1778 সালের 6 সেপ্টেম্বর, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি ছোট শহর হুগলিতে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল। প্রথম বাংলা ছাপাখানা স্থাপিত হয়, যা ভারতীয় মুদ্রণ ইতিহাসে একটি বড় মাইলফলক চিহ্নিত করে। এই প্রেসটি বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে জ্ঞান, শিক্ষা ও সাহিত্যের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং এর প্রভাব আজও অনুভূত হচ্ছে।
*পটভূমি*
18 শতকের মাঝামাঝি সময়ে, ইউরোপীয় উপনিবেশকারীরা ভারতে মুদ্রণ প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই চালু করেছিল। ভারতে প্রথম ছাপাখানা পর্তুগিজরা 1556 সালে গোয়ায় স্থাপন করেছিল। যাইহোক, এই প্রারম্ভিক প্রেসগুলি প্রাথমিকভাবে ইউরোপীয় উপনিবেশকারীদের চাহিদা এবং ইউরোপীয় ভাষায় মুদ্রিত উপকরণগুলি পূরণ করেছিল।
*একটি বাংলা প্রেসের প্রয়োজন*
বাংলা ভাষার উপকরণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা থেকে একটি বাংলা ছাপাখানার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বাংলা ছিল এই অঞ্চলে কথিত প্রাথমিক ভাষা, এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে শিক্ষা, সাহিত্য এবং ধর্মীয় গ্রন্থের প্রতি আগ্রহ বাড়ছিল। বাংলা প্রেসের অনুপস্থিতির অর্থ হল যে বাংলা ভাষার উপকরণ অন্যান্য ভাষায় যেমন সংস্কৃত বা ফারসিতে মুদ্রিত হতে হয়েছিল, যা তাদের অ্যাক্সেসযোগ্যতা সীমিত করেছিল।
*চার্লস উইলকিন্স এবং হুগলি প্রেস*
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা চার্লস উইলকিন্স প্রথম বাংলা ছাপাখানা স্থাপনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। উইলকিনস ছিলেন ভারতীয় ভাষার পণ্ডিত এবং বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি বাংলা প্রেসের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সহায়তায় 1778 সালে হুগলি প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন।
*প্রেস এবং এর কার্যক্রম*
হুগলি প্রেস আধুনিক মুদ্রণ প্রযুক্তিতে সজ্জিত ছিল, যার মধ্যে একটি হস্তচালিত প্রেস এবং বাংলা টাইপফেস ছিল। প্রেসটি উইলকিন্স এবং স্থানীয় মুদ্রকদের একটি দল দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল যারা মুদ্রণের শিল্পে প্রশিক্ষিত ছিল। প্রেসটি বাংলায় বই, পুস্তিকা এবং সংবাদপত্র সহ বিভিন্ন উপকরণ ছাপাত।
*হুগলি প্রেসের প্রভাব*
বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতিতে হুগলি প্রেসের উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল। এটা:
– *শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রসার*: সংবাদমাধ্যমটি বাংলা ভাষায় শিক্ষার উপকরণ সরবরাহ করে, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে শিক্ষার প্রসারে অবদান রাখে।
– *বাংলা সাহিত্যের প্রচার*: প্রেসটি কবিতা, নাটক এবং কথাসাহিত্য সহ বাংলা সাহিত্যকর্ম ছাপিয়েছিল, যা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রচারে সাহায্য করেছিল।
– *ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সুবিধা*: প্রেসটি বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর মধ্যে আদান-প্রদানের সুবিধার্থে ধর্মীয় গ্রন্থ এবং উপকরণ ছাপত।
*হুগলি প্রেসের উত্তরাধিকার*
হুগলি প্রেস ভারতীয় মুদ্রণ ইতিহাসে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল, এই অঞ্চলে অন্যান্য ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছিল। এর উত্তরাধিকার এতে দেখা যায়:
– *বাংলা সাহিত্যের বৃদ্ধি*: প্রেস বাংলা সাহিত্যের বৃদ্ধিতে অবদান রাখে, যা ভারতীয় সাহিত্য ঐতিহ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হয়ে ওঠে।
– *ভারতীয় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশ*: প্রেসটি ভারতীয় মুদ্রণ শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যা 19 এবং 20 শতকে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল।
*উপসংহার*
1778 সালের 6 সেপ্টেম্বর হুগলিতে স্থাপিত প্রথম বাংলা ছাপাখানা ছিল ভারতীয় মুদ্রণ ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসারে সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং এর প্রভাব আজও অনুভূত হচ্ছে। আমরা যখন এই মাইলফলকটি উদযাপন করি, তখন আমরা ভারতীয় মুদ্রণ ইতিহাস এবং বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে চার্লস উইলকিন্স এবং হুগলি প্রেসের অবদানকে স্বীকৃতি দিই।