Categories
প্রবন্ধ

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ঊনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার । তাঁর পসম্পর্কে বলা যেতে পারে, তিনি লেখক, দার্শনিক, পণ্ডিত, অনুবাদক, প্রকাশক ও মানবহিতৈষী । সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন । সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও অপরবোধ্য করে তোলেন ।

বাংলা গদ্যের সার্থক রূপকার তিনিই ।
বিদ্যাসাগরের যখন জন্ম (১৮২০), তখন শিক্ষা সংস্কারে ও বাংলা ভাষার আধুনিকরণের একটা ডামাডোল পরিস্থিতি । বিশৃঙ্খলার বাতাবরণ । শিক্ষার লক্ষ্য, পদ্ধতি ও পাঠক্রম নিয়ে চলছিল নানান বিতর্ক । অথচ বাঙালী সমাজ জানে, আধুনিক শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের গৌরবময় অবদানের কথা ।
তাঁর নির্মিত বাংলা ভাষার ভিত্তির ওপরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম অধ্যায় । বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যকে বোধগম্য এবং সবরকমের ভাব ও চিন্তা প্রকাশের যোগ্য করে তুলেছিলেন । তাই আজও বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয় ।
আটপৌরে বাঙালি পোশাকে বিদ্যাসাগর ছিলেন সর্বত্রগামী । প্রবল জেদ ও আত্নসম্মানবোধ নিয়ে সরকারি চাকরি করেছেন, দ্বিরুক্তি না করে ইস্তফা দিয়েছেন । পাঠ্যবই লিখে ছেপে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেছেন, দানের জন্য ধারও করেছেন । উনিশ শতকে সমাজ বদলের সব আন্দোলনেই তিনি ছিলেন পুরোভাগে । এমন ব্যক্তিত্ব সবসময়ে ব্যতিক্রম ।
বিদ্যাসাগরের একটা আপ্ত বাক্য আজও সমাজজীবনে উজ্জীবিত, “কোনো বিষয়ে প্রস্তাব করা সহজ, কিন্তু নির্বাহ করে ওঠা কঠিন” । অথচ তিনি এককভাবে ধুতিচাদর পরে একটার পর একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা বাস্তবায়িত করে গেছেন, যেমন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যঃ শিক্ষার সংস্কার ও বিধবা বিবাহ প্রচলন । এটা সর্বজনবিদিত, বিদ্যাসাগরের লড়াইটা ছিল একার লড়াই । বিদ্যাসাগর প্রসঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য পরিষ্কার, তিনি গতানুগতিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র, সচেতন ও পারমার্থিক ।
এটা অনস্বীকার্য যে, বাঙালী সমাজে আজও বিদ্যাসাগরের প্রদীপ্ত উপস্থিতি ‘বর্ণপরিচয়’ দিয়ে । প্রাথমিক শিক্ষায় ‘বর্ণপরিচয়’ এর মাহাত্ম্য সকলের জানা । মুর্শিদাবাদ জেলার শক্তিপুর হাই স্কুলের বাংলা ক্লাসের দিদিমণি আমার রচনা লেখার গঠন অবলোকন করে হঠাৎ তাঁর সম্মুখে তিনি আদর করে ডেকে আমাকে বললেন, “তুই বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ গ্রন্থের নাম শুনেছিস” ? মাথা নেড়ে আমি বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় গ্রন্থটির নাম শুনেছি জানালাম । তারপর চুপি চুপি বাংলা বিষয়ের শ্রদ্ধেয়া দিদিমণি বললেন, রোজ রাতে শোওয়ার আগে বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ বইখানা পড়বি । রচনা লেখার সময়ে তোর বানানের জড়তা কেটে যাবে ।” সুতরাং শৈশব থেকে বাংলা ভাষা শিক্ষার প্রেক্ষাপটে বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় আজও অমলিন । সেই বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ অতিক্রান্ত । তাই দুশো বছর ধরে শিক্ষা জীবনের বাস্তবতায় ও শিক্ষা বিকাশের প্রেক্ষাপটে বিদ্যাসাগর আজও প্রাসঙ্গিক ।
বিদ্যাসাগর যখন জন্মগ্রহন করেছিলেন সেই সময়টা ছিল রামমোহনের যুগ, যিনি একজন শিক্ষিত ও অগ্রণী পুরুষ ছিলেন এবং সমাজ সংস্কারের অন্যতম কারিগর । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । ঈশ্বরচন্দ্রের পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ ছিলেন সুপণ্ডিত ও বলিষ্ঠ দৃঢ়চেতা পুরুষ। তিনিই ঈশ্বরচন্দ্রের নামকরণ করেছিলেন। বিদ্যাসাগরের বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধায় কলকাতায় স্বল্প বেতনের চাকরিতে খুব কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করতেন । পরিবার নিয়ে শহরে বাস করা তাঁর সাধ্যের অতীত ছিল। সেই কারণে বালক ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামেই মা ভগবতী দেবী’র সঙ্গে বাস করতেন।
পাঁচ বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্রকে গ্রামের পাঠশালায় পাঠানো হয়। ১৮২৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁকে কলকাতার একটি পাঠশালায় এবং ১৮২৯ সালের জুন মাসে সংস্কৃত কলেজে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির ছ’মাসের মধ্যেই পাঁচ টাকা বৃত্তি পান । তাঁর প্রতিভার অসাধারণ ক্ষমতা দেখে শিক্ষকেরা সকলে স্তম্ভিত । তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাবান ছাত্র এবং ১৮৩৯ সালের মধ্যেই বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। পরে তিনি দু-বছর ওই কলেজে ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলঙ্কার, বেদান্ত, ন্যায়, তর্ক, জ্যোতির্বিজ্ঞান, হিন্দু আইন এবং ইংরেজি বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্মজীবন শুরু করেন ফোর্ট উইলিয়াম (১৮৪১) কলেজের প্রধান পন্ডিত হিসাবে । ঐসময়েই তাঁর ইংরেজি শিক্ষার যথাযথ শিক্ষালাভ । কেননা বিদ্যাসাগরকে সকলে জানতেন সংস্কৃতের পণ্ডিত হিসাবে । ইংরেজি হাতের লেখাও ছিল নজরকাড়া । ১৮৫০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি সংস্কৃত কলেজের সাহিত্যের অধ্যাপক পদ লাভ করেন এবং পরের মাসে অর্থাৎ ১৮৫১ সালের ২২শে জানুয়ারী ঐ কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি কলেজের অনেক সংস্কার করেন। ঐ সময়েই ১৮৫১ সালে বিদ্যালয় দেখলেন, সংস্কৃত কলেজে গোড়া থেকেই শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য সন্তানদের পড়বার অধিকার ছিল । কিন্তু বৈদ্যদের আবার ধর্মশিক্ষায় ছিল আপত্তি । স্বভাবতই প্রশ্ন উঠল কায়স্থ ও অন্যান্য হিন্দু বর্ণদের কথা । তখনকার পণ্ডিত সমাজের তোয়াক্কা না করে, বিদ্যাসাগর তদানীন্তন কাউন্সিল অফ এডুকেশনের সেক্রেটারিকে জানিয়ে দিলেন ব্রাম্মণ ও বৈদ্য ছাড়া অন্যান্য বর্ণের বিশেষ করে শূদ্রদের সংস্কৃত কলেজে প্রবেশে তাঁর আপত্তি নেই । যদিও সেই সময় সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপকরা বিদ্যাসাগরের মতে গররাজী ছিলেন, তথাপি বিদ্যাসাগরের মতটাকেই মান্যতা দিয়েছিলেন তদানীন্তনকালের কাউন্সিল অফ এডুকেশনের সেক্রেটারি । এবং পর পরই ১৮৫৪ সালের শেষে বিদ্যাসাগর হিন্দুদের সব শ্রেনীর জন্য সংস্কৃত কলেজের দরজা খুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন এবং সেই প্রস্তাব যথাসময়ে অনুমোদিত হয়েছিল ।
সংস্কৃত কলেজের সংস্কার ও আধুনিকীকরণ এবং বাংলা ও বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন ছাড়া, শিক্ষা প্রসারে তাঁর আরও অবদান সর্বজনবিদিত । ১৮৫৪ সালে চার্লস উডের শিক্ষা সনদ গৃহীত হওয়ার পর সরকার গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ উদ্দেশে ১৮৫৫ সালের মে মাসে বিদ্যাসাগরকে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদের অতিরিক্ত সহকারী স্কুল পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তিনি নদিয়া, বর্ধমান, হুগলি এবং মেদিনীপুর জেলায় স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে বাংলা ভাষাকে সহজবোধ্য করে তুলতে চেয়েছিলেন । ১৮৫৫ সালে বাংলা নববর্ষের দিনে বর্ণপরিচয়ের প্রথমভাগ প্রকাশ করে তিনি বাঙালীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এশিয়াটিক সোসাইটি (কলকাতা) ও বেথুন সোসাইটিসহ আরও কিছু সংগঠনের সম্মানিত সভ্য ছিলেন। ১৮৫৮ সালে যাঁরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ফেলো নির্বাচিত হন, তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ১৮৫৯ সালে তিনি “ক্যালকাটা ট্রেনিং স্কুল” স্থাপনে বিশেষ ভুমিকা পালন করেন। ১৮৬৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয় “হিন্দু মেট্রেপলিটন ইসস্টিটিউট”। ইংরাজ অধ্যাপকের সাহায্য ছাড়া এবং কোনোরকম সরকারি সাহায্য ছাড়া, বিদ্যাসাগর স্কুলটিকে ১৮৭২ সালে প্রথম শ্রেণীর কলেজে পরিণত করেছিলেন । বর্তমানে এর নাম “বিদ্যাসাগর কলেজ”। এটি দেশের প্রথম কলেজ যার প্রতিষ্ঠাতা – পরিচালক – শিক্ষক স্কলেই ভারতীয় । এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন লাভ করেন।
ব্রাম্মণ হয়েও বিদ্যাসাগর ত্রিসন্ধ্যা জপ করেননি । কোনো মন্দিরে যাননি এবং ঈশ্বর বিষয়ক কোনো লেখা তিনি লেখেননি । বিদ্যাসাগর ছিলেন নাস্তিক । ধর্ম সম্বন্ধে তিনি শুধু মনে করতেন জগতের কল্যাণসাধন ও বিদ্যাচর্চা । এপ্রসঙ্গে কবি শঙ্খ ঘোষের উক্তিটি প্রনিধাযোগ্য, ধর্মের কোন বহিরঙ্গ মানতেন না । তিনি, আচরণও করতেন না । এখন যেমন অনেকে বলেন, ধর্মটা ব্যক্তিগত ব্যাপার, অনেকটা সেইরকম ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ, বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়ন । সেদিনের সমাজে প্রচলিত প্রথার নির্মম পরিণতির জন্য নারীদের ভাগ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন আপামর জনতা অবলোকন করেছিলেন । শোনা যায়, একসময় রাজা রাজবল্লভ নিজের বালবিধবা কন্যাকে পুনর্বিবাহ দেওয়ার অনুমতি সমাজের পণ্ডিতদের কাছ থেকে পেয়েও সেই বিবাহ কারও কারও বাধায় দিতে পারেননি । বিদ্যাসাগরের “বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা” বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর দেশ ও সমাজ চমকে উঠেছিল । শেষ পর্য্যন্ত ১৮৫৫ সালের ১৬ই জুলাই বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয় । তারপর ১৮৫৬ সালের ২৬শে জুলাই বিধবা বিবাহ আইন স্রকারিভাবে আইন হিসাবে মঞ্জর হয় । বিদ্যাসাগরের দরদী হৃদয় কেঁদেছিল সেকালের সমগ্র হিন্দু নারী সমাজের দুর্গতি দুর্দশায় । বিধবা বিবাহ আইন নামে পরিচিত ১৮৫৬ সালের আইনটি কেবলমাত্র বিধবা নারীর দ্বিতীয় বিবাহের স্বীকৃতি দেয়নি, আইনটি যেমন বিবাহকে আইনসিদ্ধ করে তেমনই মৃত স্বামীর এবং দ্বিতীয় বিবাহের এবং পৈত্রিক বিষয় সম্পত্তিতে অধিকার সুনিদ্দিষ্ট করে । বিভিন্নভাবে জানা যায়, ১৮৫৬ থেকে ১৮৬৭ পর্যন্ত মোট ৬০টি বিধবা বিবাহ সংঘটিত হয় । আরও জানা যায়, বিদ্যাসাগর ও তাঁর বন্ধুরা মিলে ১৮৫৬ সালের ডিসেম্বর মাসে রক্ষণশীল সমাজের বিক্ষোভ এবং প্রচণ্ড বাধার মুখে ঘটা করে এক বিধবার বিবাহ দেন। পাত্র ছিল সংস্কৃত কলেজে বিদ্যাসাগরের একজন সহকর্মী। তা ছাড়া নিজের একমাত্র পুত্রের সঙ্গে বিধবার বিবাহ দিতে তিনি কুণ্ঠিত হননি। এতে একটা জিনিস পরিস্কার, বিধবাবিবাহ আইন প্রণয়নে বিদ্যাসাগরের দৃঢ় সংকল্প শতভাগ সফল ।
তিনি হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় তৈরি করেন, যাকে পরবর্তীতে বেথুন কলেজ নামকরণ করা হয়। নারীদের শিক্ষার দিকে আনার জন্য তিনি একটি অর্থায়নের ব্যবস্থা করেন, যা নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠা ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ছিল। এখান থেকে মেয়েদের শিক্ষার জন্য যাবতীয় অর্থের ব্যবস্থা করা হতো। ১৮৫৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৮৫৮ সালের মে মাস অবধি সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে বিদ্যাসাগর ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।
বিদ্যাসাগরের দয়া এবং মানবিকতার জন্যে তিনি করুণাসাগর নামে পরিচিত । দরিদ্রদের দানে তিনি সর্বদাই মুক্তহস্ত ছিলেন । তিনি তাঁর দান এবং দয়ার জন্যে বিখ্যাত হয়েছিলেন । এখানে বিদ্যাসাগর সম্বন্ধে মাইকেল মধুসূদন দত্ত’র উক্তি প্রনিধানযোগ্য,
“বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে,
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
দীন যে, দীনের বন্ধু ! উজ্জ্বল জগতে
হেমাদ্রির হেম কান্তি অম্লান কিরণে” ।
তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন একটি ঐতিহ্যিক এবং রক্ষণশীল পরিবারে এবং সমাজ সংস্কারের জন্যে তিনি যুক্তিও দিতেন হিন্দু শাস্ত্র থেকে কিন্তু তিনি ছিলেন ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে সন্দিহান মনের। তাঁর বোধোদয় গ্রন্থ যেমন তিনি শুরু করেছেন পদার্থের সংজ্ঞা দিয়ে । পরে সংজ্ঞা দিয়েছেন ঈশ্বরের, যাঁকে তিনি বলেছেন সর্বশক্তিমান, সর্বত্র বিরাজমান চৈতন্যস্বরূপ।
তিনি তাঁর একক ও সহযোগীর উদ্যোগে রেখে গেলেন আধুনিক ব্যবহারযোগ্য একটি (উচ্চারণ অনুযায়ী ও মুদ্রণযোগ্য) বাংলা ভাষা, প্রাথমিক ও নীতিশিক্ষার বহু জনপ্রিয় গ্রন্থ, বাংলা মাধ্যম স্কুলব্যবস্থা ও নারীশিক্ষার পাকা বুনিয়াদ । মাতৃ/বাংলা ভাষার শিক্ষার আর একটি প্রাক শর্ত হল ভাল পাঠ্যপুস্তকের সুলভতা । বিদ্যাসাগরের সময় তার যথেষ্ট অভাব ছিল । বিদ্যাসাগরকেও অবতীর্ণ হতে দেখা যায় এক দিকে, বাংলায় ব্যকরণসিদ্ধ মুদ্রণযোগ্য অক্ষর ও বানান সংস্কার করে, নানা পাঠ্যপুস্তক রচনা, ছাপা ও বিপণনের আয়োজন । পাঠ্যপুস্তক রচনার পাশাপাশি ছাপা বইয়ের সম্পাদনা ও সম্মার্জনার প্রতি তাঁর অখণ্ড মনোযোগ চিরদিন বজায় ছিল । একবার তিনি হতদরিদ্র সাঁওতালদের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন তিনি, সেই সময় (১৮৭৮) চর্যাপদের আবিস্কর্তা, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও তাঁর এক সঙ্গী লখনউ যাওয়ার পথে এক রাত বিদ্যাসাগরের আতিথ্যগ্রহণ করেন । রাত্রে বিশ্রামের পর সকালে উঠে শাস্ত্রী মশাই দেখলেন, “বিদ্যাসাগর মহাশয় বারান্দায় পাইচারি করিতেছেন এবং মাঝে মাঝে টেবিলে বসিয়া কথামালা কি বোধোদয়ের প্রূফ দেখিতেছেন । প্রূফে বিস্তর কাটকুটি করিতেছেন । যেভাবে প্রূফগুলি পড়িয়া আছে, বোধ হইল, তিনি রাত্রেও প্রূফ দেখিয়াছেন । আমি বলিলাম, কথামালার প্রূফ আপনি দেখেন কেন ? তিনি বলিলেন, ভাষাটা এমন জিনিস, কিছুতেই মন স্পষ্ট হয় না ; যেন আর একটা শব্দ পাইলে ভাল হইত ; — তাই সর্বদা কাটকুটি করি । ভাবিলাম — বাপ রে, এই বুড়ো বয়সেও ইহার বাংলার ইডিয়ামের ওপর এত নজর ।” (সূত্রঃ অ-বা-প,পৃঃ৪/ ২৭-৯-১৯) ।
এই অনন্য ও বিরাট ব্যক্তিত্বের মানুষটি ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ধর্মের কোনও বহিরঙ্গ মানতেন না এমনকি, আচরণও করতেন না । অথচ চালচলনে তিনি ছিলেন নিতান্তই সাদাসিধে । খুব বিনয়ী এবং জীবনে দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে ছিলেন তিনি দৃঢ় মনোভাবাপন্ন । তিনি ছিলেন একাধারে মহান সমাজ সংস্কারক অন্যদিকে এক জন শিক্ষাবিদ এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন অবিরাম । ভারতে শিক্ষার প্রতি তার অবদান এবং নারীর অবস্থার পরিবর্তন জন্য তিনি চিরস্বরণীয়। তাঁর অবর্ণনীয় মাতৃ ভক্তি একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । তাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে আজও চর্চিত ।
হিন্দু ধর্মের কুসংস্কারের বিরোধী, বিধবা বিবাহের প্রচলনকারী, নারী শিক্ষার প্রবর্তক, উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সমাজ সংস্কারক, বর্ণপরিচয় ও বহু গ্রন্থের রচয়িতা, মহান শিক্ষাবিদ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিনের প্রাক্কালে তাঁর মহান স্মৃতির প্রতি আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য ।

