Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস কি, কেন পালিত হয় জানুন।

ভূমিকা—-

 

 

বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস হল একটি বার্ষিক ইভেন্ট যেখানে ৮০টিরও বেশি দেশ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিমাপের প্রভাব উদযাপন করে। মেট্রোলজিতে আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সূচনা, ২০ মে ১৮৭৫-এ মিটার কনভেনশনে স্বাক্ষর করার স্বীকৃতিস্বরূপ এই তারিখটি বেছে নেওয়া হয়েছিল।  প্রতি বছর বিশ্ব মেট্রোলজি দিবসটি মেট্রোলজির জন্য দায়ী জাতীয় সংস্থাগুলির অংশগ্রহণে ইন্টারন্যাশনাল ব্যুরো অফ ওয়েটস অ্যান্ড মেজারস (BIPM) এবং ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ লিগ্যাল মেট্রোলজি (OIML) দ্বারা যৌথভাবে সংগঠিত এবং উদযাপন করা হয়।
আন্তর্জাতিক মেট্রোলজি সম্প্রদায় যা বিশ্বব্যাপী সঠিক পরিমাপ করা যায় তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে প্রতিটি বিশ্ব মেট্রোলজি দিবসে একটি পোস্টার ক্যাম্পেইন এবং ওয়েব সাইটের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করে।  পূর্ববর্তী থিমগুলিতে বৈশ্বিক শক্তি চ্যালেঞ্জের পরিমাপ, সুরক্ষার জন্য, উদ্ভাবনের জন্য এবং খেলাধুলা, পরিবেশ, ওষুধ এবং বাণিজ্যের পরিমাপের মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আজ শনিবার (২০ মে) বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস। ওজন ও পরিমাপ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। বিশ্ব মেট্রোলজি দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘পরিমাপ বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার সহায়ক’।

 

উদ্দেশ্য—–

 

পণ্য ও সেবার মান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সকল ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাপ সময়েরই দাবী। ভোক্তা সাধারণের সঠিক প্রাপ্য নিশ্চিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির পরিমাপে গুরুত্ব দেওয়া বাঞ্ছনীয়। তাই ওজন ও পরিমাপ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রতিবছর ২০ মে বিশ্বব্যাপি এ দিবসটি পালন করা হয়।

 

ইতিহাস—–

 

বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস হল ১৮৭৫ সালের ২০ মে সতেরোটি দেশের প্রতিনিধিদের দ্বারা মিটার কনভেনশনের স্বাক্ষরের একটি বার্ষিক উদযাপন।   আন্তর্জাতিক মেট্রোলজি দিবস প্রকল্পটি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ লিগাল মেট্রোলজি (OIML) এবং ব্যুরো ইন্টারন্যাশনাল দেশ পোয়েডস এট মেসার্স (BIPM) দ্বারা যৌথভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। কনভেনশন পরিমাপের বিজ্ঞানে এবং এর শিল্প, বাণিজ্যিক এবং সামাজিক প্রয়োগগুলিতে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার জন্য কাঠামো সেট করে।  মিটার কনভেনশনের মূল লক্ষ্য – পরিমাপের বিশ্বব্যাপী অভিন্নতা – ১৮৭৫ সালের মতোই আজও গুরুত্বপূর্ণ!

 

ওআইএমএল (OIML) সম্পর্কে—-

 

১৯৫৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ লিগ্যাল মেট্রোলজি (OIML) একটি আন্তঃসরকারি চুক্তি সংস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যাতে OIML-এর সচিবালয় এবং সদর দপ্তর হিসাবে ব্যুরো ইন্টারন্যাশনাল ডি মেট্রোলজি লেগালে (BIML) এর সাথে আইনি মেট্রোলজি পদ্ধতির বৈশ্বিক সমন্বয়ের প্রচার করা হয়।  সেই সময় থেকে, OIML একটি বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত কাঠামো তৈরি করেছে যার প্রাথমিক লক্ষ্য হল জাতীয় মেট্রোলজিক্যাল পরিষেবা, বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির দ্বারা প্রয়োগ করা প্রবিধান এবং মেট্রোলজিকাল নিয়ন্ত্রণগুলিকে সামঞ্জস্য করা।

 

বিআইপিএম সম্পর্কে—-

 

১৮৭৫ সালে মিটার কনভেনশন স্বাক্ষরের ফলে বিআইপিএম তৈরি হয় এবং প্রথমবারের মতো মেট্রোলজিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আনুষ্ঠানিকতা হয়।  কনভেনশনটি আন্তর্জাতিক ওজন ও পরিমাপের ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করেছে এবং আমাদের প্রচেষ্টার সমস্ত দিকগুলিতে পরিমাপের বিশ্বব্যাপী অভিন্নতার ভিত্তি স্থাপন করেছে, ঐতিহাসিকভাবে শিল্প ও বাণিজ্যের উপর ফোকাস এবং সহায়তা করছে, কিন্তু আজকে আমরা ২১ শতকের বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।  যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য এবং শক্তি।  BIPM ভৌত এবং রাসায়নিক পরিমাণের একটি নির্বাচিত সেটে সর্বোচ্চ স্তরে বৈজ্ঞানিক কাজ করে।  BIPM হল ন্যাশনাল মেট্রোলজি ইনস্টিটিউটের (NMIs) একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কের হাব যা জাতীয় স্বীকৃত ল্যাবরেটরি এবং শিল্পে SI-এর সন্ধানযোগ্যতার শৃঙ্খল উপলব্ধি ও প্রচার করে চলেছে।

 

প্রজন্ম জুড়ে আবহাওয়া, জলবায়ু এবং জলের ভবিষ্যত, ২৩ মার্চ ২০২৩

 

২০ মে হল বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস, যা ১৮৭৫ সালে মিটার কনভেনশন স্বাক্ষরের বার্ষিকীকে স্মরণ করে। এই চুক্তিটি একটি বিশ্বব্যাপী সুসংগত পরিমাপ ব্যবস্থার ভিত্তি প্রদান করে যা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং উদ্ভাবন, শিল্প উত্পাদন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উন্নতির পাশাপাশি  জীবনের মান এবং বিশ্বব্যাপী পরিবেশের সুরক্ষা।
বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস ২০২৩-এর থিম হল বিশ্বব্যাপী খাদ্য ব্যবস্থাকে সমর্থনকারী পরিমাপ।  এই থিমটি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের কারণে এবং বিশ্বে খাদ্যের বৈশ্বিক বিতরণের কারণে বেছে নেওয়া হয়েছিল যার জনসংখ্যা ২০২২ সালের শেষে ৮ বিলিয়নে পৌঁছেছে।
বিশ্বজুড়ে, জাতীয় মেট্রোলজি ইনস্টিটিউটগুলি পরিমাপের প্রয়োজনীয় স্তরে নতুন পরিমাপ কৌশলগুলি বিকাশ এবং যাচাই করে পরিমাপ বিজ্ঞানকে ক্রমাগত অগ্রসর করে।  জাতীয় মেট্রোলজি ইনস্টিটিউটগুলি বিশ্বব্যাপী পরিমাপের ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে ব্যুরো ইন্টারন্যাশনাল ডেস পয়েডস এট মেসুরস (BIPM) দ্বারা সমন্বিত পরিমাপ তুলনাতে অংশগ্রহণ করে।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ লিগ্যাল মেট্রোলজি (OIML) আন্তর্জাতিক সুপারিশগুলি তৈরি করে, যার লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তাগুলিকে সারিবদ্ধ করা এবং সামঞ্জস্য করা।  OIML এছাড়াও OIML সার্টিফিকেশন সিস্টেম (OIML-CS) পরিচালনা করে যা আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং নিয়ন্ত্রিত পরিমাপ যন্ত্রের বৈশ্বিক বাণিজ্য সহজতর করে।
এই আন্তর্জাতিক মেট্রোলজি সিস্টেমগুলি প্রয়োজনীয় নিশ্চয়তা এবং আত্মবিশ্বাস প্রদান করে যে পরিমাপ সঠিক, আজকের বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য একটি সঠিক ভিত্তি প্রদান করে এবং আগামীকালের চ্যালেঞ্জগুলির জন্য আমাদের প্রস্তুত করতে সহায়তা করে।
বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস সারা বছর ধরে আন্তঃসরকারি এবং জাতীয় মেট্রোলজি সংস্থা এবং ইনস্টিটিউটে কাজ করে এমন সমস্ত লোকের অবদানকে স্বীকৃতি দেয় এবং উদযাপন করে।

 

২০২৩ ভারতে বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস (ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক)—-

 

ভারত সরকারের ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক ২০শে মে ২০২৩ বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস পালন করবে।  এই উল্লেখযোগ্য উপলক্ষটি একটি অনলাইন ইভেন্ট দ্বারা চিহ্নিত করা হবে যা বৈজ্ঞানিক এবং আইনি পরিমাপবিদ্যা নীতির মাধ্যমে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে বর্তমান এবং আসন্ন প্রকল্পগুলিতে ফোকাস করে৷
ওয়েবিনারটি জাতীয় মেট্রোলজি সিস্টেমের বর্তমান অত্যাধুনিক মূল্যায়নের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মেডিকেল ডায়াগনস্টিকস, ফুড ইন্ডাস্ট্রি এবং রেডিয়েশন মেট্রোলজির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করার একটি চমৎকার সুযোগ প্রদান করবে।  অতিরিক্তভাবে, অংশগ্রহণকারীদের অন্য কৌশলগত বিষয়গুলি অন্বেষণ করতে উত্সাহিত করা হবে, যার মধ্যে একটি আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে আইনি মেট্রোলজির ভূমিকা এবং টাইম মেট্রোলজিতে স্যাটেলাইট নেভিগেশনের তাত্পর্য রয়েছে৷

 

থিম—

সাম্প্রতিক বছরগুলির কয়েকটি থিম নীচে রয়েছে:

 

প্রজন্ম জুড়ে আবহাওয়া, জলবায়ু এবং জলের ভবিষ্যত, ২৩ মার্চ ২০২৩

আগাম সতর্কতা এবং প্রাথমিক পদক্ষেপ, ২৩ মার্চ ২০২২

মহাসাগর, আমাদের জলবায়ু এবং আবহাওয়া, ২৩ মার্চ ২০২১

জলবায়ু এবং জল, ২৩ মার্চ ২০২০

সূর্য, পৃথিবী এবং আবহাওয়া, ২৩ মার্চ ২০১৯

আবহাওয়া-তৈরি, জলবায়ু-স্মার্ট, ২৩ মার্চ ২০১৮

মেঘ বোঝা, ২৩ মার্চ ২০১৭

গরম, শুষ্ক, ভেজা – ভবিষ্যতের মুখোমুখি, ২৩ মার্চ ২০১৬

জলবায়ু কর্মের জন্য জলবায়ু জ্ঞান, ২৩ মার্চ ২০১৫

আবহাওয়া এবং জলবায়ু: আকর্ষক যুব, ২৩ মার্চ ২০১৪

জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করা: ওয়ার্ল্ড ওয়েদার ওয়াচের ৫০ বছর উদযাপন, ২৩ মার্চ ২০১৩

আবহাওয়া, জলবায়ু এবং জল দিয়ে আমাদের ভবিষ্যতকে শক্তিশালী করা, ২৩ মার্চ ২০১২

আপনার জন্য জলবায়ু, ২৩ মার্চ ২০১১

আপনার নিরাপত্তা এবং সুস্থতার জন্য 60 বছরের পরিষেবা (২০১০)

আবহাওয়া, জলবায়ু এবং বায়ু আমরা শ্বাস নিই (২০০৯)

