Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ডিজিটাল যুগে শিক্ষা ও জ্ঞানের হালহকিকৎ : দিলীপ রায়।

আমরা জানি, প্রাত্যহিক জীবনের চালিকা শক্তি হচ্ছে জ্ঞান ও শিক্ষা । এখন দেখা যাক জ্ঞান ও শিক্ষা বলতে আমরা কী বুঝি  ?  শিক্ষার মধ্য দিয়ে মানুষের অন্তনির্হিত শক্তি ও সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত ও প্রস্ফুটিত হয় এবং জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞান সৃষ্টির পথ উন্মুক্ত হয় । এই জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ  তার সমাজকেও সমৃদ্ধ করে । শিক্ষা ব্যক্তি ও সমষ্টির জ্ঞান, সৃজনশীলতা, কর্মদক্ষতা, চরিত্র ও মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটায় । আবার অনেকের মতে, বিদ্যা হলো একটা পুস্তকে আবদ্ধ, একটি জ্ঞানের শিখা মাত্র । আর জ্ঞান হলো সেই শিখা থেকে অসংখ্য শিখা হয়ে আলোকিত হওয়ার উপায় । শিখার আলোয় চারিদিকে আলোকিত হয় । জ্ঞান বলতে কোনো বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষা থাকাকে  বোঝায় । দর্শন শাস্ত্রের জ্ঞান নিয়ে যে অংশটি আলোচনা করে তাকে আবার  জ্ঞানতত্ত্ব  বলে ।
সম্ভবত আমার মতো অনেকের মনেই  প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক,  “প্রযুক্তিঃ আশীর্বাদ না অভিশাপ ?” প্রচণ্ড  গতিতে  প্রযুক্তির  ব্যবহার  বাড়ছে । প্রযুক্তির অকল্পনীয় উন্নয়ন বলতে গেলে সব  কিছুকে সম্ভব করে হাতের নাগালে  এনে দিয়েছে । আগে প্রযুক্তির ব্যবহার কম ছিল । প্রযুক্তির লভ্যতা ও ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল সমাজের নির্দিষ্ট কিছু মানুষের  মধ্যে । একটা ফোন করতে মানুষ ছুটতেন পিসিও বুথে । আরও কিছুদিন আগে দুই শব্দে মৃত্যু খবর জানাতে ছুটতে হতো দূরের পোস্ট অফিসে,  টেলিগ্রাম করার জন্য ।  মানি অর্ডারের মাধ্যমে গ্রামে গঞ্জে টাকা পাঠানোর রেওয়াজ সেদিনও ছিল । ট্রেনের টিকিট, ব্যাঙ্ক, সিনেমা, বিল মেটানো, সবক্ষেত্রেই লম্বা লাইন  । এমনও দেখা গেছে কলকাতার জিপিও’র পাশে  কয়লা ঘাটের রেলের সংরক্ষিত কাউন্টারে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য রাত থেকে লাইন দিতে হতো । বর্তমানে  পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন  ঘটেছে ।  প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনযাত্রার ছবিটার আমূল পরিবর্তন করে  দিয়েছে । এইজন্য জেগে উঠেছে “ডিজিটাল ইন্ডিয়া” যার প্রভাব ভৌগলিক সীমানাকেও ছাপিয়ে গেছে ।  জানা যায়, ভারতের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সারা বিশ্বে  তুলে ধরার লক্ষ্যে এই ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কর্মসূচি ।
( ২ )
এখানে উল্লেখ থাকে যে, ডিজিটাইজেশনের দিকে ভারতের দ্রুতগতির  যাত্রা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরিকাঠামোর সম্প্রসারণ এবং গত দুই দশক ধরে বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সামগ্রী ও ডেটা সহজে নাগালের মধ্যে আসায়  শিক্ষা ক্ষেত্রে   EdTech এর  দ্রুত উত্থান ও গ্রহণযোগ্যতার পথ সুগম হয়েছে । ভারতের  EdTech ক্ষেত্র, বিশ্বের বৃহত্তম শিক্ষাপ্রযুক্তি ক্ষেত্রগুলির অন্যতম । আমরা জানি, EdTech হলো শিক্ষাদান ও শিক্ষা গ্রহণের উন্নয়ন ঘটাতে প্রযুক্তি, অর্থাৎ সফটওয়্যার এবং/অথবা হার্ডওয়্যারের ব্যবহার । EdTech অ্যাপ ডাউনলোড করা স্মার্টফোন এখন শিক্ষার সমার্থক হয়ে উঠেছে । শ্রেণীকক্ষ এখন ইট-সিমেন্টের চৌহদ্দী ছাড়িয়ে ক্লিক এবং পোর্টালে স্থানান্তরিত । দূর-দূরান্তে থাকা, আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে EdTech গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং এই ভূমিকার জন্য  আগামীদিনে EdTech ক্ষেত্রের বিকাশ অব্যাহত থাকবে ।
শুধুমাত্র পড়ুয়ারাই  নয়, শিক্ষকরাও আকর্ষণীয় শিক্ষণগত অনুশীলনের মাধ্যমে EdTech থেকে উপকৃত হচ্ছেন, তাঁদের শিক্ষাদান পদ্ধতি আরও উন্নত হচ্ছে । ইন্টারঅ্যাকটিভ হোয়াইটবোর্ড, শিক্ষামূলক ভিডিও, এবং অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদের সুবাদে পড়ুয়াদের শিক্ষাগ্রহণ আরও মনোগ্রাহী হয়ে উঠছে ।
ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে জন্ম নেওয়া  ও বেড়ে ওঠা মানুষ ছোটবেলা থেকে ইন্টারনেট এবং কম্পিউটারে সড়গড় । প্রযুক্তির সাথে তাদের হরিহর আত্মা । এরা বড় হয়ে উঠছে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, ইত্যাদিকে ঘিরে । এখানে বলা বাহুল্য, ডিজিটাল প্রযুক্তি তাদের জীবনের একটা  স্বাভাবিক অঙ্গ । তারা সহজ-সাবলীল্ভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে  কাজে লাগায় । তাই এসব তরুন-তরুনীদের মাথা থেকে বের হয় অনেক ধরনের উদ্ভাবন  । তবে এটা ঘটনা, ফোনাফুনি, ইমেল, টেক্সটিং ও টুইটের হাত ধরে এরা বুঁদ হয়ে আছে । বর্তমান প্রজন্মের মানুষেরা সহজেই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে ।  পুরানো ধ্যান ধারণার বাবা-মায়ের মতো নয়, তারা তাদের কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে বেশী আগ্রহী ।
ভারতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রযুক্তির প্রভাব এখন অনেক সুগভীর । শোনা যায়, এই বছরের জানুয়ারীতে সংখ্যায় প্রায় আট বিলিয়ন লেনদেন হয়েছে ডিজিটাল প্রথায় । প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনার ক্ষেত্রে দ্রুত কীভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলির বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে ভারত তার নজিরবিহীন উদাহরণ রেখেছে এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে । ভারত চায় সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার উপর আধারিত এই কর্মপন্থা অন্য দেশেও অনুসৃত হোক । কারণ এই পন্থা উদ্ভাবনমূলক কর্মসূচীসমূহের আঁতুরঘর হয়ে ওঠার এবং দরিদ্র দেশগুলির উত্থানের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে ।
( ৩ )
এবার আবার আসছি বিদ্যা, শিক্ষা ও জ্ঞান  প্রসঙ্গে । ব্যক্তিগত ও জাতীয় নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞান ভিত্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে  শিক্ষার্থীদের মননে, কর্মে ব্যবহারিক জীবনে উদ্দীপন সৃষ্টি করা । সুতরাং মূল্যবোধ তৈরী করা এই মুহূর্তে সময়োচিত ও  আশুকর্তব্য ।  জ্ঞানের উৎস নিয়ে দার্শনিকদের ভিন্ন ভিন্ন মত । উল্লেখযোগ্য চারটি মত —– বুদ্ধিবাদ, অভিজ্ঞতাবাদ, বিচারবাদ ও স্বজ্ঞাবাদ । বুদ্ধিবাদ অনুসারে বুদ্ধিই যথার্থ জ্ঞান লাভের মাধ্যম বা উৎস । ডেকার্ট, লিবনিজ, প্রমুখ দার্শনিক বুদ্ধিবাদের সমর্থক । অভিজ্ঞতাবাদ অনুসারে, ইন্দ্রিয়জ অভিজ্ঞতা জ্ঞানলাভের উৎস । লক, বার্কলি, হিউম প্রমুখ অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক । বিচারবাদ অর্থ — বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়েই জ্ঞানের উৎপত্তি । কান্ট  এই মতবাদের সমর্থক । স্বজ্ঞা বা সাক্ষাৎ প্রতীতিই যথার্থ জ্ঞান লাভের উৎস । দার্শনিক বার্গসোঁ স্বজ্ঞাবাদের প্রবক্তা ।  অন্যদিকে বিদ্যা প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞান, শিক্ষা, দর্শন, বা কোনো বাস্তব জ্ঞানের  ক্ষেত্রে “সঠিক জ্ঞান” বোঝায় যা বিতর্কিত বা খণ্ডন করা অসম্ভব  ! যার অর্থ হলো বিবেচনা করা, সন্ধান করা, জানা, অর্জন করা বা বোঝা । অনেকের মতে বিদ্যা অর্জনের মূল উদ্দেশ্য — মানুষ হওয়া । আবার অনেকে বিদ্যা অর্জন অন্য অর্থে বুঝে থাকেন । আমরা বুঝি বিদ্যা অর্থ শিক্ষা ।  দুটি দৃষ্টিকোন থেকে শিক্ষার উদ্দেশ্যকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে । একটি ব্যক্তিক, অপরটি সমষ্টিক বা রাষ্ট্রীক দৃষ্টি ভঙ্গি ।  ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি একটি পুরাতন প্রবাদ বাক্য- “লেখা পড়া করে যেই / গাড়ি ঘোড়া চড়ে সেই”- দিয়েই সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। কেননা ঐ প্রবাদ বাক্যের মর্মার্থ আমাদের দেশের মানুষের মানসভূমে গভীর ভাবে শিকড় বিস্তৃত করে আছে । মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেকের চিন্তা  আরও সংকীর্ণ ও আত্মকেন্দ্রিক । অধিকাংশ বাবা-মা তাদের মেয়েকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠান একটাই উদ্দেশে,  যাতে শিক্ষিত ও ভাল অর্থ উপার্জকারী পাত্র শিকার করা যায় ।  তবে অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে । পারিবারিক সংস্কৃতির উপর এটি নির্ভর করে । তা ছাড়া বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে, নারী শিক্ষার কলেবর  ঊর্ধ্বগতি !  কিন্তু ধনী-গরীব নির্বিশেষে এই সংকীর্ণ  চিন্তা পরিহার করার সময় এসেছে । নারীরা  এখন “মহলের” অলঙ্কার ‘মহিলা’ নয়; নারীরা এখন অনেক উন্নত-মনস্ক  মানুষ । দেশের উন্নয়নের নিরিখে  তারাও পুরুষদের সম-মর্যাদার ।  “Education is the method of civilization” “শিক্ষাই সভ্যতার বাহন ।” সভ্যতার অগ্রসরতা মানেই মানব সমাজের বিকাশ । আধুনিক যুগে প্রতি রাষ্ট্রের একটি শিক্ষানীতি থাকে এবং সেই  অনুসারে শিক্ষা পদ্ধতিকে সাজানো হয় । আমাদের দেশেও একাধিক শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে । আমাদের জাতীয় শিক্ষা নীতির (NEP, 2020)  উদ্দেশ্য হচ্ছে , বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমের বিষয়বস্তু হ্রাস করে প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং অভিজ্ঞতা শিক্ষার উপর বৃহত্তর ফোকাস  ।
সর্বশেষে এটাই বলা যায়,  শিক্ষার  অন্যতম  লক্ষ্য হলো জ্ঞানার্জন । জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই মানুষের বিভিন্ন দিকে দক্ষতা বাড়ে । মানুষের চিন্তাশক্তির বিকাশলাভ তখনই ঘটে যখন জ্ঞানার্জন সম্ভব  । জ্ঞান  অর্জন করলে  যেমন ব্যক্তির মানসিক  উন্নতিসাধন  হয়  তেমনই ব্যবহারিক  দিকেও প্রভূত উন্নতিসাধন ঘটে । সুতরাং প্রযুক্তির ব্যবহার যতই বাড়ুক,  শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রবহমান অটুট  থাকবে  নিজস্ব মহিমায় ।

