Categories
প্রবন্ধ

মানুষের ব্যবহার –একটি বিশেষ পর্যালোচনা : দিলীপ  রায়।।।

কথিত আছে “মানুষের ব্যবহারই মানুষের পরিচয়” ।
রাস্তাঘাটে, ট্রেনে-বাসে, অলিতে-গলিতে, বাজার-হাটে, কান পাতলে শোনা যায় মানুষের ব্যবহারের দৈনন্দিন কড়চা । মুখরোচক বাহার । মানুষের হিতার্থে কিছু মানুষের নিঃস্বার্থ প্রয়াসের কাহিনীও দৈনন্দিন কড়চার প্রাসঙ্গিক অঙ্গ, যদিও সেটা সীমিত । সুতরাং মানুষের ব্যবহারের ব্যাখার ব্যাপ্তি, ব্যাপক । দৈনন্দিন জীবনে মানুষের ব্যবহারের ক্ষেত্রে বয়সের একটা প্রেক্ষাপট কাজ করে । বাচ্চা-হাল্কা-মধ্য  বয়স্ক মানুষদের ব্যবহারের বিন্যাসের পরিবর্তন  অহরহ । জনশ্রুতি, “হাল্কা বয়সের মানুষের কথা বলার মধ্যে প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে রাগান্বিত সুরের প্রাদুর্ভাব ঘটার সম্ভাবনা উজ্জ্বল ।

আবার বয়স্ক মানুষদের মধ্যে কথোপকথনে বা কথা বলার আদান-প্রদানে অনেক মার্জিত স্বভাবের পরিচয়, পরিলক্ষিত ।“ তাই  মানুষের ব্যবহারের প্রকাশ স্থান-কাল-পাত্র একটা অপরিহার্য প্রেক্ষিত । তাই বলা চলে, মানুষের ব্যবহারের প্রেক্ষাপট আলোচনার ক্ষেত্রে “নানা মুনির নানা মত” কথাটি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক ।
ব্যবহারিক জীবনের সেকাল ও একালের দিকে তাকালে আগের দিনের মানুষের ব্যবহারের অনেক পরিবর্তন সহজেই অনুমেয় । যোগাযোগের প্রেক্ষাপটে আগের   মানুষের নিকট পোষ্ট অফিসের গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম । পোষ্ট কার্ডে চিঠি লেখার ভিতর দিয়ে মানুষের ব্যবহারের অবয়ব ফুটে উঠতো । তদানীন্তনকালের চিঠি লেখাটা ছিলো শিল্পকলার অপরিহার্য অঙ্গ । বর্তমান দৈনন্দিন জীবনে চিঠি লেখার সুঅভ্যাস প্রকৃত অর্থে নিস্প্রভ । কালের  নিয়মে এসে গেছে ডিজিটাল যুগ । টেক-সেভির সুবিধার বিভিন্ন স্তর । ইন্টারনেটের  ব্যবহারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা । যার ফলে হোয়াটস্‌ অ্যাপের মাধ্যমে মানুষ দূরের মানুষের সঙ্গে এমনকি সুদূর আমেরিকা, লন্ডন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ইত্যাদি দেশের মানুষের সঙ্গে নিমেষের মধ্যে যোগাযোগ   । সুতরাং আজকের কম্পিউটারাইজেশনের যুগে মানুষের ব্যবহারিক জীবনও খানিকটা নয় অনেকটাই বদলে গেছে । একটা ঘটনার উল্লেখ এখানে প্রনিধানযোগ্য । রাস্তায় হাঁটা চলমান মানুষটিকে অন্য আর একজন বিশিষ্ট চলমান মানুষ তাঁর প্রয়োজনে জিজ্ঞাসা করলেন, “দাদা রেলওয়ে স্টেশনটি কোন্‌দিকে ?” কিন্তু রাস্তায় হাঁটা ঐ বিশিষ্টজন যাকে জিজ্ঞাসা করলেন সেই পথিকবর  শুনতেই পেলেন না ! কারণ তাঁর দুটি কানে হেড্‌ ফোনের তার গোঁজা । ঐ পথযাত্রী কানে হেড্‌ ফোন লাগিয়ে তাঁর প্রিয় গান শুনতেই তখন ব্যস্ত । এতেই স্পষ্ট, মানুষের ব্যবহারিক জীবনে টেক-সেভির প্রভাব অবর্ণনীয়  ।  অন্যদিকে  কম্পিউটারের ব্যবহারের দিকে তাকালে দেখা যায় আগে কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটা বড় টেবিলের প্রয়োজনীয়তা ছিলো অনস্বীকার্য । কিন্তু বর্তমানে টেবিল কম্পিউটারের জায়গায় ব্যবহার হচ্ছে ল্যাপটপ । যেটা সহজেই অল্প জায়গায় ব্যবহারযোগ্য । এতেই স্পষ্ট, ব্যবহারিক জীবনে মানুষ ডিজিটাল যুগের দিকে ধাবিত ।
( ২ )
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব । সমাজবদ্ধভাবে একত্রে বসবাস করাটা মানুষের পরম্পরা । সুতরাং সমাজের প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতা অনস্বীকার্য । দায়বদ্ধতার নিরিখে মানুষের ভূমিকা অগ্রগণ্য । এজন্য মানুষের মধ্যে প্রচলিত “বাবহারই মানুষের নিজস্ব অবয়ব” । সমাজের গণ্যমান্য মানুষজন যেমন শ্রদ্ধার পাত্র, তেমনি সাধারণ মানুষের আচরণও শ্রদ্ধার ক্ষেত্রে সমভাবে উল্লেখযোগ্য । আবার অন্যদিকে ব্যবহারিক আচরণও ক্রমপরিবর্তনশীল । যেমন আগে গুরুজন বা মাস্টারমহাশয় দেখলেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গড় হয়ে প্রণাম করার রেওয়াজ সর্বজনবিদিত । নিদেনপক্ষে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করাটা ছিলো অবধারিত । আজকের যুগে গুরুজনদের শ্রদ্ধা জানানোর আগের ব্যবহারিক রীতির দৃশ্য স্পষ্টতই দুর্ল্ভ । সুতরাং সমাজের গণ্যমান্য  মানুষের প্রতি ব্যবহারের ধরণ আগের চেয়ে বর্তমানে অনেক পরিবর্তন । সমাজের প্রতি কর্তব্যপরায়ণ, ব্যবহারের একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । তাই সঠিক ব্যবহার সমাজ উন্নয়নে আবশ্যক  ।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বেশভূষা ব্যবহারিক শ্রেণিবিন্যাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার দাবি রাখে । আমরা জানি পোষাক পরিচ্ছদ শরীর আবরণের বিশেষ মাধ্যম । কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের প্রেক্ষাপটে বেশভুষারও পরিবর্তন লক্ষণীয় । সর্বকালেই ভাল পোষাকের গুণ সমাদৃত । পোষাক পরিধানেও মানুষের ব্যবহারিক রুচির বার্তা বহনের ধারক । আগে মানুষের মধ্যে ধুতি ও শাড়ি পরবার রেওয়াজ ছিলো সামাজিক রীতিনীতির অঙ্গ । এমনকি সামাজিকতার দিক থেকেও সর্বজনগ্রাহ্য ।  যার জন্য সামাজিক অনুষ্ঠানে এমনকি স্কুল-কলেজে, কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের ধুতির ব্যবহার ছিলো সাবলীল । অন্যদিকে মহিলাদের শাড়ি ছিলো অঙ্গের ভূষণ, সৌন্দর্য্যে উৎকৃষ্টের পরম্পরা । সুতরাং বলা চলে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে রুচিশীল পোষাকের ব্যবহার শালীনতাবোধের ধারক ও বাহক। ইদানীং পোষাকের পরিবর্তন ভীষণভাবে চোখে লাগে  । স্বল্প পোষাক পরিচ্ছদে মানুষ অভ্যস্ত । কলেজের-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এমনকি যুব সমাজের মধ্যে স্বল্প পোষাকের ব্যবহার অহরহ । বয়স্ক মানুষও হাফ্‌-প্যান্ট-গেঞ্জি গায়ে ইদানীং বাজারে বাজার করতে স্বচ্ছন্দ । সপিং মলগুলিতে ঢুকলে বোঝা যায়, যুব সমাজ কতোটা স্বল্প পোষাকমুখি । সন্তানের মায়েরা পর্যন্ত ফ্রকে অভ্যস্ত । সুতরাং ব্যবহারিক জীবনে আজকের দিনের মানুষ হাল্কা ও স্বল্প পোষাকের দিকে বেশীমাত্রায় ঝুঁকছে  ।
( ৩ )
চলমান জীবনে নেশার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । অথচ নেশার প্রকারভেদ দিন-দিন  পাল্টাচ্ছে । আগে নেশা বলতে ঐ বই পড়া । বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার অভ্যাস মানুষের মধ্যে দেখা যেতো । ছেলেরা বিশেষ করে  ছাত্ররা ফুটবলের নেশায় মাঠে ছুটতো । চলমান জীবনে তখন ফুটবল খেলাটা ছিলো ভীষণ জনপ্রিয় । মেয়েদের মধ্যে অ্যাথলেটিক্স ছিলো অগ্রগ্ণ্য । তা ছাড়া খেলাধূলার সু্যোগ মেয়েদের ক্ষেত্রে খুব কম ছিলো । তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে ঐ রান-কিৎ কিৎ-ইত্যাদি খেলার নেশা উল্লেখের দাবী রাখে । আগে  রেডিও’র  গান শোনার কদর ছিলো চোখে পড়ার মতো । রেডিও ছিলো তদানীন্তনকালের আ্মোদপ্রমোদের উল্লেখযোগ্য  মাধ্যম । বিড়ি ও সিগারেট খাওয়ার নেশা মানুষের ব্যবহারিক জীবনে আগাগোড়াই কম । একালে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ার ধৈর্য  হতাশাজনক । বরং কম্পিউটারের মাউস ঘুরিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বজয়ের আকাঙ্খা প্রবল । রেডিও’র পরিবর্তে টি ভি’র ব্যবহার ঘরে ঘরে । সিনেমা দেখার জন্য সিনেমা হলে গিয়ে  সিনেমা দেখার প্রবণতা এখন কম । সুতরাং বলা চলে,  মানুষের ব্যবহারিক জীবনে নেশার পরিবর্তন ব্যপকভাবে পরিলক্ষিত ।
আজকের দিনে মোবাইলের ব্যবহার ষোলোআনা । অথচ আগে কোনো একটা পরিবারের বিশেষ করে মৃত্যুর খবর দেওয়ার জন্য পোষ্ট অফিসে ছুটতে হতো টেলিগ্রাম করার জন্য । আজকের দিনে প্রায় মানুষের হাতে মোবাইল । মোবাইলে নেটের ব্যবহার সর্বত্র ।  আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সব ধরনের মানুষের মধ্যে রাস্তাঘাটে মোবাইলে নেট ব্যবহার করার দৃশ্য অনবরত । সুতরাং ব্যবহারিক জীবনে মোবাইলের কদর ছাত্র-ছাত্রী, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, বাবা-মা, সকলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান । এটা বাস্তব যে, মোবাইলের সঠিক ব্যবহার সমাজ জীবন উন্নয়নে অগ্রগণ্য  ।
( ৪ )
চুরি করার ধরণও পরিবর্তনশীল । ব্যবহারিক জীবনে মানুষ চোরের উপদ্রব বলতে আগে যেটা বুঝতেন, চোর-ডাকাত রাত্রিবেলায় গৃহস্তের বাড়ি ঢুকে সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দেওয়ার রেওয়াজ । আজকের দিনে চোর বা ডাকাত বিভিন্ন আধুনিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ঘরে ঢুকে মূল্যমান সোনা-গয়নার অলংকার নিয়ে পালাতে অভ্যস্ত । চোর-ডাকাতদের  আর খাট্‌, রেফ্রিজারেটার, টি ভি, ইত্যাদিতে নজর নেই ।  সুতরাং চুরি-ডাকাতির ব্যবহারিক ধরণও ক্রমপরিবর্তনশীল । চুরি করার প্রক্রিয়াও আধুনিক ও  উন্নতমানের  ।
ব্যবহারিক ধরণ বা ব্যবহারের প্রয়োগের কাহিনী অনেক লম্বা । উপরের আলোচনার প্রেক্ষাপটে এটা সুস্পষ্ট যে,  কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যবহারের পরিবর্তন ক্রমবর্ধমান । তবে গঠনমূলক ও স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবহার সমাজজীবনে উন্নয়নের হাতিয়ার । বাস্তবসম্মত ও রুচিসম্মত ব্যবহার অবশ্যই কাম্য । প্রকৃত ব্যবহার শিক্ষার যেমন অঙ্গ তেমনি মানুষের মধ্যে চেতনা বিকাশের নিশানা । সুতরাং সমাজ উন্নয়নে  সঠিক ব্যবহারের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।
—–০——-