কলমে : দিলীপ রায়।
————————-০——————————

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে ভারতের অন্যতম সফল শিল্পপতি স্যার রতন টাটা।।।

রতন টাটা দেশের প্রিয় শিল্পপতিদের মধ্যে এমনই এক মুখ, যাকে সবাই চেনেন। তিনি একজন বিখ্যাত ভারতীয় শিল্পপতি এবং টাটা গ্রুপের অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। রতন টাটা শুধু শিল্পপতিই নন , তিনি একজন সমাজসেবী , মানব দরদি ও দূরদর্শী মানুষ । তিনি ১৯৯১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন।

তিনি ২৮ ডিসেম্বর ২০১২ -তে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন, কিন্তু টাটা গ্রুপের দাতব্য ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল রয়েছেন।তার নেতৃত্বে, টাটা গ্রুপ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং গ্রুপের আয়ও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারতের অন্যতম সফল শিল্পপতি স্যার রতন টাটা ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি টাটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জামশেদজি টাটার দত্তক পৌত্র এবং নেভাল টাটার পুত্র। তাঁর মায়ের নাম সুনি টাটা। রতন টাটার বাবা মা যখন পৃথক হয়ে যান যখন তাঁর দশ বছর বয়স ছিল।যদিও মা বাবার ডিভোর্স নিয়ে তাঁকে ও তাঁর দাদাকে অনেক টিটকারির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। রতন টাটা গুজরাটের অন্যতম ধনী পরিবারের ছেলে হলেও তার শৈশব খুব একটা ভালো কাটেনি। তার কারণ ছিল রতনের বাবা-মা, বিচ্ছেদের কারণে তাঁরা আলাদা থাকতেন। দাদির সঙ্গে বেড়ে ওঠার ফলে তাঁর দাদি তাঁকে জীবনের মূল্যবোধ শিখিয়েছিলেন।
রতন টাটা ছোট বেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন।রতন টাটা কেম্পিয়ন স্কুলে (মুম্বাই) শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরে তিনি ক্যাথেড্রাল অ্যান্ড জন কনন স্কুল-এ তিনি স্কুল শিক্ষা শেষ করেন। স্কুল শিক্ষা শেষ করার পর তিনি ১৯৬২ সালে কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেচার বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়তে বাণিজ্য ও অ্যাডভেঞ্চেড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন।
বিশ্বের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী রতন টাটার শুরুটা হয়েছিল ছোটখাট চাকরি দিয়ে। পড়াশুনা শেষ করে রতন টাটা (Ratan Tata) আমেরিকার জোনস এ্যান্ড ইমনস নামে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে কিছুদিন কাজ করেন। তারপর ১৯৬১ সালে তিনি টাটা গ্রুপে টাটা স্টিলের কর্মচারী হিসেবে রতন টাটার (Ratan Tata) ক্যারিয়ার শুরু করেন। যেখানে তাঁর প্রথম দায়িত্ব ছিল বিস্ফোরণ চুল্লি এবং চাউলের পাথর পরিচালনা করা। ১৯৯১ সালে জে আর ডি টাটা রতন টাটার মেধা পরিশ্রম ও মানসিকতার মূল্য দিতেই টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৯১ সালে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হয়ে তিনি টাটা গ্রুপের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনেছিলেন। ধীরে ধীরে কোম্পানীকে বিরাট এক আন্তর্জাতিক কোম্পানীতে পরিনত করেন। ২১ বছরের মিশনে পৃথিবীর ৬টি মহাদেশের ১০০ টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে দেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা। রতন টাটা আসলে মানবিক হৃদয় এবং ক্ষুরধার বৈষয়িক বুদ্ধির জীবন্ত প্রতীক। যে কারণে Tata Group-এর চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে অক্লান্তভাবে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের পরিধি বাড়িয়েছেন। যার মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের একাধিক অধিগ্রহণ রয়েছে। যেমন Land Rover Jaguar-এর সঙ্গে Tata Motors, Tetly-র সঙ্গে Tata Tea এবং Corus-এর সঙ্গে Tata Steel। সবক’টি অধিগ্রহণই কোম্পানির মুনাফা কয়েকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
রতন টাটাই এ দেশের একমাত্র শিল্পপতি যাঁর গ্যারাজে যেমন Ferrari California, Cadillac XLR, Land Rover Freelander, Chrysler Sebring, Honda Civic, Mercedes Benz S-Class, Maserati Quattroporte, Mercedes Benz 500 SL, Jaguar F-Type, Jaguar XF-R-সহ আরও অনেক বিলাসবহুল, আভিজাত্যে ভরা নিজস্ব গাড়ি রয়েছে, আবার যাবতীয় প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে যিনি ভারতকে উপহার দেন মাত্র এক লক্ষ টাকার ন্যানো।তিনি ২০০৭ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে F-16 Falcon-এর পাইলট হয়েছিলেন
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে, রতন টাটা মাত্র এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি “ন্যানো” চালু করেছিলেন। আসলে, রতন এই স্বপ্নটি দেখেছিলেন ১৯৯৭ সালে, যাতে একজন সাধারণ মানুষ মাত্র এক লক্ষ টাকায় একটি গাড়ি কেনার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন।
রতন টাটা শুধু শিল্পপতিই নন , তিনি একজন সমাজসেবী , মানব দরদি ও দূরদর্শী মানুষ । মানুষের পাশে থেকে মানব সমাজের কল্যাণের জন্য ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠা করে এ যেন এক নতুন উদ্যম সৃষ্টি করেছেন , যা আগামীদিনে নতুন প্রজন্মকে পথ দেখতে পারবে। রতন টাটা (Ratan Tata) সারাজীবন ধরে প্রমান করেন দৃঢ় সংকল্প , জেদ আর মানুষের কল্যাণকামী মানসিকতা থাকলে বিশ্ব জয় করা সম্ভব।২০০৮ সালে মুম্বাই তাজ হোটেলে জঙ্গি হামলা হলে অনেক পরিবার স্বজন হারিয়ে , আহত হয়ে , কর্মচ্যুত বিপন্ন হয়ে পড়েছিলেন। উল্লেখযোগ্যভাবে রতন টাটা তখন সেই সব কর্মীদের পাশে থেকেছেন, আর্তের সহায় হয়েছেন। এমনকি কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজে উপিস্থিত থেকে সাহায্য করেছিলেন ।
রতন টাটা ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণ এবং পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন।
এছাড়াও রতন টাটা (Ratan Tata) অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন।

