Categories
প্রবন্ধ বিবিধ

ছাগ বলি বিতর্কে ফের আদালতের দ্বারস্থ পশুপ্রেমীরা, তবুও ঐতিহ্য ধরে রাখছে বোল্লা কালী পুজো।

বালুরঘাট, নিজস্ব সংবাদদাতা : – প্রত্যেক বছর মত এবছরও রাস পূর্ণিমার পরের শুক্রবার বালুরঘাটের বোল্লা এলাকায় উত্তরবঙ্গের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ এবং প্রাচীন ঐতিহ্যবাহি বোল্লা রক্ষাকালীর পুজো অনুষ্ঠিত এদিন শুরু হল। এই বোল্লা রক্ষাকালীর পুজো। পুজোর পাশাপাশি চারদিন মেলাও বসে। প্রতি বছর বোল্লা মায়ের পুজো ও মেলায় লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়।মেলা উপলক্ষে বসানো হয়েছে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প । মহিলা পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার, সাদা পোশাকের পুলিশ, পুলিশ আধিকারিক-সহ প্রায় দেড় হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়ে থাকে এই কদিন মেলাকে ঘিরে।স্বাভাবিক ভাবেই, মন্দির কমিটি এবং জেলা প্রশাসন ও পুলিশ মেলার নিরাপত্তা-সহ আগত ভক্তদের সুবিধার্থে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে ।পাশাপাশি প্রচুর সিসি ক্যামেরার মধ্যমে এই মেলাকে মুড়ে ফেলে

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। জেলার সদর শহর বালুরঘাট শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে বোল্লা গ্রামে অবস্থিত ঐতিহ্য ও মাহাত্ম্য সমৃদ্ধ রক্ষা কালী মাতা মন্দির। যা উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বোল্লা কালী পুজো ও মন্দির। এই মাতা বোল্লা কালী মাতা বলেই সুপ্রসিদ্ধ।

রাসপূর্ণিমার পরবর্তী শুক্রবারে মায়ের বাৎসরিক পুজো অনুষ্ঠিত হয় ও সোমবারে মায়ের বিসর্জন হয়। এই কয়েকদিন যাবত মায়ের পুজোকে ঘিরে বিশাল মেলা হয়।উত্তরবঙ্গের কোচবিহারের রাস মেলার পর এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম মেলা হিসেবে বিবেচিত।দুই দিনাজপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা ও রাজ্য, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও বহু মানুষ এই পুজো দেওয়ার পাশাপাশি মেলা দেখতে আসেন। পজোর দিন সারাদিন সারা রাত জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুন্যার্থীদের বোল্লাতে আসার জন্য বেসরকারি পরিবহন চলাচল করে থাকে।এর পাশাপাশি রেলের তরফে বালুরঘাট থেকে কলকাতাগামী ও শিলিগুড়িগামী এক্সপ্রেস ট্রেন গুলি অস্থায়ী ভাবে বোল্লার পাশ দিয়ে যাওয়া রেল লাইনে স্টপেজ দেওয়া হয়।সোমবার বিসর্জনের দিন বিশেষ করে পুজোকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয় বউ মেলা।

কথিত আছে, জনৈক এক ব্যক্তি মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুকুর থেকে মায়ের শিলাময় রূপটি উদ্ধার করেন ও প্রতিষ্ঠা করে নিত্য পূজা শুরু করেন। এই সময়ে মাকে ‘মরকা কালী’ বলে অভিহিত করা হত। প্রতি জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যায় হত মায়ের বিশেষ পূজা। এরপর ইংরেজ আমলে স্থানীয় জমিদার মুরারিমোহন চৌধুরী ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ঘটনাক্রমে বহু গ্রামবাসী সহ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তিনি মড়কা কালী মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন। তিনি বেকসুর খালাস পান। জ্যৈষ্ঠ মাস আসতে দেরি থাকায়; সেই সময় তিনি ধার্য করেন যে, রাস পূর্ণিমার পরবর্তী শুক্রবারে মায়ের পুজো করবেন। সেই থেকে দেবীর বাৎসরিক পুজো ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

বর্তমানে সাড়ে সাত হাত মাতৃমূর্তি পূজিত হন। কয়েক হাজার পাঁঠাবলি ও একটি মহিষ বলি হয়। প্রায় ১৪ কেজি সোনার গহনায় মায়ের প্রতিমা সজ্জিত হয়।মায়ের হাতের খড়গ থেকে পুরো শরীর পর্যন্ত সোনার গয়নায় মোড়া থাকে। পাশাপাশি বহুমুল্যের হীরের গহনাও মায়ের অংগে শোভা পায়।সোনা হীরে গহনা সব ভক্তদের দান।এছাড়াও বহু ভক্ত মানত করা ছোট ছোট কালী মূর্তিতে পূজা দেন ও বাতাসা নৈবেদ্য অর্পণ করেন। স্থানীয় মুসলিমরাও হিন্দুদের সাথে মায়ের উদ্দ্যেশ্যে পুজো দেন। বল্লভ মুখোপাধ্যায় বলে কোনো জমিদারের নাম থেকে অঞ্চলটির নাম হয় বোল্লা। বোল্লা গ্রামে অবস্থিত রক্ষা কালী মাতা ‘বোল্লা রক্ষা কালী’ বা ‘বোল্লা কালী’ নামে ভক্ত মহলে সুপ্রসিদ্ধ। আর সে থেকেই বোল্লা কালী মাতার পুজো হয়ে আসছে ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহ।

বোল্লা পুজোর অন্যতম ভোগ বাতাসা বা মিষ্টান্ন ভোগ। পুজোর কয়েক দিনে কয়েক হাজার কুইন্টাল বাতাসা বিক্রি হয়। জেলা সহ বাইরে থেকে বাতাসা বিক্রেতারা বোল্লা মেলায় পসরা সাজিয়ে বসেন।বোল্লার রক্ষাকালী মাতার পুজো উপলক্ষ্যে চলে বিশেষ কদমা ও বাতাসা লুট । বোল্লার বিখ্যাত-বাতাসা, কদমা, চিনির তৈরি বিভিন্ন পুতুল লুটের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেন ভক্তরা । লুটের সময় আঘাত থেকে বাঁচতে হেলমেট দিয়ে মাথা ঢেকে রাখে পুজো কমিটির সদস্যরা।
তবে বোল্লা মায়ের পুজোতে ভক্তরা মায়ের কাছে মানত করা মনের কামনা পুরন করার জন্য ছাগ বলি মানত করে থাকেন। পুজোর দিন কয়েক বছর আগেও হাজারের উপর ছাগ বলি দেওয়া হতো। কিন্তু বিগত তিন চার বছর আগে পুশুপ্রেমীরা মন্দির কমিটি ও ভক্তদের কাছে ছাগ বলি না দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তারপরেও অনেক ভক্ত তা না মানায় পশু প্রেমীদের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা হয়। কিন্তু তারপরেও পশু বলি বন্ধ করা যায় নি। এবারও পশুপ্রেমীরা ফের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।এখন দেখার এবার কি হয়।যদিও এই বিষয়ে মেলা কমিটির সদস্য গৌতম চক্রবর্তী জানান, বিষয়টি নিয়ে মন্দির কমিটিও উদ্বিগ্ন। তারা আদালতের নির্দেশ মেনেই সব করে থাকবেন।কিন্তু সব চেয়ে দরকার ভক্তদের এব্যাপারে সচেতন করা।

Share This
Categories
প্রবন্ধ বিবিধ

জেলাপরিষদ সভাধিপতি চিন্তামণি বিহার হাত ধরে বালুরঘাটে নতুন রাস্তা নির্মাণের শুভ সূচনা।

দক্ষিণ দিনাজপুর, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- প্রায় ১কোটি ৬১ লক্ষ টাকায় আজ বালুরঘাট ব্লকের চিঙ্গিসপুর-অমৃতখন্ড অঞ্চলের কুরমাইল থেকে হরিপুর পর্যন্ত প্রায় 4কিমি পিচ রিপিয়ারিং রাস্তার শুভ শিলান্যাস করলেন দঃদিনাজপুর জেলাপরিষদের সভাধিপতি চিন্তামণি বিহা, স্থানীয় জেলাপোরিষদের সদস্য অশোক কৃষ্ণ কুজুর, জেলাপরিষদ কর্মাধ্যক্ষা শ
দীপা দাস মণ্ডল,পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অরূপ সরকার সহ অনেকেই। বহুদিনের দাবি ছিল এই রাস্তাটির।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