 

(তথ্যসূত্র ও ছবি: সংগৃহীত ও যোজনা ০২ & ০৫/২৩)

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

একটি শিশুর বেড়ে ওঠা থেকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

আজ ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস। ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ পরিষদের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। রাষ্ট্রসংঘ ১৯৯৪ সালকে আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষ ঘোষণা করেছিল। সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে একটি পরিবারের ভূমিকা কি তা আমরা সকালেই জানি। একটি শিশুর বেড়ে ওঠা থেকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পরিবার এমন একটি সমাজিক বন্ধন যা একটি ব্যক্তিকে জীবনের চলার পথে সমূহ ঝড় ঝঞ্ঝা প্রতিহত করতে সহযোগিতা করে। তাই এ ক্ষেত্রে যৌথ পরিবারের ভূমিকা আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারন সুখে দুঃখে সকলকে একসঙ্গে না হোক কাউকে না কাউকে পাশে পাওয়া যায়। নিজেদের সুখ দুঃক্ষ গুলো ভাগ করে নেওয়া যায়। কিন্তু দুক্ষের বিষয় হলো এই যে  যতো দিন যাচ্ছে ততই ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র হচ্ছে পরিবার। কর্মের আর ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে আমরা নিজেদের ক্রমেই ভাগে ভাগে ভাগ করে নিচ্ছি। বঞ্চিত হচ্ছি, পরিবারের ছোটদের কিংবা নব প্রজন্ম কে বঞ্চিত করছি যৌথ পরিবারের আসল সুখ থেকে।

 

কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে  মনে হচ্ছে একান্নবর্তী কিংবা যৌথ পরিবারের ধারণা যেন এখন ‘সেকেলে’ হয়ে গেছে। বিশেষ করে, শহুরে জীবন ব্যবস্থায় এই ব্যাপারটি চরম আকার ধারণ করেছে। আমরা যেন ছুটে চলেছি  সুখ নামক এক অসুখের পেছনে। একা থাকব একা পরব, আমি আমার সন্তান আমার বৌ এই যেন একটা গন্ডি তৈরি করছি সকলে। কিন্তু ভুলে যাচ্ছি প্রকৃত সুখ কি সেটা ভাবতে বা বুঝতে। যৌথ পরিবারে হয়তো মতগত বিভিন্ন পার্থক্য থাকে, আর এটাই সভাবিক। কিন্তু যৌথ বা একান্নবর্তি পরিবারের মধ্যে যে সুযোগ সুবিধা গুলো থাকে সেটাও আমাদের ভাবতে হবে। কিন্তু দিন দিন জেনে আমরা সেই ভাবনা থেকে সরে আসছি। এর ফলও ভুক্তে হচ্ছে ক্ষুদ্র পরিবার গুলোকে। হঠাৎ অসুখ বিসুখ,  বিপদে আপদে বা বিপর্যয়ে সেই সমস্যা গুলো প্রকট হয়ে ওঠে। আমরা বুঝি না প্রতিটা অনু পরিবারও একদিন বড় হবে। সন্তান বড় হবে, তার বিয়ে হবে, তার সন্তান হবে এই ভাবেই। আর, আমরা কেবল ভাংতেই আছি!!

 

আমরা জানি পরিবার মানেই হচ্ছে মা, বাবা, ভাই, বোন, দাদা, দিদি, দাদু, দিদা, কাকা, কাকি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসবাস।  আমাদের সমাজব্যবস্থায় পরিবারের এই ধারণা প্রচলিত অতীত থেকেই। কিন্তু দিন যতোই যাচ্ছে, আমরা যেন ততোই এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসছি। যেন ক্রমেই ‘স্বামী-স্ত্রী-সন্তানে’ই সীমাবদ্ধ করে ফেলছি আমরা পরিবারকে। সেখানে মা-বাবা কিংবা দাদা-দাদীর কোন স্থান নেই। মা-বাবাকে হয়তো গ্রামের বাড়িতে কাটাতে হচ্ছে নিঃসঙ্গ-অসহায় জীবন। আবার অনেক মা-বাবার ঠিকানা হচ্ছে ‘বৃদ্ধাশ্রম’। এর থেকে বড় যান্ত্রনার অর কি হতে পারে ! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে একান্নবর্তী কিংবা যৌথ পরিবারের ধারণা যেন এখন ‘সেকেলে’ হয়ে গেছে। বিশেষ করে, শহুরে জীবন ব্যবস্থায় এই ব্যাপারটি চরম আকার ধারণ করেছে।  রক্তের বন্ধন মানেই পারিবারিক বন্ধন। পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে অকৃত্রিম সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তা অটুট রাখা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের চিরায়ত সমাজ ব্যবস্থায় সুন্দর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, সুন্দর পারিবারিক বন্ধন। পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বন্ধুর মতো হলে পারিবারিক নানা জটিল সমস্যা ও মোকাবেলা করা যায়। সকলের এগিয়ে চলার পথ হয় মসৃণ।  তাই যৌথ পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখার মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

 

