৬টি বাঘ রয়েছে (২০২৩ সালের হিসেব অনুযায়ী ভারতের অংশে)।

🐊 কুমির, ডলফিন ও অন্যান্য প্রাণী

খাড়িতে দেখা যায় লবণজলের কুমির, ইরাবতী ডলফিন।

আছে হরিণ, বন্য শূকর, ঊল্লুক, সাপ ইত্যাদি।

🐦 পাখির রাজত্ব

সুন্দরবন নানা ধরনের পাখির আবাসস্থল, যেমন—কিংফিশার, ফিশ ঈগল, বক, সারস ইত্যাদি।

🌱 উদ্ভিদ জগৎ

ম্যানগ্রোভ গাছের প্রাধান্য: সুন্দরী, গেওয়া, গরান, পশুর।

এই গাছগুলিই ভূমিকে ভাঙন থেকে রক্ষা করে।

৬. সুন্দরবনে ভ্রমণের সময় ও সাবধানতা

📅 ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস: শীতকাল সবথেকে আরামদায়ক ও নিরাপদ।

⚠️ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাবধানতা

গাইড ছাড়া কখনো একা প্রবেশ করবেন না।

বন্যপ্রাণীদের কাছে যাওয়া নিষিদ্ধ।

প্লাস্টিক, ধূমপান ও আগুন জ্বালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক।

৭. আবাসন ও খাবার

🛏️ থাকার জায়গা

সজনেখালি পর্যটন লজ (WBTDC)

স্থানীয় হোমস্টে (জটখালি, গোসাবা, পকিরাল ইত্যাদিতে)

🍲 খাবার

স্থানীয়ভাবে তৈরি মাছভাত, চিংড়ি মালাইকারি, গলদা চিংড়ি, নারকেল দিয়ে রান্না করা মুরগির ঝোল ইত্যাদি।

কিছু হোটেলে কন্টিনেন্টাল খাবারও মেলে।

৮. সুন্দরবনের সমস্যা ও পরিবেশ সুরক্ষা

🔥 পরিবেশগত বিপদ

ঘূর্ণিঝড়: যেমন আইলা (২০০৯), আমফান (২০২০)।

লবণাক্ততা বৃদ্ধি: কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি।

🌳 সংরক্ষণ প্রচেষ্টা

প্রাণী সংরক্ষণ আইন ১৯৭২, ইকো-ট্যুরিজম নীতি।

স্থানীয়দের জীবিকা বিকাশে সমবায় ও সেলফ হেল্প গ্রুপের ভূমিকা।

৯. কেন যাবেন সুন্দরবন?

প্রকৃতির একদম কোল ঘেঁষে বাঁচার অনুভূতি।

বন্যপ্রাণী দেখার উত্তেজনা ও অভিজ্ঞতা।

দারিদ্র্যের মাঝেও সাহসিকতার জীবন্ত উদাহরণ স্থানীয় মানুষ।

ইতিহাস, লোককাহিনী, প্রকৃতি ও ভয়—all in one!

উপসংহার

সুন্দরবন শুধুই একটা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য নয়—এ এক অনুভব, এক গল্প, এক শিক্ষা। প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন যারা দেখে, সুন্দরবন তাদের কাছে এক প্রার্থনার স্থান। এখানে প্রতিটি ঢেউয়ের আওয়াজে লুকিয়ে থাকে গল্প, প্রতিটি পাতার ফাঁকে দেখা মেলে জীবনের নতুন রূপ। একবার ঘুরে এলে আপনি ফিরে যাবেন ঠিকই, কিন্তু সুন্দরবনের একটা অংশ আপনার ভেতর রয়ে যাবে চিরকাল।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

শান্তির শহর শান্তিনিকেতন: কবিগুরুর ছায়ায় শিক্ষার আলো আর সংস্কৃতির নিঃশব্দ গতি।

🔸 ভূমিকা

শান্তিনিকেতন—শব্দটিই যেন এক নির্জন, নিস্তব্ধ অথচ প্রাণবন্ত অনুভবের প্রতিচ্ছবি। এটি কেবল একটি ভ্রমণস্থান নয়, এটি বাংলার সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি ও শিক্ষার এক অনন্য তীর্থভূমি। শান্তিনিকেতনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর কল্পনাশক্তি, শিক্ষা দর্শন এবং নান্দনিক মনোভাব এই স্থানটিকে করে তুলেছে বিশ্বখ্যাত।
এই প্রবন্ধে শান্তিনিকেতনের ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান, উৎসব, লোকশিল্প, স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিশদভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

🔸 শান্তিনিকেতনের ইতিহাস

শান্তিনিকেতনের সূচনা হয় ১৮৬৩ সালে, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে, যিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা। তিনি এখানকার মনোরম পরিবেশে এক আধ্যাত্মিক আশ্রম গড়ে তোলেন, যার নাম দেন “শান্তিনিকেতন” অর্থাৎ “শান্তির নিবাস”।
তবে শান্তিনিকেতনের প্রকৃত রূপান্তর ঘটে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে। ১৯০১ সালে তিনি এখানে ব্রহ্মচর্যাশ্রম নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত হয়। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন প্রাকৃতিক পরিবেশে মুক্ত চিন্তার শিক্ষা দেওয়া উচিত। তাঁর এই আধুনিক শিক্ষা দৃষ্টিভঙ্গি শান্তিনিকেতনকে করে তোলে বিশ্বদরবারে অন্যতম এক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

🔸 বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্বভারতী আজও শান্তিনিকেতনের হৃদয়। “Where the world makes a home in a single nest”— এই মন্ত্রে গঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে এক ভিন্নধর্মী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক।
বিশ্বভারতীতে বিভিন্ন পাঠক্রম চালু আছে — সংগীত, চারুকলা, ভাষা, সংস্কৃতির উপর উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক আদানপ্রদানের সুযোগ।
এখানে শিক্ষা দেওয়া হয় খোলা আকাশের নিচে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে। ছাতার নিচে না পড়ে গাছতলায় বসে শিক্ষার এই যে আয়োজন, তা এখনও রবীন্দ্র-দর্শনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

🔸 দর্শনীয় স্থানসমূহ

১. উপাসনা গৃহ

একটি শান্তিপূর্ণ, প্রার্থনার স্থান। রঙিন কাঁচে সজ্জিত এই ভবনটি সূর্যের আলো পড়লে অপূর্ব দীপ্তি ছড়ায়।

২. চতুরঙ্গ / পাঠভবন

খোলা পরিবেশে ক্লাস হয় এখানে। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন প্রকৃতি শিক্ষার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।

৩. শ্রীনিকেতন

গ্রামীণ উন্নয়ন ও সমাজসেবার কেন্দ্র। এখানে হস্তশিল্প, বুনন শিল্প ও লোক সংস্কৃতি শেখানো হয়।

৪. রবীন্দ্রভবন মিউজিয়াম

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহার করা জিনিস, হাতে লেখা চিঠি, পাণ্ডুলিপি, চিত্রকলা ও বিভিন্ন স্মারক এখানে সংরক্ষিত।

৫. আম্রকুঞ্জ ও ছাতিমতলা

বিশ্বভারতীর কেন্দ্রস্থল। এখানে গাছতলায় বসে পড়ানো হয়। ছাতিমতলা দেবেন্দ্রনাথের ধ্যানের স্থান ছিল।

🔸 উৎসব ও অনুষ্ঠান

📌 পৌষ মেলা

ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত এই মেলাটি শান্তিনিকেতনের সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব। এখানে বাউল গান, হস্তশিল্প মেলা, পিঠে-পুলি, কাঁসার বাসন, পোড়ামাটির শিল্পকর্ম— সব মিলিয়ে এক অপরূপ বাঙালিয়ানা।

📌 বসন্ত উৎসব

হোলির এক অনন্য সংস্করণ, যেখানে ছাত্র-শিক্ষক ও দর্শনার্থীরা হলুদ পোশাকে বসন্তকে স্বাগত জানান গানে, নাচে ও আবিরে।