।।তথ্য: সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট ।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং পালনের গুরুত্ব।।।।।

সমগ্র বিশ্বে বাঘের সংরক্ষণের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ২৯ জুলাই তারিখে আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস বা বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হয়।২০১০ সালে সেণ্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত ব্যাঘ্র অভিবর্তনে এই দিবসের সূচনা হয়। এই দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘের সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে এর সম্পর্কে থাকা ভুল ধারণা ও ভয় দূর করা।

প্রতি বছর বিভিন্ন কার্যসূচীর মাধ্যমে এই দিবস পালন করা হয়। বাঘ ভারতের জাতীয় পশু হওয়ার কারণে এই দিবসের মহত্ব এখানে বেশি ধরা হয়।
২০১০ সালে নভেম্বরে প্রথম বাঘ দিবস উদযাপিত হয়। বিংশ শতকের গোড়া থেকেই বন্য বাঘের সংখ্যা ৯৫ শতাংশ কমে যায়। এই বিষয়টি উপলব্ধি করার পরেই বাঘ দিবস পালনের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। রাশিয়ায় সেন্ট পিটার্সবার্গ টাইগাই সামিটে প্রথম বাঘ দিবস পালিত হয়। বাঘেদের স্বাভাবিক বাসস্থান রক্ষা করাই ছিল এই সামিটের মূল উদ্দেশ্য।
সামিটে যে ১৩টি দেশ অংশগ্রহণ করে, সেগুলি হল – ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, চিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং রাশিয়া। এই সামিটে ২০২২-এর মধ্যে বন্য বাঘের সংখ্যা ৬০০০-এর বেশি বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়।
সপ্তম বিশ্ব বাঘ দিবস গোটা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ভাবে পালন করা হয়। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল প্রভৃতি বাঘের বেশি ঘনত্ব থাকা দেশের সাথে ইংল্যান্ড ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রেও বিভিন্ন স্থানীয় কার্যসূচীর মাধ্যমে এই দিবস পালন করা হয়। কিছু জনপ্রিয় তারকা তাদের সোসাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে এতে অংশগ্রহণ করেন। বিশ্ব বন্যপ্রাণী সংস্থা (WWF) এর রেঞ্জারসমূহে বিনিয়োগ করে “দ্বিগুণ বাঘ” অভিযান চালায়। কয়েকটি কোম্পানী বিশ্ব বন্যপ্রাণী সংস্থার সঙ্গে মিলিতভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
তথ্য অনুযায়ী বিংশ শতকের গোড়া থেকেই বন্য বাঘের সংখ্যা ৯৫ শতাংশ কমে যায়। বিষয়টি উপলব্ধি করার পরেই বাঘ দিবস পালনের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়।প্রতি বছর বিভিন্ন কার্যসূচীর মাধ্যমে এই দিবস পালন করা হয়। বাঘ ভারতের জাতীয় পশু হওয়ার কারণে এই দিবস আমাদের দেশের একটু বেশিমাত্রায় উপযোগী। গোটা বিশ্বে নগরায়নের কারণে বাঘেরা তাদের স্বাভাবিক বাসস্থানের ৯০ শতাংশই হারিয়ে ফেলেছে। বর্তামানে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ৪০০০-এরও কম।
আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস বা বিশ্ব বাঘ দিবস সমগ্র বিশ্বে বাঘের সংরক্ষণের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ২৯ জুলাই তারিখে পালন করা হয়। ২০১০ সালে সেণ্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত ব্যাঘ্র অভিবর্তনে এই দিবসের সূচনা হয়। বিশ্ব বাঘ দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘের সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এছাড়াও বাঘের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে গেঁথে থাকা ভুল ধারণা ও ভয় দূর করাও আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস পালনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্যে।
ভারতের জাতীয় পশু বাঘ হওয়ায় ভারতে এই দিনটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বাঘেদের স্বাভাবিক বাসস্থান বৃদ্ধি ও বাঘের সংখ্যা বাড়ানো এই বাঘ দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ভারতরত্ন অরুণা আসফ আলী ,ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামী, সমাজকর্মী ও দিল্লির প্রথম মেয়র।।।।।।

অরুণা আসাফ আলী ছিলেন একজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক কর্মী এবং প্রকাশক। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী, তিনি 1942 সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বোম্বের গোয়ালিয়া ট্যাঙ্ক ময়দানে ভারতীয় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাপকভাবে স্মরণীয় হয়েছিলেন, এই আন্দোলনটিকে এটির সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী চিত্রের একটি দেয়।

তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হয়েছিলেন এবং লবণ সত্যাগ্রহের সময় জনসাধারণের মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি গ্রেপ্তার হন, এবং 1931 সালে গান্ধী-আরউইন চুক্তির অধীনে মুক্তি পাননি যা সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির শর্ত দেয়। অন্যান্য মহিলা সহ-বন্দীরা প্রাঙ্গণ ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছিল যদি না তাকেও মুক্তি দেওয়া হয় এবং মহাত্মা গান্ধীর হস্তক্ষেপের পরেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি তার মুক্তির পর 1942 সাল পর্যন্ত রাজনৈতিকভাবে খুব বেশি সক্রিয় ছিলেন না। তার স্বাধীন ধারার জন্য পরিচিত, তিনি এমনকি 1946 সালে নিজেকে আত্মসমর্পণের জন্য গান্ধীর অনুরোধকে অমান্য করেছিলেন। স্বাধীনতার পর, তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, দিল্লির প্রথম মেয়র হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি 1992 সালে পদ্মবিভূষণ এবং 1997 সালে মরণোত্তর ভারতরত্ন পুরস্কার লাভ করেন।
অরুনা আসাফ আলী 16 জুলাই 1909 সালে কালকা, পাঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে হরিয়ানা, ভারতে) একটি বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা উপেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী পূর্ব বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) বরিশাল জেলার বাসিন্দা কিন্তু ইউনাইটেড প্রদেশে বসতি স্থাপন করেন। তিনি একজন রেস্টুরেন্টের মালিক ছিলেন। তার মা অম্বালিকা দেবী ছিলেন ত্রৈলোক্যনাথ সান্যালের কন্যা, একজন প্রখ্যাত ব্রাহ্ম নেতা যিনি অনেকগুলি ব্রাহ্ম স্তোত্র লিখেছিলেন। উপেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলীর ছোট ভাই ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী (DG) ছিলেন প্রথম দিকের চলচ্চিত্র পরিচালকদের একজন। আরেক ভাই, নগেন্দ্রনাথ ছিলেন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যিনি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একমাত্র জীবিত কন্যা মীরা দেবীকে বিয়ে করেছিলেন। অরুণার বোন পূর্ণিমা ব্যানার্জী ভারতের গণপরিষদের সদস্য ছিলেন।
অরুণা লাহোরের সেক্রেড হার্ট কনভেন্ট এবং তারপর নৈনিতালের অল সেন্টস কলেজে শিক্ষিত হন। স্নাতক হওয়ার পর, তিনি কলকাতার গোখলে মেমোরিয়াল স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। তিনি এলাহাবাদে কংগ্রেস দলের একজন নেতা আসাফ আলীর সাথে দেখা করেছিলেন। ধর্ম এবং বয়সের কারণে পিতামাতার বিরোধিতা সত্ত্বেও (তিনি একজন মুসলিম এবং তার 20 বছরেরও বেশি বয়সী ছিলেন) সত্ত্বেও তারা 1928 সালে বিয়ে করেছিলেন।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অরুণা আসাফ আলীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আসাফ আলীকে বিয়ে করার পর তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হয়েছিলেন এবং লবণ সত্যাগ্রহের সময় জনসাধারণের মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। 21 বছর বয়সে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এই অভিযোগে যে তিনি একজন ভবঘুরে ছিলেন এবং তাই 1931 সালে গান্ধী-আরউইন চুক্তির অধীনে মুক্তি পাননি যা সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির শর্ত দিয়েছিল। অন্যান্য মহিলা সহ-বন্দিরা প্রাঙ্গণ ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছিল যদি না তাকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং মহাত্মা গান্ধী হস্তক্ষেপ করার পরেই ছেড়ে দেওয়া হয়। একটি গণআন্দোলন তার মুক্তি নিশ্চিত করে।
1932 সালে, তাকে তিহার জেলে বন্দী করা হয়েছিল যেখানে তিনি অনশন শুরু করে রাজনৈতিক বন্দীদের প্রতি উদাসীন আচরণের প্রতিবাদ করেছিলেন। তার প্রচেষ্টায় তিহার জেলের অবস্থার উন্নতি হয়েছিল কিন্তু তাকে আম্বালায় স্থানান্তরিত করা হয় এবং নির্জন কারাবাসের শিকার করা হয়। মুক্তির পর তিনি রাজনৈতিকভাবে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না, কিন্তু 1942 সালের শেষের দিকে তিনি ভূগর্ভস্থ আন্দোলনে অংশ নেন।
1942 সালের 8 আগস্ট, সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটি বোম্বে অধিবেশনে ভারত ছাড়ো প্রস্তাব পাস করে। সরকার প্রধান নেতাদের এবং কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সকল সদস্যকে গ্রেফতার করে সাড়া দিয়েছিল এবং এইভাবে আন্দোলনকে সাফল্য থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিল। তরুণ অরুণা আসাফ আলী 9 আগস্ট অধিবেশনের বাকি অংশে সভাপতিত্ব করেন এবং গোয়ালিয়া ট্যাঙ্ক ময়দানে কংগ্রেসের পতাকা উত্তোলন করেন। এটি আন্দোলনের সূচনাকে চিহ্নিত করে। সমাবেশে পুলিশ গুলি চালায়। বিপদের মুখে তার সাহসিকতার জন্য অরুণাকে 1942 সালের আন্দোলনের নায়িকা বলা হয় এবং পরবর্তী বছরগুলিতে তাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের গ্র্যান্ড ওল্ড লেডি বলা হয়। প্রত্যক্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ভারতের তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল কিন্তু গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি ভূগর্ভস্থ হয়ে যান এবং ১৯৪২ সালে আন্ডারগ্রাউন্ড আন্দোলন শুরু করেন। তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও বিক্রি করা হয়। ইতিমধ্যে, তিনি রাম মনোহর লোহিয়ার সাথে কংগ্রেস পার্টির একটি মাসিক ম্যাগাজিন ইনকিলাবও সম্পাদনা করেন। 1944 সালের একটি ইস্যুতে, তিনি যুবকদের সহিংসতা এবং অহিংসা সম্পর্কে নিরর্থক আলোচনা ভুলে যেতে এবং বিপ্লবে যোগ দিতে বলেছিল। জয়প্রকাশ নারায়ণ ও অরুণা আসাফ আলীর মতো নেতাদের “গান্ধীর রাজনৈতিক সন্তান কিন্তু কার্ল মার্ক্সের সাম্প্রতিক ছাত্র” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সরকার তাকে ধরার জন্য 5,000 টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দিল্লির করোলবাগের ডাঃ জোশির হাসপাতালে কিছু সময়ের জন্য লুকিয়ে ছিলেন। মহাত্মা গান্ধী তাকে একটি হাতে লেখা নোট পাঠিয়েছিলেন লুকিয়ে থেকে বেরিয়ে আসতে এবং নিজেকে আত্মসমর্পণ করার জন্য – যেহেতু তার মিশন সম্পন্ন হয়েছিল এবং তিনি হরিজন কার্যের জন্য পুরস্কারের পরিমাণ ব্যবহার করতে পারেন। যাইহোক, 1946 সালে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার করার পরেই তিনি আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি মহাত্মার কাছ থেকে পাওয়া নোটটি মূল্যবান ছিলেন এবং এটি তার ড্রয়িং রুমকে সজ্জিত করেছিল। যাইহোক, তিনি রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি বিদ্রোহকে সমর্থন করার জন্য গান্ধীর কাছ থেকেও সমালোচনার সম্মুখীন হন, একটি আন্দোলনকে তিনি হিন্দু ও মুসলমানদের একক সর্বশ্রেষ্ঠ একীকরণকারী ফ্যাক্টর হিসেবে দেখেছিলেন যেটি পাকিস্তান আন্দোলনের শীর্ষে ছিল।
তিনি কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন, সমাজতান্ত্রিক ঝোঁক সহ কর্মীদের জন্য কংগ্রেস পার্টির মধ্যে একটি ককাস। সমাজতন্ত্রের বিষয়ে কংগ্রেস পার্টির অগ্রগতিতে হতাশ হয়ে তিনি 1948 সালে একটি নতুন দল, সমাজতান্ত্রিক দল এ যোগ দেন। তবে তিনি এদাতা নারায়ণনের সাথে সেই দলটি ত্যাগ করেন এবং রজনী পামে দত্তের সাথে মস্কো সফর করেন। তারা দুজনেই 1950-এর দশকের গোড়ার দিকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত ফ্রন্টে, 1953 সালে আসাফ আলী মারা গেলে তিনি শোকাহত হন।
1954 সালে, তিনি ভারতীয় নারীদের জাতীয় ফেডারেশন গঠন করতে সাহায্য করেছিলেন, সিপিআই-এর মহিলা শাখা কিন্তু 1956 সালে নিকিতা ক্রুশ্চেভের স্ট্যালিনকে প্রত্যাখ্যান করার পরে পার্টি ত্যাগ করেন। 1958 সালে, তিনি দিল্লির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি দিল্লিতে সমাজকল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য কৃষ্ণ মেনন, বিমলা কাপুর, গুরু রাধা কিষাণ, প্রেমসাগর গুপ্ত, রজনী পালমে জোতি, সরলা শর্মা এবং সুভদ্রা জোশীর মতো তার যুগের সমাজকর্মী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
তিনি এবং নারায়ণন লিঙ্ক পাবলিশিং হাউস শুরু করেন এবং একই বছর একটি দৈনিক পত্রিকা, প্যাট্রিয়ট এবং একটি সাপ্তাহিক, লিঙ্ক প্রকাশ করেন। জওহরলাল নেহেরু, কৃষ্ণ মেনন এবং বিজু পট্টনায়কের মতো নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে প্রকাশনাগুলি মর্যাদাপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরে তিনি অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে প্রকাশনা সংস্থা থেকে সরে আসেন, তার কমরেডদের ধর্ম গ্রহণের লোভে হতবাক হয়ে যান। জরুরী অবস্থা সম্পর্কে সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও, তিনি ইন্দিরা গান্ধী এবং রাজীব গান্ধীর কাছাকাছি ছিলেন।
তিনি 29 জুলাই 1996-এ 87 বছর বয়সে নিউ দিল্লিতে মারা যান।
অরুনা আসাফ আলী ১৯৬৪ সালের জন্য আন্তর্জাতিক লেনিন শান্তি পুরস্কার এবং 1991 সালে আন্তর্জাতিক বোঝাপড়ার জন্য জওহরলাল নেহেরু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি 1992 সালে তার জীবদ্দশায় ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ এবং অবশেষে সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারে ভূষিত হন। ভারতরত্ন, মরণোত্তর 1997 সালে। 1998 সালে, তার স্মরণে একটি স্ট্যাম্প জারি করা হয়েছিল। তার সম্মানে নতুন দিল্লির অরুণা আসাফ আলী মার্গের নামকরণ করা হয়েছে। অল ইন্ডিয়া মাইনরিটিস ফ্রন্ট বার্ষিক ডক্টর অরুণা আসাফ আলী সদভাবনা পুরস্কার বিতরণ করে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস: ইতিহাস, তাৎপর্য ও জনসচেতনতায় এর গুরুত্ব।

 

🔶 ভূমিকা

প্রতিবছর ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালিত হয়। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃত এক গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বিষয়ক দিবস, যা জনসাধারণকে হেপাটাইটিস রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে পালন করা হয়। হেপাটাইটিস এমন একটি নীরব ঘাতক রোগ যা প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, অথচ সচেতনতা ও সঠিক প্রতিরোধে এটি প্রতিরোধযোগ্য ও অনেক ক্ষেত্রেই নিরাময়যোগ্য।

এই প্রবন্ধে আমরা জানব—

  • হেপাটাইটিস কি এবং এর প্রকারভেদ
  • এই দিবস পালনের ইতিহাস
  • প্রতি বছরের থিম
  • হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ও প্রতিকার
  • দিবসটির গুরুত্ব ও সমাজে এর প্রভাব

🔶 হেপাটাইটিস: এক সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

“হেপাটাইটিস” শব্দটি এসেছে গ্রিক ভাষা থেকে, যার “হেপার” অর্থ যকৃত এবং “ইটিস” অর্থ প্রদাহ। অর্থাৎ, হেপাটাইটিস হল যকৃতের প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন।

হেপাটাইটিস সাধারণত পাঁচটি প্রধান ভাইরাসের মাধ্যমে হয়:

  1. হেপাটাইটিস এ (HAV)
  2. হেপাটাইটিস বি (HBV)
  3. হেপাটাইটিস সি (HCV)
  4. হেপাটাইটিস ডি (HDV)
  5. হেপাটাইটিস ই (HEV)

এই ভাইরাসগুলি যকৃতের উপর বিভিন্ন মাত্রায় আক্রমণ করে এবং দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার জন্ম দিতে পারে, যেমন— সিরোসিস, লিভার ফেইলিওর বা লিভার ক্যান্সার।


🔶 হেপাটাইটিস-এর প্রকারভেদ

✅ হেপাটাইটিস A (HAV):

  • প্রধানত দূষিত খাদ্য ও পানি থেকে ছড়ায়
  • স্বল্পমেয়াদি কিন্তু সংক্রামক
  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ আরোগ্য সম্ভব

✅ হেপাটাইটিস B (HBV):

  • রক্ত, শুক্রাণু, মাতৃদুগ্ধ ও শরীরবিজড়িত তরলের মাধ্যমে ছড়ায়
  • যৌন সম্পর্ক, অসুরক্ষিত সূচ বা রক্তদান থেকে সংক্রমণ ঘটে
  • নবজাতকেরা মায়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে
  • দীর্ঘমেয়াদী এবং লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে
  • প্রতিরোধের জন্য টিকা রয়েছে

✅ হেপাটাইটিস C (HCV):

  • মূলত সংক্রামিত রক্তের সংস্পর্শে এসে সংক্রমণ ঘটে
  • যৌন সম্পর্ক বা রক্ত সংক্রমণে ছড়ায়
  • বহু বছর ধরে নীরবে যকৃতে ক্ষতি করে
  • প্রতিকারযোগ্য হলেও টিকা নেই

✅ হেপাটাইটিস D (HDV):

  • শুধুমাত্র হেপাটাইটিস বি-র সংক্রামিত রোগীদের মধ্যেই এই ভাইরাস কাজ করে
  • সংক্রমণ বেশি মারাত্মক
  • টিকা সরাসরি না থাকলেও HBV-এর টিকা প্রতিরোধে সহায়ক

✅ হেপাটাইটিস E (HEV):

  • দূষিত পানি থেকে সংক্রমিত
  • গর্ভবতী নারীদের মধ্যে মারাত্মক হতে পারে
  • উন্নয়নশীল দেশে সাধারণ

🔶 বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস: ইতিহাস

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০১০ সাল থেকে ২৮ জুলাই তারিখটিকে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এটি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আবিষ্কর্তা ও নোবেলজয়ী বৈজ্ঞানিক ডঃ বারুচ সামুয়েল ব্লুমবার্গ-এর জন্মদিন।

WHO-এর লক্ষ্য ছিল:

  • বিশ্বের সামনে হেপাটাইটিস জনিত বিপদের পরিমাণ তুলে ধরা
  • রোগ প্রতিরোধ, টিকাদান ও চিকিৎসার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা

এর আগে এই দিবসটি ১ অক্টোবর পালন করা হতো, কিন্তু পরে ব্লুমবার্গের সম্মানে এটি ২৮ জুলাই নির্ধারিত হয়।


🔶 বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ২০২৫: থিম

প্রতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি নির্দিষ্ট থিমের মাধ্যমে এই দিবস উদযাপন করে।

👉 ২০২৫ সালের থিম এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি (আপডেট হলে যুক্ত করা যাবে)। তবে পূর্ববর্তী বছরগুলোতে ছিল:

  • ২০২4: “We’re not waiting” — প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি দেশ যেন সময় নষ্ট না করে হেপাটাইটিস নির্মূলে একসঙ্গে কাজ করে
  • ২০২3: “One life, One liver”
  • ২০২2: “Bringing hepatitis care closer to you”

🔶 হেপাটাইটিস প্রতিরোধের উপায়

✅ প্রতিরোধমূলক টিকা:

  • হেপাটাইটিস A ও B-এর জন্য কার্যকর টিকা রয়েছে
  • শিশুদের জন্মের পরপরই HBV টিকা দেওয়া শুরু হয়
  • HAV টিকাও বর্তমানে অনেক দেশে দেওয়া হয়