তবে সুপ্রাচীন কাল থেকে যে যৌথ পরিবারে চিত্র সারাবাংলা জুড়ে ছিল এখন তা অনেকটাই ম্লান। শহুরে জীবনে অনেক আগেই বিলীন হয়েছে যৌথ পরিবারের চিত্র। আগে গ্রামে কিছু যৌথ পরিবার দেখা গেলেও এখন তাও নেই। কেউ ইচ্ছে করে কিংবা কেউ কর্মের তাগিদে ভেঙে দিচ্ছে যৌথ পরিবারের ধারনা গুলো। বংশ মর্যাদা এমনকি ঐতিহ্যের পরিবারেও বিলীন একত্রে বাস করার ইতিহাস। যা দেখতে এক সময় মনুষ অভ্যস্থ ছিল তা এখন স্বপনের মতন। হয়তো সিনেমার পর্দায় কেবল ভেসে ওঠবে গল্পের মতো অতিতের ইতিহাস।

নৃবিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কির মতে – “পরিবার হল একটি গোষ্ঠী বা সংগঠন আর বিবাহ হল সন্তান উৎপাদন ও পালনের একটি চুক্তি মাত্র”। সামনার ও কেলারের মতে- ‘পরিবার হল ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন, যা কমপক্ষে দু’ পুরুষকাল পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে”- এ সংজ্ঞার প্রেক্ষিতে বোঝা যায়, বিবাহপ্রথার আগেও সমাজে পরিবারের সৃষ্টি হয়েছিল- কারণ এ সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার আগে থেকেই মানুষ দলবদ্ধ জীবনযাত্রা করত যা পারিবারিক জীবনযাপনের স্বাক্ষরবহ। তবে বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন সংস্কৃতির পরিবারের ভূমিকা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পরিলক্ষিত হয়। এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বৈচিত্র্যপূর্ণ নানামুখী ধারা যে কারণে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে এর গঠন ও অন্যান্য অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। যে শিশুটি ভবিষ্যতের নাগরিক, তার মনোজগত প্রস্তুত হয় পরিবারে। পরিবারের ধারা কেমন, কী ধরনের প্রথা-রীতিনীতি, এ সবের উপর ভিত্তি করে তার জীবনভঙ্গি গড়ে ওঠে। তাই শিশুর সুষ্ঠু পারিবারিক শিক্ষা শৈশব তথা শিশুর মন তথা সাদা কাগজের পাতায় যে ছাপ রাখে, তা ওর পরবর্তী জীবনে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। তাই রাষ্ট্র পরিচালনায় যেমন কিছু সংবিধান আছে তেমনি পারিবারিক সংবিধানও থাকা দরকার। যেমন পরিবারের সবার সঙ্গে সদ্ভাব গড়ে তোলা, সাংসারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মিথ্যে না বলা, গুরুজনদের শ্রদ্ধা করা, নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে ফেরা, নিজের কাজ নিজে সম্পন্ন করা, মিথ্যেকে ঘৃণা করা এবং মানবিক মূল্যবোধগুলোর চর্চার মাধ্যমে অন্তরকে বিকশিত করা। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের সমাজে প্রচলিত যৌথ পরিবারে পারস্পরিক সম্প্রীতি গভীর হয়, অটুট থাকে। অসুখ বিসুখসহ নানা সমস্যায় একে অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এতে অনেক বড় সমস্যাও সমাধান হয়ে যায় অতি সহজে। সময়ের তাগিদে যৌথ পরিবার কিংবা পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার বিষয়টি যখন এই সমাজে ক্রমান্বয়ে গুরুত্বহীন হয়ে উঠছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আজকের এই আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। আসুন আমরা সেই ভাবনাকে বুকে নিয়ে আবার একি সূত্রে আবদ্ধ হই ।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

 

Share This
Categories
রিভিউ

আজ ১৫ মে, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ১৫ মে। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

দিবস—–

(ক) আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস।

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯০২ – রিচার্ড ডি ডেলেই, শিকাগোর মেয়র।

১৯০৩ – মারিয়া রাইখ, জার্মান বংশোদ্ভূত গণিতবিদ এবং প্রত্নতত্ত্ববিদ।

১৯০৫ – (ক)  ভারতীয় বাঙালি লেখক ও সাহিত্যিক শ্যামলকৃষ্ণ ঘোষ।

(খ) জোসেফ কটেন, মার্কিন অভিনেতা।

১৯০৭ – সুখদেব থাপার, ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধা।

১৯০৯ – জেমস মেসন, ইংরেজ অভিনেতা।

১৯১৫ – পল স্যামুয়েলসন, বিখ্যাত মার্কিন অর্থনীতিবিদ ও আধুনিক অর্থনীতির জনক।

১৯১৫ – চারু মজুমদার, ভারতীয় বিপ্লবীনেতা।

১৯৩২ – প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাগর সেন ।

১৯৩৫ – টেড ডেক্সটার, বিখ্যাত ইংরেজ ক্রিকেটার।

১৯৬৭ – মাধুরী দীক্ষিত, প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।

১৯৮১ – প্যাট্রিস এভরা, ফরাসি-সেনেগালীয় আন্তর্জাতিক ফুটবলার।

১৮১৭ – দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভারতের ধর্মীয় সংস্কারক; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা।

১৮৪৮ – ভিক্টর ভাসনেতসভ, রুশ চিত্রশিল্পী।

১৮৫৬ – এল ফ্রাঙ্ক বাম, মার্কিন লেখক।

১৮৫৭ – উইলিয়ামিনা ফ্লেমিং, স্কটল্যান্ডীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

১৮৫৯ – পিয়েরে কুরি, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী।

১৮৬২ – আর্থার শ্নিজলার, অস্ট্রীয় নাট্যকার।

১৮৯০ – ক্যাথেরিন অ্যান পোর্টার, মার্কিন লেখক।

১৮৯১ – মিখাইল বুলগাকভ, রুশ লেখক।

১৮৯২ – জিমি ওয়াইল্ড, মুষ্টিযোদ্ধা ।

১৮৯৫ – প্রেসকট বুশ, মার্কিন সিনেটর এবং জর্জ ডব্লিউ বুশের পিতামহ।

১৮৯৫ – উইলিয়াম ডি বায়রন, মার্কিন কংগ্রেসম্যান।

১৮৯৮ – আর্লেট্টি ফরাসি মডেল এবং অভিনয়শিল্পী।

১৭২০ – ম্যাক্সিমিলিয়ান হেল, স্লোভাকীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

১৭৭৩ – ক্লেমেন্স ভন মেটরনিখ, জার্মান-অস্ট্রিয়ান রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রনায়ক এবং তার যুগের একজন গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক।

১৭৮৬ – জেনারেল ডিমিট্রিস প্লাপাউটিস, গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান বিপ্লবী সেনানায়ক।
১৮৯৯ – জিন ইটিন্নি ভ্যালুই, ফরাসি জেনারেল।

১৬০৮ – রেনে গোপিল, ফরাসি ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারক।

১৫৬৭ – ক্লাউদিও মোন্তেভের্দি, ইতালীয় গীতিকার।

১৩৯৭ – রাজা সেজোং, কোরিয়ার রাজা।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৯৫১ – দৈনিক সংবাদ-এর আত্মপ্রকাশ।

১৯৫৪ – আদমজি মিলে বাঙালি-অবাঙালি দাঙ্গা। সরকারি হিসাবে নিহত ৪০০, বেসরকারি মতে ৬০০।

১৯৬০ – কঙ্গো প্রজাতন্ত্র স্বাধীন হয়।

১৯৭২ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ব্রাজিল।

১৯৮৮ – আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহার শুরু।

১৮১৮ – বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র বেঙ্গল গেজেট প্রকাশিত হয়।

১৭৭৬ – প্রথম বাষ্প চালিত জাহাজ বানানো হয়েছিলো।

১৬২৫ – অস্ট্রিয়ায় ১৬ বিদ্রোহী কৃষকের ফাঁসি হয়।

১০০৪ – দ্বিতীয় হেনরি ইতালির রাজা হিসেবে অভিষিক্ত।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৯৩৬- স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়,ভারতের যশস্বী বাঙালী শিল্পপতি।

১৯৯৪ – সুরকার, কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক আবদুল আহাদ।

১৮৮৬ – মার্কিন নারী কবি এমিলি ডিকিনসন।

১৮৯৪-ভূদেব মুখোপাধ্যায়, একজন বিশিষ্ট লেখক এবং শিক্ষাবিদ।

১১৫৭ – রুশ যুবরাজ ইউরি ডলগোরুক।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
রিভিউ

আজ ৭ এপ্রিল, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ৭ এপ্রিল। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

দিবস—-

 

(ক) বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯১১ – ফরাসি লেখক হেরভে বাযিন।

১৯১৫ – পঙ্কজ দত্ত, বাঙালি চলচ্চিত্র সাংবাদিক।

১৯২০ – রবি শংকর, প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ।

১৯২৮ – অ্যালান জে পাকুলা, আমেরিকান পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার।

১৯৩৯ – ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা, আমেরিকান পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার।