📌 রবীন্দ্রজয়ন্তী

২৫শে বৈশাখে গুরুদেবের জন্মদিন উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, যেখানে তাঁর কবিতা, গান ও নাটক পরিবেশিত হয়।

🔸 লোকশিল্প ও হস্তশিল্প

শান্তিনিকেতনের আশপাশের এলাকাগুলি আদিবাসী ও স্থানীয় শিল্পীদের দ্বারা সমৃদ্ধ। বিশেষ করে সোনাঝুরি হাট, যেখানে সপ্তাহান্তে (বিশেষ করে শনিবার) বসে হস্তশিল্পের মেলা। এখানে পাওয়া যায়:

কাঁথার কাজ

পোড়ামাটির জিনিস

কাঁসার পাত্র

হাতে তৈরি অলঙ্কার

চামড়ার নকশাদার ব্যাগ (শান্তিনিকেতনী ব্যাগ)

এই স্থানীয় শিল্পীরা অনেকেই বিশ্বভারতীর ছাত্র বা প্রাক্তনী।

🔸 কীভাবে যাবেন

🚆 ট্রেনে:

বোলপুর শান্তিনিকেতন স্টেশন হাওড়া থেকে মাত্র ২.৫–৩ ঘণ্টার ট্রেন যাত্রা। জনপ্রিয় ট্রেন: শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস, বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার।

🚌 বাসে:

কলকাতা থেকে বোলপুরগামী সরকারি ও বেসরকারি বাস চলে। সময় লাগে প্রায় ৪ ঘণ্টা।

🚗 প্রাইভেট গাড়ি:

নিজস্ব গাড়িতে NH2 বা NH114 ধরে যাওয়া যায়। খুবই সুন্দর রাস্তাঘাট।

🔸 থাকার ব্যবস্থা

বোলপুরে ও শান্তিনিকেতনে প্রচুর হোটেল, লজ ও হোমস্টে আছে।
বিশ্বভারতীর অতিথিশালা বা সরকার অনুমোদিত পর্যটন আবাসিক কেন্দ্রেও থাকা যায়। জনপ্রিয় কিছু:

Hotel Camellia

Mark & Meadows

Rangabitan Lodge

Visva Bharati Guest House (আগে থেকে বুকিং প্রয়োজন)

🔸 খাওয়ার ব্যবস্থা

স্থানীয় হোটেলগুলোতে বাঙালি খাবারের পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতীয় ও উত্তর ভারতীয় খাবারও পাওয়া যায়। শান্তিনিকেতনের বিখ্যাত কিছু খাবার:

খিচুড়ি ও লাবড়া

পাঁপড় ভাজা

দই ও মিষ্টি (বিশেষ করে মিহিদানা ও প্যাড়া)

পিঠে-পুলি (উৎসবকালে)

🔸 শান্তিনিকেতনে কী করবেন?

বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস ঘুরে দেখুন।

স্থানীয় হাট থেকে হস্তশিল্প কিনুন।

আদিবাসী নৃত্য ও বাউল গান উপভোগ করুন।

রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত স্থাপনাগুলি দর্শন করুন।

স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিন।

🔸 কিছু প্রয়োজনীয় টিপস

গরমের সময় (এপ্রিল–জুন) এড়িয়ে চলা ভালো।

ডিসেম্বর–ফেব্রুয়ারি সবচেয়ে ভালো সময় ভ্রমণের জন্য।

উৎসবকালে (পৌষ মেলা বা বসন্ত উৎসব) গেলে আগে থেকে হোটেল বুক করে রাখা দরকার।

ক্যাম্পাসে ফটোগ্রাফির জন্য অনুমতি লাগতে পারে।

🔸 উপসংহার

শান্তিনিকেতন শুধুমাত্র ভ্রমণের স্থান নয়, এটি হৃদয়কে ছুঁয়ে যাওয়ার এক অনুভূতির নাম। যেখানে রবীন্দ্র-ভাবনার ছায়া পড়ে প্রকৃতির প্রতিটি পাতায়, পাখির কণ্ঠে, ছাত্রদের গানে, শিল্পের রেখায়। শান্তিনিকেতন এমন এক স্থান, যা আপনাকে শুধু ঘুরে দেখাবে না, আপনাকে চিন্তায়, অনুভবে ও চেতনায় সমৃদ্ধ করবে।

📚 তথ্যসূত্র

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় অফিসিয়াল সাইট

পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন বিভাগ

শান্তিনিকেতন হেরিটেজ ট্রাস্ট

স্থানীয় ভ্রমণ গাইড ও পর্যটকদের অভিজ্ঞতা

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বাসক পাতার গোপন শক্তি ও আধুনিক বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতি।

ভূমিকা

ভারতের আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত একটি মূল্যবান ওষুধি গাছ হল বাসক (বৈজ্ঞানিক নাম: Justicia adhatoda)। বাংলায় একে বাসক, বসক, বা বাসকপাতা বলে ডাকা হয়। সংস্কৃতে এর নাম “বাসিকা”, হিন্দিতে “अडूसा (Adusa)”, আর ইংরেজিতে একে Malabar Nut নামে ডাকা হয়। এটি একটি বহু বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ, যার মূল গুণ হল শ্বাসতন্ত্র ও সর্দি-কাশি সংক্রান্ত রোগের নিরাময়।
এই প্রবন্ধে আমরা বাসক পাতার গঠন, রাসায়নিক উপাদান, আয়ুর্বেদিক গুণ, ব্যবহার, ঔষধি প্রয়োগ, আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি সবই বিশ্লেষণ করব।

১. উদ্ভিদের পরিচিতি ও বিস্তার

বাসক গাছের বৈশিষ্ট্য
বাসক একটি সিমেন্টি বা ঝোপজাতীয় গুল্ম। এটি প্রায় ১ থেকে ২.৫ মিটার উচ্চতায় বাড়ে। গাছটির পাতাগুলি সবুজ, লম্বাটে ও কিছুটা আঙুলের মতো আকৃতির। গ্রীষ্মকালে ফুল ফোটে, সেগুলি হালকা বেগুনি বা সাদা রঙের হয়। ফল সাধারণত ক্যাপসুল ধরনের এবং বীজের মাধ্যমে গাছটি বংশবৃদ্ধি করে।
বিস্তৃতি
ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু দেশে এটি প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। শুকনো, ছায়াযুক্ত ও আর্দ্র পরিবেশে বাসক ভালভাবে জন্মে।

২. রাসায়নিক উপাদানসমূহ

বাসক পাতায় বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যেগুলি একে ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ করে তোলে। এর প্রধান উপাদানগুলি হলো:

ভাসিসিন (Vasicine) – এটি একটি কুইনাজোলিন অ্যালকালয়েড, যা শ্লেষ্মা সরাতে সহায়ক।

ভাসিকোনিন (Vasicinone) – অ্যান্টি-অ্যাজমাটিক ও ব্রঙ্কোডাইলেটর গুণে সমৃদ্ধ।

Essential oils

Phenolics ও Flavonoids – অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

Tannins এবং Saponins – অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান।

এই উপাদানগুলির সম্মিলিত প্রভাবে বাসক একাধিক রোগে কার্যকরী।

৩. বাসক পাতার প্রধান ঔষধিগুণ

৩.১. কাশি ও শ্বাসকষ্টে উপকারী

বাসকপাতা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় কাশি, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টে। এর মূল রাসায়নিক ভাসিসিন ব্রঙ্কিয়াল টিউবের শ্লেষ্মা পাতলা করে বাইরে বার করে দেয় এবং শ্বাসনালিকে প্রশস্ত করে।
প্রয়োগ:

বাসক পাতার রস ও মধু মিশিয়ে খেলে কাশি উপশম হয়।

শুকনো পাতার গুঁড়ো গরম জলে ফুটিয়ে খেলে শ্বাসকষ্ট কমে।

৩.২. অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল গুণ

বাসকপাতা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। ফ্লু, ঠান্ডা, সাইনাস ইনফেকশন ইত্যাদিতে এটি কার্যকর।

