Categories
কবিতা

চঞ্চল প্রাণ :::: রাণু সরকার।।।।

দোষ কীর্তন গাইবে সবাই জানি–
তবু প্রিয়া তোমার কাছেই বাজাবো আমার প্রিয় তানপুরা খানি।
হাত আমার শাসনে নেই, তাল হারিয়েছে তারে,
ধৈর্য্যহীন চিত্তচাঞ্চল্য প্রহার করে পাঁজরের দ্বারে,
প্রিয়া তুমি মান কোর না,বাঁধ তার বুঝে নিয়ে
চেষ্টা যেন সফল হয়, তোমার ভাবের উদ্রেক বিহ্বলতা দিয়ে।
বেজে উঠুক সে তার অন্তরে আছে কথা যত
গুঞ্জরণ রবে হৃদয়ের গোপন ব্যথা আছে যত,
করে করুক কানাঘুষা লোকে, লুটোপুটি হবে হেসে–
তোমার চোখের উজ্জ্বল জ্যোতি যেন মন্ত্র দিলো শেষে।

ভয় পেওনা প্রিয়া–
একান্তে যে কুটির আছে- ক্ষুদ্র জনপদের গায়,
উদাহৃদয় নদীর ধারের পথ আকাঁ বাঁকা,
চারিধারে বনজাত ঝাউ তমালের শাখা।
খুব একটা মানুষের সমাগম নেই বলা যায়-
কি জানি কে এই সময়ে সঙ্গীতের সুর বাজায়!
পথের পথিক পারবে বলতে লাগালো সুর;
কে দিলো তারে এ ব্যথার সুর তালে ছন্দে যে ভরপুর;
এ সুরের প্রধান নাই, নাই কোন অট্টালিকা বাদ্যযন্ত্র কি আছে,
আছে একটি ভক্তিমান থাকে দেবীর কাছে!

ওই নদীটির তীর–
বনজাত তমালের শাখে ঘনিয়ে আসে রাত গভীর;
মুক্ত থাকুক দ্বার, তুমি কি পাবে ভয়!
ভয় করোনা প্রিয়া আমার- পাহাড়া দেয় যে বেতনের বিনিময়!
দখিনের বাতাস ঢুকছে কুটিরে থরথর কাঁপছে প্রদীপ খানি,
ধৈর্য্যধরো এবেলায় সুর টানি!
হাতটি আমার অবস কেনো, বুকও কাঁপছে সাথে,
অশ্রুবর্ষণ কেনো, তবে উৎকণ্ঠিত বেদনাতে।
সজ্ঞা হারিয়ে নীরবে কখন রাত বেড়ে যায়
জোনাকির আলোতে ঝিঁঝি নৃত্য করে ,তানপুরা সজ্ঞা হারায়।
পাগল পবন যদি না থামে–
সহসা বিহানে যদি বর্ষা নামে;
এবার কুটিরের ফাঁকে পবন এলে প্রদীপ যাবে নিবে!
কেউ কি আছে দুয়ার খানি টেনে দেবে!

Share This
Categories
কবিতা

জমি : রাণু সরকার।

ভাবছি যত বিঘা দুঃখের জমি আছে কেনো ফাঁকা থাকবে?
আবাদ করবো কিছু শান্তির বীজরোপণ করে
অনেক কষ্ট করে রেখেছি শান্তির বীজ
হয়তো একটু দেরি হবে ফুল ফুঁটতে তবে মনে হয় ফুঁটবে।
আর কতদিন এভাবে ফাঁকা থাকবে যত আবর্জনায়
ভরে আছে পরিচ্ছন্ন করতে একটু সময় লাগবে।

কিছুদিনের জন্য শত্রু হয়ে মনে মনে অপ্রকাশ্যে ঘৃণা করে ক্ষতিসাধন করে জমিটাকে অগ্নিদগ্ধ করেছে।
অকেন গুলো বছর কালো হয়েছিলো ভেবেছিলাম এই জমিটিতে আর কিছুই করা সম্ভব না।
ধৈর্য্য শক্তি বারিয়ে উদ্যোগ নিলাম কেনোনা
মানুষের নানান কথা আর সহ্য করতে পারছিলাম না।

Share This
Categories
কবিতা

সৌম্যমূর্তি : রাণু সরকার।।

তুমি দৃশ্যমান তোমার আড়ালে সব আছে….
সুশৃঙ্খল ভাবে সাজানো।
কোন ঋতুর সাজে সেজেছো?
শাড়ি,গয়না নূপুর,দুল,ফিতে এই গুলো…
কোন ঋতুর বললে না তো?

এতো সুন্দর কারুকার্য রয়েছে সৌম্যমূর্তি জুড়ে।
ঘন ঝোপঝাড়ের ঘ্রাণ পাচ্ছি ভয়াবহ খাদ!
ঝর্ণার চঞ্চল নৃত্যের শব্দ দূর থেকে যেন ভেসে আসছে
কারা তালে ছন্দে মাদল বাজাচ্ছে কোথায়?