১৯৩৯ – ইংরেজ বিখ্যাত ইংরেজ সাংবাদিক, লেখক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডেভিড প্যারাডাইন ফ্রস্ট।

১৯৪৪ – গেরহার্ট শ্রোডার, জার্মান রাজনীতিবিদ।

১৯৫৪ – হংকং ভিত্তিক অভিনেতা, মার্শাল আর্টিস্ট, পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার জ্যাকি চ্যান।

১৯৬৪ – নিউজিল্যান্ড বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ার অভিনেতা, গায়ক, পরিচালক ও প্রযোজক রাসেল আইরা ক্রো।

১৯৭৩ – সাবেক ইতালিয়ান ফুটবলার মার্কো ডালভেকিও।

১৯৮৩ – ফরাসি ফুটবলার ফ্রাঙ্ক বিলাল রিবেরি।

১৯৮৭ – মার্টিন কাকেরেস, উরুগুয়ের ফুটবলার।

১৯৯০ – রোমানিয়ান টেনিস খেলোয়াড় সরানা কিরস্টেয়া।

১৯৯২ – এন্নিমেরা শিমেল, জার্মানীর ইসলাম বিশেষজ্ঞ।

১৮৮৯ – গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল, ল্যাটিন আমেরিকার প্রসিদ্ধ কবি ও লেখক।

১৮৯৫ – জার্মান অভিনেত্রী মারগারেটে শন।

১৮৯৭ – তুলসী লাহিড়ী, নাট্যকার, অভিনেতা, সুরকার, বাংলা ছায়াছবির জনপ্রিয় চিত্রনাট্যকার।

১৭৭০ – উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ ইংরেজ কবি।

১৭৭২ – শার্ল ফুরিয়ে, ফরাসি কল্পবাদী সমাজতন্ত্রী।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৯৩৭ – ইতালী আলবেনীয়া দখলের জন্যে হামলা শুরু করে।

১৯৩৯ – ইতালির আলবেনিয়া দখল।

১৯৪৮ – বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৫৩ – সুইডেনের কূটনীতিক ডাক হামারস্কজোল্ট জাতিসংঘ মহাসচিব নিযুক্ত।

১৯৫৬ – মরক্কোর স্বাধীনতা লাভ।

১৯৭৩ – বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু।

১৯৮২ – মেক্সিকোয় চিকোনল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে দশ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে।

১৯৯৪ – বিক্ষুব্ধ সৈন্যরা রুয়ান্ডার ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী এবং ১১ জন বেলজীয় জাতিসংঘ সৈন্যকে হত্যা করে।

১৯৯৫ – উপমহাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম চাঞ্চল্যকর যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় ভারতের মহারাষ্ট্রে দুই কংগ্রেস দলীয় এমপি পণ্ডিত সাপকালে ও সঞ্চয় পাওয়ারকে দশ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান।

১৮১৮ – ব্রিটিশ সরকার ‘বিনা বিচারে আটক’ আইন কার্যকর করে।

১৭২১ – রাশিয়ার সম্রাট পিটার কাবির সুইডেন দখলের জন্যে দেশটির উপর হামলা শুরু করে ।

১৭৯৫ – ফ্রান্সে মিটারকে দৈর্ঘ্যের একক হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়।

১৭৯৮ – তুরস্কের তৃতীয় সেলিম রাজসিংহাসনে অধিষ্ঠিত।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

২০০৪ – ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী, গুরু ও ওডিশি নৃত্যশৈলীর উদ্গাতা কেলুচরণ মহাপাত্র।

২০০৭ – ব্যারি নেলসন, আমেরিকান অভিনেতা।

২০১২ – মিস রেড্‌, ইংরেজি লেখক।

২০১৪ – পিচেস হানিব্লসম গেল্ডফ , সাংবাদিক, টেলিভিশন উপস্থাপক ও মডেল ।

২০২১ – স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী।

 

১৯৪৭ – হেনরি ফোর্ড, মার্কিন মোটরযান উৎপাদক।

১৯৫২ – আবদুস সালাম, ভাষা শহীদ।

১৯৫৯ – মন্মথনাথ ঘোষ, প্রখ্যাত জীবনীকার।

১৯৭৪ – প্রখ্যাত বাঙালি অনুবাদক পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়।

১৯৮৫ – কার্ল স্মিট, জার্মান দার্শনিক ও আইনজ্ঞ ।

১৯৮৬ – লিওনিদ ক্যান্টোরোভিচ, রাশিয়ান গণিতবিদ ও অর্থনীতিবিদ ।

১৮২৩ – জ্যাকুইস চার্লস , ফরাসি উদ্ভাবক, বিজ্ঞানী, গণিতবিদ এবং বেলুন বিশেষজ্ঞ।

১৮৩৬ – উইলিয়াম গডউয়িন, ইংরেজ সাংবাদিক ও লেখক ।

১৮৯১ – বেইলী সার্কাসের, আমেরিকান ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ, সহ-প্রতিষ্ঠিাতা বারনুম এবং ।

১৭৬১ – টমাস বেইজ, ইংরেজ মন্ত্রী ও গণিতবিদ।

১৬১৪- এল গ্রেকো, চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর ।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
রিভিউ

আজ ৬ এপ্রিল, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ৬ এপ্রিল। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

দিবস—-

 

(ক) উন্নয়ন ও শান্তির জন্য আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস ৷

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯০৪ – জার্মান আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও ৩য় চ্যান্সেলর কার্ট গেয়র্গ কিসিঙ্গের।

১৯১১ – নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জার্মান প্রাণরসায়নী ফিওডর ফেলিক্স কনরাড লাইনেন।

১৯২০ – নোবেল পুরস্কার বিজয়ী চীনা বংশোদ্ভূত আমেরিকান প্রাণরসায়নী ও শিক্ষাবিদ এডমন্ড এইচ. ফিসার।

১৯২৮ – জেমস ওয়াটসন, মার্কিন আণবিক জীববিজ্ঞানী।

১৯৩০ – ডেভ সেক্সটন, ইংরেজ ফুটবলার ও ফুটবল ম্যানেজার।

১৯৩১ – সুচিত্রা সেন, ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী।

১৯৪২ – আমেরিকান অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার ব্যারি লেভিনসন।

১৯৪৯ – নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জার্মান পদার্থবিদ হরস্ট লুডউইগ স্টরমের।

১৯৫৬ – সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ও কোচ দিলীপ বলবন্ত ভেংসরকার।

১৯৫৬ – মুদাসসর নজর, পাকিস্তানি ক্রিকেটার।

১৯৬৩ – ইকুয়েডর রাজনীতিবিদ ও ৫৪ তম প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কররেয়া।

১৯৬৯ – আমেরিকান অভিনেতা, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার পল রুড।

১৯৭8 – রাশিয়ান ফুটবলার ইগর সেমশভ।

১৯৮৩ – জাপানি ফুটবলার মিটসুরু নাকাটা।

১৯৮৫ – লিয়াম প্লাঙ্কেট, ইংরেজ ক্রিকেটার।

১৮১২ – রাশিয়ান দার্শনিক ও লেখক আলেকজান্ডার হারযেন।

১৮২০ – ফরাসি ফটোগ্রাফার, সাংবাদিক ও লেখক নাডার।

১৮২৬ – ফরাসি চিত্রকর ও শিক্ষাবিদ গুস্টাভে মরেয়াউ।

১৮৪৯ – কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম মুসলমান বিচারপতি সৈয়দ আমীর আলী।

১৮৮৩ – চার্লি রবার্টস, ইংরেজ ফুটবলার।

১৮৮৬ – নিজাম স্যার মীর উসমান আলি খান হায়দ্রাবাদ ও বেরার রাজ্যের শেষ নিজাম।

১৮৯০ – ডাচ প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী ও ফকার বিমান প্রস্তুতকর্তা অ্যান্থনি ফকের।

১৭৭৩ – স্কটিশ ইতিহাসবিদ, অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক জেমস মিল।

১৪৮৩ – রাফায়েল, চিত্রশিল্পের রেনেসাঁস যুগের অন্যতম প্রধান শিল্পী।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

২০০৮ – এই দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ও ৯০ রানে ভারতের বিপক্ষে জয়ী হয়।

১৯১৭ – প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

১৯৩০ – ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে ভারতকে মুক্ত করতে মহাত্মা গান্ধী লবণ সত্যাগ্রহ অহিংস আন্দোলন শেষ করেন। সকাল সাড়ে ৬টার সময় গান্ধীজি লবণ আইন ভেঙে প্রথম লবণ প্রস্তুত করেছিলেন।

১৯৪২ – জাপানি বিমান সর্বপ্রথম ভারতে বোমাবর্ষণ করে।

১৯৪৮ – জিন্নাহর ঢাকা ত্যাগের পর রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন আরো বেগবান হয়ে ওঠে।

১৯৬৬ – গণ দাবির মুখে ইরানের তৎকালীন শাসক রেজা শাহ বন্দি দশা থেকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী কে মুক্তি দিতে বাধ্য হন।

