Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

রাজস্থানের জয়সলমের নিয়ে একটি সুন্দর ও তথ্যবহুল ভ্রমণ কাহিনী।

🏜️ রাজস্থানের জয়সলমের – মরুর সোনার শহর

রাজস্থানের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত জয়সলমের (Jaisalmer) ভারতীয় মরুভূমির এক অদ্বিতীয় রত্ন। সোনালি বালির পাহাড়, রজত-সুন্দর স্থাপত্য, রাজকীয় দুর্গ এবং মরুভূমির বিস্ময়কর পরিবেশের জন্য জয়সলমেরকে বলা হয় “গোল্ডেন সিটি”


🏯 ইতিহাস ও পরিচিতি

জয়সলমের শহর প্রতিষ্ঠা করেন রাও জয়সল ১ম 1156 সালে। এটি প্রাচীন সময়ে কারওয়ান সারাই ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত ছিল। সিল্ক রোডের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে এটি বিভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতির মিলনস্থল ছিল। জয়সলমেরের স্থাপত্য ও দুর্গ আজও তার ঐতিহাসিক গৌরবকে প্রতিফলিত করে।


🌟 প্রধান দর্শনীয় স্থান

1️⃣ জয়সলমের ফোর্ট (Sonar Qila / Golden Fort)

পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়ানো এই দুর্গ সোনালি বেলেপাথরের তৈরি। এটি এক জীবন্ত শহর, কারণ এখনও এখানে বহু মানুষ বসবাস করেন।

  • পাটওয়ারী প্যালেস এবং মেহরানগড়ের মতো ছোট প্রাসাদ দুর্গের ভেতরে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।
  • সূর্যাস্তের সময় দুর্গের সোনালি আভা সত্যিই চোখ জুড়ে রাখে।

2️⃣ পাটওয়ানি হাভেলিস (Patwon Ki Haveli)

পাঁচটি সংযুক্ত হাভেলি যা প্রাচীন ধনীদের গৌরবের নিদর্শন। সূক্ষ্ম খোদাই, দৃষ্টিনন্দন বারান্দা ও বড় উঠোন পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

3️⃣ সালিম সিং হাভেলি (Salim Singh Haveli)

অদ্বিতীয় স্থাপত্য এবং বাঁকা চিমনির জন্য বিখ্যাত।

4️⃣ সমধিয়া হ্রদ ও বালুকার সৈকত (Sam Sand Dunes)

মরুভূমির বেলাভূমি যেখানে ঘোড়া বা উটের পিঠে সূর্যাস্তের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা উপভোগ করা যায়।

5️⃣ ফিসার ঝরণা ও ট্র্যাডিশনাল বাজার

স্থানীয় হস্তশিল্প, জুয়েলারি, রঙিন কাপড় এবং মাটির সামগ্রী কেনার জন্য সমৃদ্ধ বাজার।


🐪 মরুভূমির অভিজ্ঞতা

জয়সলমের ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ হল মরুভূমির সাহারা অভিযান। উটের পিঠে ভ্রমণ, মরুভূমিতে স্যান্ড বর্ডিং এবং রাতের সময় ক্যাম্প ফায়ার ও রাজস্থানির লোকসংগীত এই অভিজ্ঞতাকে স্মরণীয় করে তোলে।


🍲 রাজস্থানি খাবার

জয়সলমেরের স্বাদ-ভ্রমণও সমান রোমাঞ্চকর।

  • দাল-বাটি-চুরমা
  • গট্টে-কি-সবজি
  • কচৌরি, ঘেভর ও মালপুয়া
    এখানকার রাস্তার ধারের ছোট ছোট রেস্তোরাঁ ভ্রমণকারীদের মন জয় করে।

🛍️ কেনাকাটা

  • স্থানীয় হস্তশিল্প, লেদার ব্যাগ, নকশা করা কাপড়, পট্রি (Pottery) ও রাজস্থানি পাগড়ি কেনার জন্য বিখ্যাত।
  • সোনার কাসবাহ বাজারবাজারে হ্যান্ডিক্রাফট শপ পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়।

🚌 কীভাবে পৌঁছাবেন

  • ✈️ বিমানপথে: জয়সলমের বিমানবন্দর থেকে দিল্লি, মুম্বাই ও জয়পুরের সঙ্গে সংযোগ।
  • 🚉 রেলপথে: জয়সলমের জংশন ভারতের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে যুক্ত।
  • 🚗 সড়কপথে: জয়পুর, পুণ্ডুয়া ও বীকানের থেকে সহজ ড্রাইভে পৌঁছানো যায়।

🌄 উপসংহার

জয়সলমের শুধু একটি শহর নয়, এটি মরুভূমির স্বর্ণালী রূপকথা। সোনালি বেলেপাথরের দুর্গ, বালুকার বেলাভূমি, রাজকীয় হাভেলি, রাজস্থানি খাবার ও সংস্কৃতি মিলিয়ে এই শহর ভ্রমণকারীদের এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে। যারা মরুর জাদু এবং রাজপুত ঐতিহ্যের স্বাদ নিতে চান, তাদের জন্য জয়সলমের এক অপরিহার্য গন্তব্য।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

রাজস্থানের আম্বের ফোর্ট নিয়ে একটি সুন্দর ও তথ্যবহুল ভ্রমণ কাহিনী।

🏰 রাজস্থানের আম্বের ফোর্ট – রাজকীয় ইতিহাসের সোনালি অধ্যায়

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়পুর শহরের প্রায় ১১ কিমি দূরে অবস্থিত আম্বের ফোর্ট (Amber Fort) রাজপুত স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। পাহাড়ের গা ঘেঁষে তৈরি এই দুর্গের সৌন্দর্য, ইতিহাস ও কারুকাজ প্রত্যেক ভ্রমণপ্রেমীর মনে এক স্থায়ী ছাপ ফেলে। জয়পুর ভ্রমণে যারা যান, তাদের জন্য আম্বের ফোর্ট এক অবশ্যই দেখার মতো স্থান।


🏯 ইতিহাসের পাতায় আম্বের ফোর্ট

আম্বের ফোর্টের ইতিহাস শুরু হয় ১৬শ শতকে। রাজপুত রাজা মান সিং প্রথম (Raja Man Singh I) ১৫৯২ সালে এই দুর্গ নির্মাণ শুরু করেন এবং পরবর্তী শাসকরা এর সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন। এই দুর্গ ছিল কচ্ছওয়া রাজপুত রাজাদের প্রধান আবাসস্থল এবং এখান থেকেই জয়পুরের রাজারা শাসন করতেন।


🎨 স্থাপত্যের বৈভব

আম্বের ফোর্টের স্থাপত্যে রাজপুত ও মুঘল স্টাইলের মিশ্রণ দেখা যায়। এখানে রয়েছে সাদা মার্বেল, লাল বেলেপাথর এবং জটিল জালি কাজের এক অপূর্ব সমাহার।

🔸 প্রধান অংশগুলো

  • দিল-ই-আরাম বাগান: দুর্গের প্রবেশমুখেই রয়েছে এই সুন্দর উদ্যান।
  • দেওয়ান-ই-আম: যেখানে রাজা সাধারণ প্রজাদের অভিযোগ শুনতেন।
  • শীশ মহল (Mirror Palace): দুর্গের সবচেয়ে বিখ্যাত অংশ। দেয়াল ও ছাদে ছোট ছোট আয়না বসানো, যার ফলে একটি ছোট আলোও হাজার গুণ প্রতিফলিত হয়।
  • গণেশ পোল: সূক্ষ্ম চিত্রকলায় সজ্জিত প্রবেশদ্বার, যা দুর্গের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
  • সুখ নিভাস: যেখানে শীতলীকরণ ব্যবস্থার জন্য পানির ধারা ব্যবহার করা হতো।