সৌম্যমূর্তি প্রচ্ছদের আড়ালে কোথায় যে খুঁজি?
কোথায় যেন দেখেছি ঠিক তোমার মতো উঁচু স্তূপ।
দিনের শেষে সূর্যাস্তের লাল আভা মাখছিলে গায়ে-
তুমি বিহানে এমন করে তাকালে মনে হলো সদ্য সূর্যমুখী!

কোথায় আছে ঐশ্বর্যের খিলান?
বলে দিলে প্রচ্ছদ উল্টে দেখতে পারি যা আমার হৃদয়বাসনা।
আবরণে রশ্মিরাগ সবটুকুই তুমি আমার মনে।

Share This
Categories
কবিতা

অতীত :: রাণু সরকার।।

হারিয়ে গেছে যে অতীত বারংবার আসে
আঘাত করবার জন্য।
আজ এতোটাই নিঃস্ব পরিমাপ করে দেখি,
শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করতে করতে হয়তো একদিন নিঃশেষ হবো-
মিলিত কন্ঠের আওয়াজ প্রাণনাশ করছে।
সূক্ষ্ম কিছু নাড়ি এখনো জেগে আছে ওদের ঘুম নেই-
ওরা শোকপ্রকাশ করে অশ্রুবিন্দুতে।
দিগন্ত, দূর অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত তমসা নতশিরে।
মন্দিরে কারা যেন প্রত্যহ বাজায় মন্দিরা।
হৃদয়বাসনা অনেক পূর্ণতা পেলো না শুধুই ব্যাঘাত।
উচ্চৈঃস্বরে পরমাত্মার কাছে প্রকাশ করা।
উৎকণ্ঠিত মন্থর গতিতে চলে জনশূন্য দেবালয়ে।

Share This
Categories
কবিতা

সাথী : শীলা পাল।।

তুই সঙ্গে থাকলে—-
আমার মনের
আকাশ কতো নীল হয়ে যায় !
পুষ্প বনে রঙের ঝর্ণা ,
বাতাসে চপলতার ইশারা ,
নদীর স্রোতে উচ্ছলতা
সব যেন আমাকে ঘিরে থাকে।

তোর স্পর্শে
পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে
যে ঝর্ণা তার সমস্ত উচ্ছ্বাস
আমি আমার অনুভূতি দিয়ে
বুঝতে পারি ,আমি গলতে থাকি
ওই ধোঁয়াশা জলকণার মতো।

তুই কাছে এলে
আমি স্থানুবৎ।আমার চোখ পলকহীন
ঝড়ের পূর্বাভাসের মতো,
এক নিস্তব্ধতা ঢেকে ফেলে।

একটু ছোঁয়ায় বৃষ্টি এসে
ভাসিয়ে নিয়ে যায়
বাঁধ ভাঙে প্লাবনের।

Share This
Categories
কবিতা

স্মৃতিচারণ : শীলা পাল।

আমাদের সেই প্লাটফর্ম টি
বড় সুন্দর ছিল
লালমাটির কাঁকর বিছানো একটা কর্গেটের শেড,
একটি পুরণো অশথগাছ, আর অনেক কালের একটি বটবৃক্ষ দু প্রান্তে প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে আছে।
আমার বন্ধুদের সঙ্গে নিত্যদিনের বৈকালিক ভ্রমনের একটি প্রিয় জায়গা।
রেলগাড়ির আসা যাওয়া তার তীব্র
হুইশেলের আওয়াজ আমাদের ভেতরটা নাড়িয়ে দিয়ে চলে যেত
যেন অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়ার একটা আহ্বান।
ভীষণ ভালোলাগার নেশায় তাদের চলে যাওয়া বুকের মধ্যে ঝমঝম আওয়াজ তুলতো।
এই রেশ মনের মধ্যে একটা নেশার মত থেকে যেত। আবার পরের দিনে
ছুটতাম সেই বাঁশির ডাকে।
রেলগাড়ি চলে যাওয়ার পর যে একটা শূন্যতা অনেকক্ষণ বুকের মধ্যে তা অনুভব করতাম।
কোনও কোনও দিনে
একপাশে ঝাঁকড়া ছাতিমগাছের নীচে হলুদ কাপড় পরা সাঁওতাল বর কনে প্যাসেঞ্জার ট্রেনের জন্য বসে থাকতো হাঁ করে দেখতাম।
শীতের দিনে শাল পিয়ালের জঙ্গলে পাতা ঝরার একটা শব্দ হাওয়ার সঙ্গে মিশে কেমন যেন মনকেমন করত।
এখনও সেই শৈশবের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়।জীবন টাই তো এখন সেই প্লাটফর্ম হয়ে আছে।কত জনের আসা যাওয়ার সাক্ষী হয়ে বসে আছি।
গাড়িতে হয়তো যখন চড়ে বসব তখন প্লাটফর্ম অনেক দূরে ছাড়িয়ে চলে যাব।