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও আজকের সমাজ : স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)।।।।

আমরা ভারতীয়, আমাদের কর্মময় জীবন, এবং ধর্মময় মনপ্রাণ। কিন্তু, আমাদের সমাজে আজ পাল্টে গেছে মানুষের চিন্তাধারা। কিছু বছর আগেও মানুষে মানুষে প্রেম ও গভীর ভালোবাসা ছিল। বিশুদ্ধ বিশ্বাস ছিল, নির্ভরতা ছিল। একে অপরের প্রতি প্রচন্ড বিশ্বাস ছিল। প্রকাশ ছিল কম অনুভব ছিল বেশী। এখন প্রকাশ বেশী অনুভব কম। মনের ব্যাকুলতা, অফূরন্ত বিশ্বাস, ধৈর্য্য, ভালোবাসা  আর কিছু অবশিষ্ট নাই। আজ আমরা মোবাইল আর টাকার গোলাম হয়ে পড়েছি। আজ মোবাইলের কারণে পরিবারের মধ্যে একে অপরের সাথে ভালো সুসম্পর্ক নেই। সর্বদা মোবাইলে ব্যস্ত থাকায় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কুশল বিনিময় হয় না, কারো সাথে ভালোভাবে কথা বলার সময় নেই। ফলে সবার উপর থেকে সম্মান, স্নেহ,আদর্শ, ভালবাসা, গুরুত্ব সবই কমে যাচ্ছে।