১৯৬৮ – জাতিগত সহিংসতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় শহরগুলিতে কয়েক ডজন মার্টিন লুথার রাজা হত্যায় জাতিগত দাঙ্গা তীব্রতাবৃদ্ধি পায়।

১৯৭২ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় গ্যাবন।

১৯৮৬ – ঢাকায় প্রথম এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়।

১৯৯২ – মুসলিম রাষ্ট্র বসনিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।

১৯৯৩ – মস্কোর ১৭০০ মাইল পূর্বে অবস্থিত রাশিয়ার গোপন সামরিক পরমাণু ঘাটিতে মারাত্মক দুঘর্টনা ঘটে।

১৮৭৬ – কলকাতা কর্পোরেশন অনুমোদিত হয়।

১৮৯৬ – এথেন্সে আধুনিক অলিম্পিক ক্রীড়ার সূচনা হয়।

১৭১২ – নিউইয়র্কে নিগ্রো ক্রীতদাসরা শ্বেতাঙ্গ মালিকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।

১৭৯৩ – ফরাসি বিপ্লবের পর ফ্রান্সের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ‘কমিটি অব পাবলিক সেফটি’ গঠিত হয়।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

২০০০ – টিউনিস্ রাজনীতিবিদ ও ১ম প্রেসিডেন্ট হাবিব বউরগুইবা।

২০১৪ – মিকি রুনি, মার্কিন অভিনেতা, কৌতুকাভিনেতা, প্রযোজক ও বেতার ব্যক্তিত্ব।

২০১৯ – টেলি সামাদ, বাংলা চলচ্চিত্রের শক্তিমান কৌতুকাভিনেতা।

১৯৩৭ – আন্তর্জাতিকখ্যাতি সম্পন্ন ভারতীয় কমিউনিস্ট বিপ্লবী বীরেন চট্টোপাধ্যায়।

১৯৬১ – নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বেলজিয়ান মাইক্রোবায়োলোজিস্ট জুলস বরডেট।

১৯৬৭ – কবিয়াল রমেশচন্দ্র শীল।

১৯৭১ – ইগর স্ট্রাভিনস্কি, রুশ সুরকার।

১৯৯০ – সাহানা দেবী,রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্যা গায়িকা।

১৯৯১ – বিল পন্সফোর্ড, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার।

১৯৯২ – আইজাক আসিমভ, রুশ লেখক ও শিক্ষাবিদ।

১৯৯৪ – (ক) প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি নাট্যকার, পরিচালক ও অভিনেতা শেখর চট্টোপাধ্যায়।

(খ) রুয়ান্ডার ব্যাংকার, রাজনীতিবিদ ও ৩য় প্রেসিডেন্ট জুভেনাল হাব্যারিমানা।

১৮২৯ – নরওয়েজিয়ান গণিতবিদ ও তাত্তিক নিল্স হেনরিক আবেল।

১৮৮৩ – ব্রাজিলিয়ান কবি, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ হোজে বনিফাসিও দে আন্দ্রাদা।

১৮৯২ – নিল্‌স হেনরিক আবেল, নরওয়েজীয় গণিতবিদ।

১৫২০ – রাফায়েল, চিত্রশিল্পের রেনেসাঁস যুগের অন্যতম প্রধান শিল্পী।

১৫২৮ – আলব্রেখট ড্যুরার, জার্মান চিত্রকর, খোদকার ও গণিতবিদ।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
কবিতা রিভিউ

উপেক্ষিত ভাষাশহীদ : শুভঙ্কর দাস।

২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস।আন্তর্জাতিক ও আন্তরিক আলোর।
এই সূর্যস্মরণীয় দিনটির জন্য এ-ই মানুষটির অবদান অতুলনীয়। অথচ ভাষাদিবসের প্রেক্ষাপটে তাঁর কথা খুবই কম শোনা যায়,কম উচ্চারিত হতে দেখা যায় এবং কোনো সৃজনকর্ম তাঁকে নিয়ে রচিত হয় না!
কেন?
১৯ মার্চ প্রবল শক্তিশালী ও সর্বপ্রধান মহম্মদ আলি জিন্না ঢাকায় এসে চেঁচিয়ে উঠলেন,উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।তাঁর মুখের ওপর যাঁরা প্রতিবাদ করতে দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন,তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।
ধীরেন্দ্রনাথের যুক্তি ছিল,দেশের ছয় কোটি নব্বই লক্ষ নাগরিকের মধ্যে চার কোটি চল্লিশ লক্ষ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,অতএব বাংলাই হোক রাষ্ট্রভাষা।
কিন্তু মুসলিম লিগ তা খারিজ করে দেয়,তার কারণ সহজেই অনুমেয়।
সেই মহান ভাষাসৈনিককে এর জন্য মারাত্মক মূল্য চোকাতে হয়েছিল।১৯৭১ সালে পাকসেনারা অশীতিপর সমাজকর্মী ধীরেন্দ্রনাথকে কুমিল্লার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ময়নামতী ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
বাহান্নর ভাষা আন্দোলন শুধু মাতৃভাষার রক্ষা করেনি,একটা দেশের জন্ম দিয়েছল,সেই দেশের জন্মপরতে ধীরেন্দ্রনাথের নাম অবিচ্ছেদ্য।তাঁকে বিস্মৃত হওয়া মানে একটা ভাষাকে,একটা দেশকে অস্বীকার করা।
তাঁকে জানিয়ে অক্ষরের শ্রদ্ধা।

চার কোটি চল্লিশ লক্ষের সিংহাসন

শুভঙ্কর দাস

অক্ষরের কোনো ধর্ম হয়?
মায়ের মুখের ভাষায় কোনো কাঁটা,কোনো উদ্ধত আঙুল,কোনো স্বেচ্ছাচারীর মুর্খামি
কালো কালো রেখায় মাথা তুলতে পারে?

কোনোদিন পারে না,যে মুহূর্তে অর্ধমের অন্ধকার বাংলা বর্ণে মিশিয়ে দেবে,যে মুহূর্তে রক্তচক্ষু মিশিয়ে দেবে আদুরে অক্ষরে,যে মুহূর্তে বন্দুকে বিচার করবে বিবেকের বাণী,সেই মুহূর্তে ধীরেন্দ্রনাথ শুধু উচ্চারণ করবেন,চার কোটি চল্লিশ লক্ষের মুখের ভাষা…

বাংলা,বাংলা এবং শেষ রক্তবিন্দুর সত্য, বাংলা

২১ ফেব্রুয়ারি একটা এমন দেশের নাম,যেখানে মায়ের আঁচলে সত্যিকারের ভুবন আঁকতে নিজের প্রাণ পর্যন্ত তুলে দিতে পারে
তেমন দেশের মাটিতে যদি সিংহাসন গড়ে ওঠে

তাতে হাসিমুখে বসে থাকবেন ধীরেন্দ্রনাথ।

—————-//———————-
২৯ মার্চ,২০২৩

Share This
Categories
রিভিউ

কবিতার সর্বস্ব ও কবির সর্বনাশ ::: শুভঙ্কর দাস।।।

‘কবিতা’ কথাটি উচ্চারণ করার আগে
অন্তত একটি এমন কবিতা পড়ুন,যাতে আপনার মনে হতে পারে,আয়না শুধু কাচের নয়,অক্ষরেরও হয়!
‘কবিতা’ নিয়ে কণামাত্র মতামত প্রকাশের আগে
অন্তত একজন কবির কথা আত্মজীবনীর মতো জানুন
যাতে আপনার মনে হতে পারে
আত্মীয়স্বজন বলতে শুধু রক্তের সম্বন্ধ বোঝায় না!

এই কবিতার মতো দেখতে সাজানো কথাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়াপদ ‘পড়ুন’।
অর্থাৎ পড়া।
এই পড়ার লোকের খুবই অভাব।
রক্তাল্পতার মতো পাঠকাল্পতার রোগে ভুগছে বাংলা কাব্য-কবিতা।
কবি জীবনানন্দ দাশ ইংরেজি সাহিত্যের পড়ুয়া শিক্ষক এবং বাংলা কবিতার মনন নক্ষত্রের প্রধান। তিনি যেমন শিরোধার্য রবীন্দ্রনাথের লেখা আত্মস্থ করার চেষ্টা করতেন,তেমনি সমসময়ের বন্ধুবর্গের লেখাও, যেমন দিনেশ দাসের লেখাও পড়তেন এবং পড়ার মতো পড়ে,সেই সব কবিতার মননশীল আলোচনা বা মতামত ব্যক্ত করতেন।
অনেকেই জানেন না,কবি জীবনানন্দ কবিতা চর্চার জীবনে কবি দীনেশ দাসের মুগ্ধ পাঠক এবং আলোচক। দীনেশ দাসকে চেনেন তো?
সেই যে যিনি লেখেন

” বাইরে অদূরে
থান-কাপড়ের মতো একটি পবিত্র দিন শুকায় রোদ্দুরে।”

অথবা

“তোমার পায়ের পাতা সবখানে পাতা
কোনখানে রাখব প্রণাম!”