নাটক নিয়ে দুটি কথা : দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪) ।

আমরা জানি, নাটক সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গ । নাটক জীবনেরই সুদৃশ্য রূপায়ণ । যাকে বলে নাটক জীবনের দর্পন । মঞ্চে অভিনেতা অভিনেত্রীদের সাহায্যে মানবজীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা যখন সংলাপের আশ্রয়ে দর্শকের সামনে উপস্থিত করা হয়, তখন নাটক । “নাটক” শব্দটির মধ্যে রয়েছে সত্যের ইঙ্গিত । নট, নাট্য, নাটক এই তিনটি শব্দের মূল হলো নট । আর নট্‌ অর্থ হলো নড়াচড়া করা, অঙ্গচালনা করা, ইত্যাদি । নাটক বলতে আমরা বুঝি এমন একটা ফলিত শিল্পকলা, যা অভিনয়-মঞ্চসজ্জা-রূপসজ্জা—ধ্বনি-প্রেক্ষাপট-দর্শক দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত । নাটকের ইংরেজি প্রতিশব্দ “Drama“র মধ্যেই একই সত্য আমরা খুঁজে পাই । “Drama” শব্দের মূলে রয়েছে গ্রীক শব্দ Dracin, যার অর্থ “to-do“ অর্থাৎ কিছু করা । তাই নাটককে জীবনের দর্পন বলা হয় ।
( ২ )
বাংলা নাটকের উদ্ভব দুইশত বছরেরও পূর্বে । পাশ্চাত্য রঙ্গমঞ্চের অনুকরণে বাংলা রঙ্গমঞ্চ স্থাপিত হওয়ার ফলেই বাংলা নাটক বিদেশী নাটকের মৌলধর্মাবলম্বন করেই আত্মপ্রকাশ । সংস্কৃত ও ইংরেজি নাটকের অনুবাদের মধ্য দিয়েই বাংলা নাটকের সূচনা । তাই বাংলা নাটকের আবির্ভাবের সময়কাল তিনটে । ১৭৯৫ থেকে ১৮৭২ পর্যন্ত “আদি যুগ”, ১৮৭৩ থেকে ১৯০০ পর্যন্ত “মধ্যযুগ” এবং ১৯০০ থেকে “আধুনিক যুগ” । যতটুকু জানা যায়, ১৭৯৫ সালের ২৭শে নভেম্বর কাল্পনিক সংবদল নামক একটি বাংলা অনুবাদ — প্রথম বাংলা নাটক মঞ্চস্থ হয় (কলকাতা ডোমতলায়) । আবার কোথাও জানা যায়, বাংলা নাটক প্রথম মঞ্চে অভিনীত হয় ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে । এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, “শর্মিষ্ঠা”কে (১৮৫৯) প্রথম সার্থক ও আধুনিক নাটক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় , যার রচয়িতা মাইকেল মধুসূদন দত্ত । পরবর্তীকালের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাটকের নাম এখানে দেওয়া হলো । যেমন রামনারায়ণ তর্করত্নের “কুলীনকুলসর্বস্ব”, মধুসূদন দত্তের “কৃষ্ণকুমারী” ও “বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো”, দীনবন্ধু মিত্রের “নীলদর্পন”, গিরিশ চন্দ্র ঘোষের “প্রফুল্ল”, দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের “সাহাজাহান”, ইত্যাদি ।
বাংলা সাহিত্যে বাংলা “নাটক”এর উদ্ভব বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ । জীবনকে প্রত্যক্ষ দেখতে, জানতে, বুঝতে নাটকের বিকল্প নেই । নাটক মানুষের জীবন নিয়ে রচিত । তাই সমাজের জীবনের নানা সমস্যা ও সংকটের শিল্পীত রূপ নাটকে প্রতিফলিত হচ্ছে । বাংলা সাহিত্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা হচ্ছে বাংলা নাটক । গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ সাহিত্যের এইসব বিচিত্র শাখার মধ্যে নাটক এখন জনপ্রিয় শিল্পমাধ্যম । নাটক হচ্ছে একইসঙ্গে দেখার ও শোনার বিষয় ।
( ৩ )
এবার দেখা যাক, আগেকারদিনে নাটকের উৎপত্তি কীভাবে ঘটলো । নাটক শব্দ একটি গ্রীক শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ “কাজ” বা “কাজ” যা “I do” থেকে নেওয়া । নাটকের সাথে যুক্ত দুটি মুখোশ কমেডি এবং ট্রাজেডির মধ্যে প্রচলিত জেনেরিক বিভাজনের প্রতিনিধিত্ব করে । যাই হোক পাশ্চাত্য সাহিত্যের প্রথম নাট্যকার হলেন প্রাচীন গ্রীকরা । প্রাচীন গ্রীকদের জন্য নাট্য রচনার সাথে জড়িত ছিল পোয়েসিস, অর্থাৎ নির্মিত কাজ (poesis — the act of making) । খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে অ্যারিস্টটল নাটকের উপাদানগুলি বিবেচনা করেছিলেন — প্লট (mythos), চরিত্র (ethos), চিন্তা (dianoia i.e. thought), ডিকশন (lexis), সঙ্গীত (melodia ), ইত্যাদি । চরিত্র পছন্দ এবং কর্মধারা নির্ধারিত হয় ট্রাজেডি যেটা হলো মাইমেসিস – একটি কাজের অনুকরণ যা গুরুতর (Tragedy is mimesis – “the imitation of an action that is serious.) অ্যারিস্টটল স্থান-কাল-পাত্রের সুসম ঐক্যের কথা বলেছেন ।
এবার আসছি নাটকের উপাদান বলতে আমরা কী বুঝি ? আগেই বলি — বিষয় ও পরিণতির দিক থেকে নাটক দুই প্রকার – বিয়োগান্তক নাটক (Tragedy) এবং মিলনান্তক নাটক (Comedy) । উপাদানগুলির মধ্যে অন্যতম মূল ভাবনা, প্লট, চরিত্র, সংলাপ, দৃশ্য ও সঙ্গীত । অন্যদিকে নাটকের শ্রেণী বিভাগ যেমন — ভাব সংবেদনা রীতি অনুসারে (ট্রাজেডি, কমেডি,), বিষয়বস্তুর উৎসরীতি অনুসারে (পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক, পারিবারিক), বৈশিষ্ট্য অনুসারে (গীতিনাট্য বা অপেরা, নৃত্যনাট্য ), আয়তন অনুসারে (মহানাটক, নাটক), গঠনরীতি অনুসারে (ক্লাসিক্যাল, রোমান্টিক), রচনারীতি অনুসারে (পদ্যনাটক, গদ্যনাটক), ইত্যাদি ।
( ৪ )
পরিশেষে বলা যায়, বাংলা নাটক এখন অনেক বেশী জনপ্রিয় । যদিও দর্শকদের রুচির পরিবর্তনের সাথে সাথে নাট্য ভাবনার, নাটকের প্লটের পরিবর্তন ঘটছে এবং সমান তালে দর্শকও বাড়ছে । ইদানীং আঞ্চলিক ভাষার নাটকের কদর বাড়ছে । সম্পূর্ণ মহিলাদের নিয়ে নাট্য গ্রুপ “সেঁজুতি” ভাল কাজ করছে, যার প্রভাব সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ছে । সুতরাং বাংলা সংস্কৃতিতে বাংলা নাটকের কদর দিন দিন বাড়বে বই কমবে না । (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত) ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ বিবিধ

চক্ষুদানে নাকি দুলে ওঠে প্রতিমা! মানিকোড়ার ডাকাত কালীতে অলৌকিক রহস্য।

মালদা, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ – আদিবাসী অধ্যুষিত সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রাচীন রীতি মেনে আজও মশাল জ্বালিয়ে পূজিতা হন মানিকোড়া কালী তথা ডাকাত কালী। ডাকাতদের হাতে পূজিতা দেবী এখন মানিকোড়া কালী নামে পরিচিত। শোনা যায় দেশ ভাগের আগে ডাকাতদের দল প্রায় ৩০০ বছর আগে রাতের অন্ধকারে মানিকোড়ায় দেবীর পুজো দিতে আসত। পুনর্ভবা নদী পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে একদল ডাকাত জঙ্গলে ঘেরা মানিকোড়ায় দেবীর পুজো দিতে আসত। এই দেবী জাগ্রত বলে দাবি স্থানীয়দের৷ সূর্য ওঠার আগেই পুজো দিয়ে আবার নিজেদের ডেরায় ফিরে যেত ডাকাতরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুজো উদ্যোক্তাদের পরিবর্তন ঘটেছে। ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় এক জমিদার জঙ্গলে ঘেরা এই পরিত্যক্ত পুজোর বেদি খুঁজে পান। এরপর থেকে বংশপরম্পরায় জমিদারদের উদ্যোগে এই পুজো হত। আগে পাঁঠা বলির সময় শেকল দিয়ে বাঁধা থাকত দেবীমূর্তি। তবে এখন আর শেকল বাঁধা হয় না। তবে দেবীর চক্ষুদানের সময় কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় মন্দিরের সদর দরজা।
কথিত রয়েছে, চক্ষুদানের সময় নাকি দেবীমূর্তি দুলতে থাকে। তাই আগে শেকল দিয়ে বাঁধা হতো প্রতিমা। এখন আর সেই নিয়ম নেই। এখন শুধু  কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। ভক্তদের কাছে জাগ্রত মালদার হবিবপুর ব্লকের মানিকোড়া ডাকাত কালী। পুজোকে ঘিরে সাতদিন ব্যাপী চলে মেলা, গানের আসর।
মালদার হবিবপুরের মানিকোড়া গ্রামের এই কালি পুজোকে ঘিরে রয়েছে নানান গল্প। সেখানে গেলেই শোনা স্থানীয়দের মুখে এই সব গল্প পুজোর কাহিনী। এই পুজো ডাকাত দলের হাত ধরেই সূচনা। অবিভক্ত বাংলায় (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে ঘন জঙ্গলে ডাকাতেরা পুজো শুরু করেছিলেন এখানে। কালী পুজোর রাতে ঘন জঙ্গলে মশাল জ্বালিয়ে পুজো করত রাতভোর তারপর প্রতিমা বিসর্জন করে চলে যেত ডাকাত দল।  ডাকাতেরা পুজো বন্ধ করলে স্থানীয় জমিদার সেই কালী পুজো করে আসছে দীর্ঘদিন। তারপর স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাঁধে পুজোর দায়িত্ব তুলে দেন জমিদার। বর্তমানে মানিকোড়া গ্রামের বাসিন্দারা মিলিত হয়ে এই কালী পুজো করছেন। একসময়ের ডাকাত কালী এখন সার্বজনীন কালী পূজা হিসাবেই পরিচিত।
পৌরাণিক মতে, একবার মায়ের মন্দিরের পাশ দিয়ে এক শাঁখারি শাঁখা বিক্রি করতে যাচ্ছিল। সেই সময় এক অল্প বয়সী যুবতী তার কাছ থেকে শাঁখা নিয়ে হাতে পড়ে। তখন শাঁখারি তার কাছ থেকে শাঁখার দাম চায়। উত্তরে যুবতী বলে তার বাবা দাম মিটিয়ে দেবে। কিন্তু কোথায় তার বাবা?এদিক ওদিক মুখ ঘোরাতেই দেখে সেই যুবতী নেই। ঠিক সেই সময় উল্টো দিক থেকে মন্দিরের সেবায়েত (কালি বাবা নামে পরিচিত) আসছিলেন। তখন শাঁকাড়ি তাকে বলে যে তার মেয়ে শাঁখা পরেছে তার দাম দিতে। শুনে সেবায়েত অবাক হয়ে বলে যে তার কোন মেয়ে নেই। তাই শাঁখা পড়ার প্রশ্নই উঠেনা। তখন সেবায়েতের দৃষ্টি যায় মন্দিরের পাশে পুকুরের দিকে দেখে জল থেকে দুটি হাত উঠে আছে। সেই দুই হাতে শাঁখাড়ির পড়ানো শাঁখা দেখা যাচ্ছে।সেবায়েতের বুঝতে দেরি হয়না যে স্বয়ং দেবী মা কালীই সেই শাঁখা পড়েছে।
এদিকে মানিকোড়া ডাকাত কালী ভক্তদের কাছে খুবই জাগ্রত। প্রতিবছর এই কালীপুজোয় দুই থেকে তিন হাজার ছাগ বলি হয়ে থাকে। শুধুমাত্র মালদা জেলা নয় বর্তমানে রাজ্য ও রাজ্যের বাইরে থেকে বহু ভক্তের সমাগম ঘটে এই কালীপুজোয়। বর্তমানে কালীপুজোকে ঘিরে এক বিশাল মেলার আয়োজন করে থাকেন গ্রামের বাসিন্দারা। দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ এই কালীপুজো ও মেলা দেখতে আসেন। সাত দিন ব্যাপি চলে কালীপুজোর মেলা। জাগ্রত এই মায়ের পুজো শুধুমাত্র কালি পুজোয় নয় সারা বছর মঙ্গল ও শনিবার হয়ে থাকে। ভক্তদেরও ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। ডাকাতদের হাত ধরে পূজোর সূচনা। তবে ঠিক কত প্রাচীন এই কালীপুজো তা জানা নেই স্থানীয়দের। শুধুমাত্র লোকমুখেই প্রচলিত রয়েছে ডাকাতদের হাত ধরেই শুরু পুজো। সেই পুজো জমিদার বাড়ির হাত ঘুরে বর্তমানে সার্বজনীন।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