সবাই আজ মেশিন। আর তারপর আসে আমাদের সমাজে টাকার কথা। শিক্ষা,স্বাস্থ্য, আজ ব্যবসায় পরিণত। সর্ব ত্যাগী সন্ন্যাসীগনও টাকার গোলাম আজ, যেন তেন প্রকারেন টাকা চাই। সর্ব ত্যাগী সন্ন্যাসীগন ও টাকা টাকা করে ন্যায় অন্যায় এর পার্থক্য ভুল ভাবে করছে। এখন টাকা সবার  স্ট্যাটাস সিম্বলে পরিণত। সমাজে আমরা আজ আরও টাকা চাই, আরও টাকা চাই, মানুষ আজ টাকার দাস। সবাই আজ মোবাইল আর টাকার পাগল।
একটি গল্পের মাধ্যমে চরম বাস্তবটা অনুভব করার চেষ্টা করি। আমার এক সুপরিচিত বিশাল শিল্পপতি। ১২ টার উপর ফ্যাক্টরি, শত কোটি টাকার উপর ব্যাংক  ব্যালেন্স। এক মুহূর্তের জন্য শান্তি নেই। সারাদিন ব্যাস্ত টাকার দুনিয়ার পেছনে। একদিন তাঁর অফিসে বসে গল্প করছিলাম, এমন সময় তাঁর এক কর্মচারী  আসল। তার কোন কারণে কিছু টাকার দরকার। সে বলল, সে অত্যন্ত অভাবী ব্যক্তি, তাঁকে কিছু সাহায্য করার জন্য। শিল্পপতি হেসে বলল যদি অভাবের কথাই বলতে হয়, এই পুরো অফিসে আমার চেয়ে অভাবি আর কেউ নেই। আমরা একটু থতমত হয়ে গেলাম। বললাম আমাদের সবার মিলিয়ে যত সম্পদ আছে আপনার একারই তার অনেক বেশি সম্পদ আছে।
সে বলল আপনাদের একটা গল্প বলি। তাহলেই আমার অভাবের রহস্য বুঝবেন। এক বিশাল ব্যবসায়ি, তাঁর সবই আছে খালি শান্তি নেই। খালি হাহাকার আর টেনশান। চিন্তায় মাথার চুল নেই। সে একদিন দেখল তাঁর অফিসের এক অফিস কর্মী টেবিল মুছছে আর গুনগুন করে গান গাচ্ছে। সে কর্মীকে ডেকে বলল এই যে তুমি মনে মনে গান গাও, তোমার কি অনেক সুখ, তোমার মনে কি কোন দুঃখ নেই, কোন হতাশা নেই?  কর্মী বলে না, হতাশা কেন থাকবে স্যার, আপনি যা বেতন দেন তা দিয়ে  আমার ভালই চলে যায়। ভগবানের ইছায় আমার কোন অভাব নেই।
ব্যবসায়ী তো আরো টেনশানে পড়ে গেলেন। ওনার ম্যানেজারকে ডেকে বললেন, আমার সব আছে কিন্তু শান্তি নেই, আর ওই লোককে আমি সামান্য কয়টা টাকা বেতন দিই, সে আছে মহা সুখে, এর রহ্স্যটা কি? ম্যানেজার বলল, রহস্য বললে বুঝবেন না। সত্যই যদি বুঝতে চান তাহলে, ওই কর্মীকে প্রমোশান দিয়ে একটা বড় পোস্টে দিন। আর তাঁকে ১০/১২ লক্ষ টাকা দিয়ে দিন। এরপর দেখুন। ব্যবসায়ি তাই করল। এতোগুলো টাকা, আর এতবড় চাকরি পেয়ে কর্মী আনন্দে আত্মহারা। বাড়িতে ও সবাই খুশি। যেহেতু এখন অফিসার হয়ে গেছে, এখন তো আর টিনের ঘরে থাকা যায় না। সহকর্মীরা কি মনে করবে।
প্রথমেই  বাসস্থান পরিবর্তন করে আরেকটু অভিজাত এলাকায় এপার্টমেন্টে উঠলো। দেখল, বিল্ডিং এর সবাই সন্তানকে বড় স্কুলে পাঠায়, তাই বাচ্চার স্কুলও পরিবর্তন করতে হল। কিছুদিন পড় বউ ঘ্যনঘ্যন শুরু করলো সবার বাড়িতে কত দামি আসবাব, ফ্রিজ, টিভি, আর আমাদের বাড়িতে  কিচ্ছু নেই। ও গুলোও কিনতে হোল। এরপর শুরু হোল বাচ্চার প্রাইভেট টিউশান, নানা রকম দাবি দাবা। আগে পূজায় একজোড়া জুতা পেয়েই সবাই কত খুশি হত, আর এখন প্রতি মাসে একজোড়া দিলেও তৃপ্তি নেই। যেহেতু সে এখন বড় চাকরি করে , পরিবারের সবার তাঁর কাছে প্রত্যশাও অনেক। সাধ্যমত চেষ্টা করে, তাও সবার চাহিদা মেটাতে পারেনা। আত্মীয় স্বজন বন্ধুগন তাকে অহংকারি ভেবে দুরে সরে গেলো।
এদিকে অফিসের সবাই ফ্ল্যাট বুকিং দিচ্ছে। বৌ সারাদিন বাড়িতে খোটা দেয় , তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না। ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সে চাকরির ফাকে  অন্য আয় কিছু শুরু করলো। তাতেও কিছু হয় না। নানাবিধ টেনশান আর দুশ্চিন্তায় তারো মাথার চুল  কমতে লাগলো। ব্যবসায়ি লক্ষ করলেন ব্যপারটা। উনি বললেন কি ব্যপার , তোমাকে এতো বড় প্রমোশান দিলাম, এতো টাকা দিলাম, আর এখন দেখি তুমি আগের মত আর প্রাণবন্ত নেই। ঘটনা কি?
সে বলল স্যার , কিছু  সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর সাথে যে এতো চাহিদা আর অভাব আসবে তাতো আর বুঝিনি। আগে আমার কিছুই ছিলনা, অভাবও ছিলনা। আর এখন যেদিকেই তাকাই , খালি নাই আর নাই। আগে আমার অভাব পড়লেও সেটা ছিল এক দুই হাজারের ব্যপার। কোন ভাবে মেটান যেত। আর এখন আমার অভাব লক্ষ কোটি টাকার। এটা কিভাবে মেটাবো সে চিন্তায় আমার এখন আর রাতে ঘুম আসেনা স্যার। ব্যবসায়ি বলল, এতদিনে বুঝলাম, আমার মুল অসুখ।  টাকার আর সম্পদের সাথে অভাব আসে। যতই টাকার দুনিয়ার পিছনে ছুটি, এই অভাব আর অন্য কিছু দিয়েই পূর্ণ হবেনা।
সন্ন্যাসী মানুষগনও শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা মাথায় তুলতে পারলে ভুলে যায়, তার আশেপাশের মানুষেরাই তাকে শ্রেষ্ঠ করে তুলেছিল। অহংকারের চূরায় অধিষ্ঠিত হয়ে নিজেকে চরম উচ্চস্থানে তুলে এই আমিত্ব। এখানেই মানুষের নৈতিক পরাজয় ঘটে। জাগতিক প্রাপ্তির অহংকারে গা না ভাসাতে শিখতে হয়। বোধটুকু কাজে লাগাতেই হয়। তবেই না মান+হুশ = মানুষ হওয়া যায়। তবে মানুষকে ভালোবাসতে শিখতে হয়, ভাল-তে বাস করতে শিখতে হয়। প্রেম বুঝতে হয়, প্রেম শিখতে হয়। সব সময় আরও টাকা চাই, আরও টাকা চাই নয়।
আমাদের সমাজে আজ আদর্শ শিক্ষক, আদর্শ ডাক্তার কোথায়? শিক্ষা,স্বাস্থ্য, আজ ব্যবসায় পরিণত। আজ নেট দুনিয়া আমাদের সমাজকে পরিচালনা করছে।আজ আমাদের সমাজে সাধু মহারাজ, সর্ব ত্যাগী সন্ন্যাসীগনও টাকা টাকা করে পাগল, কথাগুলি অপ্রিয় হলেও সত্যি। আজ সরকারি কাঠামো ভেঙে পড়ছে, কোথায় আজ বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ, সুভাষ এর আদর্শ?  স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল আজ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত। তাই আসুন আমরা সবাই সচেতন হই, মোবাইল আর টাকার  পিছনে ছোটাছুটি কম করি। আমাদের সমাজে সুসম্পর্ক চিন্তা, ভাবনা, কল্পনা, আনন্দ, অনুভূতি, মনের ব্যাকুলতা, অফূরন্ত বিশ্বাস, আর ভালোবাসা  প্রয়োজন।
তাই  বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন:-“মানুষ কি চায় — উন্নতি, না আনন্দ? উন্নতি করিয়া কি হইবে যদি তাহাতে আনন্দ না থাকে? আমি এমন কত লোকের কথা জানি, যাহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছে বটে, কিন্তু আনন্দকে হারাইয়াছে।” আসুন পরিবর্তন করার চেষ্টা করি। বাস্তববাদী হওয়ার চেষ্টা করি।***
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!