অথবা

“বাঁকানো চাঁদের সাদা ফালাটি
তুমি বুঝি খুব ভালোবাসতে?
চাঁদের শতক আজ নহে তো
এ যুগের চাঁদ হল কাস্তে!”

যাক! এবার মনে পড়বেই।

একটি জায়গায় জীবনানন্দ কবি দীনেশ দাসের কবিতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলেন,এখন বুঝতে পারি,কবিতা শুধু যে শিল্পকুশলতার নয়, আরোও ওপরের জিনিস।
পাঠক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
শান্তিনিকেতনে কেউ যদি দুটি শব্দ লিখে পোস্টকার্ডও পাঠাতেন,রবীন্দ্রনাথ তাও পড়তেন।
প্রমথ চৌধুরী পড়ার জন্য গ্রন্থকীট বলে উপহাসের পাত্র হয়েছিলেন অথচ সেই পড়ার গুণে তিনি বঙ্গসাহিত্যের একজন শ্রেষ্ঠ গদ্যকার হতে পেরেছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দ মাত্র উনচল্লিশ আয়ুর সময়কালে যা পড়েছেন,তা একজন মানুষ শতায়ু জীবনে পারবে না!
সৈয়দ মুজতবা আলি তো গ্রন্থকেই জীবনের দরজা-জানালা এবং সোপান করেছিলেন।
বুদ্ধদেব বসু তো কবিতার ওপর ভবন ও ভুবন নির্মাণ করেছিলেন!
তারপর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সবাই লেখার পরিমাণ মাপতে ব্যস্ত,তাঁর সেই সময় বা প্রথম আলো উপন্যাসের সহকারী গ্রন্থসূচি তালিকা নিয়ে দুই ফর্মারই বই হয়ে যেতে পারে!
মোদ্দা কথা, সেই সব পাঠকধন্য সোনালি দিন কোথায় গেল!
কবিতার বইয়ের পাঠক কোথায়?
ক’জন গাঁটের কড়ি খরচ করে কবিতার বই কেনেন?
সর্বনাশ! কেনার কথা বলে ফেললাম, হা হরি! হায় আল্লা!
কোনো কবিতার বই প্রকাশের পর যদি পঞ্চাশজনকে বিতরণ স্টাইলে দেওয়া হয়,তাহলে দেড়জন মাত্র মতামত জানান,যদি সেই কবি অতিব সৌভাগ্যবান হন।
তারপর যদি সরকারি বা বেসরকারি ডাকযোগে কবিতার বই পাঠান,তাহলে তো কথাই নেই,ডাক নিশ্চিতভাবে পৌঁছে যাওয়ার দিন অতিক্রম করে কবি যদি ফোন করে জানতে চান,কবিতার বইটি পেয়েছেন? তাতে ফোনের অপর প্রান্তের উত্তর আসবে,আপনি কী পাঠিয়েছিলেন?আসলে এতো বইপত্র আসে,বুঝতে পারছি না! আচ্ছা, আপনাকে পরে জানাচ্ছি!
ব্যাস ফোনটা কেটে যাবে এবং এই ‘পরে জানাচ্ছি’ আর কোনোদিন ফিরবে না।
এই এতো কথার সার কথা এই,কবিতা পড়ুন এবং কবিতাই আপনাকে অনুভবের সঠিক পথ দেখাবে।
প্রশ্ন উঠবে, কবিতাই কেন?
সহজ উত্তর, কবিতারই মানবমনের সর্বোত্তম নির্যাস।কবিতার চোখ দিয়ে মানুষ এবং তার সম্পর্কের পরম অনুভব ব্যক্ত ও বিস্তার দান করতে পারে।
কবিতা পড়ুন এবং তাকে স্পর্শ করতে পারলে তারপর গদ্য, উপন্যাস, গল্প অথবা গান সবকিছুর অন্তর্নিহিত আলোর কাছে অতি সহজেই পৌঁছাতে পারবেন,শুধু অক্ষর সাধন নয়, আধ্যাত্মিক এবং সংসার সত্যও অনুধাবন করতে পারবেন।
কবিতা পড়ুন এবং পড়ার যোগ্য হয়ে ওঠুন। গভীরভাবে হৃদয়স্থ করতে থাকুন,তারপর ডাক্তারি,ইঞ্জিনিয়ারগিরি,মাস্টারি, ব্যবসায়ী,বিপ্লবী,সাংবাদিক, রাজনীতি,ফুচকা অথবা বেলুন ফাটানো, যা ইচ্ছে করুন।
সবকিছু কবিতার মধ্যে দিয়ে উত্তর এবং উর্বরতা খুঁজে পাবেন।
এটাই সত্য।
ধরুন,আপনি পিতা অথবা মাতা।
কর্মক্ষেত্রের শেষে যখন বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখলেন,সন্তানের জ্বর অথবা তার খাওয়া হয়নি, সেই মুহূর্তে আপনার বুকের বাঁদিক যেই ধক্ করে উঠল,তাই অনুভব।
তাই কবিতার পথ এবং কবিতার প্রকাশ।
এটা আনন্দের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে,সেই একই জিনিস।

অনুভবকে রূপ দেয় চূড়ান্ত কবিতা।
আর একথা সর্বজনগ্রাহ্য সত্যি, অনুভবহীন মানুষ মাত্রই বিপজ্জনক, শুধু বিপজ্জনক নয়,বিশ্বধ্বংসাত্মক।
মনুষ্যত্ব নির্মাণ করতে হলে কবিতা পড়তেই হবে।
যা এই দুঃসময়ে প্রচণ্ড অভাব।

এতো বড় বড় কথার কিছু নেই।
এবার অতি সহজ করে সংক্ষিপ্ত সার।
কবিতা পড়তে হবে।নতুনভাবে।নতুন চোখে।
আপনার পাশে বসে সাহিত্যসভায় যে কবিকে দেখছেন,তাকে সত্যিকারের চিনুন কবিতার মধ্য দিয়ে।
আপনি এতদিন কবিকে দেখেছেন,
সে কালো কি ফর্সা,সে মোটা কি রোগা,সে আমিষ না নিরামিষ, সে বিবাহিত নাকি ডিভোর্সী, সে বাসে ঘুমায় নাকি টিকিট কাটে না! খাওয়ার গপগপ করে খায় নাকি কাকের মতো ছড়ায়,সে বিড়ি ফোঁকে নাকি মদ খায়,সে প্রেম করে নাকি পরকীয়া,সে বহুমূত্র রোগী নাকি উচ্চরক্তচাপ, সে স্কুল মাস্টার নাকি কয়লা খনির শ্রমিক, সে লিটল ম্যাগাজিন করে নাকি ঢাউস ম্যাগাজিন,তার সঙ্গে সুবোধ নাকি জয়ের আলাপ আছে,সে নন্দনে চেঁচায় নাকি গন্ধমাদন তোলে, সে অন্তর্বাস পরে নাকি উলঙ্গ থাকে, এসব স্রেফ ছুঁড়ে ফেলুন,
ছুঁড়ে, মুড়ে এবং এমন নিরাপদ দূরত্ব ফেলুন,যাতে আপনাকে প্রকৃত পাঠক হতে বাধা দিতে না পারে!
এবার মন ও মনন বদলে ফলুন।
এবার কবিতা দিয়ে কবিকে দেখুন, চিনুন এবং বোঝার মতো বুঝুন।
দেখবেন আপনার জগৎ বদল হয়ে গেছে এবং সত্যিকারের জগতে আপনি বসবাস করা শুরু করে দিয়েছেন।
কারণ অনুভব বা চিন্তন

কবির পোশাকে
কবির দাঁতে
কবির হাসিতে
কবির বকবকাকিতে
কবির ফতুয়ায়
কবির চুলে
কবির টাকে
কবির টাকায়
কবির বাজারে ব্যাগে
কবির বউ-এ
কবির বোনে
কবির ফেসবুকে
কবির হোয়াটসঅ্যাপে
কবির সেলফিতে
কবির বইদোকানে মাথা চুলকানোতে
কবির মাইক্রোফোন ধরে হাঁপানোয়
কবির বই প্রকাশে
কবির গালিগালাজে
কবির ধূমপানে
কবির প্রেমিকায় নেই।
নেই।নেই।নেই।একদম নেই।
আছে শুধু কবিতায়।একমাত্র কবিতায়। তাই কবিতা পড়ুন।একথা মফস্বল ও মহানগর সবের ক্ষেত্রে সমান সত্য ও চরম চমৎকার।
কবিতা পড়ুন।
কবিতার মাধ্যমে কবিকে প্রতিষ্ঠা করুন অন্তরে এবং আকাশে….
কিন্তু কাকে বলি? কে যে বোঝে!