একটি ভাল ভবিষ্যতের জন্য আমাদের গ্রহ পর্যবেক্ষণ করা (২০০৮)

পোলার মেটিওরোলজি: আন্ডারস্ট্যান্ডিং গ্লোবাল ইমপ্যাক্টস (২০০৭)

প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ এবং প্রশমন (২০০৬)

আবহাওয়া, জলবায়ু, জল এবং টেকসই উন্নয়ন (২০০৫)

তথ্য যুগে আবহাওয়া, জলবায়ু, জল (২০০৪)

আমাদের ভবিষ্যতের জলবায়ু (২০০৩)

 

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য–

 

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ লিগাল মেট্রোলজি সদর দপ্তর: প্যারিস, ফ্রান্স।

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ লিগাল মেট্রোলজি প্রতিষ্ঠিত: ১৯৫৫।

 

।।তথ্য ঋণ  : অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও ইন্টারনেট।।

 

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

১৯শে মে বাংলা ভাষা অন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি : দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

আজ ১৯শে মে । ১৯৬১ সালের আজকের দিনে বাংলা মাতৃভাষা অন্দোলনে অসম রাজ্যের শিলচরে ১১ জন তরতাজা প্রাণ দিয়েছিলেন ।
প্রথমেই বলে রাখি অসম রাজ্যে দুটি উপত্যকা — একটি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা যেমন গুয়াহাটি ও আশপাশ এলাকা এবং অন্যটি হচ্ছে বরাক উপত্যকা । ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় অসম রাজ্যের অন্তর্গত বাংলাভাষী ভূ-খণ্ড বরাক উপত্যকার মধ্যে রয়েছে করিমগঞ্জ, হইলাকান্দি, বদরপুর, শিলচর প্রভৃতি বাঙালি অধ্যুষিত শহর । দেশ বিভাগের আগে অবিভক্ত সিলেট জেলাসহ এই বরাকের অধিবাসী বাঙালিরাই পুরো আসাম প্রদেশের নেতৃত্ব দিয়েছে । আপনাদের হয় তো মনে থাকবে, অবিভক্ত অসম রাজ্য ভেঙে তৈরি হয় ত্রিপুরা, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশ রাজ্য ।
আসামের বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষার আন্দোলন ছিল আসাম সরকারের অসমীয়া ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে । ১৯৬০-৬১ সালের ঘটনা । তৎকালীন আসাম প্রদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিলো, বাংলাভাষী অধ্যুষিত এই অঞ্চলের সরকারি ভাষা হবে অসমীয়া । বরাক উপত্যকার সাধারণ মানুষ হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে এই সিদ্ধান্তকে ভাল চোখে দেখলেন না । তাই বাংলা ভাষার স্বীকৃতির জন্যে তাঁরা মরণপণ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন । এই গণ আন্দোলনের প্রধান উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটে ১৯৬১ সালের ১৯ মে । সেদিন ১১ জন প্রতিবাদীকে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে আসাম পুলিশ গুলি করে হত্যা করে । সেই আন্দোলনের জেরে শেষপর্যন্ত আসাম সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল । শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তারপর থেকে ১৯শে মে, বাংলা ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হচ্ছে সারা দেশে ।
এবার পেছনের দিকে আসা যাক । আমরা জানি, পাকিস্তান সরকারের উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী ভাষা অন্দোলনের কথা । ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বরকত-সালাম-জব্বারেরা শহিদ হয়েছিলেন বাংলা ভাষার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে । তারপর ধাপে ধাপে বাংলা ভাষার নিরিখে ১৯৭১ সালে জন্ম নিয়েছিল একটি রাষ্ট্র, নাম বাংলাদেশ ।
এবারে আসছি তৎকালীন আসাম রাজ্যের বাঙালী অধ্যুষিত বরাক উপত্যকায় অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য চক্রান্ত প্রসঙ্গে । ১৯৬০ সালের এপ্রিলে আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিতে অসমীয়া ভাষাকে প্রদেশের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার একটি প্রস্তাবের সূচনা হয় । তারপর ১০ অক্টোবর, ১৯৬০ সালের তদানীন্তন আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চলিহা অসমীয়াকে আসামের একমাত্র সরকারী ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেন । যদিও উত্তর করিমগঞ্জ-এর বিধায়ক রণেন্দ্রমোহন দাস এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন । কিন্তু তা সত্ত্বেও ২৪ অক্টোবর প্রস্তাবটি বিধানসভায় গৃহীত হয় ।
তারপর অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরূদ্ধে বরাক উপত্যকার মানুষদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা শুরু হয় । মানুষ প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন । ফলশ্রুতি হিসাবে বরাক উপত্যকার মানুষেরা সরকারের প্রতিবাদ করতে ১৯৬১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কাছাড় গণ সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন । আসাম সরকারের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ১৪ এপ্রিল শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির মানুষেরা সংকল্প দিবস হিসাবে পালন করেন । বরাকের জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য গণ সংগ্রাম পরিষদ ২৪ এপ্রিল দীর্ঘ পদযাত্রা শুরু করেছিল । ২মে শেষ হওয়া এই পদযাত্রাটিতে অংশ নেওয়া অন্দোলনকারিরা প্রায় ২০০ মাইল উপত্যকাটির গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচার চালিয়েছিলেন । পদযাত্রার শেষে সিদ্ধান্ত হয়, ১৯ মে তাঁরা ব্যাপক হরতাল করবেন । ১৯ মে শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে হরতাল ও পিকেটিং শুরু হয় । করিমগঞ্জে আন্দোলনকারীরা সরকারী কার্যালয়, রেলওয়ে স্টেশন, কোর্ট, ইত্যাদিতে পিকেটিং করেন । শিলচরে তারা রেলওয়ে স্টেশনে সত্যাগ্রহ করেছিলেন । বিকেল ৪টার সময়সূচির ট্রেনটির সময় পার হওয়ার পর হরতাল শেষ করার কথা ছিল । ভোর ৫:৪০ এর ট্রেনটির একটিও টিকিট বিক্রি হয়নি । সকালে হরতাল শান্তিপূর্ণ ভাবে অতিবাহিত হয়েছিল । কিন্তু বিকালে স্টেশনে অসম রাইফেল এসে উপস্থিত হয় । বিকেল প্রায় ২:৩৫ নাগাদ স্টেশনে আন্দোলনকারীদেরকে বন্দুক ও লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে । এরপর সাত মিনিটের ভিতর তারা ১৭ রাউণ্ড গুলি আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে চালায় । ন’জন সেদিনই নিহত হয়েছিলেন, দু’জন পরে মারা যান । (নীচে শহীদদের ফটোসহ নাম দেওয়া হলো ) । সবচেয়ে যেটি গুরুত্বপূর্ণ, প্রথম একজন মহিলা ভাষা অন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন, নাম কমলা ভট্টাচার্য ।
সেই আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত আসাম সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল এবং আসাম সরকার বরাক উপত্যকায় বাংলাকে সরকারী ভাষা হিসাবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিল । তারপর সেই ঘটনার পর থেকে ১৯শে মে বাংলা ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে সারা দেশে । উল্লেখ থাকে যে বরাক উপত্যকায় শুধু নয়, পৃথিবীর আপামর বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ ১৯ মে কে বাংলা ভাষা শহীদ দিবস হিসাবে পালন করে আসছে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে । তাই বলা চলে, ১৯৬১ সালের ১৯শে মে বরাক উপত্যকার শিলচরের ভাষা অন্দোলন — বিশ্বের মাতৃভাষা আন্দোলনের অন্যতম দৃষ্টান্ত । (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত)
১৯শে মে ভাষা দিবসের শহীদদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস, জানুন দিনটির গুরুত্ব এবং কেন পালিত হয়।

জাদুঘর এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর সংগ্রহ সংরক্ষিত থাকে। এতে বৈজ্ঞানিক, শৈল্পিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বস্তুগুলো সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হয় এবং তা জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হয়।আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস ২০২৩-এর থিম হল “জাদুঘরের ভবিষ্যত: পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠন।”  দিনটিতে জাদুঘরের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়— যাতে ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং নাগরিকরা তার আপন ঐতিহ্য সম্পর্কে ভাবতে শেখেন।ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামসের আহ্বানে ১৯৭৭ সালে প্রথম বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। সেই থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামস (আইসিওএম)। এ উপমহাদেশে জাদুঘরের ধারণাটি এসেছে ব্রিটিশদের মাধ্যমে। ভারতীয় এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যরা এ অঞ্চলের জাতিতাত্ত্বিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, ভূ-তাত্ত্বিক এবং প্রাণী বিষয়ক নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যাপারে উদ্যোগী হন। লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস, যিনি এশিয়াটিক সোসাইটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন— তিনি কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে জমির ব্যবস্থা করেন। ১৮০৮ সালে সেখানে জাদুঘরের জন্য ভবন নির্মাণ শেষ হয়। এ প্রক্রিয়ায় ১৮১৪ সালে উপমহাদেশের প্রথম জাদুঘর ‘এশিয়াটিক সোসাইটি মিউজিয়াম’-এর জন্ম ও প্রতিষ্ঠা হয়।

 

ইন্টারন্যাশনাল মিউজিয়াম ডে (আইএমডি) হল একটি আন্তর্জাতিক দিন যা প্রতি বছর ১৮ মে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়ামস (আইসিওএম) দ্বারা সমন্বিত হয়।  ইভেন্টটি একটি নির্দিষ্ট থিম হাইলাইট করে যা প্রতি বছর পরিবর্তিত হয় যা একটি প্রাসঙ্গিক থিম বা আন্তর্জাতিকভাবে যাদুঘরের মুখোমুখি সমস্যা প্রতিফলিত করে।  IMD জাদুঘর পেশাদারদের জনসাধারণের সাথে দেখা করার এবং জাদুঘরগুলি যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয় সে সম্পর্কে তাদের সতর্ক করার এবং সমাজের উন্নয়নে যাদুঘরগুলির ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার সুযোগ প্রদান করে৷  এটি যাদুঘরের পেশাদারদের মধ্যে কথোপকথনের প্রচারও করে।

 

ইতিহাস—-

 

প্রথম আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবসটি ১৯৭৭ সালে সংঘটিত হয়েছিল, ICOM দ্বারা সমন্বিত।  “জাদুঘরগুলির সৃজনশীল আকাঙ্খা এবং প্রচেষ্টাকে আরও একীভূত করার এবং তাদের কার্যকলাপের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে” একটি বার্ষিক ইভেন্ট তৈরি করার জন্য ICOM দ্বারা একটি রেজোলিউশন গ্রহণের পরে IMD প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
প্রতি বছর, বিশ্বজুড়ে জাদুঘরগুলির ভূমিকা প্রচারের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে জাদুঘরগুলিকে IMD-এ অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।  তারা বার্ষিক থিম সম্পর্কিত ইভেন্ট এবং কার্যক্রমের মাধ্যমে তা করে।  ইভেন্টের জন্য একটি বার্ষিক থিম প্রথম ১৯৯২ সালে গৃহীত হয়েছিল। ICOM থেকে একটি আন্তর্জাতিক পোস্টার প্রথম ১৯৯৭ সালে তৈরি করা হয়েছিল এবং সেই বছরে ২৮টি দেশ অভিযোজিত হয়েছিল।  ২০০৯ সালে, আইএমডি ৯০ টিরও বেশি দেশে ২০০০০টি জাদুঘরে ইভেন্টের আয়োজনে অংশগ্রহণের জন্য আকর্ষণ করেছিল।  ২০১০ সালে, ৯৮টি দেশ উদযাপনে অংশগ্রহণ করেছিল, ২০১১ সালে ১০০টি দেশ এবং ২০১২ সালে ১২৯টি দেশে ৩০০০০টি জাদুঘর। ২০১১ সালে, অফিসিয়াল IMD পোস্টারটি 37টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল।  ২০১৪ সাল নাগাদ, ১৪০টি দেশের ৩৫০০০টি জাদুঘর IMD-তে অংশ নিচ্ছিল।