।।কলমে:: স্বামী আত্মভোলানন্দ ।l

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আজ ১১ মার্চ, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।।।

আজ ১১ মার্চ । এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।
আজ যাদের জন্মদিন—-

১৭৮৭ – রুশ জেনারেল আইজাক নবোকভ।

 

১৮০৭ – ফরাসী চিত্রশিল্পী লুই বুলাঝেঁ।

১৮১২ – হরিচাঁদ ঠাকুর,বাংলার মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা।

১৮৪০ – দার্শনিক, গণিতজ্ঞ ও বাংলা শর্টহ্যান্ড লিপির উদ্ভাবক দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

১৯১৫ – বিজয় হাজারে, ভারতীয় ক্রিকেটার।

১৯১৮ – শিশুসাহিত্যিক ও আকাশবাণীর ঘোষিকা ইন্দিরা দেবী।

১৯৩৭ – ভারতীয় বাঙালি মহিলা কবি বিজয়া মুখোপাধ্যায়।

১৯৩৯ – সাহিত‍্যিক বাণী বসু।
১৯৯৫ – চামপোকার জন্ম। অমিত চক্রবর্তী।
ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-
১৩৯৯ – তৈমুর লঙ সিন্ধুনদ অতিক্রম করে ভারতে আসেন।
১৫০২ – পার্সিয়ার শাহ প্রথম ইসমাইলের অভিষেক হয় ।
১৭০২ – প্রথম ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা দ্য কোরান্ট প্রকাশিত হয় ।
১৭৮৪ – মহিশুরে টিপু সুলতানের সাথে ইংরেজদের শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত।
১৭৯৫ – কুর্দলার যুদ্ধে মারাঠাদের কাছে মোগল বাহিনী পরাজিত হয়।
১৮১২ – মার্শাম্যানের কলকাতার ছাপাখানা অগ্নিকান্ডে ভস্মীভূত হয়।
১৮২৩ – আমেরিকায় প্রথম সাধারণ স্কুল চালু হয়।
১৯১১ – রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন তার পরলোকগত স্বামীর নামে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯১৭ – ব্রিটিশ বাহিনীর বাগদাদ দখল।
১৯১৮ – মস্কো বিপ্লবী রাশিয়ার রাজধানী হয় ।
১৯১৯ – ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, বিখ্যাত বাঙালি কৌতুক লেখক।
১৯২০ – আমির ফয়সলের নিজেকে সিরিয়ার রাজা ঘোষণা।
১৯৩৫ – ব্যাংক অব কানাডা চালু হয় ।
১৯৩৮ – জার্মান বাহিনী অস্ট্রিয়ায় অনুপ্রবেশ করে।
১৯৪০ – যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্রিটেনে মাংসের রেশন চালু হয়।
১৯৪৮ – পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা না দেয়ায় পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। পুলিশ ৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করে।
১৯৪৯ – বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্ব বাংলায় রাষ্ট্রভাষা দিবস পালিত হয়।
১৯৪৯ – দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার (পরে বাংলাদেশ অবজারভার) প্রকাশিত হয়।
১৯৬৬ – ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুকর্নো সেনাবাহিনীর জেনারেল সুহার্তোর কাছে ব্যাপক ক্ষমতা অর্পণে বাধ্য হন। পরে সুকর্নোকে সরিয়ে সুহার্তো নিজেই প্রেসিডেন্ট হন।
১৯৭২ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় গ্রিস।
১৯৭৪ – সিসিলির এটনা গিরিশৃঙ্গে অগ্নুৎপাত ঘটে।
১৯৭৭ – মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা করায় ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার ২৫ বছরের সামরিক চুক্তি বাতিল করে।
১৯৭৯ – সেন্ট্রাল ট্রিটি অরগানাইজেশন বা সেন্টো থেকে ইরান নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেয়।
১৯৯০ – লিথুনিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
১৯৯২ – পাঞ্জাবে শিখ জঙ্গীদের হাতে ১৭ হিন্দু শ্রমিক নিহত।
১৯৯৪ – এদুয়ার্দো ফ্রেই চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত।
১৯৯৯ – “ইনফোসিস” প্রথম ভারতীয় তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানি হিসাবে নাসডাক স্টক মার্কেট অন্তর্ভুক্ত হয়।
২০০০ – ইউক্রেনে কয়লা খনিতে বিস্ফোরণে ৮১ শ্রমিক নিহত।
২০০৪ – স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে তিনটি স্টেশনে ১০টি বোমা বিস্ফোরণে ১৯১ জন নিহত এবং দুই হাজারের বেশি আহত হয়।
২০০৬ – হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের কারাগারে বলকানের কসাই হিসেবে খ্যাত ৬৩ বছর বয়সী স্লোবোদান মিলোসেভিচ পরলোকগমন করেন।
২০১৫ – মার্কিন-কিউবা সরাসরি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত ৷

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৭৫৯ – ইংরেজ জেনারেল জন ফোর্বস।
১৮০৯ – ইংরেজ নাট্যকার ও কবি হান্না কাউলি।

১৮৭৩- শের আলী, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ভারতের ইংরেজ গভর্নর জেনারেল তথা বড়লাটকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

১৮৯৪ – রাজকৃষ্ণ রায় বিশিষ্ট নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক।

১৯১৯ – ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, বিখ্যাত বাঙালি কৌতুক লেখক।
১৯৩১ – জার্মান চিত্রপরিচালক ফ্রিডখি সুর্নাউ।

১৯৫৫ – নোবেল বিজয়ী স্কটিশ অণুজীব বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং।

১৯৯১ – ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা অধ্যক্ষ আবুল কাশেম।

২০০৬ – হেগ অবস্থিত জাতিসংঘের কারাগারে বলকানের কসাই হিসেবে খ্যাত ৬৩ বছর বয়সী স্লোবোদান মিলোসেভিচের মৃত্যু হয়।

২০২০ – সন্তু মুখোপাধ্যায়, ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেতা।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