৩.৩. রক্ত বিশুদ্ধকারী

বাসকপাতা শরীরের ভেতরে জমে থাকা বিষাক্ত উপাদান পরিষ্কার করে। চর্মরোগ, ব্রণ, ফোঁড়া ইত্যাদিতে উপকারী।

৩.৪. মাসিক অনিয়ম ও ঋতুকষ্টে উপকারী

নারীদের ঋতুস্রাবজনিত সমস্যা বা অনিয়ম থাকলে বাসকপাতার ক্বাথ খেলে উপকার মেলে।

৩.৫. ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েডে সহায়ক

আয়ুর্বেদ অনুযায়ী বাসকপাতা জ্বর কমাতে সহায়তা করে। বিশেষত টাইফয়েড বা ম্যালেরিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে উপকারী বলে বলা হয়।

৪. বাসক পাতার বিভিন্ন ব্যবহার

৪.১. আয়ুর্বেদিক ঔষধ প্রস্তুতিতে

আরিষ্ঠ: বাসকপাতা দিয়ে তৈরি “বাসকরিষ্ট” কাশি ও হজমে কার্যকর।

ক্বাথ (decoction): পাতার ক্বাথ পানের মাধ্যমে ফুসফুস পরিষ্কার হয়।

তেল: বাসকপাতা ও তিলের তেল মিশিয়ে তৈরি তেল বাত বা গাঁটের ব্যথায় মালিশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৪.২. গার্গল ও মুখ ধোয়ার জল

বাসকপাতা সিদ্ধ করে সেই জলে গার্গল করলে গলা ব্যথা ও মুখের ইনফেকশন উপশম হয়।

৪.৩. চর্মরোগে প্রয়োগ

বাসকপাতার পেস্ট ত্বকের উপর লাগালে একজিমা, ফোঁড়া, চুলকানি দূর হয়।

৫. আধুনিক চিকিৎসা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বাসকপাতা

বর্তমানে বাসকপাতার ওপর অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে যা এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে:

Indian Journal of Pharmacology-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ভাসিসিন ব্রঙ্কোডাইলেটর হিসেবে স্যালবিউটামল-এর বিকল্প হতে পারে।

Journal of Ethnopharmacology-তে প্রকাশিত গবেষণায় দেখানো হয়েছে, বাসকপাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব লিভারের জন্য উপকারী।

International Journal of Pharmacy and Pharmaceutical Sciences অনুসারে, বাসকপাতা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি থামাতে পারে বলে কিছু প্রাথমিক গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

৬. শিশু ও বয়স্কদের জন্য বাসকের ব্যবহার

শিশুদের জন্য:
– কাশি বা ঠান্ডা হলে বাসকপাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে দিনে ২-৩ ফোঁটা করে খাওয়ানো যেতে পারে।
বয়স্কদের জন্য:
– হাঁপানি, জ্বর, সাইনাসের সমস্যা, জয়েন্টের ব্যথায় বাসকের ক্বাথ বা বাসক তেল ব্যবহার খুবই কার্যকর।

৭. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সাবধানতা

বাসকপাতা একটি প্রাকৃতিক ওষুধ হলেও কিছু সতর্কতা অবশ্যই মানা উচিত।

গর্ভবতী নারীরা এটি এড়িয়ে চলুন কারণ এটি জরায়ু সংকোচনে সাহায্য করতে পারে।

অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া বমি বা পাতলা পায়খানা ঘটাতে পারে।

যাদের রক্তচাপ কম, তাদের সাবধানে ব্যবহার করা উচিত।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত ও দীর্ঘদিন ব্যবহার বাঞ্ছনীয় নয়।

৮. বাসকপাতার ব্যবহারবিধি ও প্রস্তুতির নিয়ম

বাসকপাতার ক্বাথ তৈরি (ডিকোশন):

উপকরণ:

বাসকপাতা – ১০-১২টি

জল – ২ কাপ

পদ্ধতি:
১. বাসকপাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
২. ২ কাপ জলে ভালোভাবে সিদ্ধ করুন যতক্ষণ না তা অর্ধেক হয়ে যায়।
৩. ছেঁকে সকালে ও রাতে ১ কাপ করে খাওয়া যায়।

বাসকপাতার চা প্রস্তুত:

উপকরণ:

বাসকপাতা – ৫-৬টি

তুলসীপাতা – ৩টি

আদা – এক টুকরো

মধু – স্বাদমতো

সব উপকরণ জলে ফুটিয়ে এক কাপ চায়ের মতো পান করা যায়।

৯. সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও লোকবিশ্বাস

ভারতীয় গ্রামীণ সমাজে বাসক পাতাকে “ঘরের ওষুধ” বলা হয়। অনেক অঞ্চলে ঠাকুর ঘরে বাসকপাতা রাখা হয় ঋতুকালীন সময়ে নারীর কষ্ট দূর করতে। আবার যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত রোগীর ঘরে বাসকপাতার ধোঁয়া দেওয়ারও প্রচলন ছিল।

১০. উপসংহার

বাসকপাতা প্রকৃতির একটি অমূল্য উপহার। এটি শুধুমাত্র এক ধরনের গাছ নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসার ভান্ডার। কাশি, ঠান্ডা, হাঁপানি থেকে শুরু করে চর্মরোগ, জ্বর, হজমের সমস্যা পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বহু যুগ ধরে হয়ে আসছে। আধুনিক গবেষণাও এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। তবে যেকোনো ওষুধের মতো বাসকেরও নিয়ম মেনে ব্যবহার জরুরি। প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেও যদি আমরা যথাযথ জ্ঞান ও পরামর্শ নিয়ে এগোই, তাহলে তার থেকে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া সম্ভব।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

কেদারনাথ : ভগবান শিবের আবাসে একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা।।।।

হিমান্বিত হিমালয়ে অবস্থিত, কেদারনাথ হল একটি শ্রদ্ধেয় তীর্থস্থান এবং ভগবান শিবের বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের একটি। ভারতের উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় অবস্থিত এই পবিত্র শহরটি আধ্যাত্মিকতা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অ্যাডভেঞ্চারের ভান্ডার। এই নিবন্ধে, আমরা আপনাকে কেদারনাথ ভ্রমণে নিয়ে যাব, এর তাৎপর্য, আকর্ষণ এবং ভ্রমণের টিপস অন্বেষণ করব।

কেদারনাথের তাৎপর্য
কেদারনাথকে ভারতের সবচেয়ে পবিত্র শিব মন্দিরগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত এবং ট্রেকারদের আকর্ষণ করে। মন্দিরের তাৎপর্য মহাভারত যুগে খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে ভগবান শিব একটি ষাঁড় রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং পরে তার কুঁজ রেখে মাটিতে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা যায়, যা কেদারনাথ লিঙ্গ হিসাবে পূজা করা হয়।
কেদারনাথের আকর্ষণ
1. কেদারনাথ মন্দির: প্রধান আকর্ষণ, এই প্রাচীন মন্দিরটি একটি উঁচু প্ল্যাটফর্মে নির্মিত এবং এতে জটিল পাথরের খোদাই এবং ভাস্কর্য রয়েছে।
2. আদি শঙ্করাচার্যের সমাধি: একটি পবিত্র স্থান যেখানে শ্রদ্ধেয় দার্শনিক-সন্ত আদি শঙ্করাচার্য জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।
3. ভৈরবনাথ মন্দির: কেদারনাথের অভিভাবক দেবতা ভৈরবকে উৎসর্গ করা একটি কাছাকাছি মন্দির।
4. ভাসুকি তাল: পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত একটি মনোরম হ্রদ, শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য প্রদান করে।
5. চোরাবাড়ি তাল: স্ফটিক-স্বচ্ছ জল সহ একটি সুন্দর হ্রদ, ট্রেকিং এবং ক্যাম্পিংয়ের জন্য উপযুক্ত।
কেদারনাথে ট্রেকিং
কেদারনাথ ভ্রমণ একটি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা, যা হিমালয় এবং আশেপাশের উপত্যকার অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখায়। গৌরীকুন্ড থেকে কেদারনাথ পর্যন্ত 16 কিমি ট্র্যাক আপনার গতি এবং ফিটনেস স্তরের উপর নির্ভর করে 6-8 ঘন্টার মধ্যে সম্পন্ন করা যেতে পারে।
কেদারনাথ ভ্রমণের টিপস
1. ভ্রমণের সেরা সময়: মে থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর, বর্ষাকাল এড়িয়ে।
2. বাসস্থান: বাজেট-বান্ধব গেস্টহাউস এবং বিলাসবহুল রিসর্ট সহ বিভিন্ন বিকল্প থেকে বেছে নিন।
3. ট্রেকিং এর প্রয়োজনীয়তা: আরামদায়ক জুতা, স্তর এবং প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি যেমন জল, স্ন্যাকস এবং একটি প্রাথমিক চিকিৎসা কিট প্যাক করুন।
4. পারমিট: উত্তরাখণ্ড সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পারমিট নিন।
5. নিরাপত্তা: স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং গাইডের নির্দেশিকা এবং নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।
উপসংহার
কেদারনাথ হল একটি আধ্যাত্মিক আশ্রয়স্থল, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, দুঃসাহসিক কাজ এবং আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির এক অনন্য মিশ্রণ প্রদান করে। আপনি একজন ভক্ত, ট্র্যাকার, বা কেবল একটি শান্ত রিট্রিট খুঁজছেন না কেন, কেদারনাথে সবার জন্য কিছু না কিছু আছে। এই অবিশ্বাস্য যাত্রা শুরু করুন এবং নিজের জন্য কেদারনাথের জাদু অনুভব করুন।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