 

থিম–

 

২০২৩ – জাদুঘর, স্থায়িত্ব এবং সুস্থতা

২০২২ – দ্য পাওয়ার অফ মিউজিয়াম

২০২১ – জাদুঘরগুলির ভবিষ্যত: পুনরুদ্ধার করুন এবং পুনরায় কল্পনা করুন

২০২০ – সমতার জন্য যাদুঘর: বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি

২০১৯ – সংস্কৃতি কেন্দ্র হিসাবে যাদুঘর: ঐতিহ্যের ভবিষ্যত

২০১৮ – হাইপারসংযুক্ত মিউজিয়াম: নতুন পদ্ধতি, নতুন জনসাধারণ

২০১৭ – জাদুঘর এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ইতিহাস: যাদুঘরে অকথ্য বলা

২০১৬ – জাদুঘর এবং সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপ

২০১৫ – একটি টেকসই সমাজের জন্য জাদুঘর

২০১৪ – মিউজিয়ামের সংগ্রহগুলি সংযোগ তৈরি করে৷

২০১৩ – জাদুঘর (স্মৃতি + সৃজনশীলতা = সামাজিক পরিবর্তন)

২০১২ – পরিবর্তিত বিশ্বে জাদুঘর।  নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন অনুপ্রেরণা

২০১১ – মিউজিয়াম এবং স্মৃতি: বস্তুগুলি আপনার গল্প বলে৷

২০১০ – সামাজিক সম্প্রীতির জন্য যাদুঘর

২০০৯ – জাদুঘর এবং পর্যটন

২০০৮ – সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের এজেন্ট হিসেবে জাদুঘর

২০০৭ – জাদুঘর এবং সর্বজনীন ঐতিহ্য

২০০৬ – জাদুঘর এবং তরুণরা

২০০৫ – সংস্কৃতির সেতুবন্ধন জাদুঘর

২০০৪ – জাদুঘর এবং অধরা ঐতিহ্য (ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ)

২০০৩ – জাদুঘর এবং বন্ধুরা

২০০২ – জাদুঘর এবং বিশ্বায়ন

২০০১ – জাদুঘর: সম্প্রদায় নির্মাণ

২০০০ – সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য যাদুঘর

১৯৯৯ – আবিষ্কারের আনন্দ

১৯৯৮-১৯৯৭ – সাংস্কৃতিক সম্পত্তির অবৈধ ট্রাফিকের বিরুদ্ধে লড়াই

১৯৯৬ – আজকে আগামীকালের জন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে

১৯৯৫ – প্রতিক্রিয়া এবং দায়িত্ব

১৯৯৪ – জাদুঘরে পর্দার আড়ালে

১৯৯৩ – জাদুঘর এবং আদিবাসীরা

১৯৯২ – জাদুঘর এবং পরিবেশ

 

বিশ্বব্যাপী আইকনিক জাদুঘরের তালিকা—

 

ল্যুভর মিউজিয়াম, প্যারিস

স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন, ওয়াশিংটন, ডিসি

ব্রিটিশ মিউজিয়াম, লন্ডন

মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট, নিউ ইয়র্ক

ভ্যাটিকান মিউজিয়াম, ভ্যাটিকান সিটি

অ্যাক্রোপলিস মিউজিয়াম, এথেন্স

জাতীয় প্রাসাদ যাদুঘর, তাইপেই

হারমিটেজ মিউজিয়াম, সেন্ট পিটার্সবার্গ

ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ নৃবিজ্ঞান, মেক্সিকো সিটি

উফিজি গ্যালারি, ফ্লোরেন্স

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সমাজ দিবস, জানুন দিনটির গুরুত্ব এবং কেন পালিত হয়।

বিশ্ব টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সোসাইটি ডে (ডব্লিউটিআইএসডি) এর উদ্দেশ্য হল ইন্টারনেট এবং অন্যান্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) ব্যবহার সমাজ ও অর্থনীতিতে এবং সেইসাথে সেতু করার উপায়গুলি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করা।  ওয়ার্ল্ড টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সোসাইটি দিবস হল একটি আন্তর্জাতিক দিন যা ২০০৬ সালের নভেম্বরে তুরস্কের আন্টালিয়াতে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন প্লেনিপোটেনশিয়ারি কনফারেন্স দ্বারা ঘোষিত হয়, যা প্রতি বছর ১৭ মে পালিত হয়।

 

 ইতিহাস—

 

 বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস–

 

১৮৬৫ সালের ১৭ মে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠার স্মরণে দিনটি আগে ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস’ হিসেবে পরিচিত ছিল। এটি ১৯৭৩ সালে মালাগা-টোরেমোলিনোসে প্লেনিপোটেনশিয়ারি কনফারেন্স দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এই দিনটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারনেট এবং নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে আনা সামাজিক পরিবর্তন সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি করা।  এটি ডিজিটাল বিভাজন কমাতে সাহায্য করাও লক্ষ্য করে।

 

 বিশ্ব তথ্য সমাজ দিবস–

ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন সোসাইটি দিবস ছিল একটি আন্তর্জাতিক দিবস যা ২০০৫ সালে তিউনিস-এ ইনফরমেশন সোসাইটির ওয়ার্ল্ড সামিটের পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজোলিউশন দ্বারা ১৭ মে ঘোষণা করা হয়েছিল।

 

বিশ্ব তথ্য সমাজ দিবস একটি আন্তর্জাতিক দিবস। তিউনিসে অনুষ্ঠিত ২০০৫ তথ্য সমাজের উপর বিশ্ব সম্মেলনের পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত একটি প্রস্তাবনার মাধ্যমে ১৭ মে এই দিবস হিবেসে ঘোষণা করা হয়। দিবসটি পূর্বে ১৭ মে, ১৮৬৫ সালে, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠার স্মৃতিরক্ষা বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৭৩ সালে মালাগা-টরেমোলিনসে অয়োজিত এক পূর্ণক্ষমতাপ্রাপ্ত সম্মেলনে প্রবর্তিত হয়।
এই দিবসের প্রধান প্রতিপাদ্য ইন্টারনেট এবং নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে সঙ্ঘটিত সামাজিক পরিবর্তনের বৈশ্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এছাড়াও ডিজিটাল ডিভাইড হ্রাস করার লক্ষ্যেও কাজ করে থাকে।

 বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সমাজ দিবস–

২০০৬ সালের নভেম্বরে, তুরস্কের আন্টালিয়ায় আইটিইউ প্লেনিপোটেনশিয়ারি কনফারেন্সে ১৭ মে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সোসাইটি দিবস হিসাবে উভয় ঘটনা উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

 

হালনাগাদ রেজোলিউশন ৬৮ সদস্য রাষ্ট্র এবং সেক্টর সদস্যদের প্রতি বছর উপযুক্ত জাতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দিবসটি উদযাপন করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়:

কাউন্সিল দ্বারা গৃহীত থিমের উপর উদ্দীপক প্রতিফলন এবং ধারণা বিনিময়

সমাজের সমস্ত অংশীদারদের সাথে থিমের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিতর্ক

থিমের অন্তর্নিহিত বিষয়গুলির উপর জাতীয় আলোচনার প্রতিফলন করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা, যা আইটিইউ এবং এর বাকি সদস্যদের কাছে ফেরত দেওয়া হবে

 

আগের সব বিষয়—-

 

১৯৬৯ ইউনিয়নের ভূমিকা ও কার্যক্রম।

১৯৭০ টেলিযোগাযোগ এবং প্রশিক্ষণ।

১৯৭১ মহাকাশ ও টেলিযোগাযোগ।

১৯৭২ বিশ্ব টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক।

১৯৭৩ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

১৯৭৪ টেলিযোগাযোগ এবং পরিবহন।

১৯৭৫ টেলিযোগাযোগ এবং আবহাওয়াবিদ্যা।

১৯৭৬ টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য।

১৯৭৭ টেলিযোগাযোগ এবং উন্নয়ন।

১৯৭৮ রেডিও যোগাযোগ।

১৯৭৯ মানবজাতির সেবায় টেলিযোগাযোগ।

১৯৮০ গ্রামীণ টেলিকম।

১৯৮১ টেলিযোগাযোগ এবং স্বাস্থ্য।

১৯৮২ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

১৯৮৩ এক বিশ্ব, এক নেটওয়ার্ক।

১৯৮৪ টেলিকমিউনিকেশন: একটি বিস্তৃত দৃষ্টি।

১৯৮৫ টেলিকম উন্নয়নের জন্য ভাল।

১৯৮৬ পার্টনার অন দ্য মুভ।

১৯৮৭ টেলিকম সমস্ত দেশে পরিষেবা দেয়।

১৯৮৮ ইলেকট্রনিক যুগে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের বিস্তার।

১৯৮৯ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

১৯৯০ টেলিযোগাযোগ এবং শিল্প উন্নয়ন।

১৯৯১ টেলিযোগাযোগ এবং মানব নিরাপত্তা।

১৯৯২ টেলিযোগাযোগ এবং মহাকাশ: Xintiandi।

১৯৯৩ টেলিযোগাযোগ এবং মানব উন্নয়ন।

১৯৯৪ টেলিযোগাযোগ এবং সংস্কৃতি।

১৯৯৫ টেলিযোগাযোগ এবং পরিবেশ।

১৯৯৬ টেলিযোগাযোগ এবং ক্রীড়া।

১৯৯৭ টেলিযোগাযোগ এবং মানবিক সহায়তা।

১৯৯৮ টেলিকম ট্রেড।

১৯৯৯ ই-কমার্স।

২০০০ মোবাইল কমিউনিকেশন।

২০০১ ইন্টারনেট: চ্যালেঞ্জ, সুযোগ এবং সম্ভাবনা।

২০০২ মানুষকে ডিজিটাল ডিভাইড ব্রিজ করতে সাহায্য করা।

২০০৩ সমস্ত মানবজাতিকে যোগাযোগে সহায়তা করা।

২০০৪ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: টেকসই উন্নয়নের পথ।

২০০৫ একটি ন্যায্য তথ্য সোসাইটি তৈরি করতে পদক্ষেপ নিন।

২০০৬ অগ্রসর বিশ্ব সাইবার নিরাপত্তা।

২০০৭ আইসিটি পরবর্তী প্রজন্মকে উপকৃত করুক।

২০০৮ আইসিটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপকার করতে দিন। এবং সমস্ত লোককে আইসিটি সুযোগগুলি উপভোগ করতে দিন।

২০০৯ শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা রক্ষা করুন।

২০১০ আইসিটি শহুরে জীবনকে উন্নত করে।

২০১১ আইসিটি গ্রামীণ জীবনকে উন্নত করে।

২০১২ তথ্য যোগাযোগ এবং মহিলা।

২০১৩ আইসিটি এবং সড়ক নিরাপত্তার উন্নতি।

২০১৪ ব্রডব্যান্ড টেকসই উন্নয়ন প্রচার করে।

২০১৫ টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: উদ্ভাবনের চালিকাশক্তি।