🐘 হাতি চড়ে দুর্গে ওঠা

আম্বের ফোর্টে ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ হল হাতি চড়ে দুর্গে ওঠা। যদিও এখন প্রাণী কল্যাণের কারণে অনেকেই এই রাইড এড়িয়ে যান, তবুও এটি একসময় রাজকীয় যাতায়াতের অংশ ছিল।


🌅 লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো

সন্ধ্যাবেলা আম্বের ফোর্টে অনুষ্ঠিত লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলে। রাজপুত বীরদের কাহিনি, যুদ্ধের গল্প এবং দুর্গের নির্মাণ ইতিহাস আলো ও শব্দের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়।


🛍️ আশেপাশের বাজার

দুর্গের বাইরে ছোট ছোট দোকানে হস্তশিল্প, রাজস্থানি গয়না, কাঁচের কাজ, ব্লক প্রিন্টেড কাপড় ও রাজস্থানি পাগড়ি পাওয়া যায়।


🍲 স্থানীয় খাবারের স্বাদ

আম্বের ভ্রমণে এসে রাজস্থানি খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না। দাল-বাটি-চুরমা, গট্টে কি সবজি, মির্চি বড়া, লাল মাংস এখানে বিশেষ জনপ্রিয়।


🚌 কীভাবে পৌঁছাবেন

  • ✈️ বিমান পথে: জয়পুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি বা গাড়িতে প্রায় ৪৫ মিনিটে পৌঁছানো যায়।
  • 🚉 রেল পথে: জয়পুর রেলস্টেশন থেকে সহজেই ট্যাক্সি বা অটোতে যাওয়া যায়।
  • 🚗 সড়ক পথে: NH48 ধরে দিল্লি থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টার ড্রাইভ।

🌄 উপসংহার

আম্বের ফোর্ট শুধু একটি দুর্গ নয়, এটি এক রাজকীয় ইতিহাসের জ্যান্ত সাক্ষী। এর প্রতিটি করিডর, প্রতিটি আঙিনা যেন অতীতের বীরত্বগাথা ও রাজকীয় জাঁকজমকের গল্প বলে। স্থাপত্যের সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক কাহিনি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ মিলিয়ে আম্বের ফোর্ট ভ্রমণ প্রতিটি পর্যটকের জন্য এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিদেশে পুজোর আনন্দ।

ভূমিকা:-

দুর্গা পুজো বাঙালির জীবনের সবচেয়ে বড় উৎসব। একসময় কেবল কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, আসাম কিংবা বাংলাদেশের বাঙালিরাই এই উৎসব ঘিরে মাতোয়ারা থাকত। কিন্তু আজ প্রবাসী বাঙালির সংখ্যা কয়েক মিলিয়নে পৌঁছেছে। ফলে নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, টরন্টো, দুবাই, সিডনি, টোকিও কিংবা সিঙ্গাপুর—বিশ্বের নানা প্রান্তে আজ দুর্গা পুজো পালিত হয় মহাধুমধামে। বিদেশে এই পুজো শুধুই ধর্মীয় আচার নয়, এটি প্রবাসী বাঙালির পরিচয়, মিলনমেলা ও শিকড়ের সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষার এক অনন্য মাধ্যম।


বিদেশে দুর্গা পুজোর সূচনা

প্রবাসে দুর্গা পুজোর ইতিহাস প্রায় শতবর্ষ পুরনো।

  • প্রথম উদ্যোগ: ১৯০৯ সালে লন্ডনে প্রথম দুর্গা পুজোর আয়োজন হয় কিছু ভারতীয় ছাত্রছাত্রী ও ব্যবসায়ীর উদ্যোগে।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে: ভারত থেকে প্রচুর মানুষ পড়াশোনা ও চাকরির জন্য বিদেশে যান, তখন থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় পুজোর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
  • বর্তমান সময়ে: আজ যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ২০০টির বেশি দুর্গা পুজো অনুষ্ঠিত হয় প্রতি বছর। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও বহু বড় ক্লাব পুজো আয়োজন করে।

বিদেশে পুজোর প্রস্তুতি

বিদেশে পুজোর আয়োজন করা একেবারে সহজ নয়।

  • প্রতিমা: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা অর্ডার দিয়ে পাঠানো হয়, কখনো কখনো স্থানীয় শিল্পীরাও মাটির প্রতিমা বানান।
  • স্থান নির্বাচন: কমিউনিটি সেন্টার, স্কুল অডিটোরিয়াম, এমনকি বড় কনভেনশন হল ভাড়া করা হয়।
  • আর্থিক দিক: সব খরচ চলে সদস্যদের সাবস্ক্রিপশন, স্পনসরশিপ এবং ডোনেশন দিয়ে।
  • খাবার ও ভোগ: ভারতীয় রেস্টুরেন্ট থেকে খিচুড়ি, লাবড়া, বেগুন ভাজা, চাটনি ইত্যাদি প্রস্তুত করা হয়, যাতে ভোগের স্বাদ বাঙালির মতোই থাকে।

বিদেশে দুর্গা পুজোর সামাজিক গুরুত্ব

প্রবাসে এই পুজো কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির বার্ষিক উৎসব।

  • সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: রবীন্দ্রসঙ্গীত, নাটক, ধুনুচি নাচ, ফ্যাশন শো, এমনকি কুইজ প্রতিযোগিতাও হয়।
  • নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করানো: যারা বিদেশে জন্মেছে, তাদের জন্য এটি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার দুর্দান্ত সুযোগ।
  • মিলনমেলা: পড়াশোনা বা চাকরির চাপে একে অপরের সঙ্গে দেখা না হলেও পুজোর সময় সবাই মিলে একত্র হন।

কিছু উল্লেখযোগ্য বিদেশি দুর্গা পুজো

  • নিউ ইয়র্কের সার্বজনীন দুর্গা পুজো: যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পুজো, যেখানে হাজার হাজার বাঙালি একত্রিত হন।
  • লন্ডনের ক্যামডেন টাউন পুজো: ঐতিহ্যবাহী ইউরোপীয় দুর্গা পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম।
  • টরন্টোর বেঙ্গলি কালচারাল সোসাইটি পুজো: কানাডায় অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠান।
  • সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালামপুরের পুজো: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম জমজমাট পুজো, যেখানে ভারতীয় ও স্থানীয় জনগণ অংশ নেন।
  • দুবাই ও আবুধাবির পুজো: মধ্যপ্রাচ্যের বাঙালিরা সীমিত পরিসরে হলেও যথাযথভাবে উৎসব পালন করেন।

বিদেশে পুজোর চ্যালেঞ্জ

  • লজিস্টিক সমস্যা: প্রতিমা আনা, পুজোর সামগ্রী জোগাড় করা, বড় হল বুকিং—সবই সময়সাপেক্ষ।
  • ভিসা ও ছুটি: পুজোর তারিখ অনুযায়ী অনেককে ছুটি নিতে হয়, যা সবসময় সহজ নয়।
  • সংস্কৃতির পার্থক্য: স্থানীয় আইন মেনে শব্দদূষণ, আগুন বা ধূপ-ধুনো ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।

বিদেশে পুজোর আনন্দ

সব কষ্ট সত্ত্বেও বিদেশে দুর্গা পুজোর আবেগ আলাদা।

  • প্যান্ডেল ছোট হলেও উৎসাহ বিশাল।
  • সবার অংশগ্রহণ: রান্না থেকে শুরু করে সজ্জা, পূজা, গান—সব কাজ মিলেমিশে করা হয়।
  • নস্টালজিয়া: অনেকে কলকাতার পুজো মিস করলেও এখানে নতুন বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, মনে হয় যেন ছোট্ট কলকাতা তৈরি হয়েছে বিদেশের মাটিতে।

উপসংহার

বিদেশে দুর্গা পুজো আজ কেবল উৎসব নয়, এটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের এক মহা প্রচেষ্টা। বাঙালি যেখানেই থাকুক না কেন, মহালয়ার ভোর থেকে শুরু করে বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলা পর্যন্ত তার হৃদয়ে দেবীর আবাহন একইভাবে বেজে ওঠে। বিদেশে পুজো বাঙালিকে তার শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখে, নতুন প্রজন্মকে তার পরিচয়ের গর্ব শেখায় এবং বিশ্বমঞ্চে বাঙালি সংস্কৃতির এক অনন্য পরিচয় তুলে ধরে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