গোয়া ক্রুজ : ভারতের ক্রান্তীয় উপকূলরেখা বরাবর একটি যাত্রা।।।।

গোয়া, ভারতের পশ্চিম উপকূলে একটি ছোট রাজ্য, তার অত্যাশ্চর্য সৈকত, প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং সমৃদ্ধ ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত। একটি গোয়া ক্রুজ এই গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্বর্গের একটি অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি অফার করে, যা আপনাকে এর উপকূলরেখা অন্বেষণ করতে, নির্জন সৈকত পরিদর্শন করতে এবং স্থানীয় সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা লাভ করতে দেয়।

ক্রুজের প্রকারভেদ
গোয়াতে বিভিন্ন ধরণের ক্রুজ পাওয়া যায়, বিভিন্ন আগ্রহ এবং বাজেটের জন্য:
1. দিনের ভ্রমণ: উপকূলরেখা বরাবর সংক্ষিপ্ত, আরামদায়ক ক্রুজ, পরিবার এবং দম্পতিদের জন্য উপযুক্ত।
2. সানসেট ক্রুজ: রোমান্টিক ক্রুজ যা অত্যাশ্চর্য গোয়ান সূর্যাস্তের সাথে মিলে যায়।
3. রাতারাতি ক্রুজ: দীর্ঘ, আরও অবসরে ভ্রমণ যা আপনাকে উপকূলরেখা এবং কাছাকাছি দ্বীপগুলি অন্বেষণ করতে দেয়।
4. বিলাসবহুল ক্রুজ: চমৎকার ডাইনিং, বিনোদন, এবং বিলাসবহুল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে হাই-এন্ড ক্রুজ।
দর্শনীয় স্থান
একটি গোয়া ক্রুজ সাধারণত বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গন্তব্য কভার করে, যার মধ্যে রয়েছে:
1. মুরমুগাও হারবার: গোয়ার প্রধান বন্দর, এটির আলোড়নপূর্ণ পরিবেশ এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য পরিচিত।
2. গ্র্যান্ডে দ্বীপ: আদিম সৈকত এবং স্ফটিক-স্বচ্ছ জল সহ একটি নির্জন দ্বীপ।
3. ব্যাট দ্বীপ: ঐতিহাসিক বাতিঘর এবং অত্যাশ্চর্য দৃশ্য সহ একটি মনোরম দ্বীপ।
4. আগুয়াদা ফোর্ট: 17 শতকের একটি দুর্গ যা আরব সাগরের শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য দেখায়।
অনবোর্ড অভিজ্ঞতা
গোয়া ক্রুজগুলি অনবোর্ড কার্যকলাপ এবং সুযোগ-সুবিধাগুলির একটি পরিসীমা অফার করে, যার মধ্যে রয়েছে:
1. ফাইন ডাইনিং: সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করার সময় স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক খাবারের স্বাদ নিন।
2. লাইভ মিউজিক এবং এন্টারটেইনমেন্ট: লাইভ পারফরম্যান্স উপভোগ করুন, ঐতিহ্যবাহী গোয়ান মিউজিক থেকে আধুনিক ডিজে পর্যন্ত।
3. ওয়াটার স্পোর্টস: স্ফটিক-স্বচ্ছ জলে স্নরকেলিং, কায়াকিং বা প্যাডেলবোর্ডিংয়ে ব্যস্ত থাকুন।
4. স্পা এবং সুস্থতা: ম্যাসেজ, যোগব্যায়াম এবং অন্যান্য স্পা চিকিত্সার সাথে আরাম করুন।
দেখার জন্য সেরা সময়
গোয়া ক্রুজের জন্য সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে মে, যখন আবহাওয়া মনোরম এবং সমুদ্র শান্ত থাকে। একটি মসৃণ ভ্রমণের জন্য বর্ষা মৌসুম (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) এড়িয়ে চলুন।
টিপস এবং অপরিহার্য
1. সেরা ডিল এবং প্রাপ্যতা সুরক্ষিত করতে আগাম বুক করুন।
2. হালকা, আরামদায়ক পোশাক এবং সানস্ক্রিন প্যাক করুন।
3. স্থানীয় রীতিনীতি এবং সামুদ্রিক জীবনকে সম্মান করুন।
4. অত্যাশ্চর্য দৃশ্য এবং স্মৃতি ক্যাপচার করতে আপনার ক্যামেরা ভুলবেন না.
উপসংহার
একটি গোয়া ক্রুজ একটি অনন্য এবং অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যা আপনাকে শৈলী এবং আরামে ভারতের গ্রীষ্মমন্ডলীয় উপকূলরেখা অন্বেষণ করতে দেয়। এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে, গোয়া একটি আরামদায়ক এবং সমৃদ্ধ ক্রুজের জন্য উপযুক্ত গন্তব্য। আপনি রোম্যান্স, অ্যাডভেঞ্চার বা কেবল একটি আরামদায়ক পথের সন্ধান করছেন না কেন, একটি গোয়া ক্রুজে প্রত্যেকের জন্য কিছু না কিছু রয়েছে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হিসেবে কলকাতার প্রতিষ্ঠা : একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ।।।

আগস্ট 1, 1774, ভারতীয় ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত করে, কারণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনে কলকাতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী পরিণতি হয়েছে, যা আগামী শতাব্দীর জন্য ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ল্যান্ডস্কেপের গতিপথকে রূপ দিয়েছে।

পটভূমি—-

18 শতকের গোড়ার দিকে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, একটি ব্রিটিশ ট্রেডিং কোম্পানি, ভারতে একটি শক্তিশালী পা স্থাপন করেছিল। কোম্পানির প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে বাণিজ্য করা, কিন্তু শীঘ্রই এর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায় এবং এটি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। কোম্পানির সামরিক বিজয়, বিশেষ করে 1757 সালের পলাশীর যুদ্ধ, এর অবস্থানকে দৃঢ় করে এবং এটি ভারতের বড় অংশের প্রকৃত শাসক হয়ে ওঠে।
একটি মূলধন জন্য প্রয়োজন
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে একটি কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কোম্পানির প্রাথমিক ভিত্তি ছিল ফোর্ট উইলিয়াম, কলকাতা, কিন্তু শীঘ্রই এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে আরও আনুষ্ঠানিক মূলধনের প্রয়োজন ছিল। কলকাতার পছন্দ ছিল কৌশলগত, কারণ এটি হুগলি নদী এবং বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের প্রস্তাব দিয়েছিল, ব্রিটেনের সাথে বাণিজ্য ও যোগাযোগের সুবিধা প্রদান করেছিল।