২১ শে মার্চ,২০২২. শুভঙ্কর দাস।

Share This
Categories
কবিতা রিভিউ

কবিতার পবিত্রতার ছুঁয়ে : শু ভ ঙ্ক র দা স।

বরিশালে জন্ম হলেও বালকটি বড় হওয়া কলকাতায়…
ইস্কুলের গণ্ডী পেরানোর অনেক আগেই কবিতায় নিমজ্জন। সেইভাব জাগ্রত হল,বরিশালে এক জমিদারের বৈঠকখানায় রবি বর্মার রামায়ণ-মহাভারতের ছবি দেখে,ভাবলেন চিত্রচিল্পী হবেন,কিন্তু ছবি আঁকা শুরু করলেন অক্ষরে…
সহসা মা মারা গেলেন।
বালকটি অসহায়,নিঃসঙ্গ এবং উদাস।
লিখলেন প্রথম কবিতা,মাকে নিয়ে,লিখে টাঙিয়ে রাখলেন দরজার পাশেই…
বরিশাল থেকে মাসির হাত ধরে মহানগরের পথে..
প্রচন্ড দারিদ্র্য এবং অসংখ্যবার বাসাবদল।
এর মধ্যে সেই বালক বড় হতে লাগলেন এবং মনেপ্রাণে এই বিশ্বাস প্রোথিত হল,কবিতার জন্য তাঁর জন্মগ্রহণ।
টিউশনির টাকায় পত্রিকা প্রকাশ।
নাম, কবিপত্র।
যেটি পরে সাহিত্যপত্রের ইতিহাস সৃষ্টি করে।
বাষট্টির বছর ধরে প্রকাশ হয়ে আসছিল। এক বিরাট বিস্ময়!
দেখা হল,বিষ্ণু দে,সুভাষ মুখোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাম বসু,নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে..
আলাপ হল,প্রেরণা ও উৎসাহে পেলেন এক নতুন শক্তি।
তারপর মনে হল, কবিতার বই বের করতে হবে।
পান্ডুলিপি তৈরি হল,নাম দিলেন,’দর্পণে অনেক মুখ’।
কিন্তু ছাপতে কে? টাকা কোথায়?
কবির কী অবস্থা!
নিজে ভালো করে কবি খেতেই পান না!অন্য লোকের কাছে আশ্রিত।
অথচ তাঁর ধ্যানজ্ঞান,কবিতার বই বের করবেন।
এক বন্ধু কবিতা পড়ে বলল,আমি টাকা দেবো।
কবিযুবক ছুটলেন সিগনেটের কর্ণধার দিলীপ গুপ্তের কাছে।
প্রচ্ছদ আঁকলেন,পূর্ণেন্দু পত্রী।
সেই শুরু, আবির্ভাব হল এক নতুন কবিপুরুষের…
তিনি পবিত্র মুখোপাধ্যায়।
তিনি তো লিখতে পারেন—

“অনন্তকাল কেউ বেঁচে থাকবে না
খড়কুটোর রহস্য বেরিয়ে পড়বার আগেই
আমি
খুলে ফেললাম আনুগত্যের দস্তানা
হেলমেটের সবুজ ঢালুপথের ওপর দাঁড়িয়ে পড়লো সূর্য
আমি রেকাবে পা রাখলাম রেকাবে রাখলাম পা
রেকাবে”

কী আশ্চর্য!
কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায় সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে পা রাখার ভুলে পড়ে যান,তারপর হাসপাতালে..
তারপর অশেষ কবিতার যাত্রায়..

অলংকরণ। ভগীরথ সর্দার।।

Share This
Categories
কবিতা রিভিউ

ঈশ্বরী পাটনির সন্ধানে; দুই : শুভঙ্কর দাস।

ঈশ্বরী পাটনির সন্ধানে। দুই

প্রতিটি পদক্ষেপে ব্যর্থতা।
ছাত্রজীবনে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ফেল।
আবার চেষ্টা, আবার ফেল।
ক্রমাগত কয়েকবারের চেষ্টায় উত্তীর্ণ।
বি.এ. পরীক্ষা দেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে,কিন্তু পরীক্ষা ভালো দেননি বলে,অনার্স টিকল না।
বিলেত গেলেন আইসিএস হবেন বলে,সেখানেও ব্যর্থ।
নিজের ব্যর্থতা নিয়ে রসিকতা করে বলতেন,I came out first in the unsuccessful list’
বিলেতে গেছিলেন আইসিএস হতে কিন্তু ফিরে এলেন ব্যারিস্টার হয়ে।
কলকাতায় ফিরলেন ১৮৯৩ সালে,আবার ব্যর্থ।পসার জমাতে।
এদিকে মারাত্মক বিপদ।পিতার মৃত্যু। এবং বিপুল ঋণের বোঝা পুত্রের কাঁধে।
আদালত তাঁদের পরিবারকে দেউলিয়া ঘোষণা করলেন।
কী করবেন?
শুরু করলেন পড়াশোনা। নানা ধরণের বই পড়তে লাগলেন।বেশি পড়লেন কবিতা।
লিখে ফেললেন কাব্যগ্রন্থ ‘মালঞ্চ’। পাঠকসমাজ পেল নতুন কবি।
সেই সঙ্গে সম্পাদনা করছেন সাহিত্যের পত্রিকা।
তারপর সহসা অলৌকিকভাবে হাতে আসে আলিপুর বোমার মামলা।জয়লাভ করলেন।রক্ষা করলেন ঋষি অরবিন্দকে।
ব্যাস,সেই শুরু, একজন মহামানবের পথচলা।
তারপর এমন বিখ্যাত ও প্রভাবশালী আইনজীবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণপুরুষ হয়ে উঠলেন,লোকে তাঁর চোখে দেশ দেখতে শুরু করলেন।
শুধু বিরাট পিতৃঋণ শোধ করেননি,দানে-ধ্যানে-চরিত্রে-কর্মে হয়ে ওঠেন প্রবাদপ্রতিম।
মহাত্মা গান্ধি পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে লড়াই নেমে চোখের জল ফেলে বলে ওঠেন,হমে হারা দিয়া।
সেই যোদ্ধা, কবি, দানসাগর যখন পরলোকগমণ করলেন সারা দেশ মহাশূন্যতায় ডুবে গেছিল।
ডক্টর বিধানচন্দ্র রায় সেই মহামানবের ছবি নিয়ে ছোটেন রবীন্দ্রনাথের কাছে।
আবেদন, এই ছবির ওপর একটা কবিতা লিখে দিতে।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,ডাক্তার, এ তো প্রেসক্রিপশন করা নয় যে,কাগজ ধরলে আর চটপট লেখা হয়ে গেল।
বিধানচন্দ্র জানালেন,তিনি অপেক্ষা করবেন।
অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি।
রবীন্দ্রনাথ লিখে দিলেন,

” এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ
মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।”

আশা করি বুঝতে পারছেন,কার কথা বলছি,দেশবন্ধু।
চিত্তরঞ্জন দাশ।

তাই পড়াশোনা,সত্যিকারের পড়াশোনা, কার জীবন কীভাবে বদলে দেবে,সেটা কেউ জানেন না!
একমাত্র মা সরস্বতী ছাড়া!

শুভঙ্কর দাস। ০৬/০৭/২০২২

Share This
Categories
কবিতা রিভিউ

মৌরিফুলের কবির সুঘ্রাণ ও সৌন্দর্য : শু ভ ঙ্ক র দা স।

“ধুস,তাই কি কখনো হয়
রৌদ্রের সাথে বৃষ্টির পরিণয়”

এই অসামান্য আলোকময় প্রেমের কবিতাটি মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা।
এবং হ্যাঁ,এই চরণগুচ্ছের মধ্যে একটি শব্দ ‘ধুস’ এর জন্য মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়কে আমার প্রিয়তর কবি করেছে,প্রেমের কবি করেছে এবং আটপৌরে জীবনের সংবেদনশীল রচনাকার করেছে।
এক হাজার চরণের মহাকাব্যের পাশে এই দুটি চরণ সমানভাবে বসতে পারে,সসম্মানে এবং সাধনায়…
এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত।
কিন্তু আমরা কজন কবি মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়কে চিনি?
কজন তাঁর কবিতা পড়েছি?
কজন তাঁর সাধারণ, অতি সাধারণ জীবনযাত্রার মধ্যে এইসব অসামান্য অনুভবের কবিতা সৃষ্টির কাহিনি জানি!
জানি না!
তখন মল্লিনাথ নিজেই বলেন চায়ের বৈঠকী মজলিসি মুগ্ধতায়,

“চালচুলোহীন মানুষের কিছু কথা থাকে,কিছু প্রশ্ন থাকে।
কোনো কোনো গাঢ় দুপুরের আলোয় সে সব কথা
উথালিপাথালি ওড়ে
বানপুকুরের পাড় ধরে উড়ে যায় খাটপুকুরের দিকে
কোনোদিন তারা পাক খায় শহরের এমাথা ওমাথা
তারপর ফিরে আসে
ভিতরের ঘরে
এখানে চালও নেই, চুলোও নেই, সেখানে শুধুই
সে আর তার কিছু কথা,কিছু স্বপ্ন হামাগুড়ি
দিয়ে এপাশ ওপাশ করে”

