শহরের ব্যস্ত রাস্তাটা প্রতিদিনের মতোই শব্দে ভরা। কিন্তু সেই দিনের শেষ বিকেলটা অদ্ভুত নরম ছিল। রোদটা যেন একটু বেশি কোমল, আর বাতাসে ছিল কেমন যেন অজানা এক টান।
নীলা কলেজ থেকে ফিরছিল। হাতে আঁকা খাতাটা বুকে জড়িয়ে হাঁটছিল ধীর পায়ে। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিল অয়ন—তার পুরোনো স্কুল বন্ধু। বহুদিন পর দেখা হওয়ায় তারা দু’জনেই একটু অবাক, একটু অস্বস্তি।
“এতদিন কোথায় ছিলে?” নীলা হেসে জিজ্ঞেস করল।
অয়নও হেসে বলল, “ছিলাম তো… এখানেই। তুমি-ই ব্যস্ত হয়ে পড়লে।”
তাদের কথাবার্তা ধীরে ধীরে নরম হতে লাগল। পুরোনো দিনের স্মৃতি, ছোটখাটো দুষ্টুমি, ক্লাস ফাঁকি—সব ফিরে আসতে লাগল। অয়ন বুঝতে পারছিল, এত বছর পরও নীলার চোখের সেই কোমল হাসিটা তাকে ঠিক একইভাবে নাড়া দেয়।
কথা বলতে বলতে তারা হাঁটতে লাগল। হঠাৎ করে নীলা থেমে গেল।
“ওই রোদের আলোটা দেখো না… কত সুন্দর, তাই না?”
অয়ন তাকাল। রোদের আলো নীলার চুলে পড়ে যেন সোনালি হয়ে উঠেছে।
তার বুকের ভেতর অদ্ভুত একটা অনুভূতি জমতে লাগল।
কথা না ভেবে বলে ফেলল—
“নীলা, তুমি জানো… তুমি হাসলে মনে হয় পুরো দিনটাই সুন্দর হয়ে গেল।”
নীলা অবাক হয়ে তাকাল। চোখে একফোঁটা লাজুক ঝিলিক।
“এতদিন পর আজ এটা বললে?”
“হ্যাঁ… কারণ আজ বুঝলাম, কথা না বললে বোধহয় ভুল হয়ে যাবে।”
নীলা ধীরে ধীরে মাথা নিচু করল।
তারপর খুব নরম স্বরে বলল—
“তুমি দেরি করেছ, অয়ন… কিন্তু তবুও… আমি অপেক্ষা করছিলাম।”
শেষ বিকেলে দু’জনের ছায়া লম্বা হয়ে একসাথে মিশে গেল।
রাস্তা একই রইল, শহরও একই। কিন্তু তাদের জন্য পৃথিবীটা ঠিক তখনই একটু বদলে গেল।