আশির দশক থেকেই সাড়া জাগানো জনপ্রিয়তার অধিকারিণী লেখিকা বাণী বসু, জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।

বাণী বসু একজন সমসাময়িক ভারতীয় বাঙালি লেখিকা – উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা লেখেন, অনুবাদও করেন। বাণী বসু আশির দশক থেকে একাধিক সাহিত্য পুরস্কার ও সম্মানে সম্মানিত।  তিনি ১১ মার্চ, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি বিজয় কৃষ্ণ গার্লস কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন।  ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক  করার পর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ.  করেন।  শিক্ষার প্রথম স্থান ছিল লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ, কলকাতা এবং তারপরে স্কটিশ চার্চ কলেজ।
ছাত্রী জীবন থেকেই বাণী বসু নানা প্রবন্ধ, অনুবাদ গল্প ও কবিতা রচনায় পারদর্শিতার নজির রাখেন। ১৯৮১তে তার প্রথম গল্প আনন্দমেলা ও দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ।

শারদীয়া আনন্দলোকে ১৯৮৭তে তাঁর  প্রথম উপন্যাস জন্মভূমি মাতৃভূমি প্রকাশিত হয় । কিন্তু তার আগেই তার অনেক অনুবাদ প্রকাশিত ও আদৃত হয়েছে। তাঁর উল্লেখ্য অনুবাদগুলি হলঃ শ্রী অরবিন্দের সনেটগুচ্ছ, সমারসেট মমের সেরা প্রেমের গল্প  ও এইচ ডি লরেন্সের সেরা গল্প।
রচিত উপন্যাস——–
তাঁর রচিত উপন্যাস গুলি হলো – উত্তরসাধক, পঞ্চম পুরুষ, বাইরে, অন্তর্ঘাত, কিনার থেকে কিনারে, মেয়েলি আড্ডার হালচাল, রাধানগর, দিদিমাসির জিন, জন্মভূমি মাতৃভূমি, মৈত্রেয় জাতক, অমৃতা, নূহর নৌকা, সুরূপা কুরূপা, অষ্টম গর্ভ, অষ্টম গর্ভ (দ্বিতীয়), খনামিহিরের ঢিপি, ক্ষত্তা, কালিন্দী, কৃষ্ণ, পাঞ্চাল কন্যা কৃষ্ণা, সুযোদন দূর্যোধন, কৃষ্ণ বাসুদেব, কাক জ্যোৎস্না, অল লেডিস ভ্রমণ, একুশে পা, ট্রেকার্স, অশ্বযোনি, ফেরো মন।
পুরস্কার ও সম্মাননা——–
তারাশঙ্কর পুরস্কার (১৯৯১);  আনন্দ পুরস্কার – (মৈত্রেয় জাতক): ১৯৯৭ ; বঙ্কিম পুরস্কার ( ১৯৯৯);  ভুবনমোহিনী দাসী স্বর্ণপদক (২০০৮), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার – (খনামিহিরের ঢিপি): ২০১০।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
রিভিউ

১০ মার্চ, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।।।

১০ মার্চ । এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।
দিবস—–
(ক) জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস, বাংলাদেশ।
আজ যাদের জন্মদিন—-

১৭৭২ – ফ্রিড্‌রিশ ফন শ্লেগেল, জার্মান কবি।

১৭৮৪ – ভারতীয় পণ্ডিত ও কলকাতা হিন্দু সমাজের বিশিষ্ট নেতা স্যার রাজা রাধাকান্ত দেববাহাদুর।

১৮১০ – স্যামুয়েল ফার্গুসন, আইরিশ কবি।
১৮৭৩ – ইয়াকপ ওয়াসায়মান, জার্মান ঔপন্যাসিক।
১৮৮৮ – ব্যারি ফিটজগেরাল্ড, তিনি ছিলেন আইরিশ অভিনেতা।

১৯১১ – ওয়ার্নার অ্যান্ডারসন, তিনি ছিলেন আমেরিকান অভিনেতা।
১৯২৩ – ভ্যাল লজ্‌স্‌ডন ফিচ, তিনি ছিলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ।

১৯৩২ – আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানী উড়ুপি রামচন্দ্র রাও জন্ম গ্রহণ করেন।

১৯৩৬ – সেপ ব্লাটার, ফিফার ৮ম প্রেসিডেন্ট (বর্তমান)।

১৯৪২ – সমরেশ মজুমদার ভারতের বাঙালি লেখক ও ঔপন্যাসিক।
১৯৫০ – মাহফুজ উল্লাহ, বাংলাদেশি লেখক, সাংবাদিক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও পরিবেশবিদ।
১৯৫৬ – রবার্ট লয়েওয়েল্ল্যন, তিনি ইংরেজ অভিনেতা ও লেখক।
১৯৬৮ – ফেলিচে এরিনা, তিনি অস্ট্রেলিয়ান লেখক।

১৯৭০ – ওমর আব্দুল্লাহ, ভারতীয় রাজনীতিবিদ।

১৯৭৮ – নিল আলেকজান্ডার, তিনি স্কটিশ ফুটবল খেলোয়াড়।
১৯৮৪ – অলিভিয়া ওয়াইল্ড, তিনি আমেরিকান অভিনেত্রী ও প্রযোজক।

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৫৮৫ – সম্রাট আকবরের ফরমান জারি : আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী উদ্ভাবিত বাংলা ফসলী সন প্রবর্তিত হয়। এই সনই বর্তমানে প্রচলিত বাংলা সন।
১৬২৪ – ইংল্যান্ড ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
১৮০১ – প্রথম ব্রিটিশ লোকগণনা শুরু হয়।
১৮৭৬ – আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তার নব আবিস্কৃত টেলিফোনের মাধ্যমে প্রথম বার্তা প্রেরণ করেন।
১৯০৭ – ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সাপ্তাহিক ‘স্বরাজ’ সম্পাদনা শুরু করেন।
১৯১৯ – মিশর তেকৈ সাঈদ জগলুল পাশাকে বহিষ্কারের ফলে কায়রোতে জাতীয়তাবাদের দাঙ্গা শুরু।
১৯৩৪ – ব্রিটিশ রাজ বাংলার কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
১৯৪২ – জাপানিরা রেঙ্গুন দখল করে নেয়।
১৯৪৫ – যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারফোর্স জাপানে ফায়ার বোমা নিক্ষেপ করে। এতে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়, যার বেশির ভাগই বেসামরিক।
১৯৫৬ – বৈমানিক পিটার টুইস প্রথম মানব যিনি ঘণ্টায় ১০০০ মাইল বেগে বিমান চালনা করেন।
১৯৬৯ – মার্টিন লুথার কিং-এর হত্যাকারী জেমস আর্ল রে-কে যুক্তরাষ্ট্রের মেফিস আদালত ৯৯ বছরের সাজা প্রদান করেন।
১৯৭০ – ভিয়েতনামের মাইলাই গ্রামে বর্বরোচিত গণ-হত্যার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ক্যাপটেন আরর্নেস্ট মেডিনা এবং অপর চার সৈন্যকে অভিযুক্ত করা হয়।
১৯৭১ – ভারতের ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ভারতের কংগ্রেস পার্টি সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক বিজয় লাভ করে।
১৯৭২ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে সোয়াজিল্যান্ড।
১৯৭৪ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত।
১৯৯৩ – মিশরে মৌলবাদ দমন অভিযান। পুলিশের গুলিতে ২০ মুসলমানের প্রাণহানি।
২০০০ – দক্ষিণ আমেরিকার আন্দাজ পর্বতমালার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার এক মরুভূমিতে পৃথিবীর বৃহত্তম ডাইনোসোরের কঙ্কাল আবিষ্কার।
২০২০ – জয় বাংলাকে হাইকোর্ট কর্তৃক বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান ঘোষণা

