ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়। এই অন্দোলনে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে জীবন ঘোষাল প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। জীবন ঘোষাল ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
জীবন ঘোষাল ওরফে মাখনলাল ছিলেন একজন ভারতীয় স্বাধীনতা কর্মী এবং মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের একজন সদস্য, যেটি ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগারে অভিযান চালিয়েছিলেন।
বিপ্লবী কার্যক্রম—
ঘোষাল ব্রিটিশ ভারতের চট্টগ্রামের সদরঘাটে একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাখনলাল নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পিতার নাম যশোদা ঘোষাল। ছাত্রজীবনেই তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। ঘোষাল চট্টগ্রামে পুলিশের অস্ত্রাগার অভিযানে সক্রিয় অংশ নেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল মধ্যরাত্রে চট্টগ্রামের সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার মধ্যদিয়ে এই বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৮ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত চারদিন কার্যত স্বাধীন থাকে চট্টগ্রাম। মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে সংগঠিত এই বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক বিপ্লবী জীবন ঘোষাল। প্রয়োজনীয় অস্ত্র সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন এবং কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারে হামলা চালায় বিপ্লবীরা। পুলিশের অস্ত্রাগার দখলের জন্য গঠিত দলে ছিলেন জীবন ঘোষাল। তাঁরা সফলভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে সমর্থ হন। এই সময় অতিরিক্ত অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংসের নিমিত্তে আগুন লাগাতে গেলে হিমাংশু সেন আহত হন। তাঁকে নিরাপদে রেখে আসার জন্য গনেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, জীবন ঘোষাল ও আনন্দ গুপ্ত তাকে নিয়ে শহরে গেলে মূল দলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তাঁরা। অস্ত্রাগার দখলের পর সেখানে বিপ্লবীদের হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয় এবং ভারতীয় পতাকা উত্তোলন ও ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্য দিয়ে মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয় সামরিক সরকার। চট্টগ্রাম ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয় বীর চট্টলার গুটিকয় দামাল তরুণের অসীম সাহসী উদ্যোগে। তাঁদের এই বিদ্রোহ শোষণ-বঞ্চনার আঁধারে ঢাকা ভারতবাসীকে সূর্যোদয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিল।
অপারেশনের পর তিনি আরেক তরুণ বিপ্লবী আনন্দ গুপ্তের সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে কলকাতার দিকে পালিয়ে যান। গ্রুপের দুই সিনিয়র সদস্য, গণেশ ঘোষ এবং অনন্ত সিং তাদের যাত্রায় তাদের সঙ্গে ছিলেন। পুলিশ ফেনী রেলওয়ে স্টেশনে দলটিকে চ্যালেঞ্জ করলেও শেষ পর্যন্ত ঘোষাল ও অন্যরা একটি সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষের পর পালাতে সফল হয়। তিনি কলকাতা, মির্জাপুর গলিতে এবং হুগলি জেলার চন্দননগরে আশ্রয় নেন।
মৃত্যু—
পালানোর পর ঘোষাল আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিলেন। পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট ১৯৩০ সালের ১ সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দননগরে গোপন আস্তানায় আক্রমণ করেন এবং পরবর্তী যুদ্ধে ঘোষাল নিহত হন।বিপ্লবী জীবন ঘোষালও দেশের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনুপ্রাণিত করেছিল ।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।