✅ ব্যক্তিগত সচেতনতা:

  • বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
  • যৌন সম্পর্কের সময় সুরক্ষা ব্যবহার
  • অপ্রয়োজনীয় রক্ত গ্রহণ এড়িয়ে চলা
  • ট্যাটু বা পিয়ার্সিং করার সময় জীবাণুমুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার

✅ সঠিক চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণ:

  • হেপাটাইটিস C এর কার্যকর ওষুধ রয়েছে (DAA: Direct Acting Antiviral)
  • সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে লিভারের ক্ষয়রোগ ঠেকানো সম্ভব

🔶 বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের গুরুত্ব

১. বিশ্বজুড়ে সচেতনতা সৃষ্টি:
এই দিনটি রোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে তথ্য ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।

  1. নতুন টিকা ও ওষুধ প্রসঙ্গে তথ্য প্রদান:
    চিকিৎসা ক্ষেত্রে অগ্রগতির খবর প্রচারে সহায়তা করে।
  2. ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা:
    মাতৃগর্ভ থেকে নবজাতকের সংক্রমণ প্রতিরোধে উদ্যোগ জোরদার করা হয়।
  3. সরকারি পদক্ষেপ:
    স্বাস্থ্য নীতিতে হেপাটাইটিস সংক্রান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চাপ বাড়ে।
  4. UN Sustainable Development Goals (SDG):
    ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকারকে জোরালো করা হয়।

🔶 ভারতের প্রেক্ষিতে হেপাটাইটিস

ভারত হেপাটাইটিসে আক্রান্ত দেশের তালিকায় অন্যতম। বিশেষ করে গ্রামীণ ও দরিদ্র অঞ্চলে এখনও বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব, অজ্ঞতা, চিকিৎসার অপ্রতুলতা হেপাটাইটিস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

ভারতে প্রতি বছর প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হন। হেপাটাইটিস সি-র ক্ষেত্রেও সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য। সরকার ‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে শিশুদের জন্য হেপাটাইটিস বি টিকাকরণ চালু করেছে।


🔶 পালন পদ্ধতি ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি

প্রতিবছর এই দিনটিতে বিভিন্ন সংগঠন ও সরকার:

  • রক্তপরীক্ষার শিবির
  • টিকাদান ক্যাম্প
  • সচেতনতামূলক র‍্যালি
  • পোস্টার, লিফলেট, টিভি বিজ্ঞাপন প্রচার করে
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ কর্মসূচি চালু করে

🔶 আমরা কী করতে পারি?

  1. নিজের ও পরিবারের সদস্যদের টিকা দেওয়া
  2. সুরক্ষিত জীবনযাপন
  3. যে কোনও অসুস্থতার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
  4. আশেপাশের মানুষকে সচেতন করা
  5. ভুল ধারণা দূর করে সামাজিকভাবে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করা

🔶 উপসংহার

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস শুধুমাত্র একটি দিন নয়, এটি একটি বার্তা— সচেতন হোন, নিজের ও সমাজের জীবন রক্ষা করুন। সময় থাকতে ব্যবস্থা নিন। “এক জীবন, এক যকৃত”— যকৃতকে ভালো রাখলেই জীবন সুস্থ থাকবে।

এই দিনে আমরা যেন প্রতিজ্ঞা করি—

  • আমরা হেপাটাইটিস সম্পর্কে জানব
  • সময়মতো চিকিৎসা নেব
  • হেপাটাইটিসমুক্ত পৃথিবী গড়ব

📚 তথ্যসূত্র:

  • World Health Organization (WHO)
  • CDC – Hepatitis Overview
  • Indian Journal of Medical Research
  • Ministry of Health and Family Welfare, Govt. of India
Share This
Categories
প্রবন্ধ

রাজা মানসিংহের সঙ্গে অগ্রদাসজী কেমন আচরণ করলেন ? : ড. রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।।।।

‘ভক্তমাল’ গ্রন্থের লেখক শ্রীনাভাজীর গুরুদেব ছিলেন শ্রীঅগ্রদাসজী । তিনি রামানন্দী সম্প্রদায়ের ভক্ত-মহাত্মা ছিলেন। অগ্রদাসজী অনুক্ষণ হরিসেবায় মত্ত থাকতেন। তাঁর ভজন জীবনটি ছিল তৈলধারার ন্যায় । অর্থাৎ, তেলের প্রবাহের ন্যায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে সারাদিনরাত্রি ব্যাপী তিনি নিবিষ্ট থাকতেন ভজনে।

সদাচারী তো ছিলেনই , তার সঙ্গে সাধুমার্গে যা যা করণীয়– সেই সকল ভজন অনুকূল প্রসঙ্গেই তাঁর ছিল ঐকান্তিক চেষ্টা। হরিভক্তির মূল যে সকল কর্মে প্রবেশ করতো সেসব কর্মেই কেবল তাঁর আগ্রহ থাকতো । প্রেমরাগেই কেবল তাঁর হৃদয়তন্ত্রীতে ঝংকার উঠতো। অন্য কোন রসের আভাস সেখানে অনুমাত্রও স্থান পেত না। তাঁর নির্মল রসনা সদা সর্বদা কেবল রাম নামে মত্ত থাকত। আর নয়নে বর্ষার বারির ন্যায় প্রেমনীর নির্গত হতে থাকতো। তাঁর শুদ্ধাভক্তি বড়ই অনুপম ও অপ্রতিম ছিল।
*
জয়পুরের নরেশ তখন রাজা মানসিংহ। তিনি মহাত্মা অগ্রদাসজীর ভক্তিগুণের কথা লোকমুখে শুনেছেন। সেসব শুনে তাঁর সাধ হয়েছে একবার অগ্রদাসজীকে দর্শন করার। একদিন তাই তিনি এলেন অগ্রদাসজীর সাথে দেখা করতে। চরণদর্শন করে তাঁর আশীর্বাদ প্রাপ্ত হবেন-এই বাসনা। এখন, তিনি তো রাজা ! তাই, বিবিধ প্রকার পূজানৈবেদ্য ও উপঢৌকন নিয়ে অনেক দাস-দাসী , সেনাসহ সুসজ্জিত হয়ে বিশাল বৈভব প্রদর্শন করে এসে হাজির হলেন অগ্রদাসজীর আশ্রম প্রাঙ্গণে।
*
অগ্রদাসজীর আশ্রমটি ছায়া সুনিবিড় অরণ্যরাজীর মধ্যে এক নির্জন বিস্তীর্ণ প্রান্তরে । প্রতিদিনই অরণ্যের বৃক্ষের পত্র ঝরে পড়ে অঙ্গনে । অপূর্ব সুস্নিগ্ধ পরিবেশ । সেসময় অগ্রদাসজী মুখে রামনাম নিতে নিতে লীলাস্মরণ করছিলেন আর একটি ঝুড়ি হাতে নিয়ে তাতে অঙ্গনে পড়ে থাকা গাছের পাতাগুলি কুড়িয়ে নিয়ে রাখছিলেন। ঝুড়িটি ভরে গেলে সেটি দূরবর্তী একটি গর্তে উপুর করে এসে পুনরায় পাতা কুড়োচ্ছিলেন। ঠিক এই সময় মানসিংহের আগমন। অগ্রদাসজী বৈভব দেখে বুঝলেন, কোন রাজা এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেই স্থান ত্যাগ করে দূরের একটি বৃক্ষতলে গিয়ে অন্য দিকে মুখ করে বসে পড়লেন।
*
রাজা মানসিংহ বিচক্ষণ। তাঁর অনুধাবন করতে অসুবিধা হলো না যে তাঁর আগমনে অগ্রদাসজী এতটুকুও আনন্দ পান নি । মানসিংহের সাহসে কুলোলো না দূরে ওই বৃক্ষতলে গিয়ে প্রণাম নিবেদন করার অগ্রদাসজীকে। তিনি তাই আপন স্থানেই দাঁড়িয়ে রইলেন। স্বভাবতঃই, তাঁর সঙ্গের দাসদাসী, সেনাও স্থাণুবৎ দাঁড়িয়ে। বেশ কিছুক্ষণ অতিক্রান্ত হয়ে গেল। আগ্রদাসজীও আসেন না , মানসিংহও যান না।
*
এমন সময় নাভাজী সেইস্থানে এসে উপস্থিত। কোন কার্যবশতঃ তিনি বাইরে কোথাও গিয়েছিলেন । রাজা মানসিংহকে সেনাসহ ওভাবে নিথর ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলেন অত্যন্ত। মানসিংহ জানালেন যে, আসলে তিনি আসামাত্র তাঁকে দেখেই অগ্রদাসজী দূরে ওই বৃক্ষতলে চলে গিয়েছেন । এ কথা শুনেই নাভাজী অনুভব করলেন নিজের গুরুদেবের এমন আচরণের কারণ কী হতে পারে। তিনি বললেন, আপনি এখানেই অপেক্ষা করুন মহারাজ । আমি আপনার কথা ওঁনাকে গিয়ে জানাচ্ছি । যদি ইঙ্গিত দেই তবে আসবেন নিকটে। মানসিংহ হেঁটমুণ্ডকে সম্মতি জানালেন ।
*
নাভাজী বৃক্ষতলে এসে অগ্রদাসজীকে প্রণাম নিবেদন করে বললেন , “গুরুদেব, আপনাকে প্রণাম জানাতে, আপনার দর্শনকৃপা পেতে জয়পুরনরেশ স্বয়ং মানসিংহ এসেছেন কতদূর থেকে। আপনি যদি একটিবারের জন্য অন্ততঃ তাঁকে কৃপা না করেন , রাজা বড় ব্যথিত হবেন। আমি আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি গুরুদেব, আপনি রাজাকে একটু আশীর্বাদ করুন অন্ততঃ।” এ কথা বলেই নাভাজী সাষ্টাঙ্গে পুনরায় প্রণাম অর্পণ করলেন অগ্রদাসজীকে ।
*
প্রিয় শিষ্যের কথায় মন নরম হল অগ্রদাসজীর । তিনি মানসিংহের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। মানসিংহ এতক্ষণ চাতক পক্ষীর ন্যায় তৃষ্ণার্ত নয়নে তাকিয়ে ছিলেন স্বামী অগ্রদাসজীর দিকে , যদি একবার চোখ ফেরান- এই আশায়। তাই অগ্রদাসজী তাকাতেই ভূমিতে শুয়ে পরে প্রণাম নিবেদন করলেন তিনি। চোখ ও ভ্রূ-র ভঙ্গীতে প্রণাম গ্রহণ এবং আশীর্বাদ করলেন অগ্রদাসজীও। কিন্তু ,নিকটে গেলেন না, বা, এই আদেশও কলেন না যে মানসিংহকে কাছে আসার। অতঃপর, জয়পুর নৃপ মানসিংহ সকলকে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করলেন ।
*
এখন, প্রশ্ন হচ্ছে যে, অগ্রদাসজী রাজা মানসিংহের সঙ্গে এমন আচরণ করলেন কেন? ঠিক এমনই আচরণ আমরা করতে দেখেছি শ্রীমন্‌ কৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুকেও । তিনিও উৎকলরাজ প্রতাপাদিত্যকে দর্শন দিতে চান নি। আসলে , বিষয়ী লোকেদের সংস্রবে মনে বিষয়ের প্রভাব পরে। তাই, সন্ন্যাসীদের রাজদর্শন নিষিদ্ধ। সাধু মহাত্মাদের চরিত্রের একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাঁরা সকল মানুষকে সমান ভাবে দেখেন। বিত্তবানদের প্রতি কোন পক্ষপাত থাকে না ব্যবহারে ।
*
আজ অগ্রদাসজীর কথা যা আমরা জানলাম, এমনই নিরপেক্ষ হয় সাধুর স্বভাব। রাজ অনুরোধ-উপরোধ-অনুগ্রহ কোন আশাই তাঁরা করেন না। তাঁদের কাছে একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিও যা আবার একজন দরিদ্র-মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষও তা। আপন-পর-ভেদ নেই ভাবনায়। রাজা, প্রজা বা দাস বলে কোন বিশেষ সমীহ সম্মান জ্ঞান বা অবহেলাও থাকেনা আলাদা ভাবে , আচরণে। সকলেই সমাসনে এক সম্মান পান তাঁদের থেকে। ঠিক যেমন স্বামী অগ্রদাসজীর চরিত্র ! শ্রীহরি ভজন লালসাই তাঁদের একমাত্র উপজীব্য। আর তাই , বিষয়ের বৈভব দেখলে তাঁরা দূরে সরে যান।
অগ্রদাসজীর মতন এমন ভক্ত মহাত্মার শ্রীচরণে শত কোটি প্রণাম অর্পণ করে এমন বিষয়-স্পৃহাহীনতার প্রার্থনা জানালাম।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মূল্যবান মনুষ্য জীবনে শিবমহিমা ও শ্রাবণ মাস : স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)।।।।