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৮১১ – হেনরী ক্যাভেল ভিলন, বিজ্ঞানী।
১৮৭২ – মাৎসিনি, ইতালীয় জাতীয়তাবাদী নেতা।
১৮৯৭ – ভারতের মহারাষ্ট্রের সমাজ সংস্কারক শিক্ষাব্রতী ও কবি সাবিত্রীবাই ফুলে প্রয়াত হন।
১৯৪০ – মিখাইল বুলগাকভ, রুশ নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক।
১৯৬৬ – ফ্রাঙ্ক ও’কনার, আইরিশ ছোট গল্পকার।
১৯৬৬ – ফ্রিৎস জের্নিকে, তিনি ছিলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ডাচ পদার্থবিদ ও একাডেমিক।

১৯৭২ – বিদগ্ধ সাহিত্যিক ও ইতিহাসবেত্তা হরিহর শেঠ।

১৯৮০ – সুবোধ ঘোষ, বাঙালি কথাসাহিত্যিক।
১৯৮৩ – আতিকুজ্জামান খান, বাংলাদেশী কূটনীতিক, সাংবাদিক এবং ক্রীড়া ভাষ্যকার।

১৯৮৮ – অ্যান্ডি গিব্ব, তিনি ছিলেন ইংরেজি থেকে অস্ট্রেলিয়ান গায়ক।
১৯৯৮ – লয়েড ব্রিজেস, তিনি ছিলেন আমেরিকান অভিনেতা।

২০০৩ – নীলুফার ইয়াসমীন, বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী।

২০১২ – ফ্রাঙ্ক শেরউড রোল্যান্ড, তিনি ছিলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান রসায়নবিদ ও শিক্ষাবিদ।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
রিভিউ

জীবন বদলে দেওয়া মনীষীদের সেরা কিছু বাণী।।।

১) “মানুষের অন্তর্নিহিত পরিপূর্ণ বিকাশই হল শিক্ষা।”  – স্বামী বিবেকানন্দ।
২)  “জীবন ও সময় হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
জীবন শেখায় সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে আর সময় শেখায় জীবনের মুল্য দিতে।” – এ.পি.জে আব্দুল কালাম
৩) “আমরা যে মানবজীবন পেয়েছি তা হল আদর্শ মানবজীবন গড়ে তোলার উপকরণ।” – সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন
৪)  “মানুষের কথা-বার্তায় ক্রোধ বা রাগের পরিমান খাবারের লবনের মত। যা পরিমিত হলে রুচিকর, অপরিমিত হলে ক্ষতিকর।” – প্লেটো
৫)  “অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায়, ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়।” – শেক্সপিয়র
৬)  “মূর্খের উপাসনা অপেক্ষা জ্ঞানীর নিদ্রা শ্রেয়।” – আল হাদিস
৭)  “মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা আর সমস্তই তার অধীন।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
৮) ”সুখে থাকাই জীবনের চরম সার্থকতা নয় বরং কাউকে সুখে রাখতে পারাটাই হলো জীবনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা।” – রেদোয়ান মাসুদ।
৯)  “দেশপ্রেমিকের রক্তই স্বাধীনতা বৃক্ষের বীজ স্বরূপ।” – টমাস ক্যাম্পবেল।
১০)  “নদীতে স্রোত আছে তাই নদী বেগবান, জীবনে দ্বন্দ্ব আছে তাই জীবন বৈচিত্র্যময়।” – টমাস মুর।
১১) “স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।” – শেখ মুজিবুর রহমান
১২)  “প্রেমের আনন্দ থাকে স্বল্পক্ষণ কিন্তু বেদনা থাকে সারাটি জীবন।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১৩) “জ্ঞানীকে চেনা যায় নীরবতা থেকে, আর মূর্খকে তার বক্তব্য থেকে।” – পিথাগোরাস।
১৪)  “আমাদের সমস্ত স্বপ্ন সত্যি হতে পারে যদি আমরা তাদের অনুসরণ করার সাহস পাই।” – ওয়াল্ট ডিজনি
১৫) “বিদ্বান সকল গুণের আধার, অজ্ঞ সকল দোষের আকার। তাই হাজার মূর্খের চেয়ে একজন বিদ্বান অনেক বেশি কাম্যস” – চাণক্য
১৬) “সফল মানুষেরা কাজ করে যায়। তারা ভুল করে, ভুল শোধরায় – কিন্তু কখনও হাল ছাড়ে না।” – কনরাড হিলটন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে বিখ্যাত বাঙালি লেখক ও ঔপন্যাসিক – সমরেশ মজুমদার।।।

সমরেশ মজুমদার একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক। শহরকেন্দ্রিক জীবনের আলেখ্য বারবার উঠে এসেছে তার লেখায়। যে কারণে তাকে আপাদমস্তক ‘আরবান’ লেখক বলে অনেক সময় বর্ণনা করা হয়।
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা—–
সমরেশ মজুমদার ১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ  পশ্চিমবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্মগ্রহণ করেন।পিতা কৃষ্ণদাস মজুমদার ও মাতা শ্যামলী দেবী। তার শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানে। ভবানী মাস্টারের পাঠশালায় তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়।  এরপর বিদ্যালয়ের পাঠ জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে । তিনি কলকাতায় আসেন ১৯৬০ সালে। বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