কলকাতাকে রাজধানী ঘোষণা
1774 সালের 1 আগস্ট, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আনুষ্ঠানিকভাবে কলকাতাকে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ঘোষণা করে। এই সিদ্ধান্তটি ব্রিটিশ সরকার অনুমোদন করে এবং কলকাতা কোম্পানির প্রশাসনের ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত হয়। সরকারি ভবন, রাস্তা এবং অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে শহরটির নতুন অবস্থাকে সমর্থন করার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
রাজধানী হিসেবে কলকাতার প্রভাব
রাজধানী হিসেবে কলকাতা প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিল:
1. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: কলকাতা একটি প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল, কোম্পানির শাসনামলে বাণিজ্যের উন্নতি ঘটে। শহরের অর্থনীতি বৃদ্ধি পায় এবং এটি শিল্প ও উদ্যোক্তাদের কেন্দ্রে পরিণত হয়।
2. রাজনৈতিক কেন্দ্রীকরণ: কলকাতা রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল, কোম্পানির প্রশাসন ভারতের বৃহৎ অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে। এটি একটি আরও কেন্দ্রীভূত শাসন কাঠামোর দিকে পরিচালিত করে, যেখানে কলকাতা ছিল স্নায়ু কেন্দ্র।
3. সাংস্কৃতিক বিনিময়: রাজধানী হিসেবে কলকাতার মর্যাদা ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে সহজতর করেছে। ব্রিটিশ এবং ভারতীয় সংস্কৃতি একে অপরকে প্রভাবিত করে শহরটি ধারণার একটি গলে যাওয়া পাত্রে পরিণত হয়েছিল।
4. নগরায়ন: কলকাতার বৃদ্ধি দ্রুত নগরায়নের দিকে পরিচালিত করে, যেখানে ভারত জুড়ে মানুষ অর্থনৈতিক সুযোগের জন্য শহরে চলে আসে। এটি শহরের জনসংখ্যা এবং সামাজিক ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করেছে।

উপসংহার—

1774 সালের 1 আগস্ট ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হিসেবে কলকাতাকে ঘোষণা ভারতীয় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়কে চিহ্নিত করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে শহরের বৃদ্ধি ও বিকাশের সুদূরপ্রসারী পরিণতি হয়েছে, যা ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক গতিপথকে রূপ দিয়েছে। আমরা যখন এই ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতিফলন করি, তখন আমরা ভারতের অতীতের জটিল এবং বহুমুখী প্রকৃতি এবং শক্তি, সংস্কৃতি এবং বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসাবে কলকাতার স্থায়ী উত্তরাধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিই।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

স্কাউট স্কার্ফ দিবস : একতা এবং সাহসিকতার প্রতীক।।।।।

1লা আগস্ট সারা বিশ্বের স্কাউটদের জন্য একটি বিশেষ দিন – স্কাউট স্কার্ফ দিবস। এই দিনটি আইকনিক স্কার্ফকে উৎসর্গ করা হয় যা স্কাউটিং ইউনিফর্মের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এবং সেই মূল্যবোধ ও নীতির প্রতীক যা স্কাউটিং মূর্ত করে।

স্কাউট স্কার্ফ ইতিহাস—

স্কাউট স্কার্ফের শিকড় স্কাউটিংয়ের প্রাথমিক দিনগুলিতে রয়েছে, যখন স্কাউটিং আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা লর্ড রবার্ট ব্যাডেন-পাওয়েল বোয়ের যুদ্ধে ম্যাফেকিং অবরোধের সময় তার ইউনিফর্মের অংশ হিসাবে একটি স্কার্ফ পরতেন।

স্কার্ফটি মূলত শত্রু থেকে বন্ধু সনাক্ত করার একটি ব্যবহারিক মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল, কিন্তু শীঘ্রই এটি স্কাউটিং আন্দোলন এবং এর মূল্যবোধের প্রতীক হয়ে ওঠে।
প্রথম স্কাউট স্কার্ফগুলি সুতি বা সিল্কের তৈরি এবং একটি সাধারণ গিঁটের নকশা বৈশিষ্ট্যযুক্ত ছিল। সময়ের সাথে সাথে, স্কার্ফের নকশা বিকশিত হয় এবং বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থা তাদের নিজস্ব অনন্য ডিজাইন এবং রঙ গ্রহণ করতে শুরু করে। আজ, স্কাউট স্কার্ফ স্কাউটিং ইউনিফর্মের একটি অপরিহার্য অংশ এবং সারা বিশ্বে স্কাউটরা এটি পরিধান করে।
স্কাউট স্কার্ফের তাৎপর্য
স্কাউট স্কার্ফ শুধু এক টুকরো কাপড়ের চেয়ে বেশি; এটি স্কাউটিং আন্দোলনের মূল্যবোধ এবং নীতির প্রতিনিধিত্ব করে। স্কার্ফ একটি প্রতীক:
1. ঐক্য: স্কাউট স্কার্ফ বিশ্বজুড়ে স্কাউটদের ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, স্কার্ফ একটি সাধারণ সুতো যা স্কাউটদের একত্রে আবদ্ধ করে।
2. অ্যাডভেঞ্চার: স্কার্ফ স্কাউটিং এর দুঃসাহসিক চেতনার প্রতীক। স্কাউটরা বাইরের প্রতি তাদের ভালবাসা এবং নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে তাদের ইচ্ছার জন্য পরিচিত।
3. পরিষেবা: স্কার্ফ স্কাউটদের তাদের সম্প্রদায়ের সেবা এবং বিশ্বে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে প্রতিশ্রুতির প্রতিনিধিত্ব করে।
4. নেতৃত্ব: স্কার্ফ নেতৃত্ব এবং দায়িত্বের প্রতীক। স্কাউটরা যারা স্কার্ফ পরিধান করে তারা উদাহরণ দিয়ে নেতৃত্ব দেবে এবং অন্যদেরও একই কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা করা হয়।
স্কাউট স্কার্ফ দিবস উদযাপন করা হচ্ছে
প্রতি বছর ১লা আগস্ট স্কাউট স্কার্ফ দিবস পালিত হয়। এই দিনে, সারা বিশ্বের স্কাউটদের গর্ব করে তাদের স্কার্ফ পরতে এবং #ScoutScarfDay হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের স্কাউটিং অ্যাডভেঞ্চারের ছবি এবং গল্প শেয়ার করতে উৎসাহিত করা হয়।
স্কাউটিং সংস্থা এবং দলগুলি বিভিন্ন উপায়ে স্কাউট স্কার্ফ দিবস উদযাপন করতে পারে, যেমন:
1. আন্দোলনে নতুন স্কাউটদের স্বাগত জানাতে স্কার্ফ বাঁধার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
2. স্কার্ফ-থিমযুক্ত গেম এবং ক্রিয়াকলাপ সংগঠিত করা, যেমন স্কার্ফ বাঁধা প্রতিযোগিতা এবং স্কার্ফ-থিমযুক্ত বাধা কোর্স।
3. স্কাউটিং অ্যাডভেঞ্চারের গল্প এবং ফটো শেয়ার করা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের উপর স্কাউটিং এর প্রভাব।
4. স্কাউটদের স্কুলে স্কার্ফ পরতে বা স্কাউটিং আন্দোলনের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে উৎসাহিত করা।
উপসংহার
স্কাউট স্কার্ফ স্কাউটিং আন্দোলন এবং এর মূল্যবোধের একটি শক্তিশালী প্রতীক। স্কাউট স্কার্ফ দিবসে, সারা বিশ্বের স্কাউটরা তাদের ভাগ করা পরিচয় এবং বিশ্বে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে প্রতিশ্রুতি উদযাপন করতে একত্রিত হয়। আপনি একজন স্কাউট বা আন্দোলনের একজন সমর্থকই হোন না কেন, 1লা আগস্ট হল আপনার স্কার্ফ গর্বের সাথে পরিধান করার এবং স্কাউটিং মূর্ত হওয়া দুঃসাহসিক কাজ এবং সেবার মনোভাব উদযাপন করার একটি দিন।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