আমাদের মূল্যবান মনুষ্য জীবনে গুরুদেব ভগবান প্রাণদেবতা নিজ নিজ পিতামাতার মত প্রত্যেকের হৃদয় সিংহাসনে বিরাজ করেন। আমাদের প্রাণদেবতা যুগাচার্য্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ সাক্ষাৎ শিবস্বরূপ, চলমান শিব। গৃহদেবতা নীলরুদ্রের আশির্বাদে শিব-অবতার রূপে শিবশিশুর, দেবশিশুর ধরাধামে আবির্ভাব।

পরবর্তিকালে সাক্ষাৎ দেবাদিদেব মহাদেব রূপে আত্মপ্রকাশ হয়। আনুষ্ঠানিক সন্ন্যাস গ্রহণ পূর্বক তিনি স্বামী প্রণবানন্দ নামে পরিচিত হন। প্রনব (ওমঃ) হল পরমেশ্বরের প্রতীক। সৃষ্টির প্রথম শব্দ ওঁ। ওঁ এ আছে তিন অক্ষর- অ, উ, ম। তিন অক্ষরে আছে তিন দেবতাঃ- ব্রহ্মা, বিষ্ণু,মহেশ্বর (শিব)। শিব শব্দের অর্থ মঙ্গল। তাই প্রতিটি মঙ্গলময় জিনিস বা ব্যক্তিত্ব হলো শিবস্বরূপ। আর মঙ্গলকে আশ্রয় না করে কয়জন বাঁচতে পারে? তাই শিব সবারই আশ্রয়স্থল। তেমনি শিব ব্যক্তিত্বের ব্যক্তি মঙ্গলময় ও আশ্রয়দাতার প্রতীক। আমাদের প্রাণদেবতা গুরুমহারাজ সাক্ষাৎ ভগবান যুগাচার্য্য স্বামী প্রণবানন্দজী ও সবার আশ্রয়স্থল মঙ্গলময় ও আশ্রয় দাতার প্রতীক।
আমাদের হিন্দুদের অন্যতম প্রধান মন্ত্র – ওঁ নমঃ শিবায়।
বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টির আগে মহাশূণ্যে যে শব্দতরঙ্গ ছিল তাই “ওম ” । ন, ম, শি, বা, য় ,” এই মন্ত্রে আমরা মহাদেবের জপ করি । ন মানে মাটি , ম অর্থে জল , শি হলেন প্রতিভূ , বা মানে বায়ু বা বাতাস এবং য় হলেন সবকিছুর প্রতিনিধিস্বরূপ। তাহলে শিব লিঙ্গ শব্দের সম্মিলিত অর্থ – যা মঙ্গলময়ের প্রতীক, কল্যাণের প্রতীক প্রভৃতি। অতএব শিব লিঙ্গ পূজা, মঙ্গলময়ের পূজা, সুন্দরের পূজা, শুভ বা কল্যাণের পূজা। এই শ্রাবণ মাস সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সারা বছর শিবপুজো করা হলেও এই শ্রাবণ মাসে দেবাদিদেব মহাদেবকে নিষ্ঠাভরে ও নিয়ম মেনে পুজো করা হয়, বিশেষভাবে সোমবার। কারণ, এটি দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষার আগমনের সাথে যুক্ত। অনেকের কাছে শ্রাবণ মাস উপবাসের মাস। ভোলে বাবার উপবাস তো রাখেন, শ্রাবণ মাসেকেই কেন ‘শিবের মাস’ বলা হয়? সারাবছর শিবপুজো করা হলেও এই মাসে মহাদেবকে নিষ্ঠাভরে ও নিয়ম মেনে পুজো করা হয়। শিবের উপাসনা করার শ্রেষ্ঠ সময় হল প্রদোষ কাল। প্রত্যেক পক্ষের দ্বাদশীর শেষ ও ত্রয়োদশীর সূচনার অংশটিকে “প্রদোষ” বলা হয়। এইসময় শ্রাবণ মাসে শিবের ভক্তরা মহাদেবকে পুজো করলে মনের সব ইচ্ছে পূরণ হয়। ‘শ্রাবণ’ শব্দের উৎস হয়েছে ‘শ্রবণ’ থেকে। তাই এই সময়কাল শিবকথা, শুভকথা শোনার মাস।
শিবমন্দিরে তো বটেই, শ্রাবণ মাসে বাড়িতে বাড়িতেও শিবের উপাসনা করা হয়। সাধারণত গঙ্গাজল, দুধ দিয়ে রুদ্রাভিষেক করে মহাদেবের পায়ে ফুল, বেলপাতা অর্পণ করে শিবের পুজো করা হয়। আর এটাই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ উপায় বলে মনে করা হয়। শাস্ত্র অনুসারে, জলভিষেক করলেও মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। শ্রাবণ মাসে শিবকে সন্তুষ্ট করতে শিবের ভক্তরা কোনও ত্রুটি রাখেন না। পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, শ্রাবণ মাসেই সমুদ্র মন্থনের ঘটনা ঘটেছিল। সমুদ্র উত্থিত হলাহল বিষ থেকে গোটা ধরিত্রীকে রক্ষা করার জন্য স্বয়ং মহাদেব নিজ কণ্ঠে হলাহল বিষ ধারণ করেছিলেন। বিষের প্রভাবে মহাদেবের কন্ঠ নীল হয়ে ওঠে। এই কারণেই মহাদেবের অপর নাম নীলকণ্ঠ। বিষের তীব্রতা হ্রাস করার জন্য স্বর্গের দেবতারা শিবের মাথায় গঙ্গাজল ঢালতে থাকেন। সেই কারণেই শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় গঙ্গাজল প্রদান করা হয়। আর তাতেই আদিদেব মহাদেবের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন ভক্তরা। আরেকটি ব্যাখ্যাতে উল্লেখ রয়েছে, সতীর দেহত্যাগের পর দেবী পার্বতী রূপে ফের একবার জন্ম নেন। শিবকে আবার স্বামীরূপে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে সাধনা করে শিবকে সন্তুষ্ট করলে পার্বতীকে বিবাহ করতে রাজি হন মহাদেব। আর সেই শুভমুহূর্ত ঘটে শ্রাবণ মাসেই। তারপর শিবরাত্রির দিনেই শিব-পার্বতীর পুনর্মিলন ঘটেছিল। এই কারণেই শ্রাবণ মাসকে শিবের মাস বলা হয়। সনাতন ধর্ম অনুসারে শিব হলেন আদি দেবতা। সেই কারণে তাঁকে দেবাদিদেব বলা হয়।
ভগবান শিবের সাতটি রহস্যঃ-১) সাপঃ সর্প হচ্ছে সদা জাগ্রত থাকার প্রতীক। ২) ভষ্মঃ এটা জীবনের অনিত্যতার প্রতীক। ৩) চন্দ্রঃ মনের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার প্রতীক। ৪) ডমরুঃ উন্মুক্ত চিন্তা-চেতনার প্রতীক। ৫) ত্রিশুলঃ শিব প্রকৃতির তিনগুন নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, এটি তারই প্রতীক। ৬) নীলাভ শরীরঃ আকাশ অন্তহীন, অন্তহীনতা তথা অসীমতার প্রতীক। ৭) গঙ্গাঃ গঙ্গা নিষ্কলুষ জ্ঞানের প্রতীক। “ওঁ নমঃ শিবায়” উচ্চারণ করে জপ করলে সবরকম অশুভ প্রভাব দূরে থাকে। পাঁচ ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণে থাকে। শিব জন্মরহিত, শাশ্বত, সব কারণের কারণ। তিনি স্বরূপে বিদ্যমান। সব জ্যোতির জ্যোতি বা আলো । তিনি তুরীয়, অন্ধকারের অতীত। আদি ও অন্তহীন। সব শেষে শিবলিঙ্গ বা শিব মূর্তিকে প্রাণদেবতা সাক্ষাৎ চলমান শিব গুরুমহারাজকে প্রণাম করে বলুন:-
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং গতিস্তং পরমেশ্বরম্।।
ওঁ নমঃ শিবায়..ওঁ নমঃ শিবায়..ওঁ নমঃ শিবায়..
জয় জয় প্রণবেশ্বর মহাদেব…
জয় জয় দেবাদিদেব মহাদেব….
জয় জয় শিব শম্ভু…
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!
স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক) l

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে- হাজার চুরাশির মা, মহাশ্বেতা দেবী।।।।।

মহাশ্বেতা দেবী ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক এবং একজন কর্মী। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে হাজার চুরাশির মা , রুদালী এবং অরণ্যের অধিকার । তিনি একজন বামপন্থী ছিলেন যিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ , বিহার , মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড় রাজ্যের উপজাতিদের ( লোধা এবং শবর ) অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছিলেন ।

তিনি বিভিন্ন সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন যেমনসাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার ( বাংলায় ), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার সহ ভারতের বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী এবং পদ্মবিভূষণ ।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা—————

মহাশ্বেতা দেবী একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৪ জানুয়ারি ১৯২৬ তারিখে ঢাকা , ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে ঢাকা , বাংলাদেশ )। তার বাবা মনীশ ঘটক ছিলেন কল্লোল আন্দোলনের একজন কবি এবং ঔপন্যাসিক , যিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন যুবনাশ্ব ( বাংলা : আত্মনাশ্ব ) । ঘটকের ভাই ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক । দেবীর মা, ধরিত্রী দেবীও একজন লেখক এবং একজন সমাজকর্মী ছিলেন যার ভাইদের মধ্যে রয়েছেন ভাস্কর শঙ্খ চৌধুরী এবং এর প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক।ভারতের ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি , শচীন চৌধুরী।
দেবীর প্রথম শিক্ষা ছিল ঢাকায়, ইডেন মন্টেসরি স্কুল । এরপর তিনি পশ্চিমবঙ্গে (বর্তমানে ভারতে) চলে যান। এরপর তিনি মেদিনীপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন। এরপর তাকে শান্তিনিকেতনে ভর্তি করা হয় । এর পরে, তিনি বেলতলা গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করেন যেখানে তিনি তার ম্যাট্রিকুলেশন শেষ করেন। তারপর ১৯৪৪ সালে তিনি আসুতোষ কলেজ থেকে আই.এ. তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং ইংরেজিতে বিএ (অনার্স) সম্পন্ন করেন এবং তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এমএ সম্পন্ন করেন ।
মহাশ্বেতা দেবী বহুবার ভারতের উপজাতি মানুষদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। মহাশ্বেতা দেবীর বিশেষত্ব আদিবাসী, দলিত এবং প্রান্তিক নাগরিকদের অধ্যয়ন তাদের মহিলাদের উপর ফোকাস করে। তারা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা , মহাজন এবং উচ্চ শ্রেণীর দুর্নীতি ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হিসেবে যুক্ত ছিল । তিনি বছরের পর বছর পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড়ের আদিবাসী গ্রামে বসবাস করতেন, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতেন এবং তাদের কাছ থেকে শিখতেন। তিনি তার কথা ও চরিত্রে তাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকে মূর্ত করেছেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে তার গল্পগুলি তার সৃষ্টি নয়, সেগুলি তার দেশের মানুষের গল্প। যেমন একটি উদাহরণ তার কাজ “ছোট্টি মুন্ডি এবং তার তির”।তিনি লোধা এবং শবর , পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সম্প্রদায়, মহিলা এবং দলিতদের অধ্যয়ন করেছিলেন ।