সাহিত্য চর্চা—–
কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সাথে যুক্ত ছিলেন।  গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তার ছিল প্রবল অনুরাগ।  তাঁর প্রথম গল্প “অন্যমাত্র” একটি মঞ্চ নাটক হিসাবে রচিত হয়েছিল এবং সেখান থেকেই লেখক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল।  তাঁর লেখার আরেকটি সংস্করণ 1967 সালে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস “দৌড়” 1975 সালে দেশে প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি তাঁর লেখা গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি;  ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী থেকে শুরু করে গোয়েন্দা গল্প পর্যন্ত, তিনি কিশোর উপন্যাস লেখায় প্রবল।  তার প্রতিটি উপন্যাসের বিষয়বস্তু ভিন্ন, লেখার গতি ও গল্প বলার ধরন পাঠকদের নাড়া দেয়।  চা বাগানের মাদেশিয়া সমাজ থেকে কলকাতার নিম্নবিত্ত মানুষ রক্তমাংসে তার কলমে এসেছে।
গ্রন্থ তালিকা——
সমরেশ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে  ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ, সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা,ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার ট্রিলজি ‘উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ’ বাংলা সাহিত্য জগতে তাকে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী করেছে।
জলছবির সিংহ, মেয়েরা যেমন হয়, একশো পঞ্চাশ (গল্প সংকলন), ভালবাসা থেকে যায়, নিকট কথা, ডানায় রোদের গন্ধ, উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ, সত্যমেব জয়তে,  আকাশ না পাতাল, তেরো পার্বণ, সওয়ার, টাকাপয়সা, তীর্থযাত্রী, কলিকাল, স্বপ্নের বাজার, কলকাতা, অনুরাগ, তিনসঙ্গী, ভিক্টোরিয়ার বাগান, সহজপুর কতদূর, অনি, সিনেমাওয়ালা, গর্ভধারিণী, হৃদয় আছে যার, সর্বনাশের নেশায়, ছায়া পূর্বগামিনী, এখনও সময় আছে, স্বনামধন্য, আমাকে চাই, উজান গঙ্গা, কষ্ট কষ্ট সুখ, কুলকুণ্ডলিনী, কেউ কেউ একা, জনযাজক, সূর্য ঢলে গেলে, আশ্চর্যকথা হয়ে গেছে, অগ্নিরথ, অনেকই একা, আট কুঠুরি নয় দরজা, আত্মীয়স্বজন, আবাস, জলের নিচে প্রথম প্রেম, জ্যোৎস্নায় বর্ষার মেঘ, দায়বন্ধন, দিন যায় রাত যায়, দৌড়, বড় পাপ হে (গল্প), বিনিসুতোয়, মনের মতো মন, মেঘ ছিল বৃষ্টিও, শরণাগত, শ্রদ্ধাঞ্জলি, সাতকাহন, সুধারানী ও নবীন সন্ন্যাসী, হরিণবাড়ি, কইতে কথা বাধে, মধ্যরাতের রাখাল, আকাশে হেলান দিয়ে, কালোচিতার ফটোগ্রাফ, আকাশকুসুম, অহংকার, শয়তানের চোখ, হৃদয়বতী, স্বরভঙ্গ, ঐশ্বর্য, আকাশের আড়ালে আকাশ, কালাপাহাড়, সন্ধেবেলার মানুষ, বুনোহাঁসের পালক, জালবন্দী, মোহিনী, সিংহবাহিনী, বন্দীনিবাস, মৌষলকাল, মানুষের মা, গঙ্গা, বাসভূমি, লক্ষ্মীর পাঁচালি, শেষের খুব কাছে, জীবন যৌবন, আহরণ, বাসভূমি, এত রক্ত কেন, এই আমি রেণু, উনিশ বিশ।
পুরস্কার ও সম্মাননা——
আনন্দ পুরস্কার -১৯৮২; বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, দিশারী ও চলচিত্র প্রসার সমিতি – শ্রেষ্ঠ স্ক্রিপ্ট রাইটার – ১৯৮২; সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, ১৯৮৪; বঙ্কিম পুরস্কার – ২০০৯; বঙ্গবিভূষণ – ২০১৮, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত। চিত্রনাট্য লেখক হিসাবে জয় করেছেন বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির এওয়ার্ড। সমরেশ কলকাতা ও বাংলাদেশএর সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখক হিসাবে পাঠকমন জয় করেছেন।
মৃত্যু—–
২০২৩ সালের ২৫ই এপ্রিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত সমস্যার কারণে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই ৮ই মে তিনি প্রয়াত হন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বাঙালি কথাসাহিত্যিক, সুবোধ ঘোষ – বাঙালী পাঠকসমাজে এখনও প্রাসঙ্গিক।।।

ভারতীয় বাঙালি লেখক এবং বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ এর  জন্ম ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯০৯ বিহারের হাজারীবাগে।  আদি নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে।  তিনি হাজারীবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজের ছাত্র ছিলেন।  প্রখ্যাত দার্শনিক ও গবেষক মহেশ ঘোষের গ্রন্থাগারে অধ্যয়ন করতেন।  প্রত্নতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব এমনকি সামরিক বিদ্যায় তার যথেষ্ট দক্ষতা ছিল।
তিনি বিহারের আদিবাসী এলাকায় বাস কন্ডাক্টর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।  এরপর তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় সার্কাস ক্লাউন, বোম্বে পৌরসভায় চতুর্থ শ্রেণীর চাকরি, চা ব্যবসা, বেকারি ব্যবসা, মালগুদামে স্টোর কিপার ইত্যাদিতে কাটিয়েছেন। তিরিশের দশকের শেষের দিকে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার সাপ্তাহিক বিভাগে সহকারী হন।

সংবাদপত্র  16 আগস্ট, 1946 সালে, তিনি গান্ধীজির সাথে উত্তর দাঙ্গা-বিধ্বস্ত নোয়াখালীতে যান এবং দাঙ্গা এবং দাঙ্গা-পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করেন।  অনামি সংঘ (বা চক্র) নামক তরুণ লেখকদের একটি সভায় বন্ধুদের অনুরোধে সুবোধ ঘোষ পরপর দুটি গল্প লিখেছিলেন,  অযান্ত্রিক এবং ফসিল, যা বাংলা সাহিত্যে এক অসাধারণ আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল।
তার লেখালেখির কালপর্ব ১৯৪০ থেকে ১৯৮০। বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে একটু বেশি বয়সে যোগদান করেও নিজস্ব মেধা মনন চিন্তা চেতনা আর লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে সুবোধ ঘোষ তার অসাধারণ রচনা সম্ভাবের মাধ্যমে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন।  বিশেষ করে তার ‘অযান্ত্রিক’ এবং ‘ফসিল’-এর মত বাংলা সাহিত্যের যুগান্তকারী গল্প।
সাহিত্য কর্ম——
প্রথম গল্প ‘অযান্ত্রিক’, এরপর ‘ফসিল’। তার আর একটি বিখ্যাত গল্প ‘থির বিজুরি’। এছাড়াও, জতুগৃহ, ভারত প্রেমকথা (মহাভারতের গল্প অবলম্বনে রচিত),। সুবোধ ঘোষের প্রথম উপন্যাস হল তিলাঞ্জলি। গঙ্গোত্রী, ত্রিযামা, ভালোবাসার গল্প, শতকিয়া প্রমূখ।
চলচ্চিত্রায়ণ——–
অযান্ত্রিক (ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত, ১৯৫৮) জতুগৃহ (১৯৬৪)।
সম্মাননা—–
আনন্দ পুরস্কার , শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে সুজাতা চলচ্চিত্রের জন‍্য – ফিল্মফেয়ার পুরস্কার (১৯৫৯), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক।
১০ মার্চ ১৯৮০ সালে তিনি প্রয়াত হন।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে- বাঙালি লোকসঙ্গীত শিল্পী ও লোকসঙ্গীত গবেষক, কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য।।।

বাংলা লোকসংগীতের জগতে  কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য এক অতি পরিচিত নাম। কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য এর জন্ম ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭০ সালে। তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি লোকসঙ্গীত শিল্পী ও লোকসঙ্গীত গবেষক।
তিনি আসামের শিলচরে জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য অধ্যয়ন করেন।  তাঁর সঙ্গীতের অনুপ্রেরণা তাঁর কাকা অনন্ত ভট্টাচার্য।  আসামের শিলচরে ভট্টাচার্যের বাড়ি ছিল তাঁর সঙ্গীত জীবনের প্রাথমিক অংশ।  ছন্দে ও সুরে তিনি বেড়ে উঠছে।  তবলা বাজানোর মাধ্যমে ধীরে ধীরে গানের জগতে প্রবেশ করেন তিনি।  তবলার পর তিনি ধাপে ধাপে অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখেছিলেন।  তিনি কণ্ঠ সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নেন।