উত্তরাখণ্ডের রহস্যময় ভ্রমণ কাহিনী।

এই উত্তরাখণ্ডের ভ্রমণ স্থানগুলোকে একত্র করে একটি সুন্দর ভ্রমণ কাহিনী তৈরি করছি। এখানে আপনি পাবেন আধ্যাত্মিকতা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অ্যাডভেঞ্চারের এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

সন্ধ্যা নামতে নামতেই অরুণ তাঁর ব্যাগে শেষ কয়েকটি জিনিস ঢুকিয়ে দিল। আজ তিনি শুরু করতে যাচ্ছিলেন উত্তরাখণ্ডের এক অনন্য ভ্রমণ, যা তাঁকে নিয়ে যাবে হিমালয়ের সৌন্দর্য, পবিত্র নদী, হিল স্টেশন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষিত স্থানগুলোতে।


১️⃣ হরিদ্বার – গঙ্গার তীরে প্রথম পদক্ষেপ

হরিদ্বার পৌঁছেই অরুণের চোখ পড়ল ঘাটে জ্বলতে থাকা দীপাবলি আলোতে। গঙ্গার তীরে দাঁড়িয়ে সারা শহরের কীর্তন এবং আরতিগুলো মনকে শান্তি দিচ্ছিল। হার-কি-পৌরি থেকে পায়ে পায়ে হাঁটতে হাঁটতে তিনি অনুভব করলেন আধ্যাত্মিকতার গভীরতা।


২️⃣ ঋষিকেশ – অ্যাডভেঞ্চার ও ধ্যানের মিলন

পরের দিন তিনি রওনা দিলেন ঋষিকেশের পথে। নদীর তীরে হোয়াইট ওয়াটার রাফটিং করলেন। এরপর লক্ষ্মণ ঝুলন্ত সেতু পার হয়ে যোগ আশ্রমে ধ্যান করলেন। নদীর ঝর্ণার শব্দ এবং পাহাড়ের শীতল বাতাস এক অদ্ভুত প্রশান্তি দিচ্ছিল।


৩️⃣ কেদারনাথ – আধ্যাত্মিকতার উচ্চশিখরে

কেদারনাথের পবিত্র মন্দিরে পৌঁছালে অরুণ অনুভব করলেন নিঃশব্দ ভক্তির আবহ। বরফে ঢাকা পাহাড় এবং মন্দিরের ভিড়, সব মিলিয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছিল প্রকৃতির সৌন্দর্য ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের এক অনন্য মেলবন্ধন।


৪️⃣ বদ্রিনাথ – ভগবান বিষ্ণুর ধাম

কেদারনাথ থেকে এগিয়ে তিনি পৌঁছালেন বদ্রিনাথ। গঙ্গা এবং আলকানন্দা নদীর সংযোগস্থলে স্থাপিত এই মন্দিরে ভক্তদের প্রার্থনা এবং আরতি তাঁকে আলাদা এক আনন্দ দিল। পাহাড়ের শীতল বাতাস ও নদীর শব্দ ভ্রমণকে আরও স্মরণীয় করে তুলল।


৫️⃣ গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী – হিমালয়ের উত্স

ভ্রমণ আরও এগোতেই অরুণ পৌঁছালেন গঙ্গোত্রী। হিমালয়ের কোলাহলময় নদীর উত্সস্থান তাকে প্রকৃতির রহস্যময় সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচয় করাল। এরপর যমুনোত্রী যাওয়া এক আলাদা অনুভূতি দিল – বরফে ঢাকা পাহাড় এবং শান্ত নদীর মিলন সত্যিই হৃদয়স্পর্শী।


৬️⃣ নৈনিতাল ও মুসৌরি – হিল স্টেশন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

নৈনিতালে নয়নাভিরাম হ্রদ এবং পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করল। এরপর মুসৌরির ক্যান্টনমেন্ট এলাকা ও ট্রম লাইন দিয়ে পাহাড়ের পথ ঘুরে তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করলেন।


৭️⃣ আলমোড়া – ঐতিহ্য ও সবুজের মিলন

আলমোড়ায় পৌঁছালে তিনি দেখলেন পাহাড়ের উপত্যকা, সবুজ বন এবং ঐতিহ্যবাহী পাথরের বাড়ি। ছোট ছোট চায়ের দোকান এবং স্থানীয় হস্তশিল্প তাকে স্থানীয় জীবনধারার সঙ্গে পরিচয় করাল।


৮️⃣ জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক – বন্যপ্রাণীর অভিজ্ঞতা

শেষদিনে অরুণ গেলেন জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কে। বাঘ, হরিণ, হাতি এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। সাফারি চলাকালীন পাহাড়ের রোদের ছায়া এবং সবুজ বন তাকে প্রকৃতির সঙ্গে আরও গভীরভাবে সংযুক্ত করল।


🌄 ভ্রমণের সমাপ্তি

ভ্রমণ শেষে অরুণ হোটেলের বারান্দায় বসে ভাবলেন – হরিদ্বারের আধ্যাত্মিকতা, ঋষিকেশের অ্যাডভেঞ্চার, কেদার-বদ্রিনাথের পবিত্রতা, হ্রদ ও হিল স্টেশন, বনভূমি সব মিলিয়ে এই ভ্রমণ ছিল এক অসাধারণ জীবনদর্শন। প্রতিটি স্থান তার মনে ছাপ ফেলেছে, যা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে স্মৃতির মতো থাকবে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও প্রকৃত সাধু-সন্ন্যাসী : স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)।

আমাদের সুন্দর মূল্যবান মনুষ্য জীবনে, পরম সৌভাগ্যবশত আধ্যাত্মিক দেশ ভারতবর্ষে আমরা জন্মেছি। প্রাচীন কাল হতে এই পবিত্রভূমি, পূণ্যভূমি ভারতবর্ষে শত শত মহাপুরুষ সাধু-মহাত্মার আবির্ভাব ঘটেছে। তাদের কঠোর তপস্যা ও সাধনার ফলে ভারতভূমি আজ সারা বিশ্বের দরবারে পুণ্যভূমি, পবিত্রভূমি, সাধনা ও তপস্যার কেন্দ্রবিন্দু। ভারতভূমি তার স্বমহিমায় উজ্জ্বল। তাই ভারত মাতার পদপ্রান্তে ঘুরে ঘুরে, ভারতমাতাকে দর্শন করতে করতে, সাধু-সন্ন্যাসী কি? একটু জানার চেষ্টা করা। যেমন:-

১) জটাজুট ধারণ করলেই সাধু হওয়া যায় না, মহাত্মা তৈলঙ্গস্বামীর জট ছিল না।
২) গলায় বা হাতে রুদ্রাক্ষ ধারণ করলেই সাধু হওয়া যায় না, রামকৃষ্ণদেবের গলায় বা হাতে রুদ্রাক্ষ ধারণ করা ছিল না।
৩) মঠ-মন্দির-মিশন থাকলেই সাধু হওয়া যায় না, বাবা বামদেবের কোন মঠ-মন্দির-মিশন ছিল না।
৪) গেরুয়া-লাল-কালো বস্ত্র পরলেই সাধু হওয়া যায় না, লোকনাথ বাবার পরনে লাল, গেরুয়া বা কালো বস্ত্র থাকতো না।
৫) সঙ্ঘ বা সংগঠন করলেই বা আশ্রমে যোগদান করলেই সাধু হওয়া যায় না। লাহিড়ী মহাশয়ের কোনও সঙ্ঘ বা সংগঠন ছিল না।
৬) বেনারসের কিনারাম বাবার গলায় ‘নাদি’ ছিল না, তবুও তিনি অঘোরী সাধকদের গুরু ছিলেন।