করম উৎসব – লোকসংস্কৃতির অঙ্গ কলমেঃ দিলীপ রায়

করম উৎসব – লোকসংস্কৃতির অঙ্গ
কলমেঃ দিলীপ রায় ( ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)
করম প্রধানত সৃষ্টির উৎসব, সৃজনের উৎসব । শরতের আগমনে শস্য ও সমৃদ্ধি কামনায় করম পরব বা করম উৎসব । ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশী বা পার্শ্ব একাদশীতে করম উৎসব পালিত হয় । এই বছর অনুষ্ঠিত হবে ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ । এই পরবের মূল আকর্ষণ হলো জাওয়া গান (অনেকে ‘জাওয়া’ বানান ‘যাওয়া’ লিখে থাকেন) । বলা চলে, গানগুলো লোকসাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গ ।
এবার আসছি জাওয়া কি ? সেটা আমাদের জানা দরকার । “জাওয়া শব্দটা নাকি ‘জাত’ শব্দ থেকে এসেছে । বীজের অঙ্কুরোদ্‌গম বা চারার ‘জাত’ বা জন্ম থেকে এইরকম নামকরণ হয়ে থাকতে পারে । শব্দটি “জাওয়া” হবে, নাকি “যাওয়া” হবে , সেটা নিয়েও মতোভেদ রয়েছে । যাই হোক “জাওয়া” হচ্ছে একটি শস্য উৎসব । আবার শস্য বীজের অঙ্কুরোদ্‌গমেরও অনুষ্ঠান বলা চলে । একমাত্র কুমারী মেয়েরাই এই অনুষ্ঠান পালন করে থাকে । ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশীর এক সপ্তাহ আগে এই অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে ।
এবার আসছি করম পরব প্রসঙ্গে ।
করম পরব ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, আসাম, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং বাংলাদেশ ও নেপালে একটা ফসল কাটার উৎসব । এই উৎসবে করম দেবতার উপাসনা করা হয় । যিনি হচ্ছেন কিনা শক্তি, যুব ও যৌবনের দেবতা । করম পরব পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরুলিয়া জেলা, ঝাড়্গ্রাম জেলা, বাঁকুড়া জেলা, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কুড়মি, ভূমিজ, বৈবা, মুণ্ডা, রাজোয়াড়, সরাক, লোহার বাউরি, বীরহড়, বীরনিয়া, খেরওয়ার, হো, খেড়িয়া, শবর, কোড়া মাহালি, পাহাড়িয়া, হাড়ি, বাগদি, বেদে, ঘাসি, লোধা ও বৃহৎ জনগোষ্ঠী সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও, প্রভূতি সম্প্রদায়ের জঙ্গলভিত্তিক ও কৃষিভিত্তিক লোক উৎসব । তবে কুড়মি সমাজে এর স্বীকৃতি, মান্যতা ও ব্যাপকতা উল্লেখযোগ্য ।
প্রকৃতির পুজা ও উর্বতার উৎসব । এই করম পরব প্রায় সাতদিন ধরে উদযাপন হয় । কুমারী কন্যারা নিষ্ঠার সঙ্গে সাতদিন ধরে ব্রত পালন করেন, করম গাছের ডাল পুজা করেন এবং বপন করা হয় ভুট্টার বীজ । অঙ্কুরিত ভুট্টার চারা বা ‘জাওয়া’কে উর্বতার প্রতীক হিসাবে দেখা হয় । মূলত এই করম উৎসবটি আদিবাসী ও সাঁওতাল জনজাতিদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় । করম পুজা ঝুমুর গান, “আজরে করম রাজা ঘরে দুয়ারে, কালরে করম রাজা কাশ নদীর পারে” ।
ভাই বোনের গভীর ভালবাসার কথা জাওয়া গান গুলোতে বারবার ফুটে উঠে । দাদা ও ভাইয়ের সঙ্গে কাটানো সুখের মিহূর্তগুলো বোনকে খুব পীড়া দেয় । তাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরী হলে, মিথ্যাই সাত্ত্বনা দিতে বধূটি বলে ওঠে – “আমারি জনম পরের ঘর ।“ ভাই তখন সান্ত্বনা দেয় । সেই গান মেয়েরা গেয়ে ওঠে —
“আমি কি লিখ্যেছি বহিন বিধাতা লিখ্যেছে রে
বিধাতা লিখেছে পরের ঘর ।
পরেরই ঘরে বহিন খাটি লুটি খাও রে
রাখি দিহ বাপের ভায়ের নাম ।“
মূলত গ্রামের অবিবাহিত কুমারী মেয়েরাই এই ‘করম’ ঠাকুরের উপাসক । শুক্লা একাদশীর সাতদিন আগে কুমারী মেয়েরা একত্রে বাঁশের বোনা ‘টুপা’ (ডালা) এবং বিভিন্ন ধরনের শস্যবীজ নিয়ে জড়ো হয় পার্শ্ববর্তী কোনো নদী, পুকুর বা জলাশয়ে । সেখানে প্রত্যেকে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে সদ্যস্নাত ভিজে কাপড়ে নিজের নিজের টুপায় নদী খাতের বালি ভর্তি করে বাড়ি থেকে আনা সেই শস্যবীজগুলো বোনে । তারপর পরস্পরের হাত ধরে টুপা’কে কেন্দ্র করে গোল হয়ে বিভিন্ন ধরনের আদিবাসী গান গাইতে থাকে ।
এরপর শুরু হয় এই জাওয়া টুপাগুলোর পরিচর্যা । দিন দুয়েক পরেই বীজগুলির অঙ্কুরোদ্‌গম হয় । জাওয়া পাতানো কুমারী মেয়েরা, জাওয়ার শুদ্ধতা বজায় রাখার নিরিখে সারা সপ্তাহ ধরে পালন করে কিছু রীতি নীতি । যেমন – একদিন তারা শাক খায় না, খাটিয়ায় ঘুমোয় না, মাথায় তেল দেয় না, চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ায় না, । এছাড়াও প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় মেয়েরা নিজ নিজ ডালাসহ গ্রামের এক জায়গায় জড়ো হয় । জাওয়াকে কেন্দ্র করে সারা সন্ধ্যা চলে করম গান ও নাচ ।
সন্ধ্যাবেলায় গ্রামের লায়া (পুরোহিত) এক জায়গায় করম ডাল পুঁতে করম ঠাকুরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন । তৈরি হয় পুজোর বেদী । গ্রামের ব্রতকারী কুমারী মেয়েরা “করম ডালায়” পুজোর অর্ঘ্যরূপে মাটির প্রদীপ, শাল পাতার তৈরি থালায় নদীর বালি, ঘি, গুড়, আতপ চাল, মধু, ধূপ, সিঁদুর, একগাছি ধান আর ‘কাঁকুড়’, ইত্যাদি নিয়ে সমবেত হয়ে পুজো করে পরম ঠাকুরের । কামনা করে সোহাগী স্বামী পাওয়ার ও সন্তানবতী হওয়ার ।
এবার আসছি করম পুজার প্রচলনের ইতিহাস প্রসঙ্গে । এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, করম পুজা প্রচলনের ইতিহাস নিয়ে মতভেদ রয়েছে । একটি মত সংক্ষেপে নিম্নরূপঃ
কথিত আছে, কর্ম ও ধর্ম দুই ভাই । দু’জনেই খুব পরিশ্রমী ও দয়ালু । কিছু দিন পর কর্মের বিয়ে হয়ে গেলো । তাঁর স্ত্রী ছিল অধার্মিক এবং অন্যদের বিরক্ত করার মানসিকতা । আর এতে রাগান্বিত হয়ে কর্ম বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন ।
তিনি চলে যেতেই সকলের কর্মফল ও ভাগ্যও চলে গেলো এবং মানুষের দুঃখ দুর্দশা বাড়তে লাগলো । মানুষের সমস্যা সহ্য করতে না পেরে ধর্ম ভাইয়ের খোঁজে বেরিয়ে গেলেন । কিছু দূর হাঁটার পর তাঁর জল তেষ্টা পেলো এবং দেখলেন, আশেপাশে কোথাও জল নেই । দূরে একটা নদী দেখতে পেলেন এবং সেখানে গিয়ে দেখলেন, জল নেই । নদী ধর্মকে বলল, তোমার ভাই এখান থেকে চলে যাওয়ার পর আমাদের কর্মফল নষ্ট হয়ে গিয়েছে । গাছের সব ফল নষ্ট ! তাঁকে খুঁজে পেলে বলো, তাঁর কাছে আমাদের এই সমস্যার সমাধান চাই । তারপর আরও একজন মহিলার সঙ্গে তাঁর দেখা এবং তিনি বললেন, কর্ম চলে যাওয়ার পর থেকে রান্নার পরে পাত্রগুলি হাতে লেগে যেতে শুরু করে, এর সমাধান কী ? আপনি কর্মকে জিজ্ঞাসা করুন এবং তাঁকে সমাধান বলতে বলুন । ধর্ম আরও এগিয়ে গেলেন । একটি মরুভূমিতে পৌঁছালেন । সেখানে তিনি দেখলেন, কর্ম গরমে অস্থির । তাঁর শরীরে ফোসকা পড়েছে এবং তিনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন । তাঁর অবস্থা অসহনীয় । ধর্ম কর্মকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন । তখন উভয় ভাই বাড়ি ফিরে যেতে লাগলেন । ফেরার সময় সেই মহিলার সঙ্গে দেখা । কর্ম তাঁকে বললেন, ঐ মহিলা কখনও কোনও ক্ষুধার্ত মানুষকে খাওয়াননি, তাই তার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে । সুতরাং এটি তাঁর কর্মফল । একইভাবে সকলকে নিজের কর্মফলের কথা জানানোর পর কর্ম বাড়িতে ফিরে এসে পুজা করেন । তারপর সমগ্র এলাকার লোকেরা আবার সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলেন এবং সমৃদ্ধি ফিরে আসল । সেই স্মরণে করম পরব পালিত হয় ।
# আর একটি মত হচ্ছেঃ
এক সময় সাত ভাই ছিল যারা কৃষিকাজে কঠোর পরিশ্রমী । এমনকি তাঁদের দুপুরের খাওয়ারও সময় থাকতো না । তাই, স্ত্রীরা প্রতিদিন তাঁদের দুপুরের খাবার মাঠে নিয়ে যেতেন । একবার এমন হয়েছিল, তাঁদের স্ত্রীরা দুপুরের খাবার নিয়ে মাঠে যাননি । সাংঘাতিক ক্ষুধার্ত ছিলেন তাঁরা । সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দেখেন তাঁদের স্ত্রীরা বাড়ির উঠোনে করম গাছের ডালের পাশে নাচ-গান করছেন । এটা দেখে তাঁরা ক্রোধে অগ্নিশর্মা । এক ভাই তাঁর মেজাজ হারিয়ে ফেলে করমের ডাল ছিনিয়ে নিয়ে নদীতে ফেলে দিলেন । করম দেবতাকে অপমান করা হয়েছিল । ফলে তাঁদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে এবং অনাহারে তাঁদের দুর্দশা অবস্থা । একদিন একজন ব্রাহ্মণ (পুরোহিত) তাদের কাছে এলেন এবং সাত ভাই পুরো ঘটনাটা তাঁকে খুলে বললেন । এরপর সাত ভাই করম ঠাকুরের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে চলে যান। তাঁরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে থাকেন এবং এইভাবে খোঁজার পর একদিন তাঁরা করম গাছের সন্ধান পান । পরবর্তীকালে, করম ঠাকুরের পুজো করেন । তারপর তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থার ক্রমশ উন্নতি ঘটতে থাকে । সুখ ও শান্তি ফিরে আসে ।
এলাকার মানুষ সহ কর্ম ও ধর্ম সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলেন এবং সমৃদ্ধি ফিরে আসল । সেই স্মরণে করম পরব পালিত হয় । বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে করম পার্বণ একটি অন্যতম । এটি গ্রাম বাংলার এক অজানা অথচ বিশেষ করে আদিবাসী জনগোষ্ঠী, কুড়মিদের চা-বাগানের মানুষদের সু-প্রচলিত করম উৎসব । এই বছরও করম পুজাকে গুরুত্ব দিয়ে রাজ্য সরকার ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ছুটি ঘোষণা করেছেন ।
পরিশেষে বলা যায়, করম পরব আদিম জনগোষ্ঠীর ধারক ও বাহক । এর মধ্যে অন্যতম কুড়মি, সাঁওতাল, ভূমিজ, মুন্ডা, ওঁরাও, রাজোয়াড়, ডোম, ঘাসি প্রভৃতি জনগোষ্ঠী । যদিও উল্লেখিত, কুড়মি সমাজের মধ্যে এর স্বীকৃতি, মান্যতা ও ব্যাপকতা অবর্ণনীয় । আদিম জনগোষ্ঠী প্রায় সকলেই প্রকৃতির পুজারী । ভাল করে এই উৎসবের পুজানুষ্ঠান ও পালনবিধি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এটা একটা বৃক্ষ পুজার অনুষ্ঠান । বৃক্ষকে জীবন্ত আত্মার অধিকারী হিসাবে স্বীকার করে এবং তাকে কেন্দ্র করে বিশ্বাস-সংস্কার, আচার-অনুষ্ঠানের এক বিস্ময়কর সমাবেশ এবং শুদ্ধ ভক্তির পরম্পরা ! (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত)
এ১০এক্স/৩৪, কল্যাণী (পিন-৭৪১২৩৫) / ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও শ্রাবণ মাসের মহিমা : স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)।