তার বিস্তৃত বাংলা কথাসাহিত্যে, তিনি প্রায়শই শক্তিশালী কর্তৃত্ববাদী উচ্চ-বর্ণের জমিদার, অর্থ-ঋণদাতা এবং ভেনাল সরকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা উপজাতীয় জনগণ এবং অস্পৃশ্যদের উপর নির্মম নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন।মহাশ্বেতা দেবী ভারতে উপজাতিদের দ্বারা ভোগা বৈষম্যের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার তার আওয়াজ তুলেছিলেন। দেবীর ১৯৭৭ সালের উপন্যাস অরণ্যের অধিকার (অরণ্যে অধিকার) ছিল বিরসা মুন্ডার জীবন নিয়ে । এবং ২০১৬ সালের জুন মাসে, দেবীর সক্রিয়তার ফলস্বরূপ, ঝাড়খণ্ড রাজ্য সরকার অবশেষে মুণ্ডার মূর্তি থেকে ম্যানাকলগুলি অপসারণ করতে দেখেছিল, যা উল্লেখযোগ্য তরুণ উপজাতীয় নেতার স্মারক ভাস্কর্যের অংশ ছিল। ব্রিটিশ শাসনের যুগের একটি ফটোগ্রাফের উপর ভিত্তি করে।
দেবী ১০০ টিরও বেশি উপন্যাস এবং ২০ টিরও বেশি ছোট গল্পের সংকলন লিখেছেন প্রাথমিকভাবে বাংলায় লেখা তবে প্রায়শই অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ঝাঁসির রাণীর জীবনী অবলম্বনে তার প্রথম উপন্যাস ঝাঁসির রানী, প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে ।

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি—————–

সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৭৯), সমাজসেবায় পদ্মশ্রী (১৯৮৬), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার (১৯৯৬), রামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার (১৯৯৭), অফিসার দেল’ অর্ডার দেস আর্টস এত দেস লেটার্স (২০০৩), পদ্মবিভূষণ – ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা (২০০৬), সার্ক সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭), ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন (২০০৯), যশবন্তরাও চবন জাতীয় পুরস্কার (২০১০), বঙ্গবিভূষণ – পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা (২০১১)।

চলচ্চিত্রায়ন—————–

সংঘর্ষ, রুদালি, হাজার চৌরাসি কি মা, মাটি মায়,
গাঙ্গোর।

দেবীর প্রধান কাজগুলির মধ্যে রয়েছে——–

হাজর চুরাশির মা, অরণ্যের অধিকার, অগ্নিগর্ভ, মূর্তি, নীড়েতে মেঘ, স্তন্যদায়নী, চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর, বর্তিকা।

মৃত্যু———–

২৩ জুলাই ২০১৬ তারিখে, দেবী একটি বড় হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন এবং তাকে কলকাতার বেলে ভিউ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় । জুলাই ২৮ তারিখে ৯০ বছর বয়সে একাধিক অঙ্গ ব্যর্থতার কারণে দেবী মারা যান।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

প্রথম রেডিও কম্পাস : এভিয়েশন নেভিগেশনে একটি মাইলফলক।।।

27 জুলাই, 1920-এ, একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন বিমান চলাচলের ন্যাভিগেশনে বিপ্লব ঘটিয়েছে – প্রথম রেডিও কম্পাস। এই অগ্রগামী প্রযুক্তিটি বিমান ভ্রমণের নিরাপত্তা এবং দক্ষতাকে পরিবর্তন করে, আরও নির্ভুলতার সাথে তাদের দিকনির্দেশ এবং অবস্থান নির্ধারণ করতে পাইলটদের সক্ষম করে। এই প্রবন্ধে, আমরা প্রথম রেডিও কম্পাসের ইতিহাস, বিকাশ এবং প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব, যা বিমান চালনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

*উন্নত নেভিগেশনের প্রয়োজন*
বিমান চালনার প্রথম দিকে, পাইলটরা তাদের ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ল্যান্ডমার্ক, কম্পাস এবং আকাশী নেভিগেশনের মতো চাক্ষুষ রেফারেন্সের উপর নির্ভর করতেন। যাইহোক, এই পদ্ধতিগুলি প্রায়শই অবিশ্বস্ত ছিল, বিশেষ করে প্রতিকূল আবহাওয়া বা অপরিচিত অঞ্চলগুলিতে। বিমান ভ্রমণ সম্প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে আরও সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য ন্যাভিগেশন সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ চাপে পড়ে।
*রেডিও কম্পাসের বিকাশ*
20 শতকের প্রথম দিকে, রেডিও প্রযুক্তি নেভিগেশনের জন্য একটি সম্ভাব্য সমাধান হিসাবে আবির্ভূত হতে শুরু করে। প্রথম রেডিও কম্পাস, যা রেডিও ডিরেকশন ফাইন্ডার (RDF) নামেও পরিচিত, 1910 সালে তৈরি হয়েছিল। এই প্রাথমিক সিস্টেমটি একটি পরিচিত স্টেশন থেকে রেডিও সংকেতের দিক নির্ণয় করতে একটি ঘূর্ণায়মান অ্যান্টেনা ব্যবহার করেছিল। যাইহোক, এটি 1920 সাল পর্যন্ত ছিল না যে প্রথম ব্যবহারিক রেডিও কম্পাস তৈরি করা হয়েছিল এবং বিমান ব্যবহারের জন্য পরীক্ষা করা হয়েছিল।
*প্রথম ফ্লাইট*
27 জুলাই, 1920-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী এবং ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ডের বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীদের একটি দল রেডিও কম্পাস ব্যবহার করে প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা করে। পরীক্ষামূলক বিমান, একটি কার্টিস JN-4 “জেনি” বাইপ্লেন, একটি রেডিও কম্পাস সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত ছিল যা কাছাকাছি একটি স্টেশন থেকে রেডিও সংকেতের দিক সনাক্ত করতে একটি ঘূর্ণমান অ্যান্টেনা ব্যবহার করে। ফ্লাইটটি দিকনির্দেশ এবং অবস্থান নির্ধারণে রেডিও কম্পাসের কার্যকারিতা প্রদর্শন করেছিল, যা বিমান চালনায় এর গ্রহণের পথ প্রশস্ত করেছিল।
*কিভাবে কাজ করেছে*
রেডিও কম্পাস একটি সহজ কিন্তু বুদ্ধিমান নীতি ব্যবহার করেছিল। বিমানের একটি ঘূর্ণায়মান অ্যান্টেনা একটি পরিচিত স্টেশন থেকে রেডিও সংকেতের দিক সনাক্ত করে, যেমন একটি বাতিঘর বা একটি রেডিও বীকন। অ্যান্টেনাটি একটি রেডিও রিসিভারের সাথে সংযুক্ত ছিল, যা সংকেতকে প্রশস্ত করে এবং এটি একটি মিটারে প্রদর্শন করে। অ্যান্টেনা ঘোরানো এবং সংকেত শক্তি পর্যবেক্ষণ করে, পাইলট স্টেশনের দিকনির্দেশ এবং ফলস্বরূপ, তাদের নিজস্ব অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে।
*বিমান চলাচলের উপর প্রভাব*
রেডিও কম্পাসের প্রবর্তন বিমান চলাচলে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এটি পাইলটদের আরও বেশি নির্ভুলতার সাথে নেভিগেট করতে সক্ষম করে, এমনকি প্রতিকূল আবহাওয়া বা অপরিচিত অঞ্চলেও। এটি নিরাপত্তা এবং দক্ষতা বাড়িয়েছে, যা দীর্ঘতর ফ্লাইট এবং আরও নির্ভরযোগ্য বিমান ভ্রমণের অনুমতি দেয়। রেডিও কম্পাস আরও উন্নত ন্যাভিগেশন সিস্টেম, যেমন GPS এর বিকাশের পথ তৈরি করেছে।
*উপসংহার*
প্রথম রেডিও কম্পাস, 27 জুলাই, 1920-এ ব্যবহৃত, বিমান চলাচলে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। এই অগ্রগামী প্রযুক্তি বিমান ভ্রমণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, যা পাইলটদের আরও নির্ভুলতার সাথে তাদের দিকনির্দেশ এবং অবস্থান নির্ধারণ করতে সক্ষম করেছে। যেহেতু আমরা বিমান চালনা উদ্ভাবনের সীমানাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, আমরা যারা প্রথম রেডিও কম্পাস তৈরি করেছেন তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং অধ্যবসায়কে সম্মান জানাই, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তা এবং অগ্রগতির সাধনার প্রমাণ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারতের মিসাইল ম্যান, এপিজে আবদুল কালাম : প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।।

আব্দুল কালাম ছিলেন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি একজন বিজ্ঞানীও ছিলেন। তিনি স্বাধীন ভারতের একাদশতম রাষ্ট্রপতি যিনি ধর্মনিপেক্ষভাবে নির্বাচিত হন। ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরমে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। ভারতীয় বিজ্ঞান সংস্থা ইসরো তে তিনি একজন বিজ্ঞানী হিসাবে কাজ করেন। মহাকাশযানবাহী রকেট এবং বালিস্টিক মিসাইলের উপর অবদানের জন্য তাঁকে ভারতের Missile Man বলা হয়।