রামোজি ফিল্ম সিটি — যেখানে প্রতিটি ফ্রেমে লুকিয়ে থাকে ভারতের সৃজনশীলতার দীপ্তি।

ভারতের দক্ষিণের মনোরম রাজ্য তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদের উপকণ্ঠে অবস্থিত রামোজি ফিল্ম সিটি। এটি শুধুমাত্র একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, বরং এক বিস্ময়কর দুনিয়া — যেখানে বাস্তবের সঙ্গে মিশে যায় রূপালি পর্দার কল্পনা। বিশ্বের বৃহত্তম ফিল্ম সিটি হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম থাকা রামোজি ফিল্ম সিটি যেন এক জাদুর দেশ, যেখানে প্রতিটি ইটের গায়ে লেখা আছে সিনেমার গল্প।


📍 কীভাবে পৌঁছানো যায়

রামোজি ফিল্ম সিটি হায়দরাবাদ শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হায়দরাবাদ বিমানবন্দর, রেলস্টেশন বা বাসস্ট্যান্ড থেকে ট্যাক্সি, ক্যাব কিংবা ট্যুর বাসে সহজেই এখানে পৌঁছানো যায়। যারা নিজস্ব গাড়িতে ঘুরতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য ভালো রাস্তা ও স্পষ্ট দিকনির্দেশনা আছে।


🎬 ফিল্ম সিটির ইতিহাস

১৯৯৬ সালে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র প্রযোজক রামোজি রাও-এর উদ্যোগে নির্মিত হয় এই ফিল্ম সিটি। তাঁর স্বপ্ন ছিল এমন একটি জায়গা গড়ে তোলা, যেখানে একসঙ্গে সিনেমা নির্মাণ, সেট ডিজাইন, সম্পাদনা এবং প্রদর্শনের কাজ সম্পূর্ণভাবে করা যাবে। আজ সেই স্বপ্নই পরিণত হয়েছে এক আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রে, যেখানে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় জমায়।


🌆 রামোজি ফিল্ম সিটির বিস্ময়কর দুনিয়া

রামোজি ফিল্ম সিটি প্রায় ২০০০ একর জমির ওপর বিস্তৃত। এখানে আছে বিশাল ফিল্ম সেট, কৃত্রিম শহর, বিদেশি লোকেশনের প্রতিরূপ, বাগান, থিম পার্ক এবং থ্রিল রাইড — সব মিলিয়ে যেন এক মায়াবী জগৎ।

🎥 ফিল্ম সেট ও শ্যুটিং জোন

এখানে আপনি দেখতে পাবেন মুম্বাইয়ের রাস্তা, দিল্লির রাস্তাঘাট, বিদেশি শহরের অনুকরণে তৈরি ইউরোপীয় বিল্ডিং, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, গ্রামীণ বাজার থেকে শুরু করে রাজকীয় প্রাসাদ পর্যন্ত। ভাগ্য ভালো থাকলে চলমান কোনো সিনেমার শ্যুটিংও দেখতে পেতে পারেন!

🌺 গার্ডেন ও থিম পার্ক

মার্বেল গার্ডেন, মুঘল গার্ডেন, এবং নানা রঙের ফুলে ভরা “ফ্লোরাল কিংডম” প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ভরিয়ে দেয়। শিশুদের জন্য রয়েছে ফান-টাইম থিম পার্ক, যেখানে রোলার কোস্টার, ৪ডি শো, জঙ্গল বুক অ্যাডভেঞ্চার এবং স্টান্ট শো দর্শকদের চমকে দেয়।

🏰 ইউরোপীয় ও জাপানি স্টাইলের সেট

রামোজি ফিল্ম সিটির অন্যতম আকর্ষণ হল ইউরোপীয় ক্যাফে, জাপানি গার্ডেন এবং আমেরিকান টাউনশিপের নিখুঁত কপি। এই স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়ালে মনে হবে যেন আপনি এক মুহূর্তে ভারত থেকে ইউরোপে পৌঁছে গেছেন।


🎭 শো এবং বিনোদন

প্রতিদিন সকালে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে চলে বিভিন্ন স্টান্ট শো, ম্যাজিক শো, ডান্স পারফর্মেন্স, এবং লাইভ সিনেমা সেট ট্যুর। সন্ধ্যার পর লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো-তে ফিল্ম সিটির সৌন্দর্য নতুন রূপ পায় — ঝলমলে আলোয় পুরো এলাকা যেন রূপকথার শহরে পরিণত হয়।


🍴 খাবার ও বিশ্রাম

ফিল্ম সিটির ভেতরেই রয়েছে অসংখ্য রেস্তোরাঁ ও ফুড কোর্ট। দক্ষিণ ভারতীয় দোসা-ইডলি থেকে শুরু করে উত্তর ভারতীয় থালি, চাইনিজ ও কন্টিনেন্টাল খাবার — সবই পাওয়া যায়। যারা রাত কাটাতে চান, তাদের জন্য আছে বিলাসবহুল হোটেল যেমন Sitara Luxury HotelTara Comfort Hotel, যা নিজেই এক অভিজ্ঞতা।


🛍️ শপিং ও স্মারক সংগ্রহ

ফিল্ম সিটির ভেতরে ছোট ছোট দোকানে পাওয়া যায় সিনেমা-থিমযুক্ত পণ্য, স্থানীয় হস্তশিল্প ও স্মারক সামগ্রী। “মেমরি লেন” থেকে আপনি নিতে পারেন এই জাদুর রাজ্যের এক টুকরো স্মৃতি।


🌄 ভ্রমণ পরামর্শ

  • সকাল সকাল পৌঁছালে পুরো ফিল্ম সিটি ঘোরা সম্ভব।
  • আরামদায়ক জুতো পরুন, কারণ হাঁটাহাঁটি বেশ করতে হয়।
  • টিকিট অনলাইনে বুক করা সুবিধাজনক।
  • ফটো তোলার সুযোগ প্রচুর, তাই ক্যামেরা সঙ্গে রাখুন।

🌠 শেষ কথা

রামোজি ফিল্ম সিটি শুধু একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। এখানে বাস্তব ও স্বপ্ন একাকার হয়ে যায়। শিশু থেকে প্রবীণ — সকলের জন্যই এই স্থান আনন্দ ও বিস্ময়ের উৎস। যদি আপনি কখনও সিনেমার ভেতরে প্রবেশ করার স্বপ্ন দেখে থাকেন, তবে রামোজি ফিল্ম সিটি আপনাকে সেই স্বপ্ন স্পর্শ করার সুযোগ দেবে।


✈️ রামোজি ফিল্ম সিটি — যেখানে প্রতিটি ফ্রেমে লুকিয়ে থাকে ভারতের সৃজনশীলতার দীপ্তি।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

রামোজি ফিল্ম সিটি: এক দিনের স্বপ্নযাত্রা ভারতের সিনেমার স্বর্গে।

ভারতের দক্ষিণের মনোরম রাজ্য তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদের উপকণ্ঠে অবস্থিত রামোজি ফিল্ম সিটি। এটি শুধুমাত্র একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, বরং এক বিস্ময়কর দুনিয়া — যেখানে বাস্তবের সঙ্গে মিশে যায় রূপালি পর্দার কল্পনা। বিশ্বের বৃহত্তম ফিল্ম সিটি হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম থাকা রামোজি ফিল্ম সিটি যেন এক জাদুর দেশ, যেখানে প্রতিটি ইটের গায়ে লেখা আছে সিনেমার গল্প।