২০১৬ আইসিটি উদ্যোক্তা প্রচার এবং সামাজিক প্রভাব প্রসারিত করুন।

২০১৭ বিগ ডেটা বিকাশ করুন এবং প্রভাব বিস্তার করুন।

২০১৮ সমস্ত মানবজাতির সুবিধার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঠিক ব্যবহার প্রচার করুন।

২০১৯ মানককরণের ব্যবধানকে সংকুচিত করা।

২০২০ সংযোগ লক্ষ্য ২০৩০: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের প্রচারের জন্য ICT ব্যবহার করা।

২০২১ চ্যালেঞ্জিং সময়ে ডিজিটাল রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করা।

২০২২ বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং আবার স্বাস্থ্য।

 

উল্লেখ্য,  ইন্টারনেট এবং অন্যান্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (ICT) ব্যবহার সমাজ ও অর্থনীতিতে এবং সেইসাথে ডিজিটাল বিভাজন দূর করার উপায়গুলি নিয়ে আসতে পারে সেই সম্ভাবনার সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করার জন্য প্রতি বছর বিশ্ব টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সোসাইটি দিবস পালিত হয়।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ডিজিটাল যুগে শিক্ষা ও জ্ঞানের হালহকিকৎ : দিলীপ রায়।

আমরা জানি, প্রাত্যহিক জীবনের চালিকা শক্তি হচ্ছে জ্ঞান ও শিক্ষা । এখন দেখা যাক জ্ঞান ও শিক্ষা বলতে আমরা কী বুঝি  ?  শিক্ষার মধ্য দিয়ে মানুষের অন্তনির্হিত শক্তি ও সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত ও প্রস্ফুটিত হয় এবং জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞান সৃষ্টির পথ উন্মুক্ত হয় । এই জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ  তার সমাজকেও সমৃদ্ধ করে । শিক্ষা ব্যক্তি ও সমষ্টির জ্ঞান, সৃজনশীলতা, কর্মদক্ষতা, চরিত্র ও মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটায় । আবার অনেকের মতে, বিদ্যা হলো একটা পুস্তকে আবদ্ধ, একটি জ্ঞানের শিখা মাত্র । আর জ্ঞান হলো সেই শিখা থেকে অসংখ্য শিখা হয়ে আলোকিত হওয়ার উপায় । শিখার আলোয় চারিদিকে আলোকিত হয় । জ্ঞান বলতে কোনো বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষা থাকাকে  বোঝায় । দর্শন শাস্ত্রের জ্ঞান নিয়ে যে অংশটি আলোচনা করে তাকে আবার  জ্ঞানতত্ত্ব  বলে ।
সম্ভবত আমার মতো অনেকের মনেই  প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক,  “প্রযুক্তিঃ আশীর্বাদ না অভিশাপ ?” প্রচণ্ড  গতিতে  প্রযুক্তির  ব্যবহার  বাড়ছে । প্রযুক্তির অকল্পনীয় উন্নয়ন বলতে গেলে সব  কিছুকে সম্ভব করে হাতের নাগালে  এনে দিয়েছে । আগে প্রযুক্তির ব্যবহার কম ছিল । প্রযুক্তির লভ্যতা ও ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল সমাজের নির্দিষ্ট কিছু মানুষের  মধ্যে । একটা ফোন করতে মানুষ ছুটতেন পিসিও বুথে । আরও কিছুদিন আগে দুই শব্দে মৃত্যু খবর জানাতে ছুটতে হতো দূরের পোস্ট অফিসে,  টেলিগ্রাম করার জন্য ।  মানি অর্ডারের মাধ্যমে গ্রামে গঞ্জে টাকা পাঠানোর রেওয়াজ সেদিনও ছিল । ট্রেনের টিকিট, ব্যাঙ্ক, সিনেমা, বিল মেটানো, সবক্ষেত্রেই লম্বা লাইন  । এমনও দেখা গেছে কলকাতার জিপিও’র পাশে  কয়লা ঘাটের রেলের সংরক্ষিত কাউন্টারে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য রাত থেকে লাইন দিতে হতো । বর্তমানে  পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন  ঘটেছে ।  প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনযাত্রার ছবিটার আমূল পরিবর্তন করে  দিয়েছে । এইজন্য জেগে উঠেছে “ডিজিটাল ইন্ডিয়া” যার প্রভাব ভৌগলিক সীমানাকেও ছাপিয়ে গেছে ।  জানা যায়, ভারতের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সারা বিশ্বে  তুলে ধরার লক্ষ্যে এই ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কর্মসূচি ।
( ২ )
এখানে উল্লেখ থাকে যে, ডিজিটাইজেশনের দিকে ভারতের দ্রুতগতির  যাত্রা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরিকাঠামোর সম্প্রসারণ এবং গত দুই দশক ধরে বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সামগ্রী ও ডেটা সহজে নাগালের মধ্যে আসায়  শিক্ষা ক্ষেত্রে   EdTech এর  দ্রুত উত্থান ও গ্রহণযোগ্যতার পথ সুগম হয়েছে । ভারতের  EdTech ক্ষেত্র, বিশ্বের বৃহত্তম শিক্ষাপ্রযুক্তি ক্ষেত্রগুলির অন্যতম । আমরা জানি, EdTech হলো শিক্ষাদান ও শিক্ষা গ্রহণের উন্নয়ন ঘটাতে প্রযুক্তি, অর্থাৎ সফটওয়্যার এবং/অথবা হার্ডওয়্যারের ব্যবহার । EdTech অ্যাপ ডাউনলোড করা স্মার্টফোন এখন শিক্ষার সমার্থক হয়ে উঠেছে । শ্রেণীকক্ষ এখন ইট-সিমেন্টের চৌহদ্দী ছাড়িয়ে ক্লিক এবং পোর্টালে স্থানান্তরিত । দূর-দূরান্তে থাকা, আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে EdTech গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং এই ভূমিকার জন্য  আগামীদিনে EdTech ক্ষেত্রের বিকাশ অব্যাহত থাকবে ।
শুধুমাত্র পড়ুয়ারাই  নয়, শিক্ষকরাও আকর্ষণীয় শিক্ষণগত অনুশীলনের মাধ্যমে EdTech থেকে উপকৃত হচ্ছেন, তাঁদের শিক্ষাদান পদ্ধতি আরও উন্নত হচ্ছে । ইন্টারঅ্যাকটিভ হোয়াইটবোর্ড, শিক্ষামূলক ভিডিও, এবং অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদের সুবাদে পড়ুয়াদের শিক্ষাগ্রহণ আরও মনোগ্রাহী হয়ে উঠছে ।
ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে জন্ম নেওয়া  ও বেড়ে ওঠা মানুষ ছোটবেলা থেকে ইন্টারনেট এবং কম্পিউটারে সড়গড় । প্রযুক্তির সাথে তাদের হরিহর আত্মা । এরা বড় হয়ে উঠছে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, ইত্যাদিকে ঘিরে । এখানে বলা বাহুল্য, ডিজিটাল প্রযুক্তি তাদের জীবনের একটা  স্বাভাবিক অঙ্গ । তারা সহজ-সাবলীল্ভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে  কাজে লাগায় । তাই এসব তরুন-তরুনীদের মাথা থেকে বের হয় অনেক ধরনের উদ্ভাবন  । তবে এটা ঘটনা, ফোনাফুনি, ইমেল, টেক্সটিং ও টুইটের হাত ধরে এরা বুঁদ হয়ে আছে । বর্তমান প্রজন্মের মানুষেরা সহজেই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে ।  পুরানো ধ্যান ধারণার বাবা-মায়ের মতো নয়, তারা তাদের কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে বেশী আগ্রহী ।
ভারতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রযুক্তির প্রভাব এখন অনেক সুগভীর । শোনা যায়, এই বছরের জানুয়ারীতে সংখ্যায় প্রায় আট বিলিয়ন লেনদেন হয়েছে ডিজিটাল প্রথায় । প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনার ক্ষেত্রে দ্রুত কীভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলির বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে ভারত তার নজিরবিহীন উদাহরণ রেখেছে এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে । ভারত চায় সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার উপর আধারিত এই কর্মপন্থা অন্য দেশেও অনুসৃত হোক । কারণ এই পন্থা উদ্ভাবনমূলক কর্মসূচীসমূহের আঁতুরঘর হয়ে ওঠার এবং দরিদ্র দেশগুলির উত্থানের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে ।
( ৩ )
এবার আবার আসছি বিদ্যা, শিক্ষা ও জ্ঞান  প্রসঙ্গে । ব্যক্তিগত ও জাতীয় নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞান ভিত্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে  শিক্ষার্থীদের মননে, কর্মে ব্যবহারিক জীবনে উদ্দীপন সৃষ্টি করা । সুতরাং মূল্যবোধ তৈরী করা এই মুহূর্তে সময়োচিত ও  আশুকর্তব্য ।  জ্ঞানের উৎস নিয়ে দার্শনিকদের ভিন্ন ভিন্ন মত । উল্লেখযোগ্য চারটি মত —– বুদ্ধিবাদ, অভিজ্ঞতাবাদ, বিচারবাদ ও স্বজ্ঞাবাদ । বুদ্ধিবাদ অনুসারে বুদ্ধিই যথার্থ জ্ঞান লাভের মাধ্যম বা উৎস । ডেকার্ট, লিবনিজ, প্রমুখ দার্শনিক বুদ্ধিবাদের সমর্থক । অভিজ্ঞতাবাদ অনুসারে, ইন্দ্রিয়জ অভিজ্ঞতা জ্ঞানলাভের উৎস । লক, বার্কলি, হিউম প্রমুখ অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক । বিচারবাদ অর্থ — বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়েই জ্ঞানের উৎপত্তি । কান্ট  এই মতবাদের সমর্থক । স্বজ্ঞা বা সাক্ষাৎ প্রতীতিই যথার্থ জ্ঞান লাভের উৎস । দার্শনিক বার্গসোঁ স্বজ্ঞাবাদের প্রবক্তা ।  অন্যদিকে বিদ্যা প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞান, শিক্ষা, দর্শন, বা কোনো বাস্তব জ্ঞানের  ক্ষেত্রে “সঠিক জ্ঞান” বোঝায় যা বিতর্কিত বা খণ্ডন করা অসম্ভব  ! যার অর্থ হলো বিবেচনা করা, সন্ধান করা, জানা, অর্জন করা বা বোঝা । অনেকের মতে বিদ্যা অর্জনের মূল উদ্দেশ্য — মানুষ হওয়া । আবার অনেকে বিদ্যা অর্জন অন্য অর্থে বুঝে থাকেন । আমরা বুঝি বিদ্যা অর্থ শিক্ষা ।  দুটি দৃষ্টিকোন থেকে শিক্ষার উদ্দেশ্যকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে । একটি ব্যক্তিক, অপরটি সমষ্টিক বা রাষ্ট্রীক দৃষ্টি ভঙ্গি ।  ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি একটি পুরাতন প্রবাদ বাক্য- “লেখা পড়া করে যেই / গাড়ি ঘোড়া চড়ে সেই”- দিয়েই সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। কেননা ঐ প্রবাদ বাক্যের মর্মার্থ আমাদের দেশের মানুষের মানসভূমে গভীর ভাবে শিকড় বিস্তৃত করে আছে । মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেকের চিন্তা  আরও সংকীর্ণ ও আত্মকেন্দ্রিক । অধিকাংশ বাবা-মা তাদের মেয়েকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠান একটাই উদ্দেশে,  যাতে শিক্ষিত ও ভাল অর্থ উপার্জকারী পাত্র শিকার করা যায় ।  তবে অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে । পারিবারিক সংস্কৃতির উপর এটি নির্ভর করে । তা ছাড়া বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে, নারী শিক্ষার কলেবর  ঊর্ধ্বগতি !  কিন্তু ধনী-গরীব নির্বিশেষে এই সংকীর্ণ  চিন্তা পরিহার করার সময় এসেছে । নারীরা  এখন “মহলের” অলঙ্কার ‘মহিলা’ নয়; নারীরা এখন অনেক উন্নত-মনস্ক  মানুষ । দেশের উন্নয়নের নিরিখে  তারাও পুরুষদের সম-মর্যাদার ।  “Education is the method of civilization” “শিক্ষাই সভ্যতার বাহন ।” সভ্যতার অগ্রসরতা মানেই মানব সমাজের বিকাশ । আধুনিক যুগে প্রতি রাষ্ট্রের একটি শিক্ষানীতি থাকে এবং সেই  অনুসারে শিক্ষা পদ্ধতিকে সাজানো হয় । আমাদের দেশেও একাধিক শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে । আমাদের জাতীয় শিক্ষা নীতির (NEP, 2020)  উদ্দেশ্য হচ্ছে , বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমের বিষয়বস্তু হ্রাস করে প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং অভিজ্ঞতা শিক্ষার উপর বৃহত্তর ফোকাস  ।
সর্বশেষে এটাই বলা যায়,  শিক্ষার  অন্যতম  লক্ষ্য হলো জ্ঞানার্জন । জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই মানুষের বিভিন্ন দিকে দক্ষতা বাড়ে । মানুষের চিন্তাশক্তির বিকাশলাভ তখনই ঘটে যখন জ্ঞানার্জন সম্ভব  । জ্ঞান  অর্জন করলে  যেমন ব্যক্তির মানসিক  উন্নতিসাধন  হয়  তেমনই ব্যবহারিক  দিকেও প্রভূত উন্নতিসাধন ঘটে । সুতরাং প্রযুক্তির ব্যবহার যতই বাড়ুক,  শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রবহমান অটুট  থাকবে  নিজস্ব মহিমায় ।