আব্দুল পাকির জয়নুলাবদিন আব্দুল কালাম ছিলেন একজন ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানী এবং রাষ্ট্রনায়ক যিনি ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ১১ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের সাধারণ এক পরিবারে ১৯৩১ সালের ১৫ই অক্টোবর জন্ম হয় এপিজে আব্দুল কালামের। তখন রামেশ্বরম বৃটিশ ভারতের মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ছিল। তাঁর বাবার নাম জয়নুল আবেদীন এবং মায়ের নাম আশিয়াম্মা। তাঁর জীবনে তাঁর বড় বোন জোহরা এবং ভগ্নিপতি আহামাদ জালালুদ্দীনেরও অনেক প্রভাব ছিল। রামেশ্বরম এবং তাম্রেশ্বরম এবং রমেশ্বরম এবং স্টান্ট ইঞ্জিনে জন্ম ও বেড়ে ওঠেন।
তিনি পরবর্তী চার দশক একজন বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞান প্রশাসক হিসেবে কাটিয়েছেন, প্রধানত ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) এবং ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) এ এবং ভারতের বেসামরিক মহাকাশ কর্মসূচি এবং সামরিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। এইভাবে তিনি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং উৎক্ষেপণ যান প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করার জন্য ভারতের মিসাইল ম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৯৮ সালে ভারতের পোখরান-II পারমাণবিক পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক, প্রযুক্তিগত এবং রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেছিলেন, যা ১৯৭৪ সালে ভারতের মূল পারমাণবিক পরীক্ষার পর প্রথম।
ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি এবং তৎকালীন বিরোধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস উভয়ের সমর্থনে কালাম ২০০২ সালে ভারতের ১১ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ব্যাপকভাবে “জনগণের রাষ্ট্রপতি” হিসাবে উল্লেখ করা হয়, তিনি একটি একক মেয়াদের পরে তার শিক্ষা, লেখালেখি এবং জনসেবার নাগরিক জীবনে ফিরে আসেন। তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান, ভারতরত্ন সহ বেশ কয়েকটি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের প্রাপক ছিলেন।
তিনি মানুষের মাঝে জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে পছন্দ করতেন। ভালবাসতেন নিজের জীবনের শিক্ষা তরুণ পজন্মের মাঝে পৌঁছে দিতে । তেমনই ২০১৫ সালে ২৭শে জুলাই মেঘালয়ের শিলং শহরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠানে বসবাসযোগ্য পৃথিবী বিষয়ে বক্তব্য রাখছিলেন । ভারতীয় সময় ৬টা ৩০ মিনিটে বক্তব্য রাখা অবস্থায় তাঁর হার্ট এ্যটাক হয় এবং তাকে বেথানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ৭টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তাঁর মৃত্যু ঘটে ।
৮৪ বছর বয়সে দেশের জন্য নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করে যাওয়া এ মহাপুরুষ পরলোক গমন করেন। ২৯শে জুলাই তাঁর জন্মস্থান রামেশ্বরমেই তাকে দাফন করা হয়।
কালামের লেখা—
এ পি জে আব্দুল কালাম এবং রোদ্দাম নরসিমহা দ্বারা তরল মেকানিক্স এবং স্পেস টেকনোলজির উন্নয়ন; ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস, ১৯৮৮।
ভারত ২০২০: এ পি জে আবদুল কালাম, ওয়াই এস রাজন-এর নতুন সহস্রাব্দের জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি; নিউ ইয়র্ক, ১৯৯৮।
উইংস অফ ফায়ার: এ পি জে আবদুল কালাম, অরুণ তিওয়ারির একটি আত্মজীবনী; বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, ১৯৯৯।
ইগনিটেড মাইন্ডস: এ পি জে আবদুল কালামের দ্বারা ভারতের মধ্যে শক্তি উন্মোচন করা; ভাইকিং, ২০০২।
দ্য লাউমিনাস স্পার্কস এ পি জে আবদুল কালাম, দ্বারা; পুণ্য পাবলিশিং প্রাইভেট লিমিটেড, ২০০৪।
এ পি জে আবদুল কালামের মিশন ইন্ডিয়া, মানব গুপ্তের আঁকা ছবি; পেঙ্গুইন বই, ২০০৫।
এ পি জে আবদুল কালামের অনুপ্রেরণামূলক চিন্তা; রাজপাল অ্যান্ড সন্স, ২০০৭।
এ পি জে আবদুল কালামের অদম্য আত্মা; রাজপাল অ্যান্ড সন্স প্রকাশনা
শিবথানু পিল্লাইয়ের সাথে এ পি জে আব্দুল কালামের দ্বারা একটি ক্ষমতাপ্রাপ্ত জাতির কল্পনা করা; টাটা ম্যাকগ্রা-হিল, নয়াদিল্লি
ইউ আর বর্ন টু ব্লসম: টেক মাই জার্নি বিয়ন্ড এ পি জে আবদুল কালাম এবং অরুণ তিওয়ারি; ওশান বুকস, ২০১১।
টার্নিং পয়েন্টস: এ পি জে আব্দুল কালামের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে একটি যাত্রা; হার্পারকলিন্স ইন্ডিয়া, ২০১২।
এ পি জে আবদুল কালাম এবং সৃজন পাল সিং-এর লক্ষ্য ৩ বিলিয়ন; ডিসেম্বর ২০১১ (প্রকাশক: পেঙ্গুইন বই)।
মাই জার্নি: এ পি জে আবদুল কালাম দ্বারা স্বপ্নকে কর্মে রূপান্তর করা; রূপা পাবলিকেশন দ্বারা ২০১৪।
পরিবর্তনের জন্য একটি ইশতেহার: এ পি জে আব্দুল কালাম এবং ভি পোনরাজের ভারত ২০২০ এর সিক্যুয়েল; হার্পারকলিন্স দ্বারা জুলাই ২০১৪।
আপনার ভবিষ্যত তৈরি করুন: এ পি জে আবদুল কালামের দ্বারা স্পষ্ট, স্পষ্ট, অনুপ্রেরণামূলক; রাজপাল অ্যান্ড সন্স দ্বারা, ২৯ অক্টোবর ২০১৪।
পুনরুজ্জীবিত: এ পি জে আব্দুল কালাম এবং সৃজন পাল সিং দ্বারা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বৈজ্ঞানিক পথ; পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া দ্বারা, ১৪ মে ২০১৫।
অরুণ তিওয়ারির সঙ্গে এ পি জে আবদুল কালামের প্রমুখ স্বামীজির সঙ্গে আমার আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা; হার্পারকলিন্স পাবলিশার্স, জুন ২০১৫।
অ্যাডভান্টেজ ইন্ডিয়া: ফ্রম চ্যালেঞ্জ টু অপারচুনিটি এ পি জে আবদুল কালাম এবং সৃজন পাল সিং দ্বারা; হার্পারকলিন্স পাবলিশার্স, ১৫ অক্টোবর ২০১৫।
তার জীবদ্দশায় ৮৪ বছরের দীর্ঘ ও সফল কর্মজীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও দর্শন থেকে আমাদের জন্য রেখে গেছেন অসংখ্য মহামূল্যবান বাণী। তার মধ্যে কিছু সংকলন করা হলো-
(ক) স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যাও। স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না।
(খ) মানুষ তার ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে পারে না, কিন্তু অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে। অভ্যাসই মানুষের ভবিষ্যত পরিবর্তন করে দেয়।
(গ) তুমি যদি সূর্যের মতো আলো ছড়াতে চাও, তাহলে আগে সূর্যের মতো পুড়তে শেখো।
(ঘ) একটি ভালো বই একশ ভালো বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভালো বন্ধু একটি লাইব্রেরির সমান।
(ঙ) সফলতার গল্প পড়ো না, কারণ তা থেকে তুমি শুধু গল্পটাই পাবে। ব্যর্থতার গল্প পড়ো, তাহলে সফল হওয়ার কিছু উপায় পাবে।
(চ) উদার ব্যক্তিরা ধর্মকে ব্যবহার করে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান। কিন্তু সংকীর্ণমনস্করা ধর্মকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
(ছ) ছাত্রজীবনে আমি বিমানের পাইলট হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়েছি, হয়ে গেছি রকেট বিজ্ঞানী।
(জ) জীবন ও সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। জীবন শেখায় সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করতে আর সময় শেখায় জীবনের মূল্য দিতে।
(ঝ) যারা মন থেকে কাজ করে না, তারা আসলে কিছুই পায় না। আর পেলেও সেটা হয় অর্ধেক হৃদয়ের সফলতা। তাতে সব সময়ই একরকম তিক্ততা থেকে যায়।
(ঞ) কঠিন কাজে আনন্দ বেশি পাওয়া যায়। তাই সফলতার আনন্দ পাওয়ার জন্য মানুষের কাজ কঠিন হওয়া উচিত।
(ট) প্রথম সাফল্যের পর বসে থেকো না। কারণ দ্বিতীয়বার যখন তুমি ব্যর্থ হবে তখন অনেকেই বলবে প্রথমটিতে শুধু ভাগ্যের জোরে সফল হয়েছিলে।
(ঠ) বৃষ্টি শুরু হলে সব পাখিই কোথাও না কোথাও আশ্রয় খোঁজে। কিন্তু ঈগল মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে বৃষ্টিকে এড়িয়ে যায়।
(ড) নেতা সমস্যায় ভয় পান না। বরং সমস্যার মোকাবিলা করতে জানবেন। তাকে কাজ করতে হবে সততার সঙ্গে।
(ঢ) জাতির সবচেয়ে ভালো মেধা ক্লাসরুমের শেষ বেঞ্চ থেকে পাওয়া যেতে পারে।(ণ) আমি সুপুরুষ নই। কিন্তু যখন কেউ বিপদে পড়েন আমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। সৌন্দর্য থাকে মানুষের মনে, চেহারায় নয়।
(ত) তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার বার্তা হলো- তাদের ভিন্নভাবে চিন্তা করবার সাহস থাকতে হবে। মনের ভেতর আবিষ্কারের তাড়না থাকতে হবে। নিজের সমস্যা নিজে মেটাবার মানসিকতা থাকতে হবে।
(থ) কাউকে হারিয়ে দেয়াটা খুব সহজ, কিন্তু কঠিন হলো কারো মন জয় করা।
(দ) জীবনে সমস্যার প্রয়োজন আছে। সমস্যা আছে বলেই সাফল্যে এতো আনন্দ।
(ধ) যে হৃদয় দিয়ে কাজ করে না, শূন্যতা ছাড়া সে কিছুই অর্জন করতে পারে না।
(ন) সেই ভালো শিক্ষার্থী যে প্রশ্ন করে। প্রশ্ন না করলে কেউ শিখতে পারে না। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে।
(প) সমাপ্তি মানেই শেষ নয়। ‘END’ শব্দটির মানে হচ্ছে ‘Effort Never Dies’ অর্থাৎ ‘প্রচেষ্টার মৃত্যু নেই’।
(ফ) উপরে তাকিয়ে আকাশটাকে দেখো। তুমি একা নও, এই মহাবিশ্ব তোমার বন্ধুর মতোই।
(ব) স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখে যেতে হবে। স্বপ্ন না দেখলে কাজ করা যায় না।
(ভ) ফেল করে হতাশ হয়ো না। ইংরেজি শব্দ ফেল ‘Fail’ মানে ‘First Attempt in Learning’ অর্থাৎ ‘শেখার প্রথম ধাপ’। বিফলতাই তোমাকে সফল হবার রাস্তা দেখিয়ে দেবে।
(ম) কোনো একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছো না! চিন্তিত করো না- ‘NO’ শব্দের মানে হচ্ছে ‘Next Opportunity’ অর্থাৎ ‘পরবর্তী সুযোগ’।
(য) আমরা শুধু সাফল্যের উপরেই গড়ি না, ব্যর্থতার উপরেও গড়ি।
(র) একজন খারাপ ছাত্র একজন দক্ষ শিক্ষকের কাছ থেকে যা শিখতে পারে তার চেয়ে একজন ভালো ছাত্র একজন খারাপ শিক্ষকের কাছ থেকে অনেক বেশি শিখতে পারে।
(ল) তুমি যদি তোমার কাজকে স্যালুট করো, দেখো তোমাকে আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান করো, অমর্যাদা কর, ফাঁকি দাও, তাহলে তোমার সবাইকে স্যালুট করতে হবে।
(ব) প্রতিদিন সকালে এই পাঁচটা লাইন বলো:
১) আমি সেরা
২) আমি করতে পারি
৩) সৃষ্টিকর্তা সব সময় আমার সঙ্গে আছে
৪) আমি জয়ী
৫) আজ দিনটা আমার
(শ) তিনজনই পারেন একটি দেশ বা জাতিকে বদলাতে। তাঁরা হলেন, বাবা, মা ও শিক্ষক।

Share This