📍 কীভাবে পৌঁছানো যায়

রামোজি ফিল্ম সিটি হায়দরাবাদ শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হায়দরাবাদ বিমানবন্দর, রেলস্টেশন বা বাসস্ট্যান্ড থেকে ট্যাক্সি, ক্যাব কিংবা ট্যুর বাসে সহজেই এখানে পৌঁছানো যায়। যারা নিজস্ব গাড়িতে ঘুরতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য ভালো রাস্তা ও স্পষ্ট দিকনির্দেশনা আছে।


🎬 ফিল্ম সিটির ইতিহাস

১৯৯৬ সালে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র প্রযোজক রামোজি রাও-এর উদ্যোগে নির্মিত হয় এই ফিল্ম সিটি। তাঁর স্বপ্ন ছিল এমন একটি জায়গা গড়ে তোলা, যেখানে একসঙ্গে সিনেমা নির্মাণ, সেট ডিজাইন, সম্পাদনা এবং প্রদর্শনের কাজ সম্পূর্ণভাবে করা যাবে। আজ সেই স্বপ্নই পরিণত হয়েছে এক আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রে, যেখানে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় জমায়।


🌆 রামোজি ফিল্ম সিটির বিস্ময়কর দুনিয়া

রামোজি ফিল্ম সিটি প্রায় ২০০০ একর জমির ওপর বিস্তৃত। এখানে আছে বিশাল ফিল্ম সেট, কৃত্রিম শহর, বিদেশি লোকেশনের প্রতিরূপ, বাগান, থিম পার্ক এবং থ্রিল রাইড — সব মিলিয়ে যেন এক মায়াবী জগৎ।

🎥 ফিল্ম সেট ও শ্যুটিং জোন

এখানে আপনি দেখতে পাবেন মুম্বাইয়ের রাস্তা, দিল্লির রাস্তাঘাট, বিদেশি শহরের অনুকরণে তৈরি ইউরোপীয় বিল্ডিং, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, গ্রামীণ বাজার থেকে শুরু করে রাজকীয় প্রাসাদ পর্যন্ত। ভাগ্য ভালো থাকলে চলমান কোনো সিনেমার শ্যুটিংও দেখতে পেতে পারেন!

🌺 গার্ডেন ও থিম পার্ক

মার্বেল গার্ডেন, মুঘল গার্ডেন, এবং নানা রঙের ফুলে ভরা “ফ্লোরাল কিংডম” প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ভরিয়ে দেয়। শিশুদের জন্য রয়েছে ফান-টাইম থিম পার্ক, যেখানে রোলার কোস্টার, ৪ডি শো, জঙ্গল বুক অ্যাডভেঞ্চার এবং স্টান্ট শো দর্শকদের চমকে দেয়।

🏰 ইউরোপীয় ও জাপানি স্টাইলের সেট

রামোজি ফিল্ম সিটির অন্যতম আকর্ষণ হল ইউরোপীয় ক্যাফে, জাপানি গার্ডেন এবং আমেরিকান টাউনশিপের নিখুঁত কপি। এই স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়ালে মনে হবে যেন আপনি এক মুহূর্তে ভারত থেকে ইউরোপে পৌঁছে গেছেন।


🎭 শো এবং বিনোদন

প্রতিদিন সকালে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে চলে বিভিন্ন স্টান্ট শো, ম্যাজিক শো, ডান্স পারফর্মেন্স, এবং লাইভ সিনেমা সেট ট্যুর। সন্ধ্যার পর লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো-তে ফিল্ম সিটির সৌন্দর্য নতুন রূপ পায় — ঝলমলে আলোয় পুরো এলাকা যেন রূপকথার শহরে পরিণত হয়।


🍴 খাবার ও বিশ্রাম

ফিল্ম সিটির ভেতরেই রয়েছে অসংখ্য রেস্তোরাঁ ও ফুড কোর্ট। দক্ষিণ ভারতীয় দোসা-ইডলি থেকে শুরু করে উত্তর ভারতীয় থালি, চাইনিজ ও কন্টিনেন্টাল খাবার — সবই পাওয়া যায়। যারা রাত কাটাতে চান, তাদের জন্য আছে বিলাসবহুল হোটেল যেমন Sitara Luxury HotelTara Comfort Hotel, যা নিজেই এক অভিজ্ঞতা।


🛍️ শপিং ও স্মারক সংগ্রহ

ফিল্ম সিটির ভেতরে ছোট ছোট দোকানে পাওয়া যায় সিনেমা-থিমযুক্ত পণ্য, স্থানীয় হস্তশিল্প ও স্মারক সামগ্রী। “মেমরি লেন” থেকে আপনি নিতে পারেন এই জাদুর রাজ্যের এক টুকরো স্মৃতি।


🌄 ভ্রমণ পরামর্শ

  • সকাল সকাল পৌঁছালে পুরো ফিল্ম সিটি ঘোরা সম্ভব।
  • আরামদায়ক জুতো পরুন, কারণ হাঁটাহাঁটি বেশ করতে হয়।
  • টিকিট অনলাইনে বুক করা সুবিধাজনক।
  • ফটো তোলার সুযোগ প্রচুর, তাই ক্যামেরা সঙ্গে রাখুন।

🌠 শেষ কথা

রামোজি ফিল্ম সিটি শুধু একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। এখানে বাস্তব ও স্বপ্ন একাকার হয়ে যায়। শিশু থেকে প্রবীণ — সকলের জন্যই এই স্থান আনন্দ ও বিস্ময়ের উৎস। যদি আপনি কখনও সিনেমার ভেতরে প্রবেশ করার স্বপ্ন দেখে থাকেন, তবে রামোজি ফিল্ম সিটি আপনাকে সেই স্বপ্ন স্পর্শ করার সুযোগ দেবে।


✈️ রামোজি ফিল্ম সিটি — যেখানে প্রতিটি ফ্রেমে লুকিয়ে থাকে ভারতের সৃজনশীলতার দীপ্তি।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

জীবন ও সংগ্রাম : গ্রাম থেকে শহরে সংগ্রামে ও শপথে অধ্যাপক মহীতোষ গায়েন।

অবিভক্ত চব্বিশ পরগনার ৫২টি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বিনোদ বিহারী গায়েনের কনিষ্ঠ পুত্র মহীতোষ।পঞ্চম শ্রেণিতে হাফ প্যান্ট পরে বন্ধুর সঙ্গে নদী তীরে মাছ ধরার আনন্দ,অন্যের দোকান ঘর পাহার দেওয়া, নদীতীরে মোটর বোট তুলতে বড়দের সঙ্গে শ্রমের শরিক হয়ে ৪টাকা উপার্জন ছিল বড়ই আনন্দের,
এটিই ছিল তার জীবনের প্রথম উপার্জন,তখন ৪টাকা মানে বেশ খুশি হওয়ার মত।ষষ্ঠ শ্রেণিতে অন্যের বাড়িতে থেকে মাঝে মধ্যে গোয়াল ঘরে শোওয়ার নিয়তি যার কৈশোরে । পঞম শ্রেণিতে বাবা ভর্তি করেন বাবারই প্রতিষ্টিত স্কুল সন্দেশখালি রাধারাণী হাইস্কুলে।সন্দেশখালিতে বাবার হাতে গড়া শিক্ষক হরিবিলাস সিংহের বাড়িতে বাবা রেখেছিলেন। সেখানেই পড়া শুরু। জ্বর অবস্থায় একা একা বাড়িতে ছেড়ে দেওয়ার কারণে তার বাবা ষষ্ঠ শ্রেণিতে
ছোট মোল্লাখালি স্কুলে ভর্তি করেন,সেখানে জামাইবাবুর বাড়িতে থাকা, কিন্তু রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কারণে পুণরায় সন্দেশখালিতে, আবার অষ্টম শ্রেণিতে কালীননগর স্কুলে বাবা ভর্তি করেন, সেখানে হস্টেলে থেকে পড়াশোনার জন‌্য।
অর্থ সঙ্কটের কারণে অষ্টম, নবম ,দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় খিদের জ্বালায় স্কুল সংলগ্ন যাত্রাপালার মাঠে বাদাম কুড়িয়ে খেতে হয়েছে, সকাল বেলায় প্রার্থনার পর হস্টেলের অবস্থাপন্ন দাদাদের টিফিন এনে দেওয়ার বিনিময়ে খাবারের ভাগ পাওয়ার আনন্দের লড়াই ছিল অবশ্য তার বেদনার তৃপ্তি।
যদিও এই অর্থ সংকটের মধ্যে পড়াটাও এক নির্মম নিয়তি। বাবা ছিলেন সুন্দরবনের স্থানীয় এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মাত্র ৮বছর শিক্ষকতা করে সুন্দরবন তথা অবিভক্ত ২৪ পরগনার মানুষদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে,সমাজ গড়ার কাজের জন্য স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিলেন, সংসারে নেমে এলো তীব্র অর্থ সংকটের কালোমেঘ। তীব্র প্রতিকূলতাকে জয় করে একে একে ৫২টি স্কুল গড়ে তুললেন তিনি।