Share This
Categories
কবিতা

উর্বরা : শীলা পাল।

কুয়াশার আড়ালে তন্বী মেয়েটি আনমনা,
ভরন্ত ধানের ক্ষেতের মত গর্ভিনী পরবিনী
সোনারঙ উছলে পরে আড়াল সরে গেলে
ফসল ভরা যৌবন তার অহংকার।
চোখে তার কামনার উগ্র চাহনি
সুবাস ছড়িয়ে পড়ে দিক থেকে দিকে।
পৌষের অবেলায় গৃহস্থের উঠোনে
তার আরাধনা শুরু হয়
প্রদীপের আলোয় আলোকিত যুবতী দেবীরূপে
প্রতিষ্ঠিতা ।তন্বী মেয়েটি মাতৃ রূপে
কল্যাণী জননী র প্রশান্ত হাসি
সংসারে তার আলো কুয়াশা সরিয়ে দেয়।

Share This
Categories
কবিতা

উপলব্ধি : শীলা পাল।

কবে কখন চুড়ির রিনরিন বেজে ওঠা থেমে গেছে
বুঝি নি,
ধুলো মাখা পায়ে সবকিছু
ফেলে কখন এসেছি অন্য মনে, বুঝতে পারি নি।
তোমার প্রসন্ন হাসি আমার জীবনের প্রশান্তি এনে দিয়ে বলল
নিরাভরণ হলে তবেই প্রাপ্তি, ত্যাগের একটা একটা ধাপ এভাবেই এসে তোমাকে মুক্ত মনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে।
তোমার কাছে আকাশ নেমে আসবে একদিন
আমি অপেক্ষা করি।

Share This
Categories
কবিতা

প্রকৃতি : শীলা পাল।

গোধূলির আলোয় দেখলাম ঝরাপাতার উপর
বসে তুমি কেমন যেন সব হারিয়ে উদ্ভ্রান্ত।
কেন কেন
এই যে নিস্তব্ধ আকাশ তার ভাষাহীন সৌন্দর্য,
পাটে বসা সূর্যের কোমল রঙের বিচ্ছুরণ
তোমার হৃদয়ে একটা ভীষণ কিছু পাওয়ার মত
মনে হল না!
আমরা চোখ মেলে যদি একবার প্রকৃতিকে
ভালোবেসে ফেলতে পারি
দেখবে সে তোমার জন্য তার গোপন অন্দরের জায়গায়
বিছিয়ে রেখেছে ভালোবাসার গন্ধে মাখা চন্দনের
সুবাসিত শীতলপাটি,
তুমি তার উপর শুয়ে বিশ্রাম করবে ।
আসন্ন সন্ধ্যায় কাঁপা কাঁপা হাতে তোমার চোখে ,
তোমার সর্বাঙ্গে ছুঁয়ে যাবে কামরাঙা রঙের বিকেল
চুপি চুপি বলবে “এসো আমাকে ভালোবাস “তোমার সব হতাশা হারিয়ে যাবে।

Share This
Categories
কবিতা

বিজ্ঞান :: রাণু সরকার।।

মানুষ পৃথিবীর এক বিরলতম প্রজাতি যে অজ্ঞতাকে দূর করতে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারে ডুবে থাকে, অনেক চেষ্টার পর নতুন কিছু আবিষ্কার করে, তার সফলতায় রোমাঞ্চকর অনুভূতিও উপভোগ করে। আগুন জ্বালাবার কৌশল, কৃষিকাজ কিম্বা চাকার ব্যবহার মানব সভ্যতার আদি পর্বের যুগান্তকারী আবিষ্কার।

গবেষণা থেমে নেই চলতেই থাকে, কে তাকে আটকায়।আমরা বিজ্ঞানের জগতে ভেসে বেড়াই, যেমন দূরদুরন্তে পাড়ি দেই সেই বিজ্ঞানের ওপর ভর করে।

বাতাসের তরঙ্গে কথা বলা, মঙ্গলে বাড়ি খোঁজা, সমুদ্রের নিচে ট্রেনে চেপেও চলাচল করি দূরে বহুদূরে। বিজ্ঞানের সৃষ্টি বোঝা বড় দায়।

বৈজ্ঞানিকেরা গবেষণায় জয় করে বিশ্ব, তারা জয় করে কত কষ্ট করে আর আমরা সহজেই তা উপভোগ করি। বড় বড় রোগ এক্সরে মেশিনের সাহায্যে রোগ নির্ণয় হয়, ভালোমন্দ তাদের হাতে ছেড়ে আমরা নিশ্চিন্তে থাকি বসে, আমরা তাদের আবিষ্কারের ফল ভোগ করি কিন্তু মনে করি ক’বার তাদের অবদানের কথা, ব্যস্ত থাকি ভোগের আনন্দে।

বিজ্ঞানের সৃষ্টি মানবজীবনে যেমন অনেক স্বাচ্ছন্দ এনেছে তেমনি তার অপব্যবহার
মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়েও দিয়েছে। হিরোসিমা-নাগাসাকি আধুনিক সভ্যতার কলঙ্ক নয় কি!

Share This