 

(তথ্যসূত্র ও ছবি: সংগৃহীত ও যোজনা ০২ & ০৫/২৩)

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

একটি শিশুর বেড়ে ওঠা থেকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

আজ ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস। ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ পরিষদের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। রাষ্ট্রসংঘ ১৯৯৪ সালকে আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষ ঘোষণা করেছিল। সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে একটি পরিবারের ভূমিকা কি তা আমরা সকালেই জানি। একটি শিশুর বেড়ে ওঠা থেকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পরিবার এমন একটি সমাজিক বন্ধন যা একটি ব্যক্তিকে জীবনের চলার পথে সমূহ ঝড় ঝঞ্ঝা প্রতিহত করতে সহযোগিতা করে। তাই এ ক্ষেত্রে যৌথ পরিবারের ভূমিকা আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারন সুখে দুঃখে সকলকে একসঙ্গে না হোক কাউকে না কাউকে পাশে পাওয়া যায়। নিজেদের সুখ দুঃক্ষ গুলো ভাগ করে নেওয়া যায়। কিন্তু দুক্ষের বিষয় হলো এই যে  যতো দিন যাচ্ছে ততই ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র হচ্ছে পরিবার। কর্মের আর ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে আমরা নিজেদের ক্রমেই ভাগে ভাগে ভাগ করে নিচ্ছি। বঞ্চিত হচ্ছি, পরিবারের ছোটদের কিংবা নব প্রজন্ম কে বঞ্চিত করছি যৌথ পরিবারের আসল সুখ থেকে।

 

কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে  মনে হচ্ছে একান্নবর্তী কিংবা যৌথ পরিবারের ধারণা যেন এখন ‘সেকেলে’ হয়ে গেছে। বিশেষ করে, শহুরে জীবন ব্যবস্থায় এই ব্যাপারটি চরম আকার ধারণ করেছে। আমরা যেন ছুটে চলেছি  সুখ নামক এক অসুখের পেছনে। একা থাকব একা পরব, আমি আমার সন্তান আমার বৌ এই যেন একটা গন্ডি তৈরি করছি সকলে। কিন্তু ভুলে যাচ্ছি প্রকৃত সুখ কি সেটা ভাবতে বা বুঝতে। যৌথ পরিবারে হয়তো মতগত বিভিন্ন পার্থক্য থাকে, আর এটাই সভাবিক। কিন্তু যৌথ বা একান্নবর্তি পরিবারের মধ্যে যে সুযোগ সুবিধা গুলো থাকে সেটাও আমাদের ভাবতে হবে। কিন্তু দিন দিন জেনে আমরা সেই ভাবনা থেকে সরে আসছি। এর ফলও ভুক্তে হচ্ছে ক্ষুদ্র পরিবার গুলোকে। হঠাৎ অসুখ বিসুখ,  বিপদে আপদে বা বিপর্যয়ে সেই সমস্যা গুলো প্রকট হয়ে ওঠে। আমরা বুঝি না প্রতিটা অনু পরিবারও একদিন বড় হবে। সন্তান বড় হবে, তার বিয়ে হবে, তার সন্তান হবে এই ভাবেই। আর, আমরা কেবল ভাংতেই আছি!!

 

আমরা জানি পরিবার মানেই হচ্ছে মা, বাবা, ভাই, বোন, দাদা, দিদি, দাদু, দিদা, কাকা, কাকি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসবাস।  আমাদের সমাজব্যবস্থায় পরিবারের এই ধারণা প্রচলিত অতীত থেকেই। কিন্তু দিন যতোই যাচ্ছে, আমরা যেন ততোই এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসছি। যেন ক্রমেই ‘স্বামী-স্ত্রী-সন্তানে’ই সীমাবদ্ধ করে ফেলছি আমরা পরিবারকে। সেখানে মা-বাবা কিংবা দাদা-দাদীর কোন স্থান নেই। মা-বাবাকে হয়তো গ্রামের বাড়িতে কাটাতে হচ্ছে নিঃসঙ্গ-অসহায় জীবন। আবার অনেক মা-বাবার ঠিকানা হচ্ছে ‘বৃদ্ধাশ্রম’। এর থেকে বড় যান্ত্রনার অর কি হতে পারে ! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে একান্নবর্তী কিংবা যৌথ পরিবারের ধারণা যেন এখন ‘সেকেলে’ হয়ে গেছে। বিশেষ করে, শহুরে জীবন ব্যবস্থায় এই ব্যাপারটি চরম আকার ধারণ করেছে।  রক্তের বন্ধন মানেই পারিবারিক বন্ধন। পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে অকৃত্রিম সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তা অটুট রাখা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের চিরায়ত সমাজ ব্যবস্থায় সুন্দর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, সুন্দর পারিবারিক বন্ধন। পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বন্ধুর মতো হলে পারিবারিক নানা জটিল সমস্যা ও মোকাবেলা করা যায়। সকলের এগিয়ে চলার পথ হয় মসৃণ।  তাই যৌথ পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখার মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

 

তবে সুপ্রাচীন কাল থেকে যে যৌথ পরিবারে চিত্র সারাবাংলা জুড়ে ছিল এখন তা অনেকটাই ম্লান। শহুরে জীবনে অনেক আগেই বিলীন হয়েছে যৌথ পরিবারের চিত্র। আগে গ্রামে কিছু যৌথ পরিবার দেখা গেলেও এখন তাও নেই। কেউ ইচ্ছে করে কিংবা কেউ কর্মের তাগিদে ভেঙে দিচ্ছে যৌথ পরিবারের ধারনা গুলো। বংশ মর্যাদা এমনকি ঐতিহ্যের পরিবারেও বিলীন একত্রে বাস করার ইতিহাস। যা দেখতে এক সময় মনুষ অভ্যস্থ ছিল তা এখন স্বপনের মতন। হয়তো সিনেমার পর্দায় কেবল ভেসে ওঠবে গল্পের মতো অতিতের ইতিহাস।

নৃবিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কির মতে – “পরিবার হল একটি গোষ্ঠী বা সংগঠন আর বিবাহ হল সন্তান উৎপাদন ও পালনের একটি চুক্তি মাত্র”। সামনার ও কেলারের মতে- ‘পরিবার হল ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন, যা কমপক্ষে দু’ পুরুষকাল পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে”- এ সংজ্ঞার প্রেক্ষিতে বোঝা যায়, বিবাহপ্রথার আগেও সমাজে পরিবারের সৃষ্টি হয়েছিল- কারণ এ সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার আগে থেকেই মানুষ দলবদ্ধ জীবনযাত্রা করত যা পারিবারিক জীবনযাপনের স্বাক্ষরবহ। তবে বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন সংস্কৃতির পরিবারের ভূমিকা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পরিলক্ষিত হয়। এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বৈচিত্র্যপূর্ণ নানামুখী ধারা যে কারণে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে এর গঠন ও অন্যান্য অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। যে শিশুটি ভবিষ্যতের নাগরিক, তার মনোজগত প্রস্তুত হয় পরিবারে। পরিবারের ধারা কেমন, কী ধরনের প্রথা-রীতিনীতি, এ সবের উপর ভিত্তি করে তার জীবনভঙ্গি গড়ে ওঠে। তাই শিশুর সুষ্ঠু পারিবারিক শিক্ষা শৈশব তথা শিশুর মন তথা সাদা কাগজের পাতায় যে ছাপ রাখে, তা ওর পরবর্তী জীবনে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। তাই রাষ্ট্র পরিচালনায় যেমন কিছু সংবিধান আছে তেমনি পারিবারিক সংবিধানও থাকা দরকার। যেমন পরিবারের সবার সঙ্গে সদ্ভাব গড়ে তোলা, সাংসারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মিথ্যে না বলা, গুরুজনদের শ্রদ্ধা করা, নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে ফেরা, নিজের কাজ নিজে সম্পন্ন করা, মিথ্যেকে ঘৃণা করা এবং মানবিক মূল্যবোধগুলোর চর্চার মাধ্যমে অন্তরকে বিকশিত করা। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের সমাজে প্রচলিত যৌথ পরিবারে পারস্পরিক সম্প্রীতি গভীর হয়, অটুট থাকে। অসুখ বিসুখসহ নানা সমস্যায় একে অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এতে অনেক বড় সমস্যাও সমাধান হয়ে যায় অতি সহজে। সময়ের তাগিদে যৌথ পরিবার কিংবা পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার বিষয়টি যখন এই সমাজে ক্রমান্বয়ে গুরুত্বহীন হয়ে উঠছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আজকের এই আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। আসুন আমরা সেই ভাবনাকে বুকে নিয়ে আবার একি সূত্রে আবদ্ধ হই ।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

 

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

আজ ‘মা দিবস’, জানব দিনটি পালনের ইতিহাস ও তাৎপর্য।

জীবনের কোনও মুহূর্তেই ‘মা’-কে বাদ দিয়ে ভাবা যায় না। এই একটা শব্দ মনে অনেক শক্তি যোগায়, যা সকল প্রকার বাধাকে কাটিয়ে উঠতে যথেষ্ট। মা ছাড়া জীবন অচল, নিঃসঙ্গ যাত্রায় প্রতিটি মূহূর্ত নির্জন, জীবনে মায়ের প্রয়োজনীয়তা অসীম, মায়ের আশীর্বাদেই কঠিন পরিস্থিতিও হয় সহজ। মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার পৃথিবী জুড়ে পালিত হয় ‘মাদার্স ডে’। যদিও প্রতিটি দিন মায়ের জন্য সমান, কিন্তু মাতৃ দিবস এমন একটি দিন, যেদিন শিশুরা তাদের মায়ের এই একটি দিন বিশেষ তৈরি করতে চায়। এই খুশি উপলক্ষে মাতৃ দিবসে  মা-কে শুভেচ্ছা জানান। এই বছর এই বিশেষ দিনটি পড়েছে ১৪ মে।