মহীতোষের কথায়- “আমাদের সব কষ্ট জল হয়ে গেল মানুষের কল্যাণে বাবার এই ব্রত ও সমাজকল্যাণকর কাজে।জমি জমা এক এক সব বিক্রি হয়ে গেল,কাজের বিনিময়ে কোন অর্থ নিতেন না বাবা।কালীনগর হস্টেলে অষ্টম শ্রেণি থেকে থাকতাম,স্টাইপেন্ড পেতাম,সে টাকা থেকে হস্টেলে মাসের থাকা খাওয়ার খরচের টাকা কেটে নেওয়া হত,কারণ বাবার আর্থিক সঙ্গতি ছিল না মাসের টাকা দেওয়ার মতো,কারণ তিনি যে পরোপকারী সংসার সন্ন্যাসী।একদিন এক রুমমেট এর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। তুচ্ছ এই কারণে সুপারের ঘরে ডেকে আমাকে বেত দিয়ে ভীষণ প্রহার করা হয়,মারতে মারতে সেই শিক্ষকের মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ে এক অদ্ভুত বাণী,”বিনা পয়সায় খেতে লজ্জা করে না, টাকা দিতে পারিস না আবার বাহাদুরি?” তিনি ছিলেন জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক,নামটি আর বলছি না,
সেদিন থেকেই আমার তীব্র জেদ বাসা বাঁধে রক্তে, রক্ত গরম হয়ে যায়,মুখ বুজে নির্মম প্রহার সহ্য করেছি, সেদিন থেকেই শপথ নিলাম আমাকে কিছু একটা করে দেখাতে হবে।মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা অংকে মাত্র ১৩পেয়েছিলাম (Unlike thirteen ).। বাবাকে ডেকে পাঠানো হয়। প্রধান শিক্ষক বলেন,” স্যার ,(প্রধান শিক্ষক ছিলেন শশাঙ্ক শেখর মন্ডল, যিনি বাবারই ছাত্র ছিলেন) আমরা কোন বিষয়ে ফেল করা ছাত্রদের হস্টেলে রাখি না,কারণ এতে স্কুলের বদনাম হয়। বাবা বলেছিলেন, ছেলেকে আমি নিয়ে যাব ঠিকই, কিন্তু যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাই,” শশাঙ্ক, আমার মাথা খারাপ(বুদ্ধি) তা আমার ছেলের মাথা আর কত ভালো হবে?” আর ঠিক সেদিন মাথায় বিদ্যুৎ চমকে ওঠে, কঠিন প্রত্যয়ে মনে মনে স্থির করি, কিছু একটা করতেই হবে, প্রধান শিক্ষককে ছাপিয়ে যেতে হবে ।মনের অগোচরে তীব্র জেহাদ কষ্টের মধ্যে থেকে বাড়তে লাগলো । যথারীতি মাধ্যমিক পাশ করলাম ৫৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে, অংকে ৪৫ পেলাম, গুরুদেব শিক্ষক দিলীপ দেববর্মণ এর কাছে শিখলাম গ্রাফ ও মিডল টার্ম ফ্যাক্ট, ভালো করে রপ্ত করলাম, এই গুরুদেবই আমার কৈশোরের মন্ত্রদাতা পুরোহিত।তখন জীবনের অংকে সমানে পীড়া দিচ্ছে, বিজ্ঞান নিয়ে পাটানখালি কলেজে ভর্তি হলাম,তখন থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে, নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ড্র,পরে Re Counting ১ভোটে হারিয়ে দেওয়া হলো, পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হলো অগত্যা বাড়ি ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পালাতে হলো,৩/৪ দিন পর মা এর কান্না আর দাদার সন্ধ্যানে ধরা দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এবার নতুন উদ্যমে তৈরি হওয়ার জন্য আদা জল খেয়ে লাগার পালা। দক্ষিণ বারাসত কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে মেসের মালিক দিলীপ পুরকাইতের বদান্যতায় ভোটের সময় সেক্টর অফিসে এক দিনের হোম গার্ড হয়ে ৩৫০ টাকা আমার দ্বিতীয় উপার্জন, কাউকেই যেন সেই তৃপ্তি পেতে না হয়,ঈশ্বরের কাছে এ আমার করুণ আর্তি!!! এক জামা এক প্যান্ট অর্থাৎ ছেঁড়া স্কুল ড্রেস পরে শীত গ্রীষ্ম অতিবাহিত করা, পুজোর সন্ধ্যায় রাস্তার ধারে বসে নতুন পোশাকের এর আশায় অশ্রু মিশ্রিত স্বপ্নময় আনন্দরা মিছিল করে মন ও মননে আজও ধাক্কা দেয়,এখনো বঞ্চনা ও মর্যাদার লড়াই চলছে আজও এবং অবিরত।” তাই মরমী
কবি জয় গোস্বামীর কবিতার লাইন মনে পড়ে আজও বারবার….
” ঝাড় খেতে খেতে শেষ হয়ে গেছি
ঝাড় খেতে খেতে শুরু;
অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়েছি গুরু”।
তবে আমার এই উঠে দাঁড়ানো কারো ঈর্ষা ও হিংসার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ,যা কাম্য নয়, মাঙ্গলিক বীণার তারটা বারবার ছিঁড়ে যাচ্ছে , ভুবনভাঙার মাঠে একটি পঞ্চম শ্রেণির ছোট্ট ছেলের কান্না কেউ না শুনতে পেলেও চরাচর,আকাশ,বাতাস, বাংলার মাঠ -ঘাট ,ফুল,পাখি ও নদী আজও স্বাক্ষ‌্য বহন করে চলছে।অনন্ত গোধূলিতে আজও সে সুর অদৃশ্য হয়ে বেড়ায়।”
“সবার জন্য শুভকামনা জানিয়ে বলতে হয়…
আমি ঈশ্বরের সৃষ্টি ,কালের রাখাল। তবে মানুষের মঙ্গলের জন্য দরকার রাজনৈতিক স্বীকৃতি অর্থাৎ জন প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ, যদি তার সারবত্তা কতখানি তার হদিস হয়তো ঈশ্বরেরও জানা নেই।
আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রথিতযশা কবি সুবোধ সরকারের কবিতা মনে পড়ে “দুঃখ ছিল গ্রামেও কিন্তু রাগ ছিল না নিশীথ কালে/যে দুঃখটা ভারত জুড়ে,সে দুঃখটা চালে ডালের” সেই দুঃখ কীভাবে মোচন হবে জানি না,তবে অপেক্ষায় রইলাম কালের রাখালের মত”
মহীতোষ উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এম.এ পাস করে। ছাত্র রাজনীতিতে তখন তার দাপট,পর পর দু’বার ছাত্র সংসদের নির্বাচিত হয়েছেন।এরপর কর্মসংস্থান এর খোঁজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েও চান্স না পেয়ে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে, আন্দোলন করে ভর্তি হলেন এম.ফিলে ,সোনারপুর মেসে থেকে চাকরির পড়াশোনা করতে করতে অন্ন সংস্থানের জন্য দিশা না পেয়ে বাণীপুর বিএড কলেজ ভর্তি,এম.ফিল ডিগ্রি অর্জন আর হলো না দৈব দুর্বিপাকে।বাণীপুর বিএড কলেজ থেকে ফাস্ট ক্লাস পেয়ে বন্ধুর সহায়তায় অশোকনগরে একটি এক কামরার ছোট্ট ঘরভাড়া নিয়ে নিজের হাতে রান্না করে খেয়ে সারা দিন রাত টিউশনি করে খরচ চালাতে থাকলেন, ইতোমধ্যেই এম.এ ক্লাসের সহপাঠী মৌসুমীকে রেজিস্ট্রি করে বন্ধনে জড়িয়ে পড়লেন। টিউশনি করে খরচ চালাতে শুরু করলেন। এভাবেই দিন কাটছিল, হঠাৎ এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে কল পেয়ে অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান ১৯৯৭ এর নভেম্বরে,তার আগেই এপ্রিল মাসে সামাজিক ভাবে বিবাহ সম্পন্ন হয়। অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলে সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেন দীর্ঘ সাড়ে ১২ বছর, শিক্ষক রাজনীতিতে পূর্ণমাত্রায় জড়িয়ে পড়লেন, স্কুল শিক্ষকতা করতে করতে সেট পরীক্ষায় ইতিহাসে ৩৯জনের মধ্যে ১৩তম স্থান পেলেন ২০০৮ এ , কলেজ সার্ভিস কমিশনে ইন্টারভিউ দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১০- এর এপ্রিলে হুগলির শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যামহাপীঠ (কামারপুকুর কলেজ) অধ্যাপনা শুরু করেন, ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে। ২০১৫-১৬ কামারপুকুর কলেজ তখন ছাত্র রাজনীতির গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে জেরবার। মারামারি রক্তপাত দেখে স্থায়ী প্রিন্সিপাল চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে পুরানো কলেজ চলে গেলেন,তখন ছাত্র ভর্তি চলছে। কেউ ভয়ে টিচার ইনচার্জ হতে চাইলেন না,সবাই Un Willing দিলেন, অগত্যা ১৪নম্বর সিনিয়র হিসেবে মহীতোষ দায়িত্ব নিলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের,২০১৬ এর ৫অক্টোবর,১০ মাস সেই দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করলেন, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব সূকৌশলে বন্ধ করে কলেজের স্থিতাবস্থা ফেরালেন, উচ্চ শিক্ষা দপ্তর থেকে ৩৬ লক্ষ টাকা অনুদান যোগাড় করলেন, কলেজে সিসি ক্যামেরা বসালেন, নতুন বিল্ডিং হলো সেই অর্থে, ৮ জন
শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী দীর্ঘ ৮বছর ধরে কাগজপত্রের সমস্যার জন্য পেনশন পাচ্ছিলেন না, তারই অদম্য প্রয়াসে তাঁরা পেনশন পেলেন, ফুলের বাগান করলেন,আজকের কামারপুকুর কলেজের যে সাজানো পরিপাটি রূপ,তা তাঁর অবদান,মাত্র ১০ মাস ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালীন বাড়ির পাশে আসার জন্য ।কলেজ সার্ভিস কমিশনে ইন্টারভিউ দিয়ে ২০১৭ সালের ৬জুলাই সিটি কলেজ এ জয়েন করলেন,২০২২ এর মে মাসে হায়ার এডুকেশন কাউন্সিল বিলের এক ধারা অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষা দপ্তর থেকে ভাইস প্রিন্সিপাল এর নিয়োগপত্র পেলেন। ভাইস প্রিন্সিপাল হওয়াতে সবচেয়ে খুশি হয়েছিলেন তার কলেজের প্রিয় শিক্ষিকা শর্মিলা রায় ও প্রিয় শিক্ষক প্রথিতযশা কবি সুবোধ সরকার। বর্তমানে মহীতোষ সেখানেই কর্মরত ,২০২৫ এ দীর্ঘ ২৮ বছর তার এই শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা।