ওঁ নমঃ শ্রীভগবতে প্রনবায়!

আমাদের এই সুন্দর মূল্যবান মনুষ্য জীবনে পবিত্র শ্রাবণ মাস সত্য সনাতন ধর্মে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছর শিবপুজো করা হলেও এই শ্রাবণ মাসে দেবাদিদেব মহাদেবকে নিষ্ঠাভরে ও নিয়ম মেনে পুজো করা হয়, বিশেষভাবে সোমবার। কারণ, এটি দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ও বর্ষার আগমনের সাথে যুক্ত। শ্রাবণ মাস পঞ্জিকার চতুর্থ মাস এবং এটি ভগবান শিবের মাস হিসেবে পরিচিত। এই মাসে শিবের পূজা ও উপাসনা করা হয় এবং এটি সত্য সনাতন ধর্মানুসারে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শ্রাবণ মাসের প্রতিটি সোমবার ভক্তদের কাছে শিবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত এবং এই দিনে উপবাস ও পূজা করার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। শ্রাবণ মাস দেবাদিদেব মহাদেবের প্রিয় মাস হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এই মাসে শিবের পূজা করলে বিশেষ ফল লাভ করা যায়।

পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, শ্রাবণ মাসেই সমুদ্র মন্থনের ঘটনা ঘটেছিল। সমুদ্র উত্থিত হলাহল বিষ থেকে গোটা ধরিত্রীকে রক্ষা করার জন্য স্বয়ং মহাদেব নিজ কণ্ঠে হলাহল বিষ ধারণ করেছিলেন। বিষের প্রভাবে মহাদেবের কন্ঠ নীল হয়ে ওঠে। এই কারণেই মহাদেবের অপর নাম নীলকণ্ঠ। বিষের তীব্রতা হ্রাস করার জন্য স্বর্গের দেবতারা শিবের মাথায় গঙ্গাজল ঢালতে থাকেন। সেই কারণেই শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় গঙ্গাজল প্রদান করা হয়। আর তাতেই আদিদেব মহাদেবের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন ভক্তরা। আরো উল্লেখ রয়েছে, সতীর দেহত্যাগের পর দেবী পার্বতী রূপে ফের একবার জন্ম নেন। শিবকে আবার স্বামীরূপে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে সাধনা করে শিবকে সন্তুষ্ট করলে পার্বতীকে বিবাহ করতে রাজি হন মহাদেব। আর সেই শুভমুহূর্ত ঘটে সোমবার শ্রাবণ মাসেই। তারপর শিবরাত্রির দিনেই শিব-পার্বতীর পুনর্মিলন ঘটেছিল। এই কারণেই শ্রাবণ মাসকে শিবের মাস বলা হয়। সনাতন ধর্ম অনুসারে শিব হলেন আদি দেবতা। সেই কারণে তাঁকে দেবাদিদেব মহাদেব বলা হয়।