 

মা দিবস হল পরিবার বা ব্যক্তির মাকে সম্মান করার একটি দিন, সেইসাথে মাতৃত্ব, মাতৃত্বের বন্ধন এবং সমাজে মায়েদের প্রভাব তা স্মরণ করা । তবে এটি বিশ্বের অনেক অংশে বিভিন্ন দিনে পালিত হয়, সাধারণত মার্চ বা মে মাসে।  এটি অনুরূপ উদযাপনের পরিপূরক, পরিবারের সদস্যদের সম্মান করে, যেমন ফাদার্স ডে, ভাই-বোন দিবস এবং দাদা-দাদি দিবস।

 

ঠিক কবে থেকে পালিত হচ্ছে মাতৃ দিবস? এর ইতিহাসই বা কী? এই সম্পর্কে অনেক ভিন্ন মতামত রয়েছে। একাংশের মতে প্রাচীন গ্রীক এবং রোমানদের মধ্যেই মাকে শ্রদ্ধা জানাতে এই বিশেষ উদযাপনের দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় প্রথম। তারা মাতৃদেবী রিয়া এবং সাইবেলের সম্মানে উৎসবের আয়োজন করে। অন্যদিকে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাতৃদিবস উদযাপন হয় প্রথম। ১৯০৮ সালে মার্কিন কর্মী আনা জার্ভিস প্রথম এই দিন উদযাপন করেন।আনা জার্ভিস তাঁর মা, অ্যান রিভস জার্ভিসের সঙ্গে থাকতেন। এমনকি তিনি কখনও বিয়েও করেননি। মায়ের মৃত্যুর পর, আনা জার্ভিস তাঁরই স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এবং বলা হয় যে এখান থেকেই মাতৃ দিবসের সূচনা হয়েছিল।আনা জার্ভিস ছিলেন একজন শান্তি কর্মী যিনি গৃহযুদ্ধের সময় আহত সৈন্যদের যত্ন নেওয়ার জন্য মাতৃ দিবস ওয়ার্ক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আনা জার্ভিস তার পরিবার এবং দেশের প্রতি তার মায়ের উত্সর্গ এবং আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছিলেন এই দিনটির মাধ্যমে। আনা জার্ভিসের প্রয়াসেই মাতৃ দিবস বা মাদার’স ডে ১৯১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারী স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার গোটা বিশ্বে মাতৃ দিবস পালিত হয়ে আসছে।

 

বেশিরভাগ দেশেই মা দিবস হল একটি সাম্প্রতিক রীতি, যা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ছুটির দিনটির রীতি অনুসারে চলে এসেছে। যখন অন্যান্য বহু দেশ ও সংস্কৃতি এটিকে গ্রহণ করে তখন এই দিনটিকে একটি অন্য মাত্রা দেওয়া হয়, বিভিন্ন পর্বের (ধর্মীয়, ঐতিহাসিক বা পৌরানিক) সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়, এবং একটি একদমই অন্য দিন বা বিভিন্ন দিনে এটিকে পালন করা হয়।
কিছু কিছু দেশে বহু আগে থেকেই মাতৃত্বের প্রতি উৎসর্গিত কয়েকটি অনুষ্ঠান ছিল এবং সেইসব অনুষ্ঠানে মার্কিন মা দিবসের মত মায়েদের কার্নেশন (গোলাপী ফুল) এবং আরো অন্য উপহার দেওয়া হত।
অনুষ্ঠান পালনের রীতিটি অনেক রকম। অনেক দেশে মা দিবস পালন না করলে এটিকে প্রায় একটি অপরাধ গণ্য করা হয়। অনেক দেশে আবার মা দিবস একটি স্বল্প-পরিচিত উৎসব যা মূলত প্রবাসী মানুষেরা পালন করে থাকে বা বিদেশী সংস্কৃতি হিসাবে মিডিয়া সম্প্রচার করে থাকে (U.K বা যুক্তরাজ্যে দীপাবলী পালনের মত)।

 

যদিও কিছু দেশে মা উদযাপনের বহু-শতাব্দীর ইতিহাস রয়েছে, তবে ছুটির আধুনিক আমেরিকান সংস্করণটি ২০ শতকের গোড়ার দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছিল অ্যানা জার্ভিসের উদ্যোগে, যিনি প্রথম মা দিবসের পূজার আয়োজন করেছিলেন এবং  ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনের অ্যান্ড্রুস মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চে উদযাপন, যেটি আজ আন্তর্জাতিক মা দিবসের মন্দির হিসেবে কাজ করে।  এটি হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান মা এবং মাতৃত্বের অনেক ঐতিহ্যবাহী উদযাপনের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, যেমন গ্রীক কাল্ট থেকে সাইবেলে, মাতৃদেবতা রিয়া, হিলারিয়ার রোমান উত্সব, বা অন্যান্য খ্রিস্টান ধর্মযাজক মাদারিং  রবিবার উদযাপন (মাদার চার্চের ছবির সঙ্গে যুক্ত)।  যাইহোক, কিছু দেশে, মা দিবস এখনও এই পুরানো ঐতিহ্যের সমার্থক।  মা দিবসের আমেরিকান সংস্করণটি খুব বেশি বাণিজ্যিকীকরণের জন্য সমালোচিত হয়েছে।  জার্ভিস নিজেই, যিনি একটি লিটারজিকাল পালন হিসাবে উদযাপন শুরু করেছিলেন, এই বাণিজ্যিকতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন এবং প্রকাশ করেছিলেন যে এটি তার উদ্দেশ্য ছিল না।  এর প্রতিক্রিয়ায়, কনস্ট্যান্স অ্যাডিলেড স্মিথ ইংরেজিভাষী বিশ্বের অন্যান্য অনেক অংশে মাতৃত্বের একটি বিস্তৃত সংজ্ঞার স্মারক হিসেবে মাদারিং সানডে-এর পক্ষে সফলভাবে ওকালতি করেছেন।

 

আধুনিক ছুটির দিনটি প্রথম পালিত হয় ১৯০৭ সালে, যখন আনা জার্ভিস পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনের অ্যান্ড্রুস মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চে প্রথম মা দিবসের উপাসনা করেন।  অ্যান্ড্রু’স মেথডিস্ট চার্চ এখন আন্তর্জাতিক মা দিবসের মন্দিরটি ধারণ করে।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবসকে একটি স্বীকৃত ছুটিতে পরিণত করার জন্য তার প্রচারণা শুরু হয়েছিল ১৯০৫ সালে, যে বছর তার মা অ্যান রিভস জার্ভিস মারা যান।  অ্যান জার্ভিস ছিলেন একজন শান্তি কর্মী যিনি আমেরিকান গৃহযুদ্ধের উভয় পক্ষের আহত সৈন্যদের যত্ন নিতেন এবং জনস্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের জন্য মাদার্স ডে ওয়ার্ক ক্লাব তৈরি করেছিলেন।  তিনি এবং অন্য একজন শান্তি কর্মী এবং ভোটাধিকার জুলিয়া ওয়ার্ড হাওয়ে একটি “শান্তির জন্য মা দিবস” তৈরি করার জন্য জোর দিয়েছিলেন যেখানে মায়েরা জিজ্ঞাসা করবেন যে তাদের স্বামী এবং ছেলেরা আর যুদ্ধে নিহত হবেন না।  এটি একটি সরকারী ছুটি হওয়ার ৪০ বছর আগে, ওয়ার্ড হাউ ১৮৭০ সালে তার মাদার্স ডে ঘোষণা করেছিলেন, যা “আন্তর্জাতিক প্রশ্নের বন্ধুত্বপূর্ণ মীমাংসা, শান্তির মহান এবং সাধারণ স্বার্থ” প্রচার করার জন্য সমস্ত জাতীয়তার মায়েদের একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানায়।  আনা জার্ভিস এটিকে সম্মান জানাতে চেয়েছিলেন এবং সমস্ত মাকে সম্মান জানাতে একটি দিন নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে একজন মা হলেন “সেই ব্যক্তি যিনি আপনার জন্য বিশ্বের যে কারও চেয়ে বেশি করেছেন”।

১৯০৮ সালে, ইউ.এস. কংগ্রেস মাদার্স ডেকে একটি সরকারী ছুটিতে পরিণত করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, মজা করে যে তাদেরও একটি “শাশুড়ি দিবস” ঘোষণা করতে হবে।  যাইহোক, আনা জার্ভিসের প্রচেষ্টার কারণে, ১৯১১ সাল নাগাদ সমস্ত মার্কিন রাজ্য ছুটি পালন করে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে মা দিবসকে স্থানীয় ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় (প্রথমটি হল ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, জার্ভিসের হোম স্টেট, ১৯১০ সালে)।  ১৯১৪ সালে, উড্রো উইলসন একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন যেটি মা দিবসের নামকরণ করে, যা মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার অনুষ্ঠিত হয়, মায়েদের সম্মানের জন্য একটি জাতীয় ছুটির দিন হিসাবে।
যদিও জার্ভিস, যিনি মা দিবসকে একটি লিটারজিকাল পরিষেবা হিসাবে শুরু করেছিলেন, উদযাপনটি প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছিলেন, তিনি ছুটির বাণিজ্যিকীকরণে বিরক্ত হয়েছিলেন এবং এটি “হলমার্ক হলিডে” শব্দগুচ্ছের সাথে যুক্ত হয়েছিল।  ১৯২০ এর দশকের গোড়ার দিকে, হলমার্ক কার্ড এবং অন্যান্য কোম্পানিগুলি মা দিবসের কার্ড বিক্রি করা শুরু করেছিল।  জার্ভিস বিশ্বাস করতেন যে কোম্পানিগুলি মা দিবসের ধারণাকে ভুল ব্যাখ্যা করেছে এবং শোষণ করেছে এবং ছুটির জোর অনুভূতির উপর ছিল, লাভ নয়।  ফলস্বরূপ, তিনি মা দিবস বয়কট সংগঠিত করেন এবং জড়িত কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন।  জার্ভিস যুক্তি দিয়েছিলেন যে উপহার এবং আগে থেকে তৈরি কার্ড কেনার পরিবর্তে লোকেদের তাদের ভালবাসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে হাতে লেখা চিঠির মাধ্যমে তাদের মায়েদের প্রশংসা ও সম্মান করা উচিত।  জার্ভিস ১৯২৩ সালে ফিলাডেলফিয়াতে একটি ক্যান্ডি মেকারদের কনভেনশনে এবং ১৯২৫ সালে আমেরিকান ওয়ার মাদারদের একটি সভায় প্রতিবাদ করেছিলেন। এই সময়ের মধ্যে, কার্নেশনগুলি মা দিবসের সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং অর্থ সংগ্রহের জন্য আমেরিকান যুদ্ধের মায়েদের দ্বারা কার্নেশন বিক্রি করা ক্ষুব্ধ হয়েছিল।  জার্ভিস, যাকে শান্তি নষ্ট করার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল।
ব্রিটেনে, কনস্ট্যান্স অ্যাডিলেড স্মিথ মাদারিং সানডে-এর পক্ষে ওকালতি করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, এটি ইতিমধ্যেই বিদ্যমান একটি খ্রিস্টান ধর্মযাজক উদযাপন যেখানে বিশ্বস্তরা গির্জায় যান যেটিতে তারা বাপ্তিস্মের ধর্মানুষ্ঠান পেয়েছিলেন, একটি সমতুল্য উদযাপন হিসেবে।  তিনি মাদার চার্চ, ‘পৃথিবী ঘরের মা’, মেরি, যিশুর মা এবং মাদার নেচার উদযাপনের মধ্যযুগীয় ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করেছেন।  তার প্রচেষ্টা ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং ইংরেজি-ভাষী বিশ্বের অন্যান্য অংশে সফল হয়েছিল।