*সাধু হতে গেলে প্রকৃত অর্থে অন্তঃশৌচ ও বহিঃশৌচ করার দরকার হয়……মনটাকে সাধু করতে হয়।* বসনে-ভূষণে সাধু হয় না, বসনে-ভূষণে সাধু সাজা হয়।

*অখণ্ড ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় অনেক স্বনামধন্য পরিবার থেকে বহু ভারত মাতার সুসন্তান এই সন্ন্যাসী লাইনে এসেছিলেন। তারা অনেক সন্ন্যাসী সংস্থাকে, আশ্রমকে মহিমাময় করে তুলেছেন। অনেক গৌরবময় ধার্মিক, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, অনেক মঠ, আশ্রম, জনহিতকর প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। মঠ, আশ্রমকে, সংঘকে, সাধু সমাজকে জনমানসে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।*

আবার খন্ডিত ভারতে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক তরতাজা যুবক যেমন স্বেচ্ছায় সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। তেমনি অনেক পূর্ব-পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) হতে পাকিস্তানি সেনাদের ভয়ে ভীত হয়ে আশ্রয় ও নিরাপত্তার স্বার্থে, অনেক আশ্রমে, সংঘে, মঠে, সংস্থায় আশ্রয় নিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছিলেন। তারা নিজের জীবন জীবিকার জন্য ভয়ে সন্ন্যাসী হয়েছিলেন, ভক্তিতে নয়।

আবার লিখতে ও বলতে খুবই দুঃখ হয়, খারাপ লাগে। খুব দুঃখের বিষয় যে, আজকাল অনেক আশ্রমে, অনেক সংস্থায়, নুতন সাধু আশ্রমে প্রবেশের ন্যূনতম নিয়মকানুন না থাকাই, অনেক নিম্নমানের, নিম্ন রুচিসম্পন্ন লোক জীবন জীবিকার জন্য সন্ন্যাসী হয়ে যাচ্ছে। *(তারে কিটি ধা মেরে কেটে খা) তারা সন্ন্যাসী হওয়ার বদলে জীবন জীবিকার সন্ধানে এসেছে। তারা ভেকধারি, চিটিংবাজ, ধাপ্পাবাজ, সন্ন্যাসী তৈরি হচ্ছে।*

*আবার অনেক আশ্রমে আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডল না থাকায়, সাধু-সন্ন্যাসীগণ আত্মহত্যা করছে। খুনের আসামি, জেলখাটা আসামি, ধর্ষণ কেসের আসামীতে পরিণত হচ্ছে। তারা আবার আশ্রমের অধ্যক্ষ, আশ্রমের পদ অধিকার করে বসে আছে।*

আবার অনেক বিধর্মী ভারতে এসে নিজের নাম-ধর্ম-পরিচয় গোপন করে সাধু সাজছে, ইনারাই বড় বড় সন্ন্যাসী, সাধু হয়ে যাচ্ছে। অনেক সংস্থার আশ্রমের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হচ্ছে। এইসব কারণের ফলে সাধু সমাজ, আশ্রমগুলি ও সত্য সনাতন ধর্মকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে। এই বিষয়ে সত্য সনাতন ধর্মের রক্ষকদের ও প্রকৃত সাধু সন্ন্যাসীদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

আবার অনেক সুপ্রতিষ্ঠিত আশ্রমগুলিতে সুন্দর নিয়মমাফিক আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডল ও ভাবধারা বিরাজমান। সেখানে প্রকৃত সাধু সন্ন্যাসী হবার মনোভাব নিয়ে আশ্রমে এসেছে কিনা তা যাচাই করার পরই সন্ন্যাস লাইনে প্রবেশ-অধিকার দেয়া হয়। সেখানে ভারত মাতার সুসন্তান ও রুচিবোধ সম্পন্ন, শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন যুবকদের প্রবেশ অধিকার দেওয়া হয়। তাই সেই আশ্রমগুলি সারা বাংলা তথা ভারতবর্ষ ও বিশ্বব্যাপী ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার গৌরবময় ধার্মিক পরিমন্ডল হয়ে উঠেছে।

পরিশেষে ভারত মাতার চরণে, সমস্ত প্রকৃত সাধু-মহাত্মাদের চরণে আমি ভক্তিপূর্ণ ভুমিষ্ঠ প্রণাম নিবেদন করি, ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করি। জগৎগুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি প্রণাম নিবেদন করি।
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্।
স্বামী আত্মভোলানন্দ *পরিব্রাজক*
🙏🏻🙏🏻🙏🏻

*কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মানসিক আঘাত দেওয়ার জন্য এ লেখা নয়। এটি চরম সত্য, তাই অনেক দুঃখের সাথে তুলে ধরলাম।*

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ফুলের ময়দান – জম্মু ও কাশ্মীরের গুলমার্গ নিয়ে একটি সুন্দর ভ্রমণ কাহিনী।

যখন কেউ “কাশ্মীর” শব্দটি শোনে, মনের মধ্যে যে ছবিটি প্রথম আঁকা হয় তা হলো তুষারে মোড়া পাহাড়, সবুজ মেদিনী এবং নীরব সৌন্দর্য। সেই ছবির বাস্তব রূপ হলো গুলমার্গ। জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুলা জেলায় অবস্থিত এই মনোরম হিল স্টেশনটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শীতকালীন খেলাধুলা এবং রোমাঞ্চের এক অনন্য মিলন। গুলমার্গকে বলা হয় “Meadow of Flowers” – অর্থাৎ ফুলের ময়দান, কারণ গ্রীষ্মে এখানে ফুটে ওঠে অসংখ্য বুনো ফুল, আর শীতে এটি রূপ নেয় বরফের রাজ্যে।


🏞 অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

গুলমার্গ প্রায় ২,৬৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। চারদিকে পির পাঞ্জাল পর্বতমালার তুষারাবৃত চূড়া একে সত্যিই স্বর্গীয় সৌন্দর্য দেয়। গ্রীষ্মকালে সবুজ ঘাস, রঙিন ফুল এবং হিমালয়ের শীতল বাতাস পর্যটকদের মন জয় করে। আর শীতে গুলমার্গ রূপ নেয় আন্তর্জাতিক মানের স্কি রিসোর্টে


🚡 গন্ডোলা রাইড – আকাশে ভেসে ওঠার অনুভূতি

গুলমার্গের সবচেয়ে বিখ্যাত আকর্ষণ হলো গুলমার্গ গন্ডোলা, যা বিশ্বের অন্যতম উচ্চতম কেবল কার।

  • প্রথম ধাপ পর্যটকদের নিয়ে যায় কংদোর বেস স্টেশনে (প্রায় ৩,০৮০ মিটার)।
  • দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে যায় আফারওয়াত শিখরের কাছে (প্রায় ৩,৯৭৯ মিটার) – যেখানে চারপাশের তুষারাবৃত পাহাড় চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।
    এই রাইডে দাঁড়িয়ে মনে হয় যেন আপনি আকাশ ছুঁয়ে ফেলছেন।

🎿 শীতকালীন খেলাধুলা

গুলমার্গকে বলা হয় ভারতের স্কি রাজধানী

  • এখানে স্কি, স্নোবোর্ডিং, স্নো ট্রেকিং, স্লেজ রাইড, স্নোম্যান বানানো ইত্যাদি অসাধারণ অভিজ্ঞতা নেওয়া যায়।
  • প্রতি বছর আন্তর্জাতিক পর্যটকরা গুলমার্গে এসে স্কি করার আনন্দ উপভোগ করেন।

🌸 গ্রীষ্মকালীন সৌন্দর্য

শুধু শীতেই নয়, গুলমার্গ গ্রীষ্মকালেও স্বর্গের মতো সুন্দর।

  • পাহাড়ি পথ ধরে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে দেখা যায় খিলানমার্গ, আলপাথর লেক ইত্যাদি।
  • গ্রীষ্মকালে এখানে অসংখ্য বুনো ফুল ফোটে – পপি, ব্লুবেল, ডেইজি, বাটারকাপ – যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক রঙিন অভিজ্ঞতা।