এবার আসি তার সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক জীবনের বর্তমান দ্বিতীয় অধ্যায়ের। তার বাবা কংগ্রেস রাজনীতি করতেন ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর সন্দেশখালি ইউনিয়ন বোর্ডের দায়িত্ব সামলেছেন। দীর্ঘ ১৪ বছর ছিলেন আলিপূর জাজেস কোর্টে জুরির বিচারক। এরপর পর কংগ্রেস রাজনীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে মনোরঞ্জন শূরের আহ্বানে সিপিআই তে যোগ দেন।১৯৭১ সালে হিঙ্গলগঞ্জ কেন্দ্রে টিকিট পান। কিন্তু সিপিএম -এর ভোট জালিয়াতির শিকার হন, বিনোদ বিহারীর পক্ষে পড়া ভোটের ব্যালট বাক্স সিপিএম পুকুরে ফেলে দিয়ে মাত্র একহাজার ভোটে জালিয়াতি করে বিনোদ বিহারীকে হারায় । ২০১১-র জানুয়ারিতে মহীতোষ এর পিতা প্রয়াত হন।২০১১ তে ভোট আসন্ন, বাংলায় পালা বদলের বছর এটি। সিপিআই এর সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত সিপিআই এর উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জীকে প্রস্তাব দিলেন ,বিনোদদা এতগুলো স্কুল করেছেন, দক্ষ রাজনীতিবিদ, ভালো মানুষ তার কনিষ্ঠ পুত্র কামারপুকুর কলেজের অধ্যাপক, ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতিতে দক্ষ, সুবক্তা ও বিনয়ী তাকে এবার হিঙ্গলগঞ্জ কেন্দ্রের টিকিট দেওয়া হোক ।স্বপন ব্যানার্জী বললেন, ওনার ছেলে সিপিআই এর পার্টি মেম্বার নয় , সিপিএম এর পার্টি মেম্বার নয়,পত্রপাঠ খারিজ হলো প্রস্তাব। বিনোদ বিহারীর রাজনৈতিক শিষ্য পার্টি মেম্বার আনন্দ মন্ডল যথারীতি টিকিট পেলেন, মন্ত্রী গৌতম দেবও বলেছিলেন সিপিআই নেতাদের, ‘আপনাদের প্রার্থী নির্বাচন ঠিক হয়নি, আনন্দ মন্ডল এর নামে কেসও আছে।তাই মহীতোষকে টিকিট দেওয়া হোক ,সে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লড়াকু অধ্যাপক’, সিপিআই নেতৃত্ব আরো রেগে আনন্দ মন্ডলকেই টিকিট দিলেন। আনন্দ মন্ডল অবশ্য বিনোদ গায়েনের ভাবমূর্তি ভাঙিয়ে খুলনা অঞ্চলের ১হাজার ভোটে জয়ী হন।
মহীতোষ বামফ্রন্টের প্রতি তীব্র অসন্তুষ্ট হয়ে
কংগ্রেস দলে যোগ দেন ২০১২ তে এবং সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লক কংগ্রেসের সহ সভাপতি পদ দেন সভাপতি অনিল সরকার। তৃণমূল কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়লাভ করলো,৩৪ বছরের বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন মুখ্যমন্ত্রী।

মহীতোষ অবশ্য ২০১২ র ডিসেম্বরে ওয়েবকুপার প্রথম রাজ্য সম্মেলনের থেকে অর্থাৎ ওয়েবকুপার শুরু থেকেই ওয়েবকুপা করছেন। ওয়েবকুপার তখন তত্ত্বাবধায়ক, শিক্ষা সেলের দায়িত্বে মুকুল রায়, কৃষ্ণকলি বসু হলেন প্রেসিডেন্ট। শিক্ষামন্ত্রী তখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মহীতোষ ইতিমধ্যেই কামারপুকুর কলেজের ওয়েবকুপার ইউনিট কনভেনার নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন এসে গেল, কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য্যের নজরে আসেন মহীতোষ, তিনি বলেন, “আপনি ভালো অধ্যাপক, এখন পঞ্চায়েত নির্বাচন, আপনি আমাদের প্রার্থী হন’
পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হিসেবে টিকিট দিলেন মহীতোষকে, কংগ্রেস সংগঠন তখন খুব দূর্বল জেনেও ভালো ফল করলেন, দীর্ঘ বছর জেতা সিপিএম প্রার্থী তপন প্রামাণিক সেই কারণেই পরাজিত হন,ফলে তৃণমূল জয়লাভ করলো। তখন
সন্দেশখালি তৃণমূল কংগ্রেসের ২নম্বর ব্লক সভাপতি লক্ষ্মন অধিকারী, তিনি মহীতোষকে ও কংগ্রেসের স্থানীয় শিক্ষক সঞ্জয় মন্ডলকে তৃণমূলে যোগ দিতে আহ্বান জানান, তিনি ভালো ফল করার জন্যে মহীতোষকে ও সঞ্জয়বাবাবুকে সন্দেশখালিতে এক বিরাট সমাবেশে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা দুজনের হাতে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা তুলে দিলেন ,মহীতোষকে জয়েন্ট সেক্রেটারি ও সঞ্জয়বাবাবুকে সহ সভাপতির পদ দিলেন। মহীতোষ তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবাদর্শে উদ্দীপ্ত হয়ে চুটিয়ে মিটিং, মিছিল পথসভা করে যাচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে পার্টি অফিসে বসছেন। ইতিমধ্যে বছর অতিক্রান্ত হলো, একদিন পার্টি অফিসে গিয়ে জানতে পারলেন তাকে সহ আরো ১৩ জনকে ব্লক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিনা নোটিশে না জানিয়ে বিনা কারণে এই ঘটনায় খুব দুঃখ পেলেও অসন্তোষ প্রকাশ না করে পার্টি অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিলেও দলের কর্মসূচিতে যোগ দিতেন মহীতোষ,দলকে ভালোবেসে ,জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আকর্ষণ ও মুগ্ধতা থেকে দল ছাড়েন নি, সেই থেকেই আজও একনিষ্ঠ ভাবে দলের কাজ করে যাচ্ছেন অক্লেশে। মহীতোষ অবশ্য মনস্থির করলেন স্থানীয় রাজনীতিতে আবিষ্ট না থেকে অধ্যাপক সংগঠনটা ভালো করে করি,যা ভাবা তাই কাজ, সেই ২০১২ থেকেই শুরু করে ২০১৩ থেকে রাত দিন এক করে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তৈরি লোগো, দলনেত্রীর স্বপ্নের ওয়েবকুপার তিনি আজও অতন্দ্র নিষ্ঠাবান স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সৈনিক, মিটিং মিছিল,দলের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে সদা ব্যস্ত তিনি, নিজের কর্নিমষ্ঠার দ্বারা রাজ্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হলেন, সমস্ত সাংগঠনিক কর্মসূচিতে তিনি আজও সক্রিয়। ২০২১ এর নতুন রাজা কমিটিতে অ্যাসোসিয়েট সেক্রেটারি হলেন মহীতোষ। শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান তখন অধ্যাপক ব্রাত্য বসু।২০২৪ সালে অধ্যাপক ব্রাত্য বসু দায়িত্ব পেলেন ওয়েবকুপার নতুন সভাপতির, তার নেতৃত্বে ওয়েবকুপায় এলো প্রাণের সঞ্চার,রাজ্য সম্মেলন হলো গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে।সহ সভাপতি তখন মণিশঙ্কর মন্ডল ও সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়, মণিশঙ্কর মন্ডল নানান সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলায় যুক্ত,নতুন রাজ্য কমিটি গঠিত হলো। নতুন রাজ্য কমিটিতে মণিশঙ্কর মন্ডল তার সাংগঠনিক শৃঙ্খলা অবমাননার জন্য বাদ পড়লেন ,সহ সভাপতি হলেন্ সেলিমা বক্স মন্ডল ও সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়।। ২০২৫ এর ৭ ফেব্রুয়ারি নবরূপে অধ্যাপক ব্রাত্য বসুর নির্দেশনায় নতুন রাজ্য কমিটি পুনর্গঠন হলো দলের অনুমোদনে, জেনারেল সেক্রেটারি হলেন কৃষ্ণকলি বসু, যিনি আজ প্রয়াত, নতুন সভাপতি অধ্যাপক ব্রাত্য বসু ,সহ সভাপতি বাড়ালেন তিনি ,৩জন সহসভাপতির মধ্যে জায়গা পেলেন মহীতোষ।ওয়েবকুপায় এলো নবজাগরণ,
১মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ৫হাজার অধ্যাপকদের নিয়ে বার্ষিক সাধারণ সভা ও সেমিনার।
যা ওয়েবকুপার ইতিহাসে প্রথম নিদর্শন।
সেদিনের ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে সাড়া ফেলে দেয়, অধ্যাপক ব্রাত্য বসুর উপর হলো হুলিগানদের আক্রমণ, তিনি আহত হলেন।মহীতোষ, অধ্যাপকদের নিয়ে মিছিল করলেন।অতি অল্প সময়ে ৩৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি ও ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠিত হলো। সভাপতির নির্দেশনায়। হঠাৎ করে ২৫সেপ্টেম্বর দল নানা অভিযোগে শিক্ষা সেল ভেঙে পুজোর পর নতুন রাজ্য ও জেলা কমিটি গঠনের ঘোষণা করলো দলীয় ভাবে।