সঙ্গীত ছিল তার গভীর আগ্রহ;  অবশেষে তিনি উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন।  এরপর শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী লোকগানের সন্ধান যা ছিল প্রাণবন্ত, সুরেলা এবং সর্বজনীন লোক সুর, যা অনেকের কাছেই ছিল অজানা ও অজানা। ১৯৯৯ সালে, তিনি উত্তরবঙ্গ এবং পূর্ববঙ্গের পল্লীগান এবং লোকায়ত গানের ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে লোকসংগীত ব্যান্ড দোহারের সহ-প্রতিষ্ঠা করেন।  তিনি দেশ-বিদেশে আসাম ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সিলেটি গান, বিহু, বাউল, কামরূপী, ভাওয়াইয়া গান গেয়েছেন।  বেশ কিছু চলচ্চিত্রের গানেও অবদান রেখেছেন।  তাঁর শেষ ছবির কাজ ছিল ভুবন মাঝি।
কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য হিন্দি ও বাংলা ছবিতে কয়েকটি প্লেব্যাক গান গেয়েছেন।  অশোক বিশ্বনাথ পরিচালিত হিন্দি ছবি গুমশুদাতে তাঁর একটি গান ছিল।  ২০০৭ সালে, তিনি সুমন মুখার্জি পরিচালিত বাংলা চলচ্চিত্র চতুরঙ্গে গান গেয়েছিলেন।  ২০০৮ সালে, তিনি গৌতম ঘোষ পরিচালিত একটি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রকল্প মনের মানুষ (সোনালী ময়ূর পুরস্কার বিজয়ী) বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য গান করেন।  এটি ফকির লালন শাহের জীবন ও দর্শনের উপর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র।সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত  বাংলা চলচ্চিত্র জাতিশ্বর ছিল একটি জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র; যেখানে ২০১৪ সালে কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য গান গেয়েছিলেন। ২০১২ সালে কালিকাপ্রসাদের গবেষণা নিবন্ধগুলি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নাল এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।
তিনি ‘সা রে গা মা পা’ অনুষ্ঠানে বাংলা লোক সঙ্গীত প্রচার করেন এবং বিশ্বব্যাপী অভিনন্দন পান।
তিনি ২০১৩ সালে গুয়াহাটি ব্যতিক্রম গ্রুপ থেকে উত্তর পূর্ব পুরস্কারের সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রদূত পান। কালিকাপ্রসাদ তার অনন্য সৃষ্টি এবং বাদ্যযন্ত্র শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার “সংগীত সম্মানের পুরস্কার” দেন (২০১৩)।
কালিকাপ্রসাদ হুগলী জেলার গুরাপ গ্রামের কাছে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ২০১৭ সালের ৭ই মার্চে।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

কুম্ভ মেলা সম্পর্কে কিছু তথ্য।

ভূমিকা:-  হিন্দুদের একটি গণ তীর্থযাত্রা, কুম্ভ মেলা বিশ্বের বৃহত্তম মানব সমাবেশ। এটি বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিকতার এক দর্শনীয় প্রদর্শন যা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ ভক্তকে আকর্ষণ করে। এই মেলা প্রতি ১২ বছর অন্তর ভারতের চারটি ভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয়: এলাহাবাদ (প্রয়াগরাজ), হরিদ্বার, নাসিক এবং উজ্জয়িনী।

ইতিহাস এবং তাৎপর্য:- কুম্ভ মেলার উৎপত্তি প্রাচীন হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী (সমুদ্র মন্থন) থেকে। কিংবদন্তি অনুসারে, দেবতা এবং অসুররা সমুদ্র মন্থনে সহযোগিতা করে অমরত্বের অমৃত, অমৃত উৎপন্ন করে। মন্থন প্রক্রিয়া চলাকালীন, চারটি স্থানে যেখানে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে অমৃতের চারটি ফোঁটা পৃথিবীতে পড়ে।

মেলা হল মন্দের উপর শুভের বিজয় এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের উদযাপন। এটি ভক্তদের জন্য তাদের আত্মাকে পবিত্র করার, আধ্যাত্মিক বিকাশের সন্ধান করার এবং জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি লাভের একটি সুযোগ।

প্রস্তুতি এবং আচার-অনুষ্ঠান:-  কুম্ভমেলার প্রস্তুতি কয়েক মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। স্থানগুলি বিশাল তাঁবুর শহরে রূপান্তরিত হয়, যেখানে হাজার হাজার অস্থায়ী আশ্রয়স্থল, খাবারের দোকান এবং চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মেলার সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য একসাথে কাজ করে।

কুম্ভমেলা একটি 48 দিনের উৎসব, যার প্রথম দিন মকর সংক্রান্তি (শীতকালীন অয়নকাল)। মেলাটি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত: শাহী স্নান (রাজকীয় স্নান), পৌষ পূর্ণিমা স্নান এবং মহা শিবরাত্রি স্নান।

শাহী স্নান হল কুম্ভমেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান, যেখানে লক্ষ লক্ষ ভক্ত পবিত্র নদীতে স্নান করেন। নগ্ন তপস্বীদের একটি দল, নাগা সাধুরা প্রথমে পবিত্র স্নান করেন, তারপরে অন্যান্য সাধু, সাধু এবং ভক্তরা আসেন।

সাংস্কৃতিক তাৎপর্য:-  কুম্ভমেলা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও একটি উদযাপন। মেলা দেশের সমৃদ্ধ বৈচিত্র্য প্রদর্শন করে, যেখানে সাধু, সাধু, সঙ্গীতজ্ঞ, নৃত্যশিল্পী এবং কারিগর সহ সকল স্তরের অংশগ্রহণকারীরা অংশগ্রহণ করেন।

কুম্ভমেলা ভক্তদের জন্য তাদের আধ্যাত্মিক শিকড়ের সাথে সংযোগ স্থাপন এবং ভারতের প্রাণবন্ত সংস্কৃতি অনুভব করার একটি সুযোগ। এটি আত্ম-প্রতিফলন, আধ্যাত্মিক বিকাশ এবং সাম্প্রদায়িক উদযাপনের সময়।

চ্যালেঞ্জ এবং বিতর্ক:-  কুম্ভমেলা তার চ্যালেঞ্জ এবং বিতর্ক ছাড়াই নয়। বিশাল সমাবেশ উল্লেখযোগ্য লজিস্টিক এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করে, যার মধ্যে রয়েছে ভিড় ব্যবস্থাপনা, মৌলিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

মেলা চলাকালীন পদদলিত, দুর্ঘটনা এবং স্বাস্থ্য সংকটের ঘটনা ঘটেছে। পরিবেশগত প্রভাবের জন্যও এই অনুষ্ঠান সমালোচিত হয়েছে, দূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংসের বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

উপসংহার:-  কুম্ভমেলা একটি অনন্য এবং আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান যা ভারতীয় সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিকতার গভীরতা এবং বৈচিত্র্য প্রদর্শন করে। চ্যালেঞ্জ এবং বিতর্ক সত্ত্বেও, মেলা ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রয়ে গেছে, যা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ ভক্ত এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

বিশ্বের বৃহত্তম মানব সমাবেশ হিসেবে, কুম্ভ মেলা বিশ্বাস, সম্প্রদায় এবং সাংস্কৃতিক উদযাপনের শক্তির প্রমাণ। এটি এমন একটি অনুষ্ঠান যা এতে অংশগ্রহণকারীদের অনুপ্রাণিত করে, শিক্ষিত করে এবং রূপান্তরিত করে, তাদের জীবন ও আত্মার উপর স্থায়ী প্রভাব ফেলে।

Share This