🕌 আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

  • শ্রাইন অব বাবা রেশি – ১৫শ শতকের সুফি সন্তের সমাধি।
  • খিলানমার্গ – ঘোড়ায় চেপে বা ট্রেক করে যাওয়া যায়, এখান থেকে পুরো গুলমার্গ ভ্যালি দেখা যায়।
  • আলপাথর লেক – বরফে ঢাকা সুন্দর হ্রদ, গ্রীষ্মেও যার জল বরফশীতল।

🏨 আবাসন ও আতিথেয়তা

গুলমার্গে রয়েছে নানা ধরনের হোটেল, কটেজ ও রিসোর্ট – বিলাসবহুল থেকে বাজেট ফ্রেন্ডলি সব ধরনের। শীতকালে গরম কাঠের কটেজে বসে বাইরে বরফঝড় দেখা এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। স্থানীয় কাশ্মীরি কাহওয়া চা ও গুসতাবা, রোগানজোশের মতো খাবার স্বাদে এনে দেয় বাড়তি আনন্দ।


📸 ফটোগ্রাফির স্বর্গ

গুলমার্গে গেলে ক্যামেরা না থাকাটা অপরাধ! বরফের মধ্যে স্কি করা মানুষ, গন্ডোলার আকাশযাত্রা, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য, পাহাড়ের মাঝে ছোট ছোট গ্রাম – সব কিছুই পোস্টকার্ডের মতো সুন্দর।


🛡 সংরক্ষণ ও দায়িত্বশীল ভ্রমণ

গুলমার্গের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য পর্যটকদের সচেতন থাকা জরুরি। প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত থাকা, প্রকৃতি নষ্ট না করা – এই জায়গার ভবিষ্যৎ সৌন্দর্য রক্ষায় সবার দায়িত্ব।


🏁 উপসংহার

গুলমার্গ এমন এক জায়গা, যেখানে একসঙ্গে শান্তি, রোমাঞ্চ ও সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তুষারে ঢাকা ঢাল, আকাশছোঁয়া গন্ডোলা রাইড, গ্রীষ্মে ফুলের মেলা – সব মিলিয়ে এটি যেন এক রূপকথার দেশ। কাশ্মীর ভ্রমণ যদি করেন, তবে গুলমার্গ না গেলে আপনার যাত্রা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

মহালয়া মানেই আবেগ, স্মৃতি ও বাঙালির চিরন্তন উৎসবের ডাক।

ভূমিকা:-  ভোর রাত পেরিয়ে অন্ধকার যখন ফিকে হতে থাকে, আকাশে তখনও একফোঁটা চাঁদের আলো। ঠিক তখনই বাজতে শুরু করে সেই চেনা কণ্ঠস্বর—
“যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা…”

এ এক এমন মুহূর্ত যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঙালির হৃদয়ে আবেগের জোয়ার বইয়ে দেয়। এ হলো মহালয়ার সকাল, এ হলো বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী। বাঙালি জীবনে মহালয়া মানে শুধু পিতৃপক্ষের অবসান নয়, এটি দুর্গাপুজোর সূচনা এবং এক অনন্য সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার নাম। আর এই অভিজ্ঞতার কেন্দ্রবিন্দু হলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।

মহালয়া: এক ঐতিহ্যের নাম

হিন্দু শাস্ত্রমতে, মহালয়া হল ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা থেকে শুরু হওয়া পিতৃপক্ষের শেষ দিন। এই দিনে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করলে তাঁদের আত্মা শান্তি পায় বলে বিশ্বাস করা হয়। কিন্তু বাংলার মানুষের কাছে মহালয়ার আরও এক তাৎপর্য রয়েছে — দেবীপক্ষের সূচনা। এই দিন থেকেই শুরু হয় দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন।

মহিষাসুরমর্দিনীর জন্মকথা

১৯৩১ সালে আকাশবাণী কলকাতা প্রথম সম্প্রচার করে মহিষাসুরমর্দিনী নামের এক অনন্য সঙ্গীতনাট্য। স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন বাণী কুমার (বাণীশরণ চট্টোপাধ্যায়) এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক।
এটি মূলত চণ্ডীপাঠ, শাস্ত্রোক্ত স্তোত্র, গান ও সংগীতের মিশ্রণে তৈরি একটি আধুনিক শ্রবণনাট্য, যা ভোরবেলা আকাশবাণী থেকে সম্প্রচারিত হয়।

প্রথম দিন থেকেই এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং বাঙালির দুর্গোৎসবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র: কণ্ঠযাদুকরের আবির্ভাব

মহিষাসুরমর্দিনীর প্রাণ হলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।

জন্ম: ১৯০৫ সালে কলকাতায়।

শিক্ষা: সংস্কৃত ভাষা ও শাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন।

আকাশবাণীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি মহিষাসুরমর্দিনীর আবৃত্তিকার হিসেবে নির্বাচিত হন।

তাঁর কণ্ঠে চণ্ডীপাঠের যে গভীরতা ও ভক্তিভাব প্রতিফলিত হয়েছে, তা আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁর উচ্চারণে ছিল প্রাঞ্জলতা, ছন্দে ছিল অনন্য গাম্ভীর্য, আর স্বরে ছিল এমন এক শক্তি যা শুনলেই শ্রোতা দেবীর রূপ কল্পনা করতে পারেন।

“যা দেবী সর্বভূতেষু”: এক চিরন্তন ধ্বনি

মহিষাসুরমর্দিনীর প্রথম শব্দ থেকেই যে ভক্তিময় পরিবেশ তৈরি হয়, তা অনন্য।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের আবৃত্তি শুরু হয়—
“যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা…”

এই মন্ত্রোচ্চারণ যেন পুরো মহালয়ার আবহকে ভরিয়ে তোলে এক আধ্যাত্মিক শক্তিতে। সেই সঙ্গে গান—

“শুনো শুনো শুনো শোভন…”

“জাগো দুর্গা…”

“বাজলো তোমার আলোর বেণু…”

সব মিলিয়ে ভোরবেলার কলকাতার আকাশে এক অন্যরকম আবহ তৈরি হয়।

বাঙালির আবেগ ও স্মৃতি

মহালয়া শুনতে মানুষ ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠে, রেডিও বা এখন টিভি/মোবাইলে অনুষ্ঠান শোনে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী বাঙালির কাছে এক স্মৃতি, আবেগ ও নস্টালজিয়ার উৎস।

বহু মানুষ বলেন, মহিষাসুরমর্দিনী শুনলেই দুর্গাপুজোর গন্ধ পাওয়া যায়।

পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে শোনেন, ছোটদের বোঝানো হয় দেবীর আগমনের কাহিনি।

এমনকি বিদেশে থাকা বাঙালিরাও অনলাইনে মহালয়ার দিন এই অনুষ্ঠান শোনেন।

 

বিরাট বিতর্ক: কণ্ঠ বদলের চেষ্টা

১৯৭৬ সালে আকাশবাণী প্রথমবার বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ বাদ দিয়ে নতুন সংস্করণ সম্প্রচার করেছিল, যেখানে আবৃত্তি করেছিলেন উত্তমকুমার। কিন্তু শ্রোতারা এই পরিবর্তন মেনে নেননি। প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়ে পরের বছরই আকাশবাণী আবার পুরনো সংস্করণ ফিরিয়ে আনে।
এটি প্রমাণ করে যে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ শুধু আবৃত্তি নয়, এটি বাঙালির আবেগের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

মহালয়া আজকের দিনে

আজ মহালয়া শুধু রেডিওতে সীমাবদ্ধ নয়, টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান, লাইভ শো, এবং অনলাইনে স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে মানুষ মহিষাসুরমর্দিনী শোনেন। কিন্তু বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের রেকর্ডিং এখনও সবচেয়ে বেশি শোনা হয়।