 

তাই, আন্তর্জাতিক মাদার’স ডে বা মাতৃ দিবস প্রতিটি শিশুর জন্য একটি বিশেষ দিন। বছরের এই বিশেষ দিনটি প্রত্যেক সন্তান ও মায়ের জন্য এক বিশেষ দিন। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা  জানাতে পালিত হয় দিনটি। এই দিনে, শিশু, তরুণ এবং বৃদ্ধ, তাদের মায়েদের উপহার, ফুল, কার্ড দিয়ে বা বিশেষ খাবার বা কার্যকলাপের জন্য তাদের নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে তাদের ভালবাসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। মায়ের আদরে যে আরাম, ভরসা আছে, তা আর পৃথিবীর কারও আদরে নেই।

পৃথিবীতে সবাই বদলে যায়, কিন্তু বদলায় না মা। মা দিবসে পৃথিবীর সকল মা কে তাই জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও অশেষ ভালোবাসা।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য — প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি :  দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

“দৃঢ় সত্যের দিতে হবে খাঁটি দাম,
হে স্বদেশ, ফের সেই কথা জানলাম ।“
সুকান্ত ভট্টাচার্য

প্রথমেই বলে রাখি, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে বলা হয় গণমানুষের কবি । অসহায়-নিপীড়িত, নির্যাতিত, সর্বহারা মানুষের সুখ, দুঃখ তাঁর কবিতার মূল বিষয়। অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায়ের স্বার্থে ধনী-মহাজন অত্যাচারী প্রভুদের বিরূদ্ধে সুকান্ত ভট্টাচার্যের কলম ছিল সক্রিয় । তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে শোষণ-বঞ্চনার বিরূদ্ধে অভিব্যক্তি । তিনি চেষ্টা করেছেন কবিতার মাধ্যমে শ্রেণী বৈষম্য দূর করতে । সর্বক্ষণ তাঁর শ্যেন দৃষ্টি ছিল মানবতার জয়ের দিকে । অসুস্থতা এমনকি অর্থাভাব তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি । তাঁর মানবিক বোধ অবিস্মরণীয় । মানুষের কল্যাণ করা ছিল তাঁর একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান । মানবিক চেতনায় উদ্‌বুদ্ধ হয়ে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা কাব্যধারার প্রচলিত প্রেক্ষাপটকে আমূল বদলে দিতে পেরেছিলেন । সেই কারণে আজও আমাদের কাছে তিনি নমস্য কবি ।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ১৫আগস্ট, ১৯২৬ এবং মৃত্যু ১৩ মে, ১৯৪৭ । তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ঠিক দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে । বাংলা সাহিত্যের নিরিখে তিনি ছিলেন তরুন কবি । তাঁর কবিতার পটভূমি মূলত মার্কসবাদী ভাবধারার এবং প্রগতিশীল চেতনার প্রেক্ষাপটে ।
বাবা ছিলেন নিবারন ভট্টাচার্য এবং মা সুনীতি দেবী । কালীঘাটের মহিম হালদার স্ট্রিটে মাতামহের বাড়িতে তাঁর জন্ম । তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল অবিভক্ত ফরিদপুর জেলার অর্থাৎ বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার, উনশিয়া গ্রামে । তিনি স্কুলে পড়ার সময় ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন । আর তা ছাড়া বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার কারণে তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটে । এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, সুকান্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন কবি অরুণাচল বসু । তাঁর জীবনে বাল্যবন্ধু অরুণাচল বসুর প্রভাব অবর্ণনীয় । অরুণাচল বসুর মা কবি সরলা বসু । তিনি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে পুত্রস্নেহে ভালবাসতেন । সুকান্ত ছেলেবেলায় মাতৃহারা হলেও সরলা বসু তাঁকে সেই অভাব কিছুটা পূরণ করে দিয়েছিলেন । কবির জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়িতে । সেই বাড়িটি এখনও অক্ষত আছে । শোনা যায়, পাশের বাড়িটিতে এখনও বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র জীবিত ভাই বিভাস ভট্টাচার্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মম্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরূদ্ধে কলম ধরেন । ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন । সেই বছর আকাল নামক একটি সংকলন গ্রন্থ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।
আট-নয় বছর বয়স থেকেই সুকান্ত লিখতে শুরু করেন । স্কুলের হাতে লেখা পত্রিকা “সঞ্চয়ে” একটি ছোট্ট হাসির গল্প দিয়ে প্রথম আত্মপ্রকাশ । তারপর কয়েকদিন পরে তাঁর লেখা বিবেকান্দের জীবনী প্রথম ছাপার মুখ দেখে বিজন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শিখা’ কাগজে । মাত্র এগারো বছর বয়সে ‘রাখাল ছেলে’ নামে একটি গীতিনাট্য রচনা করেন । এটি পরে ‘হরতাল’ বইতে সংকলিত হয় । এখানে জানিয়ে রাখি, পাঠশালাতে পড়ার সময়ে ‘ধ্রুব’ নাটকের নাম ভূমিকায়‍ অভিনয় করেছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য । সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাল্য বন্ধু লেখক অরুণাচল বসুর সঙ্গে মিলে আরেকটি হাতে লেখা কাগজ ‘সপ্তমিকা’ সম্পাদনা করেন । সেই সময় হাতে লেখা দেওয়াল পত্রিকার প্রচলন ছিল চোখে পড়ার মতো । বেশীর ভাগ দেওয়াল পত্রিকা স্টেশনের প্লাটফর্মে সাটানো থাকত, যাতে বেশী মানুষ পড়তে পারেন । অরুণাচল বসু তাঁর আমৃত্যু বন্ধু ছিলেন ।
মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত ভট্টাচার্য কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন । সুকান্ত ভট্টাচার্য কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা “ দৈনিক স্বাধীনতার” (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন । সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতায় অনাচার ও বৈষ্যমের বিরূদ্ধে প্রতিবাদি কন্ঠস্বর ফুটে ওঠে । গণমানুষের প্রতি গভীর মমতা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর প্রত্যেকটি কবিতায় । তাঁর রচনাবলির মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য: ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) প্রভৃতি । পরবর্তী কালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্ত সমগ্র নামে তাঁর রচনাবলি প্রকাশিত হয় ।
পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হন এবং ১৯৪৭ সালের ১৩ মে কলকাতায় মারা যান । মাত্র একুশ বৎসর বয়সে প্রতিভাধর কবির দেহাবসান ঘটে । স্বল্প বয়সে কবির দেহাবসান ঘটলেও সামান্য কয়েকবছরে অত্যাশ্চর্য কবিত্ব শক্তির পরিচয় দিয়ে গেছেন যেটা আজও আমাদের মধ্যে অমলিন । (তথ্যসূত্র: সংগৃহীত)
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ৭৭তম প্রয়াণ দিবসে আমার শতকোটি প্রণাম ।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল : দ্যা লেডি উইথ দ্যা ল্যাম্প।

আজ আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ বা ধাত্রী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আজ ভারতেও পালন করা হচ্ছে দিবসটি। নার্সিং এমন একটি পেশা যা সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। এ পেশার মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা সামাজিকভাবে কোন রোগী বা ব্যক্তির স্বাস্থ্য পুণরুদ্ধার এবং জীবনযাত্রার গুরুত্বতা তুলে ধরা হয়। এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত, দক্ষ কিংবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি নার্স বা সেবিকা নামে পরিচিত। প্রধানতঃ নারীরাই নার্সিং পেশার সাথে জড়িত থাকেন। তবে এখন অনেক পুুুরুষেও এই পেশার সাথে যুুুুক্ত হচ্ছেন। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের জন্মদিন কে স্মরণীয় করে রাখতে আজকের দিনটি অর্থাৎ আন্তৰ্জাতিক ধাত্রী দিবস সমগ্র বিশ্বে প্ৰতিবছর ১২ মে তারিখে পালন করা হয়। ১৮২০ সালের এই তারিখে আধুনিক নার্সিং পরিষেবার মাৰ্গদৰ্শক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্ম হয়েছিল। এই দিবস পালনের মাধ্যমে সম্মান জানানো হয় সেই নারীকে যিনি তার কর্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছেন – নার্সিং একটি পেশা নয় সেবা। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের প্ৰতি শ্ৰদ্ধা জানাবার সাথে বিশ্বের ধাত্রীদের রোগীদের প্ৰতি দেওয়া স্বাস্থ্যসেবার জন্য কৃতজ্ঞতা প্ৰকাশ করা হয়।

ইতিহাস—

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল এর জন্মদিন কে আন্তৰ্জাতিক ধাত্রী দিবস হিসেবে পালিত হয়। তিনি ছিলেন আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত, একজন লেখিকা এবং পরিসংখ্যানবিদ। যিনি দ্যা লেডি উইথ দ্যা ল্যাম্প নামে পরিচিত ছিলেন। ১৮২০ সালের ১২ মে মাসে ইতালির ফ্লোরেন্সে জন্মগ্রহণ করেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।
ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিল নার্স হওয়া। কিন্তু তখনকার সময়ে নার্সিংকে সম্মানের চোখে দেখা হতো না। এছাড়া তার পিতা-মাতা চাননি ফ্লোরেন্স নার্স হোক। তাই ফ্লোরেন্সকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়। কেননা তার নিজ বাড়িতে তার স্বপ্নটি পূরণ করা সম্ভব ছিলনা।
১৮৫৫ সালে তিনি নার্স প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য কাজ শুরু করেন। নিরলস প্রচেষ্টায় ১৮৫৯ সালে তিনি নাইটিঙ্গেল ফান্ডের জন্য সংগ্রহ করেন প্রায় ৪৫ হাজার পাউন্ড। পরবর্তী সময়ে তিনি ভারতবর্ষের গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর গবেষণা চালান। যা ভারতবর্ষে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবদান রাখে।লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশারূপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৮৬০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল’ যার বর্তমান নাম ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্কুল অব নার্সিং । ডা. এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েলের সাথে যৌথভাবে ১৮৬৭ সালে নিউইয়র্কে চালু করেন ‘উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ’। এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় নার্সিংয়ের উপর বইও লিখেছেন। ১৮৮৩ সালে রাণী ভিক্টোরিয়া তাকে ‘রয়েল রেডক্রস’ পদক প্রদান করেন। প্রথম নারী হিসাবে ‘অর্ডার অব মেরিট’ খেতাব লাভ করেন ১৯০৭ সালে। ১৯০৮ সালে লাভ করেন লন্ডন নগরীর ‘অনারারি ফ্রিডম’ উপাধি। এ ছাড়াও ১৯৭৪ সাল থেকে তার জন্মদিন ১২ মে পালিত হয়ে আসছে ‘ইন্টারন্যাশনাল নার্সেস ডে’। যার মধ্যেমে সম্মান জানানো হয় এক নারীকে যিনি তার কর্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছেন- নার্সিং একটি পেশা নয় সেবা। ১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট ৯০ বছর বয়সে প্রয়াত হন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।

 