হ্যাঁ,কবিতায় যে শহরের কথা বলা হয়েছে, তা হল পূর্ব মেদিনীপুরের ঐতিহাসিক শহর তাম্রলিপ্ত। এইখানে মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায় কবিতার বন্দর, মনের মালপত্র এইখানেই হিউয়েং সাংএর হাতে সঁপে দেবেন বলে ঘুরে বেড়ান সাদা পাজামা আর ফতুয়া পরে…
দিনরাত, রাতদিন।

আচ্ছা এই মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায় বললেন,কিছু কথা, কিছু স্বপ্ন, এইগুলো কেমন করে হামাগুড়ি দিয়ে পাঠকের বুকের মধ্যে সেঁধিয়ে গিয়ে তুমুল বেগে দৌড়াদৌড়ি করছে, একটু দেখে নিই,

এক

“বহু পুরাতন পয়ারের গায়ে যেখানে পড়েছে ধুলো
দিন শেষ করে সবে সাঁঝবেলা তরুণ সেখানে শুনলো”

দুই

“এমন করেই দিন কেটে যায়,উদাস হাওয়ায়
একলা একা বাঁচতে হবে তীব্র চাওয়ায়।’

তিন

” সহজ ছিল না আস্থা রাখা অপরিসীমে
তাই একা একা ভিজেছি হিমে ”

চার

“নদীর জলে নৌকা ভাসে
চোখের জলে তুমি
বুকের ভিতর বাড়ছে ব্যথার
নিবিড় মরুভূমি ”

পাঁচ

“রৌদ্র গন্ধ মেখে শুয়ে আছে নিঃসঙ্গ বিছানা
কেউ নেই তার বুকে আদরে সোহাগে
সে একা শুয়ে আছে একার ভিতরে”

আহ্ কী জ্যোৎস্নাধৌত অনুভব,” সে একা শুয়ে আছে একার ভিতরে ”
এ যেন কবি মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নিজের আয়না।তাই কবিকে অনায়াসে মৌরিফুলের কবি বলা যায়,মৌরিফুল যেমন সুগন্ধি ও সুস্বাদে ফুটে থাকে ছোট্ট ছোট্ট মাটিজুড়ে,তেমনই মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা সেইরকম মন ও মননের মাটি জুড়ে বিন্দু বিন্দু বোধশব্দ হয়ে জেগে থাকে।
তাই তিনি মৌরিফুলের কবি।
এমন একজন প্রেমের গভীরতা ও পেয় হয়ে ওঠানো অক্ষরকর্মীকে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত বলেন

“আমার বন্ধু মল্লিনাথ মরিয়া জীবনযুদ্ধে সেই কিশোর বয়স থেকে সে লিখ চলেছে।এমনকি নিজের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে,চারিদিকে তাকিয়ে ”

কবি শ্যামলকান্তি দাশ বলেন,

“শত দুঃখের মধ্যেও কবিতা থেকে মল্লিনাথ সরে যায়নি।অনেক উৎকৃষ্ট কবিতা লিখেছে সে।কবিতাই এখন হয়তো তার সহায়,সম্বল।একমাত্র আশ্রয়। ”

কবি সত্যপ্রিয় মুখোপাধ্যায় লিখলেন,

“প্রায় ৪৫ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন কবিতা লিখে চলছেন মল্লিনাথ। গৃহশিক্ষকতার সামান্য অর্থকে সম্বল করে শুধু কবিতাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থেকেছেন।কলেজ জীবনে এক সহপাঠিনীর প্রেমে ভেসে গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধ বাবা ও অবিবাহিতা বোনকে নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিলেন,সেও কবিতাকে ভালোবাসেই”

সহদেব প্রধান শ্রদ্ধার সঙ্গে লিখেছেন,

“সমস্ত উচ্চাশা লোভ খ্যাতি সংবরণ করে শুধু কবিতার জন্য দারিদ্র্যের কণ্টকাকীর্ণ রুগ্ন অথচ মর্যাদার পথ বেছে নেওয়া,এ লড়াইটা সবাই লড়তে পারে না,তাই সাধারণ হয়েও কবি মল্লিনাথ অসাধারণ। ”

তাই বোধহয় মৌরিফুলের কবি মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায় এভাবে লিখতে পারবেন,

“তুমি তো কতই সহজে
গিয়েছ ভুলে
নির্জন সেই হঠাৎ প্রেমের হাওয়া
তোমাকে সাজানো
অনামা রঙিন ফুলে
সারাটা দুপুর, তোমাকেই শুধু চাওয়া।”

এখন যদি আমরা এই রকম মৌরিফুলের কবির সুগন্ধি ও সৌন্দর্য না চিনতে শিখি, না বুঝতে শিখি,তাহলে আমাদের প্রেমে পড়ার অর্থ কী?
আমাদের ভালোবাসা প্রকাশের অন্ধত্ব ও অন্ধকার দূর হবে কী করে?
আপনি যা ভেবেছেন,প্রেমের প্রতি, নিজের প্রেমিকার প্রতি,আবার অপরদিকের ক্ষেত্রেও তাই সত্য, তা কিন্তু অর্ধ,অসম্পূর্ণ এবং অবয়বহীন।
তাকে সুন্দর ও সাবলীল করতে হলে প্রেমের কবিতা পড়তে হবে এবং অবশ্যই মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পড়তে হবে।
আপনি কবিতা চর্চা করেন,আপনাকে আরও বেশি করে পড়তে হবে। হবেই।
তাহলে মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি মৌরিফুলের কবি তাঁকে পাবেন কীভাবে?
একটা উপায়,আপনি সোজা তমুলক চলে যান,সেখানে মাতা বর্গভীমার দর্শন করে রাস্তায় যাকে হোক জিজ্ঞেস করবেন, মৌরিফুলের কবিকে কোথায় পাওয়া যাবে?
কেউ না কেউ বলেই দেবেন।
আপনি দেখা করে নেবেন,কবিতাও শুনে নেবেন।
তারপর হয়তো আপনি সরাসরি কবি মল্লিনাথকেই না চিনেই জিজ্ঞেস করে বসলেন, তখন উত্তর একটু দেরিতে পাবেন।
তার কারণ আমি ভাঙব না!
আপনি নিজে অনুসন্ধান করুন।
উপায় দুই, একজন নবীন কবি আছেন,তাঁর নাম অরিন্দম প্রধান,নাটক তাঁর প্যাসন,কবিতা তাঁর প্রাণ। তিনি আবার সম্পর্কের কবিতায় অসাধারণ অনুভাবী, তিনি একটি দরজা তৈরি করেছেন।
তাঁর কাছে গিয়ে সবিনয়ে বলুন,কবিবর, একটু মৌরিফুলের কবির দরজাটা খুলে দেবেন?
অবশ্যই খুলে দেবেন,কারণ অরিন্দম প্রধান নিজেই তো মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে লিখেছেন,

“হে প্রেম,ক্ষুধা নিবৃত্ত করো
ছাইটুকু ফেলে দিয়ে শুষে নাও শব্দের হাড়
মানুষ আগুন ধরানো এক ঋতু পাখি
রঙের ঝোলা
পুড়ে যাওয়া প্রেম থেকে বেরিয়ে আসে
জীবনের সুতো ”
সেই সময়
আপনি সরাসরি মল্লিনাথে প্রবেশ করতে পারবেন এবং মল্লিনাথ সঙ্গে সঙ্গে মৌরিফুলের মতো বলে উঠবেন,

“দৃশ্যত তোমার মুখোমুখি হই না
অথচ
আমাদের দেখা শোনা হচ্ছে প্রতিদিন ”

—————————-//———————–

নির্জন কবি মল্লিনাথ
সম্পাদনা। অরিন্দম প্রধান
প্রচ্ছদ। অঙ্কন মাইতি
প্রকাশ। লিপি
মূল্য। ২৫০ টাকা

ওহ্ একটা কথা বলার ছিল,এটা ঠিক আলোচনা নয়,যাঁরা মৌরিফুলের কবির কোনোদিন ছবি দেখেন অথবা সামনাসামনি হননি,তিনি অনায়াসে কবি ও শিল্পী অঙ্কন মাইতির অপূর্ব আলো দিয়ে আঁকা ছবিটি দেখুন,মুগ্ধ হবেনই।
লিপি প্রকাশনার কর্ণধার কবি গৌতম ভট্টাচার্য এতো মনোহর মুদ্রণ ও অসাধারণ প্রোডাকশন করেছে যে,মল্লিনাথ নামক মৌরিফুলের কবির ঘ্রান ও ঘনত্ব ধারণা করতে কোনোরূপ কষ্ট ও কাঠিন্য মনে হয় না!

Share This