এটি প্রমাণ করে—

প্রযুক্তি বদলেছে, কিন্তু আবেগ একই রয়ে গেছে।

প্রজন্ম পাল্টেছে, কিন্তু মহালয়ার সকাল এখনও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ ছাড়া অসম্পূর্ণ।

 

উপসংহার

মহালয়া ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র একে অপরের সমার্থক। মহালয়ার আসল আবহ তৈরি হয় তাঁর কণ্ঠেই। তিনি শুধু একটি অনুষ্ঠানকে জনপ্রিয় করেননি, বাঙালির আবেগকে এক অমর রূপ দিয়েছেন। যতদিন বাঙালি থাকবে, দুর্গাপুজো থাকবে, ততদিন মহালয়ার সকাল শুরু হবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী দিয়ে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

মহালয়া আসলে পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনা।

ভূমিকা

বাংলার দুর্গোৎসবের সূচনা হয় মহালয়ার মাধ্যমে। এই দিনটিকে বাঙালি সমাজে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়। মহালয়া মানেই এক অদ্ভুত আবেগ, এক আশার প্রতীক্ষা। রেডিও বা টেলিভিশনে ভোরবেলা মহিষাসুরমর্দিনী শোনা, গঙ্গার ঘাটে পিতৃতর্পণ, ঘরে ঘরে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি — সব মিলিয়ে মহালয়া এক অনন্য দিন। মহালয়া আসলে পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনা। অর্থাৎ এই দিন থেকেই দেবী দুর্গার আগমনের পথ প্রশস্ত হয়।


মহালয়ার আক্ষরিক অর্থ

“মহালয়া” শব্দটি এসেছে সংস্কৃত থেকে — “মহা” অর্থাৎ মহান, এবং “আলয়” অর্থাৎ আবাস। এই দিনে পূর্বপুরুষদের আত্মা মহালয়ে বা পিতৃলোকে আবাস নেন বলে বিশ্বাস করা হয়। আবার এটি এমন এক দিন, যখন আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।


পিতৃপক্ষ ও তার তাৎপর্য

হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুসারে, ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা থেকে শুরু হয় পিতৃপক্ষ, যা চলে আশ্বিন মাসের অমাবস্যা পর্যন্ত। এই সময়কালে পূর্বপুরুষদের আত্মা পৃথিবীতে আসে বলে বিশ্বাস করা হয়। এই দিনগুলিতে মানুষ শ্রাদ্ধ, পিণ্ডদান, তর্পণ ইত্যাদি করে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।

মহালয়া হল পিতৃপক্ষের শেষ দিন। এই দিন তর্পণ করলে পূর্বপুরুষরা সন্তুষ্ট হন এবং আশীর্বাদ দেন বলে বিশ্বাস রয়েছে।


দেবীপক্ষের সূচনা

মহালয়ার আরেকটি দিক হলো দেবীপক্ষের সূচনা। শাস্ত্রমতে, এই দিন থেকেই দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধযাত্রা শুরু হয়। দেবলোক থেকে তিনি তাঁর সন্তানদের নিয়ে মর্ত্যে আগমন করেন। মহালয়ার পর থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত পাঁচদিন ধরে দেবীর পৃথিবীতে আগমনের কাহিনি কল্পনায় বাঙালি হৃদয়ে প্রতিফলিত হয়।


মহালয়া ও মহিষাসুরমর্দিনী

মহালয়ার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে মহিষাসুরমর্দিনী নামের একটি রেডিও প্রোগ্রাম। ১৯৩১ সালে প্রথম আকাশবাণী কলকাতা থেকে সম্প্রচারিত হয় এই অনুষ্ঠান। স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন বাণী কুমার (বাণীশরণ চট্টোপাধ্যায়) এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক।

সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বর। তাঁর আবৃত্তি — “যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা…” — আজও কোটি বাঙালির কানে প্রতিধ্বনিত হয়। এই আবৃত্তি, গান এবং সংগীতের সমন্বয়ে মহালয়া এক অনন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।


পিতৃতর্পণ ও আচার-পদ্ধতি

মহালয়ার ভোরে বহু মানুষ গঙ্গার ঘাটে যান পিতৃতর্পণের জন্য।
আচারগুলো সাধারণত এইভাবে পালিত হয়:

  1. ভোরবেলা স্নান করে পবিত্র হওয়া।
  2. গঙ্গা বা পবিত্র জলের তীরে দাঁড়িয়ে পিণ্ডদান ও জলতর্পণ করা।
  3. পিতৃদের নাম স্মরণ করে মন্ত্রোচ্চারণ।
  4. দরিদ্র ব্রাহ্মণদের খাদ্যদান ও দক্ষিণা প্রদান।

এই সমস্ত আচার মূলত আত্মার শান্তি ও পারিবারিক সুখশান্তির জন্য করা হয়।


মহালয়ার সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

মহালয়া শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বাংলার সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ।

  • শিল্প ও সংগীত: মহিষাসুরমর্দিনীর সুর, সংগীত, আবৃত্তি আজও মানুষের হৃদয়ে এক বিশেষ আবেগ জাগিয়ে তোলে।
  • পুজোর প্রস্তুতি: মহালয়ার পর থেকেই শুরু হয় প্রতিমা গড়ার শেষ ধাপ — চোখ আঁকা বা চক্ষুদান। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি।
  • সামাজিক দিক: মহালয়া এমন এক সময় যখন পরিবার একত্রিত হয়, পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে, এবং নতুন প্রজন্মকে সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।

মহালয়ার বৈজ্ঞানিক দিক

অনেক পণ্ডিত মহালয়ার সময়কে প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত করেন। আশ্বিন মাসে ঋতুচক্রে পরিবর্তন আসে, বর্ষা বিদায় নেয় এবং শরতের নির্মল আকাশে শিউলি ফুটতে শুরু করে। প্রকৃতি যেন নিজেই দুর্গাপুজোর জন্য প্রস্তুতি নেয়। এই সময় কৃষিকাজেরও এক নতুন সূচনা হয়।


মহালয়া: আধুনিক প্রেক্ষাপটে

আজকের দিনে মহালয়ার গুরুত্ব কিছুটা পাল্টেছে। আকাশবাণীর বদলে এখন টেলিভিশনে মহালয়ার স্পেশাল শো হয়, যেখানে নাচ, গান, অভিনয়ের মাধ্যমে দেবীর আগমনের কাহিনি দেখানো হয়। তবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠের মহিষাসুরমর্দিনীর আবেদন আজও অপরিবর্তিত। বহু মানুষ আজও ভোরে উঠেই রেডিও বা মোবাইল অ্যাপে সেই অনুষ্ঠান শোনেন।


সমাজ ও প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয়

মহালয়া আমাদের শেখায় —

  • পূর্বপুরুষদের সম্মান করতে হবে।
  • পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে।
  • ধর্মীয় উৎসবের মাধ্যমে সমাজে ঐক্য, আনন্দ এবং সাংস্কৃতিক চেতনা জাগিয়ে তুলতে হবে।

উপসংহার

মহালয়া শুধুমাত্র একটি দিন নয়, এটি এক আবেগ, এক সাংস্কৃতিক বন্ধন, এক আধ্যাত্মিক যাত্রা। এই দিন থেকে শুরু হয় বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব — দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন। মহালয়ার সকাল যেন আকাশে বাজিয়ে দেয় নতুন আশার সুর, যেখানে ভক্তির সঙ্গে মিশে থাকে নস্টালজিয়া, পারিবারিক মিলন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আবহ।

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল – শুধু একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী নন, বরং স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক একতা প্রতিষ্ঠার প্রধান স্থপতি।