মহীতোষ ২০১৪ থেকেই ২০২৪ এর সমস্ত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর হয়ে মিটিং, মিছিল, জনসভায় পথসভায় বক্তব্য রাখা, দলের হয়ে নিরবধি কাজ করে যেতে থাকলেন বিভিন্ন জেলায় জেলায় বিভিন্ন দলীয় ও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে নিবেদিতপ্রাণ মহীতোষ । দলের কাছে কখনোই কোনো পদের জন্য দাবি করেন নি। অত্যন্ত বিনয়ী, বিচক্ষণ, দক্ষ এহেন অধ্যাপক দলের ও সংগঠনের সব কাজে ঝড়,জল, বৃষ্টিতে দিবারাত্র তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করেও অবিরাম অবিরত দীর্ঘ ১২ বছর ধরে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জননেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলীয় আদর্শকে পাথেয় করে একনাগাড়ে আজও করে চলেছেন দল ও সংগঠন। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগৎ -এ এক নিষ্ঠাবান, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সুপরিচিত মুখ তিনি ,এজন্যই সংগঠনের অধিকাংশ অধ্যাপকের প্রিয় ও ভালোবাসার পাত্র তিনি।
শুধুমাত্র এই আত্মতুষ্টিতে থাকবেন তিনি?শিক্ষা, সংগঠন, দলের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ বা জনপ্রতিনিধিত্ব করার দাবি কখনো করেন নি বা চান নি তিনি বা সে বিষয়ে কোনো প্রস্তাবও দলীয় ভাবে আসে নি কখনো। জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,দল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ও সাংগঠনিক ঊর্ধ্ব নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে তার। তাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দলীয় ও সাংগঠনিক কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে এক যুগ ধরে তিনি।এই আত্মতুষ্টি নিয়েই কী কাটবে কর্মযোগী জনহিতৈষী এই অধ্যাপকের বাকিটা জীবন? নাকি ২৯৪ এর কোন কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে দেখা যাবে তাকে বা কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে, মা মাটি -মানুষের গুঞ্জনে ,সেই প্রশ্ন ভুবন ডাঙার মাঠে অনুরণিত।

কলমে : হিমাদ্ৰী শেখর মণ্ডল,দিব্যেন্দু সরকার ও রাজীব দত্ত।

(সন্দেশখালি,কামারপুকুর, কলকাতা )

Share This
Categories
প্রবন্ধ বিবিধ

পুরুলিয়া ভ্রমণ: অযোধ্যা পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অ্যাডভেঞ্চার।।

পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলা তার অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়ি এলাকা এবং অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য পরিচিত। এ জেলার অন্যতম আকর্ষণ অযোধ্যা পাহাড়। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই পাহাড়ি অঞ্চল প্রকৃতি ও অভিযাত্রীদের জন্য এক স্বর্গীয় স্থান। সবুজ পাহাড়, ঝরনা, নদী এবং শান্ত পরিবেশ মিলিয়ে এটি ভ্রমণকারীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে।


অযোধ্যা পাহাড়ের পরিচিতি

অযোধ্যা পাহাড় তার চমৎকার সবুজ পাহাড়ি দৃশ্য, পাহাড়ি ঝরনা এবং শান্ত পরিবেশের জন্য খ্যাত। এটি প্রধানত ট্রেকিং, রক ক্লাইম্বিং এবং প্রকৃতি দর্শনের জন্য উপযুক্ত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পাহাড়ের শীতল বাতাস এখানে ভ্রমণকারীদের মনে শান্তি ও আনন্দ দেয়।


দর্শনীয় স্থানসমূহ

  1. কংসাবতী নদী – পাহাড়ের কোলে বয়ে যাওয়া নদী যা নৌকা ভ্রমণ ও নদীর ধারে পিকনিকের জন্য আকর্ষণীয়।
  2. বাঘমুন্ডি জলপ্রপাত – পাহাড়ি ঝরনার স্বচ্ছ জল, ঝর্ণার পাশ দিয়ে হাঁটা এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য উপযুক্ত।
  3. মায়াবিনী পাহাড় – পাহাড়ের শীর্ষ থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। পাহাড়ি ট্রেকিং এবং ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ।
  4. রক ক্লাইম্বিং ও ট্রেকিং – পাহাড়ের প্রাকৃতিক প্রলেপযুক্ত পাথর ও বিভিন্ন চূড়া অভিযাত্রীদের জন্য উত্তেজনাপূর্ণ।

ভ্রমণকারীর জন্য আকর্ষণ

  • প্রকৃতি দর্শন – সবুজ পাহাড়, নদী, ঝরনা এবং বনভূমির দৃশ্য।
  • অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস – ট্রেকিং, হাইকিং, রক ক্লাইম্বিং।
  • ফটোগ্রাফি – পাহাড়ি প্রকৃতি ও ঝর্ণার দৃশ্য ধারণ করা।
  • নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ – শহরের ভিড় থেকে দূরে, শান্তিতে প্রকৃতির সঙ্গে মিলিত হওয়া।

সেরা ভ্রমণের সময়

  • শীতকাল (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি) – আবহাওয়া শীতল ও মনোরম।
  • বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) – সবুজ পাহাড় ও ঝরনার সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায়, তবে ভিজে পরিবেশ থাকতে পারে।

কীভাবে পৌঁছাবেন

  • রাস্তা – পুরুলিয়া জেলা সদর থেকে স্থানীয় সড়ক ধরে অযোধ্যা পাহাড় সহজেই পৌঁছানো যায়।
  • ট্রেন বা বাস – ঝাড়গ্রাম, বিন্ধ্যসাগর বা পুরুলিয়ার কাছাকাছি রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্যাক্সি বা বাসে পৌঁছানো সম্ভব।

উপসংহার

অযোধ্যা পাহাড় শুধুমাত্র একটি পাহাড়ি স্থান নয়, এটি প্রকৃতি ও অ্যাডভেঞ্চারের মিলনস্থল। কংসাবতী নদী, বাঘমুন্ডি জলপ্রপাত, সবুজ পাহাড় এবং ট্রেকিং পথ—সবকিছু মিলিয়ে এই স্থান ভ্রমণকারীর মনে এক অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করে। যারা প্রকৃতি, শান্তি এবং অ্যাডভেঞ্চার একসাথে খুঁজছেন, তাদের জন্য পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় নিঃসন্দেহে এক স্বর্গীয় গন্তব্য। 🌄🌿🗻

Share This
Categories
প্রবন্ধ

একটি পরিবারে পিতার ভূমিকা।।

পরিবার সমাজের ছোটতম একক, যা মানুষের জীবনের প্রাথমিক শিক্ষা, মূল্যবোধ এবং আচরণের মূলে প্রভাব ফেলে। একটি পরিবারের মূল ভিত্তি হলো ভালোবাসা, সংহতি, সহমর্মিতা এবং দায়িত্ববোধ। এই সকল গুণাবলীর ধারক হতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাবা। পিতার উপস্থিতি ও তার আচরণ সন্তান এবং পুরো পরিবারের মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। আধুনিক সমাজে যেখানে পরিবার ও সামাজিক কাঠামো ক্রমে পরিবর্তিত হচ্ছে, সেখানে পিতার দায়িত্ব এবং ভূমিকা আগের তুলনায় আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

১. পরিবারের অর্থনৈতিক ভিত্তি ও পিতার দায়িত্ব

পিতা সাধারণত পরিবারের প্রধান অর্থনৈতিক সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি পরিবার পরিচালনার জন্য অর্থ উপার্জনের দায়িত্ব নেন এবং পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। পিতার সঠিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবারকে সামাজিকভাবে সুস্থিত রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

একটি পরিবারে পিতার অর্থনৈতিক ভূমিকা শুধুমাত্র আয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি পরিবারকে দায়িত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার শিক্ষা দেন। শিশুরা যখন দেখেন পিতা সঞ্চয়, বাজেট পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সচেতন, তখন তারা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিকভাবে সুষ্ঠু জীবন যাপন করার শিক্ষা গ্রহণ করে।

২. মানসিক ও নৈতিক দিক

পিতা শুধুমাত্র অর্থের দিক দিয়ে নয়, মানসিক ও নৈতিক দিক থেকেও পরিবারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সন্তানের মানসিক বিকাশে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং আত্মবিশ্বাস গঠনের জন্য কাজ করেন। পিতার স্নেহময় উপস্থিতি সন্তানের মানসিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ায়।

নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ শেখানোয় পিতার ভূমিকা অপরিসীম। বাবা তার আচরণ ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সন্তানকে সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য শেখান। উদাহরণস্বরূপ, পিতা যখন সততা, সহানুভূতি, শ্রমের মূল্য ও দায়িত্ববোধের দিক দেখান, তখন সন্তান তার আচরণে সেই গুণাবলী আত্মস্থ করে।

৩. শিক্ষাগত ও মানসিক বিকাশে পিতার প্রভাব

শিশুর শিক্ষাগত বিকাশে পিতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিতা কেবল অর্থনৈতিকভাবে শিক্ষার জন্য সুযোগ করে দেন না, তিনি শিশুকে শেখার প্রতি আগ্রহ, অধ্যবসায় এবং কৌতূহল জন্মাতে সাহায্য করেন। বাবা যখন সন্তানকে বিভিন্ন পাঠ্যবিষয়, জীবনদর্শন বা বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেন, তখন শিশু কেবল জ্ঞানই নয়, জীবন দক্ষতাও অর্জন করে।