ক্রিমিয়ার যুদ্ধে নার্সিং ইতিহাসে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ও পরিবর্তন ঘটেছিল। এতে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল পেশাদারী পর্যায়ে নার্সিংয়ের পরিধি এবং নীতিমালা প্রণয়ন ও বিশ্লেষণপূর্বক তার প্রণীত নোটস অন নার্সিং গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
পেশাদারী পর্যায়ে এ পেশার মানোন্নয়নে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নার্স ব্যক্তিত্বরূপে ম্যারি সীকোল, এগনেস এলিজাবেথ জোন্স এবং লিন্ডা রিচার্ড ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছেন। ম্যারি সীকোল ক্রিমিয়ায় কাজ করেছেন; এগনেস এলিজাবেথ জোন্স ও লিন্ডা রিচার্ডস গুণগত মানসম্পন্ন নার্সিং বিদ্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে প্রতিষ্ঠা করেন। তন্মধ্যে – লিন্ডা রিচার্ডস আমেরিকার প্রথম পেশাদার ও প্রশিক্ষিত নার্সরূপে ১৮৭৩ সালে বোস্টনের নিউ ইংল্যান্ড হসপিটাল ফর উইম্যান এন্ড চিল্ড্রেন থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন।
বিশ্বের ১ম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ডে জাতীয় পর্যায়ে নার্সদেরকে নিবন্ধিত করা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯০১ সালে নার্সেস রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট প্রণীত হয়। এলেন ডাফার্টি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রথম নিবন্ধিত নার্স। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অঙ্গরাজ্যরূপে নর্থ ক্যারোলাইনায় নার্সিং লাইসেন্স ল ১৯০৩ সালে গৃহীত হয়। ১৯৯০-এর দশকে নার্সদেরকে ঔষধ দেয়া, ডায়াগনোস্টিক, প্যাথলজি পরীক্ষাসহ রোগীদেরকে প্রয়োজনে অন্য পেশাদারী স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকের কাছে স্থানান্তরের অনুমতি দেয়া হয়।

 

আন্তর্জাতিক ধাত্রী পরিষদ বা ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ নার্সেস (আইসিএন) ১৯৬৫ সাল থেকে এই দিনটি উদযাপন করে আসছে। ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কল্যাণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা ডরোথি সাদারল্যান্ড প্রস্তাব করেন যে প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার “ধাত্রী দিবস” ঘোষণা করবেন; তবে তিনি তা অনুমোদন করেননি।
১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে, ১২ মে দিনটি উদযাপনের জন্য নির্বাচিত হয় কারণ এটি আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মবার্ষিকী। প্রতি বছর, আইসিএন আন্তর্জাতিক নার্স দিবসের কিট প্রস্তুত এবং বিতরণ করে। কিটে সর্বত্র নার্সদের ব্যবহারের জন্য শিক্ষাগত এবং উন্মুক্ত তথ্য উপকরণ রয়েছে।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আমার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ :: অরূপ কুমার ভট্টাচার্য্য।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ও বাঙালির শৈল্পিক অহঙ্কারের সৌধে অনিবার্যভাবে বিরাজমান। বাংলার সামাজিক উত্থান-পতনের এক যুগ সন্ধিক্ষণে তাঁর জন্ম। ঐতিহ্যবাহী কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সন্তান হিসেবে রবীন্দ্রনাথের শৈশব-কৈশোর অতিক্রান্ত হয়েছে জ্ঞানচর্চার এক নির্মল পরিবেশের মধ্যে। মহর্ষি পিতার উপনিষদ চর্চা বালক বয়সেই রবীন্দ্রমানস-গঠনে প্রতিফলন ঘটে এবং সেই শিক্ষাকে তাঁর সমস্ত সত্তায় আত্মস্থ করে নেন। বাল্যকালের সেই উপনিষদিক শিক্ষার আলো সারাজীবন তাঁকে পথ দেখিয়েছে। উপনিষদে যে সত্যের সন্ধান তিনি পেয়েছিলেন সেই সত্যেরই উজ্জ্বল প্রভা তাঁর মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছিল। তিনি নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্য সাধনা, মেধা ও শ্রমে নিজেই ক্রমাগত নিজেকে অতিক্রম করেছেন যা তাঁকে বহুমাত্রিক শিল্পস্রষ্টার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। নিজের বিরাট সৃষ্টিশীল ক্ষমতা তাঁকে এক যুগোত্তীর্ণ মহাপুরুষের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। বাংলা সাহিত্যে হাতে গোনা যে ক’জন বড় মাপের খ্যাতিসম্পন্ন লেখক আছেন তার মধ্যে একজন অন্যতম পুরোধা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অবিভক্ত বাংলায় নবজাগরণের মধ্যাহ্নে রবি কিরণের উন্মেষ ঘটেছিল। সেই থেকে রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনে সত্য ও সুন্দরের ফলগুধারার মতো বহমান এবং সমগ্র বাঙালির হৃদয়ে এবং বাংলা সাহিত্যজগতে হিমাদ্রির মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন এক অলৌকিক ঐশ্বর্য নিয়ে। বাঙালির সমৃদ্ধ ভাষা, সাহিত্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতির বহুলাংশ জুড়েই আছেন ধীমান পুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

বাঙালি তাই তার প্রতিটি সংকটে, প্রতিটি সংশয়ে আশ্রয় নেয় সেই রবীন্দ্রনাথের কাছে। রবীন্দ্রনাথ নিজের সমৃদ্ধ সাহিত্য চর্চার পরিধি দিয়ে বিস্তৃত করেছেন গোটা বাংলা সাহিত্যের পরিসর। আমরা তাঁকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় অভিষিক্ত করেছি। রবীন্দ্রনাথের সাফল্যের এই ক্রম-উত্তরণ কিন্তু একদিনে ঘটেনি। এক লহমায় তিনি ‘বিশ্বকবি’ বা ‘কবিগুরু’ অভিধায় ভূষিত হননি। সমগ্র রবীন্দ্র জীবন ও সৃষ্টির পিছনে রয়েছে তাঁর সৃষ্টির দীর্ঘ অবিশ্রান্ত পথ চলা। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতে রবীন্দ্রনাথ এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। তাঁর রচনা চির নতুন ও চিরকালের, কারণ তিনি জগৎ ও জীবনকে দেখেছেন বর্তমানের দৃষ্টির সীমানায়। যে দৃষ্টি তৈরি হয়েছিল অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দর্শনের সমন্বিত অন্তর্দৃষ্টি থেকে। তাই তিনি সব সময়ই আজকের রবীন্দ্রনাথ। বাঙালির যাপিত জীবনাচরণের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। জীবনের প্রভাত থেকে অন্তিমলগ্ন তিনি বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা; সব্যসাচী লেখক, কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, সঙ্গীত রচয়িতা, সুর স্রষ্টা, গায়ক, সমালোচক, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, সমাজসেবী ও শিক্ষাবিদ হিসেবে অনন্য। তিনি সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে, বিপুল সৃষ্টিসম্ভারে বদলে দিয়েছেন বাঙালির মানসজগত এবং বাংলাকে দিয়েছেন বিশ্ব পরিচিতি। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর অবদান। একে অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। আমাদের শিল্প-সাহিত্য, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, রাজনীতি, জীবন- চেতনায় রবীন্দ্রনাথ অবশ্যই অপরিহার্য। আমাদের জীবনের সঙ্গে, চেতনার সঙ্গে, মননের সঙ্গে, আন্দোলনে, ভাষার মাধুর্যে, দেশপ্রেমে সৃষ্টিশীল কর্মের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। আমাদের প্রাণের টানে, জীবনের টানে, চেতনার টানে, শিল্প ও সাহিত্যের টানে রবীন্দ্রনাথের কাছে আমাদের বারবার ফিরে যেতে হবে শিল্পের আরাধনায়। তাঁর কবিতার ছন্দ, বাণী ও সুর আমাদের হৃদয়ে বুলিয়ে দেয় শান্তির শুভ্র পরশ। অনন্ত অসীমের সেই অসামান্য রবীন্দ্রনাথের কাছে আমরা প্রার্থনায় নতজানু হই, সমর্পিত হই, পরম বিশ্বাসে।

রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রাণের কবি, প্রেমের কবি, জীবনের কবি, প্রকৃতির কবি, গানের কবি সর্বোপরি মানুষের ভালোবাসার কবি হয়ে চেতনার আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে অপার্থিব আনন্দলোকে আনন্দের বিস্তৃৃতি ঘটিয়েছেন। তিনি বাঙালি হয়েও চিন্তা-চেতনায় আধুনিক ও আন্তর্জাতিক বোধসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তাঁর শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা ছড়া, কবিতা কিংবা বড়দের জন্য লেখা কবিতা, গান, গল্প-উপন্যাসে আমরা বাঙালির সহজ সরল জীবনকে তুলে ধরতে দেখি। তাঁর নানা কাব্যগীতিতে আমরা প্রেম সৌন্দর্য, রোমান্টিক ভাবনা, আধ্যাত্মিক কল্পনার চিন্তাধারা পরিলক্ষিত হতে দেখি। রবীন্দ্রনাথের অসাধারণ গল্প উপন্যাস এখনো আমাদের সৃজনশীল মনকে আন্দোলিত করে। আমরা রাবীন্দ্রিক চরিত্রগুলোকে চলচ্চিত্র ও মঞ্চে রাজা ও রানী, বিসর্জন, রক্তকরবী, চিত্রাঙ্গদা, চিরকুমার সভা, বাল্মিকী প্রতিভা, তাসের দেশ, ডাকঘর, রাজা, মুক্তধারা, অচলায়তন, শাপমোচন, শেষের কবিতা, সফল সঞ্চায়ন দেখি; তখন আমরা নিজেরা কিছুটা রাবীন্দ্রিক হয়ে ওঠার চেষ্টা করি। রবীন্দ্রনাথ আছেন বাঙালির হৃদয় জুড়ে তাঁর সৃষ্টির উৎসারণে কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাস, মঞ্চনাটক, টিভি নাটক, নৃত্যনাট্য, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এবং বাংলার সমগ্র সংস্কৃতিতে। তিনি তাঁর মানবীয় উচ্চ ভাবনা-চেতনা আর মানুষের চিরায়ত অনুভূতি ভাষার সৌকর্য সাধন আর নিপুণ শৈল্পিক উপস্থাপনার মাধ্যমে কাব্য-সঙ্গীত-প্রবন্ধ-গল্পে আর চিত্রকলায় রূপায়িত করে মানুষের চেতনাকে শানিত করেছেন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির ব্যাপকতা বিশ্বজুড়ে শিখরস্পর্শী প্রতিভায় উদ্ভাসিত যা বাঙালির সাংস্কৃতিক স্বকীয়তায় ছড়িয়েছে রবির আলো।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনকে শিল্পবোধ থেকেই অনুভব করেছেন। আর সেজন্য তাঁর শিল্প-সৃষ্টি প্রায়শই জীবনসংলগ্ন। তিনি কাব্য, গল্প, উপন্যাস, সঙ্গীত, নাটককে জীবনের প্রতিভাষে সিঞ্চিত করেছেন। যা রূপালঙ্কার, প্রতীক ও বিমূর্ততার দ্যোতনায় হয়েছে উজ্জ্বল। সব মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় এক বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। দেড়শ বছর পেরিয়েও কবি আমাদের মাঝে তাই চিরজাগরুক হয়ে আছেন।

সমগ্র বাঙালির মানস জগতে রবীন্দ্রনাথ চিরকালীন আবেগ, প্রেরণায় জাগ্রত থাকবেন এবং বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির আলোর দিশারি হয়ে আলো ছড়াবেন যুগ থেকে যুগান্তরে। তাঁর সৃষ্টি, তাঁর স্বপ্ন আর জীবন দর্শন আগামী প্রজন্মকে পথ দেখাবে সত্য ও সুন্দরের।

——————————————————————————-

Share This