ভূমিকা

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে কিছু নাম চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু, ভগৎ সিং – এই নামগুলোর সঙ্গে যিনি সমান মর্যাদা পান তিনি হলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। তাঁকে বলা হয় ভারতের লোহপুরুষ (Iron Man of India)। কারণ তিনি শুধু একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী নন, বরং স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক একতা প্রতিষ্ঠার প্রধান স্থপতি। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব, প্রশাসনিক দক্ষতা ও আপসহীন চরিত্রের কারণে আজকের ভারতের মানচিত্র গঠিত হয়েছে।


শৈশব ও শিক্ষাজীবন

বল্লভভাই প্যাটেলের জন্ম ৩১ অক্টোবর ১৮৭৫ সালে গুজরাটের নাডিয়াদ গ্রামে। তাঁর পিতা ঝাভেরভাই একজন কৃষক ছিলেন এবং মাতা লাদবাই ছিলেন এক দৃঢ়চেতা গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই বল্লভভাই ছিলেন মেধাবী, সাহসী এবং পরিশ্রমী।

শৈশবে তিনি প্রথাগত শিক্ষা নেন গুজরাটের স্থানীয় বিদ্যালয়ে। আর্থিক অভাব থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের প্রচেষ্টায় পড়াশোনা চালিয়ে যান। ২২ বছর বয়সে তিনি মেট্রিকুলেশন পাশ করেন – যা তখনকার সময়ে গ্রামাঞ্চলের জন্য বিরল ঘটনা।

পরে তিনি আইনজীবী হওয়ার জন্য লন্ডনে যান। লন্ডনের মিডল টেম্পল ইন থেকে তিনি ব্যারিস্টারি পাশ করেন। দেশে ফিরে তিনি সফল আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন এবং গুজরাটে তাঁর নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে।


পরিবার ও ব্যক্তিজীবন

বল্লভভাই প্যাটেলের বিয়ে হয়েছিল ঝাভেরবাবি প্যাটেলের সঙ্গে। তাঁদের দুটি সন্তান ছিল – কন্যা মনিবেন এবং পুত্র দাহ্যাভাই। কিন্তু স্ত্রী অল্প বয়সেই মারা যান। এরপর প্যাটেল সন্তানদের একা মানুষ করেন। তাঁর কন্যা মনিবেন পিতার ছায়াসঙ্গিনী হয়ে সারা জীবন ছিলেন এবং প্যাটেলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে থেকেছেন।


রাজনীতিতে প্রবেশ

বল্লভভাই প্রথমে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। তিনি একজন সফল আইনজীবী হিসেবে স্বচ্ছল জীবন যাপন করছিলেন। কিন্তু ১৯১৭ সালে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয় এবং সেখান থেকেই তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু। গান্ধীর আদর্শ – অহিংসা ও সত্যাগ্রহ তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

তিনি গুজরাটে খেলাফত আন্দোলন, অহমেদাবাদের মিল শ্রমিকদের ধর্মঘট ও পরে বারদোলি সত্যাগ্রহ (১৯২৮) নেতৃত্ব দেন। এই আন্দোলনের জন্যই তাঁকে “সর্দার” উপাধি দেওয়া হয়। বারদোলি সত্যাগ্রহ ছিল কৃষকদের উপর অন্যায় কর বৃদ্ধির বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক অহিংস সংগ্রাম।


স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান

সর্দার প্যাটেল কংগ্রেস দলের এক অনন্য সংগঠক ছিলেন। তিনি

  • নাগরিক অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০–২২)
  • দ্বিতীয় অসহযোগ আন্দোলন ও দান্ডি অভিযান (১৯৩০)
  • ভারত ছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২)
    – প্রতিটি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

তিনি বহুবার ব্রিটিশ সরকারের হাতে কারাবন্দি হন। কিন্তু তাঁর মনোবল কখনও ভাঙেনি। তিনি গুজরাট ও পশ্চিম ভারতের জনগণকে রাজনীতিতে সক্রিয় করে তোলেন এবং গান্ধীর অন্যতম বিশ্বস্ত সহযোগী হয়ে ওঠেন।


অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও প্রধানমন্ত্রী পদ বিতর্ক

১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করলে সর্দার প্যাটেল স্বরাষ্ট্র ও তথ্য সম্প্রচার দপ্তরের দায়িত্ব পান। কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১৫টি প্রাদেশিক কমিটি তাঁকে মনোনীত করলেও মহাত্মা গান্ধীর ইচ্ছায় তিনি নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন এবং নেহেরুকে সুযোগ দেন।

ইতিহাসবিদরা বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন প্যাটেলের পক্ষে থাকলেও তিনি দলের ঐক্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন। যদি তিনি প্রধানমন্ত্রী হতেন তবে ভারতের প্রশাসনিক কাঠামো হয়তো আরও দৃঢ় হাতে পরিচালিত হতো।


স্বাধীন ভারতের লোহপুরুষ

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর তিনি ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন। তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান হলো ভারতের ভূখণ্ডগত ঐক্য রক্ষা।

তখন ব্রিটিশ ভারতকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল – ভারত ও পাকিস্তান। ব্রিটিশ শাসনের বাইরে ছিল ৫৬২টি দেশীয় রাজ্য। সর্দার প্যাটেল দক্ষতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে এসব রাজ্যকে ভারতের সঙ্গে একীভূত করেন।

  • হায়দরাবাদ, জুনাগড় ও কাশ্মীর – এই তিনটি রাজ্যের একীকরণ ছিল সবচেয়ে জটিল।
  • হায়দরাবাদে “অপারেশন পোলো” চালিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে একীভূত করা হয়।
  • জুনাগড় পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে প্যাটেল গণভোটের মাধ্যমে সেটিকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করেন।

তাঁর এই অবদানের কারণেই তাঁকে বলা হয় “ভারতের একীকরণের স্থপতি”


অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক অবদান

প্যাটেল কেবল রাজ্য একীকরণেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবা (IAS) ও ভারতীয় পুলিশ পরিষেবা (IPS) বজায় রাখেন এবং নবগঠিত রাষ্ট্রের জন্য একটি দৃঢ় আমলাতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলেন।

তাঁর বিশ্বাস ছিল – শক্তিশালী কেন্দ্র ছাড়া দেশ টিকে থাকতে পারবে না। তাই তিনি সংবিধানে কেন্দ্রকে শক্তিশালী করার পক্ষে ছিলেন।


ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের ধরণ

সর্দার প্যাটেল ছিলেন দৃঢ়চেতা, বাস্তববাদী ও স্পষ্টভাষী নেতা। তিনি ত্যাগ ও শৃঙ্খলাকে জীবনের মূলমন্ত্র মনে করতেন। তাঁর সাহসী মনোভাবের জন্য তাঁকে “লোহপুরুষ” বলা হয়।

তিনি নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। গান্ধীজির মৃত্যুর পর তিনি কয়েক মাস মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, কারণ গান্ধী তাঁর রাজনৈতিক জীবনের পথপ্রদর্শক ছিলেন।


শেষ দিনগুলি

১৯৫০ সালের শেষ দিকে তাঁর স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটে। ১৫ ডিসেম্বর ১৯৫০ সালে মুম্বাইয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর পুরো দেশ শোকাহত হয়।

ভারত সরকার তাঁকে মরণোত্তর ভারতরত্ন (১৯৯১ সালে) প্রদান করে।


উত্তরাধিকার ও স্মৃতিচিহ্ন

সর্দার প্যাটেলের অবদানের স্মরণে গুজরাটের নর্মদা জেলায় ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেন “স্ট্যাচু অফ ইউনিটি” – বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি (উচ্চতা ১৮২ মিটার)। এটি তাঁর অবিস্মরণীয় ভূমিকার প্রতীক।


উপসংহার

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন প্রশাসক, সংগঠক, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাষ্ট্রনায়ক – সব মিলিয়ে এক পূর্ণাঙ্গ দেশনায়ক।

তাঁর জীবনের শিক্ষা আজও প্রাসঙ্গিক:

  • জাতীয় ঐক্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া
  • প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও দৃঢ় নেতৃত্ব
  • ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার চেয়ে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখা

সত্যিই, তিনি ভারতের “লোহপুরুষ” – যার দৃঢ়তা ছাড়া আজকের ভারতের মানচিত্র এ রকম হতো না।

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস শুধুমাত্র একজন কবি বা ঋষি ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক যুগস্রষ্টা।

ভূমিকা

ভারতের আধ্যাত্মিক ইতিহাসে যে কয়েকজন মহামুনি তাঁদের অনন্য অবদানের জন্য যুগে যুগে শ্রদ্ধার আসনে বিরাজমান, তাঁদের মধ্যে মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস সর্বাগ্রে। তিনি শুধু এক মহাকাব্যকার নন, তিনি ছিলেন ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার স্থপতি। তাঁর রচিত মহাভারত বিশ্বের দীর্ঘতম মহাকাব্য, যার মধ্যে মানবজীবনের প্রায় সমস্ত দিক – ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ – এর শিক্ষা বিদ্যমান। তিনি বেদের বিভাজন করেছিলেন, পুরাণ রচনা করেছিলেন এবং হিন্দুধর্মকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য করে তুলেছিলেন। তাই তাঁকে “ব্যাসদেব”, “বেদব্যাস” এবং “হিন্দু সংস্কৃতির মহাগুরু” বলা হয়।

জন্ম ও বাল্যজীবন

মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়নের জন্ম ছিল অলৌকিক। তাঁর পিতা মহর্ষি পরাশর, যিনি একজন মহান ঋষি ও যোগী ছিলেন, গঙ্গার তীরে সত্যবতী নামে এক যুবতীর সঙ্গে মিলিত হন। সত্যবতী ছিলেন একজন মৎস্যজীবীর কন্যা, যিনি গঙ্গায় নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরাশর সত্যবতীর গুণে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে আশীর্বাদ করেন যে তাঁর গর্ভে এক মহাজ্ঞানী ঋষির জন্ম হবে।

কথিত আছে যে, সত্যবতী তখন এক ছোট দ্বীপে ছিলেন এবং সেখানেই বেদব্যাসের জন্ম হয়। তাঁর জন্মের সময়ই তিনি কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেছিলেন, তাই তাঁর নাম হয় “কৃষ্ণ”। জন্মস্থান দ্বীপ হওয়ায় নাম হয় “দ্বৈপায়ন”। তিনি জন্মের পরেই বড় হয়ে গিয়ে মাকে আশীর্বাদ করে বনবাসে চলে যান। শাস্ত্র মতে তিনি জন্মগত মহাজ্ঞানী ছিলেন।

বেদের বিভাজন

বেদব্যাসের সবচেয়ে বড় অবদান হল বেদ বিভাজন। প্রাচীন যুগে একটিমাত্র “বেদ” ছিল, যা আকারে বিশাল এবং জটিল ছিল। সাধারণ মানুষ সেটি আয়ত্ত করতে পারছিল না। তাই বেদব্যাস এটিকে চারটি ভাগে ভাগ করেন –

1. ঋগ্বেদ – স্তোত্র ও দেবতাদের প্রশস্তি।

2. যজুর্বেদ – যজ্ঞের মন্ত্র ও আচারের বিধি।

3. সামবেদ – সুরেলা সঙ্গীত ও স্তোত্র।

4. অথর্ববেদ – চিকিৎসা, তন্ত্র, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার জ্ঞান।

 

এই চারভাগ করার ফলে বেদের জ্ঞান সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়। এই বিশাল কাজের জন্যই তিনি “বেদব্যাস” নামে পরিচিত হন।

মহাভারতের রচনা

মহাভারত বেদব্যাসের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এটি ১,০০,০০০ শ্লোকের এক মহাকাব্য। এতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, পাণ্ডব ও কৌরবদের কাহিনি, নীতিশিক্ষা, ধর্মসংকট, মানবজীবনের দার্শনিক ব্যাখ্যা সবই আছে।

ভাগবদ্গীতা – মহাভারতের অন্তর্গত একটি অংশ, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে ধর্ম ও কর্মের জ্ঞান দেন। এই গীতা আজও ভারতীয় দর্শনের মূল ভিত্তি।

নীতিশিক্ষা – মহাভারত শুধুমাত্র যুদ্ধের কাহিনি নয়, এটি এক জীবন্ত ধর্মশাস্ত্র। এতে রাজনীতি, ন্যায়নীতি, সমাজনীতি, মানবধর্ম সবই শিক্ষা দেয়।

 

পুরাণ রচনা

বেদব্যাসকে ১৮টি মহাপুরাণের রচয়িতা বলা হয়। এগুলি হল –
বিষ্ণু পুরাণ, শিব পুরাণ, ভাগবত পুরাণ, মার্কণ্ডেয় পুরাণ, ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ ইত্যাদি। এই পুরাণগুলিতে দেবদেবীর কাহিনি, ধর্মনীতি, সৃষ্টিতত্ত্ব এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান বর্ণিত আছে।

পরিবার ও বংশ

বেদব্যাস নিজে মহাভারতের চরিত্র। তাঁর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল নিয়োগ প্রথা। সত্যবতীর দুই পুত্র বিচিত্রবীর্য ও চিত্রাঙ্গদ অকালমৃত্যুবরণ করলে, কুরু বংশ নির্বংশ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তখন সত্যবতীর অনুরোধে বেদব্যাস নিয়োগ প্রথা অনুযায়ী দুই রাণীকে গর্ভবতী করেন। এর ফলে জন্ম নেন –

ধৃতরাষ্ট্র – কৌরবদের পিতা।

পাণ্ডু – পাণ্ডবদের পিতা।

বিদুর – মহাভারতের এক নীতিবাগীশ চরিত্র।

 

দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি

বেদব্যাসের দর্শন ছিল মানবজীবনের চারটি পুরুষার্থ – ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ – এর মধ্যে সুষমা স্থাপন করা। তিনি শিখিয়েছিলেন –

ধর্ম ছাড়া অর্থ ও কাম অর্থহীন।

সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকাই মুক্তির একমাত্র উপায়।

মানুষের কর্তব্য কর্ম করতে হবে, ফলের প্রতি আসক্ত না হয়ে।

 

গুরুপূর্ণিমা ও বেদব্যাস পূজা

প্রতিবছর আষাঢ় পূর্ণিমার দিনে গুরুপূর্ণিমা পালিত হয়। এই দিনটি ব্যাস পূর্ণিমা নামেও পরিচিত। সমস্ত শাস্ত্রাচার অনুযায়ী এই দিন গুরুকে সম্মান জানানোর দিন, কারণ বেদব্যাসকে সমগ্র মানবজাতির প্রথম গুরু হিসেবে ধরা হয়।

ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

বেদব্যাস হিন্দু ধর্মের সংহতিসাধক। তাঁর কারণে ভারতীয় সংস্কৃতি এক সুসংহত আকার পেয়েছে। তাঁর রচনাই পরবর্তী যুগে দর্শন, সাহিত্য, সমাজনীতি, আধ্যাত্মিকতা – সব কিছুর ভিত্তি হয়েছে।

উপসংহার

মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস শুধুমাত্র একজন কবি বা ঋষি ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক যুগস্রষ্টা। তাঁর সৃষ্টি মহাভারত, তাঁর বেদের বিভাজন, তাঁর পুরাণ রচনা – সব মিলিয়ে তিনি ভারতীয় চেতনার শাশ্বত প্রতীক। আজও যখন ভারতীয় সমাজ ধর্ম, নীতি, আধ্যাত্মিকতা নিয়ে চিন্তা করে, তখন বেদব্যাসের নির্দেশনা ও শিক্ষা আলো দেখায়। তাই তাঁকে “অষ্টচিরঞ্জীবী”দের একজন হিসেবে মান্য করা হয় – যিনি যুগে যুগে বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।

Share This