মানসিক বিকাশে বাবা শিশুর সাহস, মনোবল এবং সমস্যা মোকাবেলার ক্ষমতা গড়ে তুলেন। বাবা যখন সন্তানের সাথে খেলাধুলা, গল্পকথন বা শিক্ষামূলক কার্যক্রমে যুক্ত হন, তখন শিশুর মনোযোগ, চিন্তাভাবনার ক্ষমতা এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৪. পরিবারে নেতৃত্বের ভূমিকা

পরিবারের নেতৃত্ব প্রদানে পিতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার পরিচালনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সংকট মোকাবেলায় পিতা প্রধান দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করেন। বাবা পরিবারের জন্য উদাহরণ স্থাপন করেন, যা সন্তানদের চরিত্র গঠনে প্রভাব ফেলে।

পরিবারে পিতার নেতৃত্ব শুধুমাত্র কর্তৃত্বপূর্ণ নির্দেশ দেওয়ায় সীমাবদ্ধ নয়। তিনি পরিবারকে একত্রিত রাখার, সমস্যা সমাধানের এবং সদস্যদের মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আধুনিক সমাজে পিতা যখন একটি সমানাধিকারভিত্তিক ও সমন্বিত পরিবারের পরিবেশ তৈরি করেন, তখন পরিবারকে মানসিক ও সামাজিকভাবে শক্তিশালী করা সম্ভব হয়।

৫. পিতার সামাজিক ভূমিকা

পিতা কেবল পরিবারে নয়, সমাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাবা পরিবারের বাইরে সামাজিক সম্পর্ক, পরিচয় এবং সম্মান বজায় রাখেন। তিনি সন্তানদের সামাজিক আচরণ, শিষ্টাচার এবং পরিপূর্ণ সামাজিক মূল্যবোধ শেখান।

একজন সচেতন পিতা সন্তানদের শেখান কিভাবে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়, কিভাবে অন্যের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হয় এবং কিভাবে সমাজের নিয়ম ও নৈতিকতা মেনে চলতে হয়। এই শিক্ষা শিশুর সামাজিক বিকাশে অপরিসীম প্রভাব ফেলে।

৬. আধুনিক সমাজে পিতার ভূমিকা

আজকের আধুনিক সমাজে যেখানে মা-বাবা উভয়েই কাজ করছেন, পিতার ভূমিকা আরও বিস্তৃত হয়েছে। তিনি কেবল অর্থনৈতিক সহায়ক নয়, পরিবারের মানসিক, শিক্ষাগত এবং সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে সমানভাবে দায়িত্বশীল। আধুনিক পিতারা এখন সন্তানদের দৈনন্দিন যত্ন, শিক্ষাগত সহায়তা, আবেগীয় সমর্থন এবং ঘরকাঘরের কাজেও অংশ নিচ্ছেন।

পরিবারে সমানাধিকার ভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, সন্তানদের মানসিক বিকাশে মনোযোগী হওয়া এবং ঘরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা আধুনিক পিতার মূল দায়িত্ব।

৭. পিতার উপস্থিতির প্রভাব

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে পিতার সক্রিয় উপস্থিতি থাকে, সেই পরিবারের সন্তানরা মানসিকভাবে স্থিতিশীল, শিক্ষায় আগ্রহী এবং সামাজিকভাবে সক্ষম হয়। পিতার অনুপস্থিতি বা অমনোযোগ শিশুদের মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যেমন আত্মবিশ্বাসের অভাব, আচরণগত সমস্যা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।

পিতা যখন সন্তানের জীবনে আদর্শ এবং পথপ্রদর্শক হিসেবে উপস্থিত থাকেন, তখন তারা জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আত্মনির্ভরশীল ও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে।

৮. চ্যালেঞ্জ ও দায়িত্ব

পিতার জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ আসে। কাজের চাপ, অর্থনৈতিক সমস্যা, সামাজিক চাপ এবং ব্যক্তিগত সমস্যা বাবাদেরকে প্রভাবিত করে। তবে এই সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তিনি যদি পরিবারের কাছে একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ ও উদার পরিবেশ বজায় রাখেন, তখন তার ভূমিকা সার্থক হয়।

পিতার দায়িত্ব শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, তিনি মানসিক, নৈতিক, শিক্ষাগত এবং সামাজিক দিক থেকেও পরিবারকে সমর্থন দিতে হবে। এই বহুমাত্রিক দায়িত্ব পূরণ করা একটি চ্যালেঞ্জ, কিন্তু তা পরিবারকে সুখী, সুস্থ এবং সমৃদ্ধ করার জন্য অপরিহার্য।

৯. সমাপনী কথা

পরিবারে পিতার ভূমিকা সমগ্র পরিবারের স্বাস্থ্য, সুখ এবং সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। তিনি কেবল অর্থনৈতিক সহায়ক নয়, মানসিক সমর্থন, নৈতিক শিক্ষা, নেতৃত্ব এবং সামাজিক মূল্যবোধের প্রধান উৎস। আধুনিক সমাজে পিতার ভূমিকা আরও বিস্তৃত হয়েছে, যেখানে তিনি সন্তানের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

একটি সফল পরিবার গঠনের জন্য পিতার দায়িত্ব পালন, সন্তানের প্রতি স্নেহময় দৃষ্টি, নৈতিক ও সামাজিক শিক্ষা দেওয়া এবং পরিবারে নেতৃত্ব প্রদান অপরিহার্য। পিতার উপস্থিতি এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ শিশু এবং পুরো পরিবারের জন্য অনন্য শক্তি ও স্থিতিশীলতার উৎস।

পরিশেষে বলা যায়, পিতা হলো পরিবারের অদৃশ্য স্তম্ভ, যার উপস্থিতি পরিবারকে শক্তিশালী, সন্তানের মননশীল, নৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে উন্নত এবং পুরো সমাজকে সুস্থিত রাখে। বাবা শুধুমাত্র একটি পরিবারে নয়, পুরো সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশকের ভূমিকা পালন করেন।

Share This
Categories
প্রবন্ধ বিবিধ রিভিউ

গোয়ার দুধসাগর জলপ্রপাত – প্রকৃতির এক বিস্ময়।।

গোয়া মানেই সাধারণত বিচ, নাইটলাইফ আর পার্টি কালচার – কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য গোয়ার অন্যতম রত্ন হলো দুধসাগর জলপ্রপাত (Dudhsagar Waterfalls)। পশ্চিমঘাট পর্বতের কোলে অবস্থিত এই জলপ্রপাত যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব উপহার, যা প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটককে তার দিকে টেনে আনে।


🏞️ অবস্থান ও সৌন্দর্য

দুধসাগর জলপ্রপাত গোয়া ও কর্ণাটকের সীমান্তে অবস্থিত। এটি ভারতের অন্যতম উঁচু জলপ্রপাত – প্রায় ৩১০ মিটার (১০১৭ ফুট) উঁচু থেকে জল নেমে আসে চার ধাপে। দূর থেকে তাকালে মনে হয় যেন পাহাড় বেয়ে দুধের স্রোত নেমে আসছে, তাই এর নাম “দুধসাগর” – অর্থাৎ দুধের সাগর

বর্ষার সময় যখন মন্ডোভী নদীর জলপ্রবাহ তীব্র হয়, তখন জলপ্রপাতের সৌন্দর্য চরমে পৌঁছায়। চারপাশের সবুজ বন, ঝোপঝাড় আর পাহাড়ের গর্জন মিলিয়ে এক স্বর্গীয় দৃশ্য তৈরি করে।


🚆 যাত্রা ও রোমাঞ্চ

দুধসাগর ভ্রমণের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশ হলো সেখানে পৌঁছানো।

  • ট্রেনপথে: মাদগাঁও থেকে কোল্লেম (Kulem) বা কাসেলরক (Castle Rock) পর্যন্ত ট্রেন ধরে তারপর জঙ্গলপথে হেঁটে যাওয়া যায়। অনেকেই ট্রেনের জানলা থেকে জলপ্রপাতের দৃশ্য দেখতে পছন্দ করেন।
  • জিপ সাফারি: কোল্লেম থেকে জিপ সাফারি নিয়ে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।

🐾 প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী

দুধসাগর জলপ্রপাত ভগবান মহাবীর ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির অংশ। তাই এখানে বানর, হরিণ, পাখি, এমনকি বন্য মোষের ঝাঁকও দেখা যায়। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটি এক স্বর্গরাজ্য।


📸 ফটোগ্রাফির স্বর্গ

জলপ্রপাতের কাছাকাছি গেলে চারপাশে জলকণা ছড়িয়ে পড়ে, যা এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি করে। এখানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা, ভিডিও করা এক অনন্য অভিজ্ঞতা – বিশেষত ট্রেন যখন জলপ্রপাতের সামনের সেতু পেরিয়ে যায়, তখন সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধরার জন্য অনেক পর্যটক অপেক্ষা করে।


🏖️ ভ্রমণ টিপস

  • সেরা সময়: জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর (বর্ষাকাল) – জলপ্রপাত তখন সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর থাকে।
  • নিরাপত্তা: বৃষ্টির সময় পিচ্ছিল পথ সাবধানে চলতে হবে।
  • প্রস্তুতি: সঙ্গে জলরোধী ব্যাগ, হালকা খাবার ও ক্যামেরা রাখতে ভুলবেন না।

🏁 উপসংহার

দুধসাগর জলপ্রপাত শুধু একটি প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়, এটি এক অনন্য অ্যাডভেঞ্চার। জঙ্গলের পথ, পাহাড়ের সৌন্দর্য আর গর্জনরত জলপ্রপাতের দৃশ্য আপনার মনকে পরিপূর্ণ আনন্দ দেবে। গোয়া ভ্রমণে যদি একটু অফবিট অভিজ্ঞতা চান, তাহলে দুধসাগর জলপ্রপাত আপনার ট্রাভেল লিস্টে অবশ্যই থাকা উচিত।

Share This