অনেক শিবভক্ত এই মাসে প্রতিটি সোমবার শিবের উদ্দেশ্যে এবং প্রতি মঙ্গলবার দেবী পার্বতীর উদ্দেশ্যে উপবাস করেন। শ্রাবণ মাসে ভক্তিভরে শিবের পূজা করলে ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরণ হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। শ্রাবণ মাসে বহু মানুষ বিভিন্ন শিব মন্দিরে তীর্থযাত্রা করেন এবং শিবের মাথায় জল ঢেলে পুণ্য অর্জন করেন। সনাতন ধর্মের মতে, শিবলিঙ্গের অর্থ হল অনন্ত। অর্থাৎ, যাঁর সূচনা বা অন্ত নেই। শিবলিঙ্গ আসলে শিব ও পার্বতীর আদি-অনাদি একক রূপ। শিবলিঙ্গ পুরুষ ও প্রকৃতির সাম্যের প্রতীক। স্ত্রী বা পুরুষ কেউই এই সমাজে একা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না, তা-ই জানিয়ে থাকে শিবলিঙ্গ। শাস্ত্র অনুযায়ী ভারতবর্ষ তথা সারা পৃথিবীতে অনেক শিবলিঙ্গ আছে মানব নির্মিত। কেবলমাত্র ১২ টি শিবলিঙ্গ জ্যোতির্লিঙ্গ ও স্বয়ম্ভূ।

আমার প্রাণদেবতা যুগাচার্য্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ সাক্ষাৎ শিবস্বরূপ, চলমান শিব। গৃহদেবতা নীলরুদ্রের আশির্বাদে শিব-অবতার রূপে শিবশিশুর, দেবশিশুর ধরাধামে আবির্ভাব। পরবর্তিকালে সাক্ষাৎ দেবাদিদেব মহাদেব রূপে আত্মপ্রকাশ হয়। সত্য সনাতন ধর্মে গুরুদেব ভগবান প্রাণদেবতা নিজ নিজ পিতামাতার মত প্রত্যেকের হৃদয় সিংহাসনে বিরাজ করেন। শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ আপনাদের সকলের শিরে বর্ষিত হোক… এই প্রার্থনা করি…ওঁ নমঃ শিবায়…
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

অ্যাপোলো 15 : চাঁদে একটি গ্রাউন্ডব্রেকিং মিশন।।।

31 জুলাই, 1971, মহাকাশ অনুসন্ধানের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল যখন অ্যাপোলো 15 মহাকাশযান চাঁদে যাত্রা শুরু করেছিল। এই মিশনটি ছিল চতুর্থ মানব চান্দ্র অবতরণ এবং লুনার রোভিং ভেহিকল (LRV) ব্যবহার করা প্রথম, যা নভোচারীদের অভূতপূর্ব গতিশীলতার সাথে চাঁদের পৃষ্ঠ অন্বেষণ করতে সক্ষম করেছিল।

ক্রু এবং মিশনের উদ্দেশ্য—–
Apollo 15 ক্রু তিনজন অভিজ্ঞ মহাকাশচারী নিয়ে গঠিত: ডেভিড স্কট (মিশন কমান্ডার), জেমস আরউইন (লুনার মডিউল পাইলট), এবং আলফ্রেড ওয়ার্ডেন (কমান্ড মডিউল পাইলট)। তাদের মিশনের উদ্দেশ্য ছিল:
1. হ্যাডলি রিলে অঞ্চলে একটি চন্দ্র অবতরণ সম্পাদন করুন।
2. বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এবং নমুনা সংগ্রহ করুন
3. পৃষ্ঠ অনুসন্ধানের জন্য LRV স্থাপন করুন
4. Apollo Lunar Surface Experiments Package (ALSEP) পরিচালনা করুন
মহাকাশযান এবং লঞ্চ
অ্যাপোলো 15 মহাকাশযান দুটি প্রধান উপাদান নিয়ে গঠিত: এন্ডেভার নামক কমান্ড এবং সার্ভিস মডিউল (সিএসএম) এবং ফ্যালকন নামক লুনার মডিউল (এলএম)। মহাকাশযানটি কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ কমপ্লেক্স 39A থেকে একটি Saturn V রকেটের উপরে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
চাঁদে যাত্রা—
পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করার পর, মহাকাশযান ট্রান্স-লুনার ইনজেক্ট করে এবং চন্দ্রের কক্ষপথে প্রবেশের আগে প্রায় 67 ঘন্টা মহাকাশে ভ্রমণ করে। ক্রুরা চন্দ্র অবতরণের প্রস্তুতির জন্য কক্ষপথের একটি সিরিজ পরিচালনা করেছিল।
চন্দ্র অবতরণ এবং সারফেস অপারেশন—–
2শে আগস্ট, স্কট এবং আরউইন তাদের স্পেসসুট পরে এবং কমান্ড মডিউল থেকে আলাদা হয়ে লুনার মডিউলে আরোহণ করেন। তারা চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করে, হ্যাডলি রিলে অঞ্চলে অবতরণ করে। ক্রু চাঁদের পৃষ্ঠে প্রায় 67 ঘন্টা কাটিয়েছে, তিনটি এক্সট্রাভেহিকুলার অ্যাক্টিভিটিস (ইভিএ) পরিচালনা করেছে।
LRV একটি গেম-চেঞ্জার হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে, যা মহাকাশচারীদের আরও বেশি দূরত্ব ভ্রমণ করতে এবং আগের মিশনের চেয়ে আরও বেশি ভূখণ্ড অন্বেষণ করতে দেয়। তারা নমুনা সংগ্রহ করেছে, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে।
ফিরতি যাত্রা—–
তাদের মুনওয়াক শেষ করার পর, স্কট এবং আরউইন লুনার মডিউলে ফিরে আসেন এবং কমান্ড মডিউলে ওয়ার্ডেনের সাথে মিলিত হয়ে চাঁদ থেকে উঠে যান। ক্রু কমান্ড মডিউলে ফেরত স্থানান্তরিত হয়, এবং লুনার মডিউলটি জেটিসন করা হয়।
মহাকাশযানটি 7 আগস্ট, 1971 সালে প্রশান্ত মহাসাগরে সফলভাবে স্প্ল্যাশ করে, একটি অত্যন্ত সফল মিশনের সমাপ্তি চিহ্নিত করে।
Apollo 15 এর উত্তরাধিকার—
Apollo 15 অসংখ্য মাইলফলক অর্জন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:
1. LRV এর প্রথম ব্যবহার, যা বৃহত্তর পৃষ্ঠের গতিশীলতা সক্ষম করে
2. দীর্ঘতম চন্দ্র পৃষ্ঠ থাকার সময় (67 ঘন্টা)
3. চাঁদে পরিচালিত সর্বাধিক বিস্তৃত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা
4. ALSEP এর প্রথম স্থাপনা
মিশনটি অ্যাপোলো মহাকাশযানের ক্ষমতা প্রদর্শন করে এবং ভবিষ্যতের চন্দ্র ও গ্রহ অনুসন্ধানের পথ তৈরি করে।
উপসংহার—–
Apollo 15 ছিল একটি যুগান্তকারী মিশন যা মানুষের বুদ্ধিমত্তা, বৈজ্ঞানিক কৌতূহল এবং পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে অন্বেষণ করার সংকল্প প্রদর্শন করে। মিশনের সাফল্য চাঁদ এবং এর ভূতত্ত্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপকে চিহ্নিত করেছে এবং এর উত্তরাধিকার নতুন প্রজন্মের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং অনুসন্ধানকারীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

Share This